বিশিষ্ট আইনজীবী অ্যাডভোকেট শিশির মনির বলেছেন, সংবিধানে গণভোট সম্ভব না এমন বক্তব্য যারা দিচ্ছেন তারা বুঝতে পারেন না গণ-অভ্যুত্থানের স্পিরিট কাকে বলে, তারা আন্ডারমাইন্ড করেন গণ-অভ্যুত্থানকে। একটা ভুল রিডিং হচ্ছে। ট্র্যাডিশনিলিজিম আর প্রাগমেটিজম। ট্র্যাডিশনাল ব্যাখ্যা যদি আপনি দেন, এই চোখে যদি আপনি দেখেন, এই চশমা যদি আপনার চোখে থাকে, আপনি ব্যাখ্যা দেবেন ট্র্যাডিশনাল। আর যদি প্রাগমিটিক হন, কনটেক্সটকে বিবেচনা করেন, তাহলে আপনি ব্যাখ্যা দেবেন উইথ দি কনটেক্সট, কোনো একটা কনটেক্সট কোনো একটা ডকুমেন্টের বাইরে পড়লে ভুল হয়, আপনি আজকের কাজ বা সকল আয়োজন ৫ আগস্টের বাইরে গিয়ে পড়লে ভুল হবে, ৫ আগস্টকে সরিয়ে দিলে আমরা কেউ থাকব না। কনটেক্সট চেঞ্জ হয়ে যাবে। এখানে একটা ভুল ইন্টারপ্রিটেশন কেউ কেউ দিচ্ছেন।
আইনজীবী শিশির মনির নয়া দিগন্তকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন।
নয়া দিগন্ত : তারা কেন এমন বক্তব্য দিচ্ছেন?
শিশির মনির : তারা মনে করছেন যে বাংলাদেশে একটা নিয়মতান্ত্রিক ইলেকশন হতে যাচ্ছে।
একটা নিয়মতান্ত্রিক সরকার পরিবর্তন হচ্ছে, সুতরাং যা কিছু হবে সবকিছুই হবে দুই দুই চার নিয়মের মধ্যে। তারা আন্ডারমাইন্ড করেন গণ-অভ্যুত্থানকে। তারা বুঝতে পারেন না গণ-অভ্যুত্থানের স্পিরিট কাকে বলে আর তার ফোর্স কত শক্তিশালী। এটা বুঝতে না পারার কারণে লেটারিক ইন্টারপ্রিটেশন দেন। লিটারিরি ইন্টারপ্রিটেশন দেন। যা লেখা আছে তাই দেখেন। পেছনে কী ঘটেছে তা আর দেখতে পান না।
নয়া দিগন্ত : এ ধরনের বক্তব্য কি তাহলে গ্রহণযোগ্য নয়?
শিশির মনির : আমি মনে করি এ ধরনের ইন্টারপ্রিটেশনকে গ্রহণ করা ঠিক হবে না। তাহলে রাষ্ট্র মেকানিজমটা মুখ থুবড়ে পড়বে। রাষ্ট্র মেকানিজমের মূল ইন্টারপ্রিটেশন হলো ৫ আগস্টে যে ঘটনা ঘটেছে এইটাই হলো সকল ঘটনার কেন্দ্রবিন্দু। এখান থেকে আপনি যদি সরেন, তাহলে কী পাবেন, সংবিধান পাবেন? এখান থেকে সরে গেলে আপনি মত প্রকাশের স্বাধীনতা পাবেন? এখান থেকে সরে গেলে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা থাকবে? এখান থেকে সরে গেলে ইলেকশন কমিশন থাকবে? এখান থেকে সরে গেলে ফ্রি ফেয়ার ক্রেডিবল ইলেকশনের আয়োজন থাকবে? কিছুইতো থাকবে না। ফলে এ আরগুমেন্ট যারা করছেন ‘দে আর ডুইং কনশাসলি এ রং আরগুমেন্ট দেয়ার অ্যাডভান্সিভ’।
নয়া দিগন্ত : তাহলে গ্রহণযোগ্য পথ কী?
শিশির মনির : আমি মনে করি গণ-অভ্যুত্থানের সোর্সকে ধরেই ইন্টারপ্রিটেশন করলে বাকি ইন্টারপ্রিটেশন মিলবে, এ ছাড়া আর বাকি কিছু মিলবে না। আইনে মিলবে না। গণ-অভ্যুত্থানের সোর্সকে ধরলে সব হিসেবে মিলে যাবে। গণ-অভ্যুত্থানের সোর্সকে সরালে কোনো কিছুর সাথে কোনো কিছুর ডিফিট করতে পারবেন না। গোঁজামিল দিয়ে নয়, ক্লিয়ারকাট স্টেপ যারা নেবেন, গণ-অভ্যুত্থান হয়েছে, একটা রাষ্ট্রের সরকার গঠিত হয়েছে, পরে কতগুলো সংস্কার প্রস্তাব নেয়া হয়েছে, ঐকমত্য কমিশন কনস্টিটিউশনের পাওয়ারটুকু ডিসকাস করেছে, বাকি অ্যারেঞ্জমেন্টগুলো আস্তে আস্তে বড় হয়ে বৃহৎ আকারে দেখা দিয়েছে।
এখন এটা কি সংবিধানের সাথে যায়? যায় না, আপনি চিফ অ্যাডভাইজারের শপথ নিয়েছেন, বলেন তো কোন আইনে আছে চিফ অ্যাডভাইজারের শপথ? নাই তো কিছু, তাহলে আমরা কী করেছি?
নয়া দিগন্ত : ১০৬ দিয়ে বৈধ করা হয়েছে কি?
শিশির মনির : না, ১০৬ দিয়ে এসবকে ব্যাখ্যা করা যায় না। এ সব ব্যাখ্যা যারা দিচ্ছেন, তারা আইনকে জেনে শুনে সাংঘাতিকভাবে মিসইন্টারপ্রিটেশন করছেন। মূল বিষয় হচ্ছে হাইকোর্টে একটি রায় হয়েছে, তাতে বলা হয়েছে এই সরকারের ভিত্তি শুধু ১০৬ না, কনস্টিটিউশনাল পাওয়ার, জনগণের গাঠনিক ক্ষমতা। এটা আপিল শুনানির জন্য আসছে, এ আপিল সুপ্রিম কোর্টের ফুল কোর্টে শুনানি হবে। সরকারের ভিত্তি নিয়ে। এখানে মূল ইন্টারপ্রিটেশন হবে জনগণের অভ্যুত্থান এবং জনগণের ক্ষমতা। এটাই সরকারের মূল ভিত্তি আর বাকি যেখানে যা দাঁড় করাতে চাইবেন সব গোঁজামিল ছাড়া কোনো উপায় নাই।



