সাইমুমের সাংস্কৃতিক উৎসবে উঠে এলো জুলাই অভ্যুত্থানের দলিল

‘জুলাই জাগরণ’-এর বিশেষ আকর্ষণগুলোর মধ্যে একটি ভাবনানির্ভর প্রদর্শনীর মাধ্যমে তুলে ধরা হয়েছে আয়নাঘর। যার মাধ্যমে দর্শকরা অনুভব করতে পারবেন প্রতিবাদের বহুমাত্রিক রূপ।

আবুল কালাম

Location :

Dhaka City
Printed Edition

জুলাই অভ্যুত্থান। কয়েক হাজার ছাত্র-জনতার প্রাণ আর পঙ্গুত্বের বিনিময়ে অর্জন দেশের দ্বিতীয় স্বাধীনতা। গেল বছরের জুলাই থেকে আগস্টে সংঘটিত হয় দেশের ইতিহাসের এই ভয়ানক গণহত্যা। ফ্যাসিস্ট হাসিনার নির্দেশে তার দল ও প্রশাসনের কর্তাদের নেতৃত্বে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন দমনে ছাত্র-জনতার ওপর নির্বিচারে গুলি ও হামলা চালানো হয়, যা দলিল হয়ে ওঠে এসেছে সাইমুম শিল্পীগোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক উৎসবে। এক কথায় বলা যায় এটি হলো রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক প্রতিবাদের এক অভিন্ন মঞ্চ, যা জাতিকে তার অতীত সংগ্রামের সাথে নতুনভাবে সংযুক্ত করছে। জুলাই আন্দোলন নিয়ে এমন বৃহৎ আয়োজন এটাই প্রথম।

রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে চার দিনের এ আয়োজনে শিশুকিশোর পরিবার-পরিজন নিয়ে আসা মানুষ ছাড়াও সরকারের উপদেষ্টা, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন শিল্পী, সংস্কৃতিকর্মী, রাজনীতিবিদ, নাট্যজন, সাংবাদিক, সমাজকর্মী ও তরুণ প্রতিনিধি, শহীদ পরিবারের সদস্য ও আহত আন্দোলনকারীরা অংশ নিচ্ছেন।

গতকাল উৎসব ঘুরে দেখা যায় এতে স্থান পেয়েছে জুলাই গ্রাফিতি, চলচ্চিত্র ও প্রামাণ্যচিত্র। ডকুমেন্টারির মাধ্যমে তুলে ধরা হয়েছে জুলাই গণ-অভ্যুত্থান। এতে স্মৃৃতিচারণ ও আলোচনায় অংশ নিচ্ছেন শহীদ পরিবার, আহত আন্দোলনকারী ও বিশিষ্টজনরা। সন্ধ্যায় পরিবেশিত হচ্ছে সঙ্গীত, নাটক, আবৃত্তি ও নানান শিল্পকর্ম উপস্থাপনা।

অন্য দিকে ‘জুলাই জাগরণ’-এর বিশেষ আকর্ষণগুলোর মধ্যে একটি ভাবনানির্ভর প্রদর্শনীর মাধ্যমে তুলে ধরা হয়েছে আয়নাঘর। যার মাধ্যমে দর্শকরা অনুভব করতে পারবেন প্রতিবাদের বহুমাত্রিক রূপ। শহীদ মানচিত্রে বাংলাদেশের আটটি বিভাগের প্রতীকী চিত্রায়নে তুলে ধরা হয়েছে আন্দোলনের স্মরণীয় মুহূর্ত।

এর বাইরে গ্রাফিতি প্রদর্শনীতে আন্দোলন চলাকালে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে আঁকা দেয়ালচিত্র স্থান পেয়েছে। আর কিডস জোনে রয়েছে ছোটদের জন্য চিত্রাঙ্কন, গল্পপাঠ, মিনি থিয়েটার ও খেলার আয়োজনসহ স্মারক ও বইয়ের স্টল। যাতে আন্দোলনভিত্তিক প্রকাশনা ও স্মারক সংগ্রহের সুযোগ রাখা হয়েছে। আয়োজক কমিটির পরিচালক আবু মুসা জানান, এ উৎসব শুধুই আয়োজন নয় এটা ইতিহাসের দলিল, প্রতিবাদের স্মারক ও শিক্ষা। সাংস্কৃতিক চেতনায় নতুন প্রজন্মকে জানান দিতেই এমন আয়োজন।

প্রথম দিনের অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। বিশেষ অতিথি ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।

দ্বিতীয় দিনের আয়োজনে গতকাল বেলা ১১টায় ১ম অধিবেশন শুরু হয়। কুরআন তিলাওয়াতের মাধ্যমে শুরু হওয়া অনুষ্ঠানে সঙ্গীত পরিবেশন করেন শিশুশিল্পী ফাতিন ইশরাক মাহিরা। আবৃত্তি করেন শিশু আবৃত্তিকার সিদরাতুল মুনতাহা মালাছি।

এতে প্রদর্শিত হয় জুলাই নিয়ে নির্মিত আজিজ হাকিমের ফিল্ম ‘থ্রি নট থ্রি’, বাংলাদেশ সরকারের আবরার ফাহাদকে নিয়ে নির্মিত ডকুমেন্টারি ‘অনির্বাণ’, জুলাই আন্দোলনে পেশাজীবী মানুষের অবদান নিয়ে নির্মিত ডকুমেন্টারি। এ ছাড়াও সঙ্গীত পরিবেশন করেন সওগাত সাংস্কৃতিক সংসদ।

দ্বিতীয় অধিবেশনের শুরুতে কুরআন তিলাওয়াত করেন, ডি এম জুবায়ের ইসলাম, সঙ্গীত পরিবেশন করেন সাইমুম শিল্পীগোষ্ঠীর শিল্পীরা, সন্দীপন শিল্পীগোষ্ঠী ও অন্যরা। ফিল্ম প্রিমিয়ার শো হয় এইচ আল হাদী নির্মিত ‘সেই একই বিকেল’ প্রবন্ধ পাঠ করেন আর যে টুটূল এবং মঞ্চ নাটক পরিবেশন করেন বিকল্প সাহিত্য সাংস্কৃতিক জোট এবং অন্যান্য পরিবেশনা করেন দেশের জনপ্রিয় শিল্পী ও অভিনেতারা।

এতে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি নুরুল ইসলাম বুলবুল, ইনকিলাব মঞ্চ’র মুখপাত্র শরীফ ওসমান হাদি এবং আপ বাংলাদেশের আহ্বায়ক আলি আহসান জুনায়েদ। উপস্থিত ছিলেন সাইমুমের চেয়ারম্যান জাহিদুল ইসলাম, ভাইস চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম সাদ্দাম প্রমুখ।

এতে বক্তারা জুলাই ঘোষণাপত্র ও সনদের ওপর জোর দেন এবং জুলাই ঘোষণাপত্রে জাতীয় আকাক্সক্ষা প্রকাশ পাবে বলে আশা প্রকাশ করেন। হাদি সাইমুমের আয়োজনের প্রশংসা করেন এবং সাইমুমের এ আয়োজনে সবাইকে অংশগ্রহণের আহ্বান জানান। আর জুনায়েদ সাইমুমের ওই আয়োজন ঘুরে দেখে প্রতীকী আয়নাঘর নিয়ে বলেন, আপনারা এ প্রতীকী আয়নাঘর দেখে কষ্ট সহ্য করতে, পারছেন না তাহলে ব্যারিস্টার আরমান, আমান আযমীসহ যারা সেখানে ছিল; এতগুলো বছর তারা কতটা কষ্ট সহ্য করেছেন; সাইমুমের এ মহা আয়োজনকে বক্তারা ধন্যবাদ জানান।

আজ তৃতীয় দিনে অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক ও এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ, দীর্ঘদিন আয়নাঘরে বন্দী থাকা ব্যারিস্টার আহমেদ বিন কাসেম আরমান, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব:) আবদুল্লাহিল আমান আযমী এবং শহীদ ওসমানের পিতা।

গতকালের পর্বে সঞ্চালনায় ছিলেন আব্দুর রউফ। অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন ‘জুলাই জাগরণ’-এর পরিচালক এইচ এম আবু মুসা।