- নির্মাণ ব্যয় হবে হাজার কোটি টাকা
- বার্ষিক রাজস্ব আয় হবে ১৪৫ কোটি টাকা
২০২২ সালের জুন মাসে পদ্মা সেতু সড়ক যোগাযোগের জন্য খুলে দেয়ার পর মুন্সীগঞ্জের ব্যস্ততম শিমুলিয়া ফেরিঘাট প্রাণ চাঞ্চল্য হারিয়ে কেবল রাতের পর্যটন স্পটে পরিণত হয়েছে। এবার শিমুলিয়া নদী বন্দরের নামে থাকা জমি পরিকল্পিতভাবে কাজে লাগোনোর উদ্দেশ্যে হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে কনটেইনার টার্মিনাল ও ইকোপার্ক তৈরির প্রকল্প অনুমোদনের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠাচ্ছে বিআইডব্লিউটিএ। সরকার প্রকল্পটি অনুমোদন দিলে প্রকল্পের কাজ শেষ করতে সময় লাগবে তিন বছর। টার্মিনাল থেকে বার্ষিক ২০৪০০০ টিইইউ কনটেইনার পরিবহন করা যাবে। এতে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রায় এক লাখ লোকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হবে। এ ছাড়াও পরিবহন খরচ হ্রাসসহ পরিবেশবান্ধব পরিবহন চালু হবে।
বিআইডব্লিউটিএ সূত্রে জানা যায় প্রস্তাবিত প্রকল্পের শুরুতে কনটেইনার টার্মিনাল তৈরি করা হবে। যার আনুমানিক নির্মাণব্যয় হতে পারে ৭৫০ কোটি টাকা। পরে এখানে একটি ইকো পার্কও তৈরি করা হবে। যার নির্মাণ ব্যয় হতে পারে আনুমানিক ৪০০ কোটি টাকা। প্রস্তাবিত প্রকল্পের মাস্টারপ্লান থেকে জানা যায়, প্রকল্পটির মোট আয়তন ১,১২,৫৪২ বর্গমিটার (২৯.৩১ একর)। প্রবেশ সড়ক ৬৫৫০ বর্গমিটার ও অভ্যন্তরীণ সড়ক ২০০০০ বর্গমিটার। এ ছাড়াও পুরো মাস্টারপ্লান জোন এ, জোন বি, জোন সি ও জোন ডি মোট চারটি জোনে ভাগ করা হয়েছে।
জোন-এ : এ অঞ্চলের মোট আয়তন ৭৬৬২২ বর্গমিটার (১৮.৯৩ একর)।
এ জোনে থাকছে, কনটেইনার লোডিং-আনলোডিং, কনটেইনার স্টেকিং ইয়ার্ড, সেন্ট্রাল ফ্রেইট স্টোর (সিএফএস), মেরামত কাজের দোকান, জ্বালানি সংরক্ষণ এলাকা, পাম্প হাউজ, ক্রেন/ সরঞ্জাম/ যানবাহন চলাচলের জন্য অভ্যন্তরীণ রাস্তা এলাকা ও প্রধান প্রবেশদ্বার ইত্যাদি।
টার্মিনালটির জেটির দৈর্ঘ্য ২১৫ মিটার ও প্রস্থ ৩৫ মিটার। ১০০ মিটার পর্যন্ত দৈর্ঘ্যরে দু’টি কনটেইনার জাহাজ একসাথে এই জেটিতে পণ্য লোড-আনলোড করতে পারবে। জেটির সংলগ্ন ৪৩০০ বর্গমিটার এলাকা হলে লোড-আনলোডিং এরিয়া।
প্রকল্পটিতে ৩২২৬০ বর্গমিটার আয়তনের কনটেইনার স্টোরেজ/স্ট্যাক ইয়ার্ড থাকবে। যার একসাথে স্টোরেজ ক্ষমতা ৩০০০টিইইউ। কনটেইনার হ্যান্ডলিং করার বার্ষিক ক্ষমতা প্রায় ২০৪০০০টিইইউ। যেখানে বিলম্ব ফি ছাড়া পাঁচ দিন স্টোরেজ করা যাবে। এ ছাড়াও জোন এ-তে থাকছে, ৬০০ বর্গমিটারের কনটেইনার ফ্রেইট স্টেশন, ১৫,০০০ লিটার স্টোরেজ ক্ষমতাসম্পন্ন রিফুয়েলিং স্টেশন, কেপিআই নিরাপত্তা মান সীমানা প্রাচীর ও কাঁটাতারের সাথে ২.৫ মিটার উঁচু চারটি নিরাপত্তা টাওয়ার।
জোন-বি : জোন-বি তে থাকছে ট্রাক পার্কিং ইয়ার্ড (আইসিটির উত্তর-পশ্চিম অংশ)। যেখানে প্রায় ৩০টি ৪০ ফুট লম্বা কনটেইনার ক্যারিয়ার/ লরি, ১৬টি ২০ ফুট লম্বা কনটেইনার ক্যারিয়ার/ লরি/ কাভার্ড ভ্যান এবং আরো কিছু যানবাহন একসাথে পার্ক করা যেতে পারে। এ ছাড়াও থাকবে আনসার ব্যারাক, বিনোদন কক্ষ ও সাধারণ ওয়াশ রুম।
জোন সি : প্রায় ১৮,৯০০ বর্গমিটার নিয়ে গঠিত হবে জোন-সি। যেখানে থাকবে আইসিটি অফিস, প্রশাসনিক ভবন ও ক্যাফেটেরিয়া।
জোন ডি : যেকোনো জরুরি পরিস্থিতির জন্য জোন-ডি তে আইসিটির দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে একটি ফেরিঘাট প্রস্তাব করা হয়েছে। ফেরিঘাটের জন্য বাস ও গাড়ি পার্কিং থাকবে। এ ছাড়াও দর্শনার্থী ও নদী পর্যটনকারীদের ইলিশ মাছের স্বাদ উপভোগ করার জন্য একটি ইকো পোর্ট প্রস্তাব করা হয়েছে। এর জন্য পদ্মা নদীর বাম তীরে (ফেরিঘাটের বাইরে) সাত-আট একর জমি অধিগ্রহণ করতে হবে।
প্রকল্পটির বিনিয়োগ ব্যয় (প্রস্তাাবিত) : ৭৫৬৭১ লাখ টাকা, প্রকল্পের ওঅ্যান্ডএম ব্যয় (বার্ষিক) ৩০৮৯ লাখ টাকা, প্রকল্পের সময়কাল : ৩ বছর। প্রকল্পের কাজ শেষ হয়ে টার্মিনালটি চালু হলে সম্ভব্য বার্ষিক রাজস্ব আয় হবে ১৪৫ কোটি টাকা।
উল্লেখ্য, বর্তমানে দেশের সমুদ্র বন্দরগুলোর হ্যান্ডেলিংকৃত মাত্র ৪.৫২ শতাংশ কনটেইনার নদী পথে দেশের অভ্যন্তরে পরিবহন করা হয়। অবশিষ্ট ৯৫.৪৮ শতাংশ কনটেইনার সড়ক ও রেল পথে পরিবহন করা হয়। পায়রা বন্দর দিয়ে কনটেইনার উঠানো-নামানো এখনো শুরু হয়নি। মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণকাজ চলমান রয়েছে। সব সমুদ্র বন্দর চালু হলে ২০৪১ সাল নাগাদ ১০.৩০ মিলিয়ন টিইইউ কনটেইনার দেশের অভ্যন্তরে পরিবাহিত হবে। ভবিষ্যতে যান বাহনের সংখ্যা বৃদ্ধির কারণে সড়ক পথে যানজট অনেক বৃদ্ধি পাবে। ফলে দেশের আমদানি-রফতানি বৃদ্ধি এবং সব সমুদ্রবন্দরে কটেইনার উঠানো-নামানো শুরু হলে সড়ক পথে কনটেইনার পরিবহন অনেক সময় এবং ব্যয়সাপেক্ষ ব্যাপার হবে।
নদী পথে কনটেইনার পরিবহন করে উঠানো-নামানোর জন্য বর্তমানে সরকারিভাবে একটি অভ্যন্তরীণ কনটেইনার টার্মিনাল (আইসিটি) আছে যা ভবিষ্যতের প্রয়োজন মেটাতে পারবে না। ফলে শিমুলিয়ায় নতুন কনটেইনার টার্মিনাল তৈরি হলে দেশের পরিবহন সেক্টরে সম্ভাবনাময়ী সাফল্য বয়ে আনবে।
প্রস্তাবিত প্রকল্পের বিষয় জানতে চাইলে বিআইডব্লিউটিএ চেয়ারম্যান আরিফ আহমেদ মোস্তফা নয়া দিগন্তকে বলেন, প্রকল্পটির প্রস্তাবনা মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর জন্য কাজ করছি। এ সপ্তাহে পাঠানো সম্ভব না হলেও দু’সপ্তাহের মধ্যে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। তিনি বলেন, সরকার মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্র বন্দরের মতো বন্দর তৈরি করেছে। এতে দেশের মধ্যে পণ্য পরিবহনের চাপ বাড়বে। ফলে নদী পথে কনটেইনার টার্মিনাল তৈরি হলে বিশেষ করে সড়ক পথে পরিবহনের চাপ কমবে। পাশাপাশি নদী পথে পরিবহন জ্বালানি সাশ্রয়ী হওয়ায় পণ্য পরিবহনের খরচ কমবে। এ ছাড়াও বহু লোকের কর্মসংস্থানসহ এই টার্মিনাল দীর্ঘ মেয়াদিভাবে দেশের অর্থনীতিতে ভূমিকা পালন করবে।