আগামী বছরের পবিত্র হজের জন্য খরচের প্যাকেজ ঘোষণা করা হবে আজ। সচিবালয়ে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলনে হজ প্যাকেজ ঘোষণা করবেন ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন।
এ দিকে আগামী বছরের হজের বিমান ভাড়া প্রায় ১৩ হাজার টাকা কমতে পারে। এতে চলতি বছরের হজের তুলনায় আগামী বছরের সার্বিক খরচও কমবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
এ দিকে আগামী বছরের হজযাত্রীদের জন্য সরকারি ব্যবস্থাপনায় তিনটি প্যাকেজ ঘোষণা করতে যাচ্ছে ধর্ম মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে হারাম শরিফ থেকে দূরবর্তী আজিজিয়া এলাকায় আবাসন সুবিধা সংবলিত একটি সাশ্রয়ী প্যাকেজ ঘোষণা করা হবে। এই প্যাকেজের মাধ্যমে হজ পালনে সাড়ে চার লাখ টাকার মতো খরচ হতে পারে বলে ধর্ম মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
চলতি বছরের হজে বিমান ভাড়া ছিল এক লাখ ৬৭ হাজার ৮২০ টাকা। ধর্ম মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, আগামী হজের জন্য বিমান ভাড়া এক লাখ ৫৪ হাজার ৮২১ টাকা হতে পারে। ফলে বিমান ভাড়া কমছে ১২ হাজার ৯৯৯ টাকা।
জানা গেছে, ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন আগামী বছরের পবিত্র হজের জন্য বিমান ভাড়া কমাতে গত কয়েক দিন ধরে বেশ দৌড়ঝাঁপ করছেন। যার ফলে পেতে যাচ্ছেন হজে গমনেচ্ছুরা। গত কয়েক দিনে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টাসহ সংশ্লিষ্টদের সাথে দফায় দফায় বৈঠক করেছেন তিনি।
ধর্ম মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, এবার সরকারি ব্যবস্থাপনার হজযাত্রীদের জন্য তিনটি প্যাকেজ ঘোষণা করা হবে। চলতি বছর দু’টি হজ প্যাকেজ ছিল। অন্য দিকে চলতি বছরের মতো আগামী বছরও বেসরকারি ব্যবস্থাপনার হজযাত্রীদের জন্য একটি প্যাকেজ নির্ধারণ করে দেয়া হবে। হজ এজেন্সিগুলো এর নিচে কোনো প্যাকেজ ঘোষণা করতে পারবে না।
গত হজে সরকারি ব্যবস্থাপনায় প্যাকেজ-১ এর মাধ্যমে খরচ হয়েছে চার লাখ ৭৮ হাজার ২৪২ টাকা। প্যাকেজ-২ এর মাধ্যমে খরচ হয় ৫ লাখ ৭৫ হাজার ৬৮০ টাকা। আর বেসরকারিভাবে হজ পালনে সর্বনিম্ন খরচ নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছিল ৪ লাখ ৮৩ হাজার ১৫৬ টাকা। এর ভিত্তিতে প্যাকেজ নির্ধারণ করেছে হজ এজেন্সিগুলো।
আগামী বছর হারাম শরিফের একেবারে কাছাকাছি ৫০০ থেকে ৭০০ মিটারের মধ্যে হোটেলের সুবিধা দিয়ে একটি প্যাকেজ হবে। গত বছরের প্যাকেজ-২ এ আরো সুযোগ-সুবিধা বাড়িয়ে এই প্যাকেজটি করা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে খরচও পড়বে সবচেয়ে বেশি।
আরেকটি প্যাকেজ হবে হারাম শরিফের দুই কিলোমিটারের মধ্যে। যেটি এবার প্যাকেজ-১ ছিল। এবার এ প্যাকেজের খরচ গতবারের থেকে কিছুটা কমবে।
আরেকটি প্যাকেজ হবে হারাম শরিফ থেকে দূরবর্তী আজিজিয়া এলাকায় আবাসন সুবিধা সংবলিত। এটি হবে সাশ্রয়ী প্যাকেজ। এই প্যাকেজের মাধ্যমে হজ পালনে সাড়ে ৪ লাখ টাকার মতো খরচ হতে পারে বলে ধর্ম মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
অন্য দিকে বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় হজ পালনে এজেন্সিগুলোর জন্য যে প্যাকেজ নির্ধারণ করে দেয়া হবে, সে ক্ষেত্রে চলতি বছরের তুলনায় খরচ কিছুটা কমবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। এবার কোরবানির খরচ প্যাকেজের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত থাকবে বলে জানা গেছে।
সৌদি সরকারের রোডম্যাপ অনুযায়ী আগামী বছরের (২০২৬) হজের কার্যক্রম বেশ আগেভাগেই শেষ করতে হবে। গত কয়েক বছরের মতো আগামী বছরও বাংলাদেশ থেকে সরকারি ও বেসরকারি ব্যবস্থাপনা মিলিয়ে মোট এক লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন হজ পালন করতে পারবেন। যদিও গত দুই হজে বাংলাদেশের কোটা পূরণ হয়নি।
আগামী বছর হজে যেতে চার লাখ টাকা জমা দিয়ে প্রাথমিক নিবন্ধন গত ২৭ জুলাই থেকে শুরু হয়েছে। হজ প্যাকেজ ঘোষণার পর বাকি টাকা জমা দিয়ে নিবন্ধন শেষ করতে হবে।
গত বছরের ২৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত হজযাত্রী নিবন্ধন চললেও রোডম্যাপ অনুযায়ী, এবার ১২ অক্টোবরের মধ্যে প্যাকেজের পুরো টাকা নিয়ে হজের নিবন্ধন শেষ করতে হবে।
ধর্ম মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গত সন্ধ্যা পর্যন্ত সরকারি ব্যবস্থাপনায় ৯৫৪ জন এবং বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় এক হাজার ১৩৫ জন হজের প্রাথমিক নিবন্ধন করেছেন। হজ প্যাকেজ ঘোষণা না হওয়ায় অর্থাৎ কত খরচ হবে সেটি নির্ধারিত না হওয়ায় হজযাত্রীরা নিবন্ধনে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। চলতি বছর হজ হয়েছিল ৫ জুন। গত বছরের ৩০ অক্টোবর হজ প্যাকেজ ঘোষণা করেছিল সরকার।
ধর্মবিষয়ক উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন নয়া দিগন্তকে বলেন, বিমান ভাড়া কমানো নিয়ে কয়েক দিন ধরে আলোচনা হয়েছে। এর মধ্যে বিমান ভাড়ার ওপর জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের শুল্ক ও সিভিল অ্যাভিয়েশনের ফি কমানোর বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। এতে এবার বিমান ভাড়া কমছে।
চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী বছরের মে মাসের শেষ সপ্তাহে সৌদি আরবে পবিত্র হজ অনুষ্ঠিত হবে।



