আলোচনা করে শরিকদের সাথে সমঝোতায় পৌঁছতে চায় বিএনপি

‘ক্ষুব্ধ’ শরিকদের বাগে আনার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বিএনপি। এর অংশ হিসেবে গতকাল বুধবার ফ্যাসিবাদবিরোধী যুগপৎ আন্দোলনের শরিক দুই জোটের সাথে বৈঠক করেছে। বৈঠকে বিএনপির তরফে জোটের ‘বিজয়ী হতে পারার মতো নেতাদের’ আসন ছাড় দেয়ার কথা হয়েছে। এ ছাড়া এরই মধ্যে যেসব আসনে বিএনপির প্রার্থিতা ঘোষণা করা হয়েছে, শরিকদের জন্য সেগুলোর দু-একটিতে রিভিউ (পুনর্মূল্যায়ন) করা হতে পারে বলে আশ্বস্ত করা হয়েছে।

বিশেষ সংবাদদাতা
Printed Edition

আলোচনা করে ‘ক্ষুব্ধ’ শরিকদের বাগে আনার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বিএনপি। এর অংশ হিসেবে গতকাল বুধবার ফ্যাসিবাদবিরোধী যুগপৎ আন্দোলনের শরিক দুই জোটের সাথে বৈঠক করেছে। বৈঠকে বিএনপির তরফে জোটের ‘বিজয়ী হতে পারার মতো নেতাদের’ আসন ছাড় দেয়ার কথা হয়েছে। এ ছাড়া এরই মধ্যে যেসব আসনে বিএনপির প্রার্থিতা ঘোষণা করা হয়েছে, শরিকদের জন্য সেগুলোর দু-একটিতে রিভিউ (পুনর্মূল্যায়ন) করা হতে পারে বলে আশ্বস্ত করা হয়েছে। একই সাথে দলটি বলেছে, কৌশলগত কারণে মিত্রদের যাদেরকে আসন ছাড়া সম্ভব হবে না, ক্ষমতায় গেলে তাদেরকে সংসদের উচ্চকক্ষসহ রাষ্ট্রের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় পদায়নের মাধ্যমে যথাযথ মূল্যায়ন করা হবে। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় ‘যৌক্তিকভাবে’ জোটের ঐক্য ধরে রাখতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ বিএনপি।

নির্বাচন সামনে রেখে এখন পর্যন্ত দুই দফায় মোট ২৭২ আসনে প্রার্থিতা ঘোষণা করেছে বিএনপি। ফলে ফাঁকা রয়েছে আর ২৮ আসন। বিএনপি থেকে বলা হয়েছে, এই ফাঁকা আসনগুলোতে মূলত শরিকরাই নির্বাচন করবেন। অবশ্য জোট নেতাদের অভিযোগ, বিএনপির চাওয়া অনুযায়ী দল ও জোটের প্রার্থী তালিকা জমা দিলেও কোনো আলোচনা ছাড়াই প্রার্থিতা ঘোষণা করা হয়েছে। এর মধ্যে অন্তত ছয়টি আসনে ‘অনিবন্ধিত’ দল ও জোটের গুরুত্বপূর্ণ নেতারা মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন। তারা হলেন নড়াইল-২ আসনে সমমনা জোটের আহ্বায়ক ও এনপিপির চেয়ারম্যান ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, লক্ষ্মীপুর-১ আসনে ১২ দলীয় জোটের মুখপাত্র ও বাংলাদেশ এলডিপির চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন সেলিম, কিশোরগঞ্জ-৫ আসনে ১২ দলীয় জোটের সমন্বয়ক ও বাংলাদেশ জাতীয় দলের চেয়ারম্যান সৈয়দ এহসানুল হুদা, কুষ্টিয়া-২ আসনে ১২ দলীয় জোট শরিক জাতীয় পার্টির (জাফর) মহাসচিব আহসান হাবিব লিংকন, যশোর-৫ আসনে জোট শরিক জমিয়তের যুগ্ম মহাসচিব রশিদ বিন ওয়াক্কাস এবং ঝালকাঠি-১ আসনে বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান। এর মধ্যে গত ৮ ডিসেম্বর নিজ দল বাংলাদেশ এলডিপি বিলুপ্ত করে বিএনপিতে যোগদান করেন সেলিম। তাকে লক্ষ্মীপুর-১ আসনে শীষের মনোনয়ন নিশ্চিত করেছে বিএনপি।

এ অবস্থায় করণীয় নির্ধারণে গত ১০ ডিসেম্বর শিশু কল্যাণ পরিষদে গণতন্ত্র মঞ্চ, ১২ দলীয় জোট, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, গণ অধিকার পরিষদ, গণফোরাম এবং একটি ইসলামী দলসহ মোট ২৯টি দল বৈঠকে বসে। সেখানে সিদ্ধান্ত হয়- আসন সমঝোতা ইস্যুতে মিত্রদের নিয়ে কী ভাবছে, সেটি স্পষ্টভাবে বিএনপির কাছে জানতে চাওয়া হবে। তারপর তারা তাদের পরবর্তী করণীয় ঠিক করবেন। এমন অবস্থায় ১৩ ডিসেম্বর যুগপতের শরিকদের নিয়ে একত্রে বৈঠক করে বিএনপি। সেখানে আসন নিয়ে মিত্ররা তাদের ক্ষোভের কথা জানিয়ে অবিলম্বে বিষয়টি সুরাহার তাগিদ দেন। শরিকদের এমন ক্ষোভ ও তাগিদের প্রেক্ষিতে ১৭ ও ১৮ ডিসেম্বর শরিকদের সাথে আলাদা করে বৈঠকের সিদ্ধান্তের কথা জানায় বিএনপি।

সে অনুযায়ী গতকাল গুলশানে চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে দুপুরে প্রথমে জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট এবং পরে বিকেলে ১২ দলীয় জোটের সাথে পৃথকভাবে বৈঠক করে বিএনপি। উভয় বৈঠকে বিএনপির পক্ষে মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু উপস্থিত ছিলেন।

দুপুর ১২টা থেকে ১টা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত সমমনা জোটের বৈঠকে জোটের আহ্বায়ক ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, গণদলের গোলাম মওলা চৌধুরী, এনপিপির মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তফা, সাম্যবাদী দলের সৈয়দ নুরুল ইসলাম, বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক পার্টির এস এম শাহাদাত, এনডিপির আব্দুল্লাহ আল হারুন সোহেল প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

জানা গেছে, বৈঠকে জোট নেতারা বলেছেন, তারা বিগত দিনে বিএনপির সাথে ফ্যাসিবাদবিরোধী যুগপৎ আন্দোলনে রাজপথে ছিলেন, এখনো বিএনপির সাথে রয়েছেন, আগামীতেও থাকবেন। নির্বাচনে ধানের শীষকে বিজয়ী করতে তারা নিজ নিজ অবস্থান থেকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করবেন। এ সময় নির্বাচনে বিজয়ী হলে যুগপৎ আন্দোলনের শরিকদের নিয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ‘জাতীয় সরকার’ গঠনের অঙ্গীকারের কথা তুলে ধরে তারা বলেন, বিএনপির সেই জাতীয় সরকারে আমরা থাকতে চাই।

তবে তারা এরই মধ্যে ঘোষিত নড়াইল-২ আসনটি জোট প্রধান ফরিদুজ্জামান ফরহাদের জন্য পুনর্বিবেচনা করতে বিএনপির প্রতি ঐক্যবদ্ধভাবে জোরালো অনুরোধ জানান। জোট নেতারা বলেন, একাদশ সংসদ নির্বাচনে তিনি ওই আসন থেকে ধানের শীষ প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন।

এ সময় মির্জা ফখরুল ইসলাম জোট নেতাদের আশ্বস্ত করে বলেন, ঘোষিত ফরিদুজ্জামান ফরহাদের আসনটি (নড়াইল-২) পুনর্বিবেচনা করা যায় কি না, সেটি অত্যন্ত গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করছে বিএনপি। তবে কৌশলগত কারণে জোটের সবাইকে আসন দেয়া সম্ভব হবে না। সেক্ষেত্রে যাদেরকে আসন ছাড়া সম্ভব হবে না- বিএনপি রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় গেলে তাদের যোগ্যতা অনুযায়ী উপযুক্ত জায়গায় পদায়ন করা হবে।

জানতে চাইলে জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের আহ্বায়ক ও এনপিপির চেয়ারম্যান ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ বলেন, নির্বাচন সামনে রেখে আসন সমঝোতা ইস্যুতে বিএনপির সাথে অনুষ্ঠিত জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের বৈঠক ফলপ্রসূ হয়েছে। আমরা আশা করছি, বিএনপি আমাদের বিষয়টি সঠিকভাবে মূল্যায়ন করবে। বিএনপির নেতৃত্বে আমরা রাজপথে একসাথে ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলন করেছি। এখন আমরা একসাথে নির্বাচন এবং সরকার গঠন করব। প্রধান শরিক বিএনপির প্রতি আমাদের আস্থা ও বিশ্বাস রয়েছে।

অন্য দিকে বিকেল ৪টা থেকে ৫টা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত ১২ দলীয় জোটের বৈঠকে জোটের সমন্বয়ক সৈয়দ এহসানুল হুদা, জাতীয় পার্টির (জাফর) আহসান হাবিব লিংকন ও কাজী মো: নজরুল, জমিয়তের গোলাম মহিউদ্দিন ইকরাম, ইসলামী ঐক্যজোটের মাওলানা আব্দুর রকিব ও মাওলানা আব্দুল করিম, ন্যাশনাল লেবার পার্টির লায়ন মো: ফারুক রহমান, বাংলাদেশ ইসলামিক পার্টির আবুল কাসেম, কল্যাণ পার্টির শামসুদ্দিন পারভেজ, পিএনপির ফিরোজ মো: লিটন প্রমুখ ছিলেন।

জানা গেছে, বৈঠকে জোটের পক্ষ থেকে শরিকদের জন্য এখন তিনটি আসনের ওপর সর্বোচ্চ গুরুত্বারোপ করা হয়। এরই মধ্যে বিএনপির প্রার্থীকে মনোনয়ন দেয়া এই আসনগুলো হলো কুষ্টিয়া-২ ও কিশোরগঞ্জ-৫। এ ছাড়া এখন পর্যন্ত ফাঁকা থাকা পিরোজপুর-১ আসনটি জোট প্রধান মোস্তফা জামাল হায়দারের জন্য দাবি করা হয়।

এ সময় বিএনপির পক্ষ থেকে জোট নেতাদের আশ্বস্ত করে বলা হয়, আপনারা আমাদের ওপর আস্থা রাখুন; আপনাদের দাবির বিষয়টি আমরা সর্বোচ্চ বিবেচনা করার চেষ্টা করব।