দিগন্ত সাহিত্য কবিতাবলী

Printed Edition
দিগন্ত সাহিত্য কবিতাবলী
দিগন্ত সাহিত্য কবিতাবলী

ফেরদৌস সালাম

দিশেহারা ছদ্মবেশ

মানুষই ছদ্মবেশী- মুখ ঢেকে করে লুটপাট

অন্ধকারে নিপতিত পুজারির হতভাগ্য দিন

বৃষ্টির বন্দনা শেষে রৌদ্রস্নানে বাড়ে কাব্যঋণ

কোথায় সে দয়াগঞ্জ দয়াবান মানুষের হাট!

পারি না মাতাল হতে সর্পবিষ করিনি আস্বাদ

কালো পাখি সাদা পাখি নগ্নতার গীতে আত্মহারা

লালন আশ্রমে দেখো পাপপূণ্যে একাকার ধারা

মানুষে ভজন করো ধর্মতন্ত্র হোক বরবাদ...

প্রেমে পূণ্য- সতীভাগ্যে এই দেহ রেখো না বঞ্চিত

যেই জমি চাষযোগ্য তার কাছে করো নিবেদন

আহারে সোনার কন্যা খুঁজে নাও গুপ্ত বৃন্দাবন

তোমার সান্নিধ্যে নারী পেতে চাই ঐশ্বরিক ধন।

যে কলসি জলে ভরা দেখবে সে আশ্চর্য নীরব

শূন্য যেই জল নেই তাকে দেখো ভিষণ সরব।


আবু এন এম ওয়াহিদ

বন্ধুত্বের আলো

রক্তের সম্পর্ক জন্মের সঙ্গে সঙ্গে বাধা পড়ে যায়,

কিন্তু বন্ধুত্ব

এটা তো মানুষের নিজের পছন্দের ফল।

কেউ যখন তোমাকে বেছে নেয়

কোনো রক্তের বাধ্যবাধকতা ছাড়াই,

তখনই বোঝা যায়

সম্পর্ক কতটা খাঁটি।

বন্ধুর কাঁধ ঝড়ের দিনে আশ্রয়,

পরীক্ষার হলে কলম ধার দেওয়া হাত,

অন্ধকার রাস্তায় হাঁটার সময়

নীরব আলোকবর্তিকা।

বন্ধুত্ব মানে সত্যি কথা শুনতে পাওয়া,

যখন পরিবারও কেবল সান্ত¡না দেয়।

বন্ধুত্ব মানে- ভুল করে ফেললেও কেউ পাশে থাকে,

কারণ সে জানে মানুষ হওয়া মানেই ভাঙা-গড়া।

দর্শনের চোখে বন্ধুত্ব এক অনন্য সম্পর্ক

যেখানে স্বার্থের হিসাব থাকে না,

শুধু আত্মার সাদৃশ্যই

দুই মানুষকে টেনে আনে পাশাপাশি।

এ কারণেই প্লেটো বলেছিলেন

বন্ধুত্ব ছাড়া ভালোবাসাও অসম্পূর্ণ।

আর আমাদের জীবনে বন্ধু ছাড়া যাত্রা মানে

একটি নির্জন রাস্তায় হাঁটা,

যেখানে নেই সুখ, নেই স্বস্তি,

নেই কবিতা, নেই গল্প।

বন্ধুত্ব কোনো জন্মের নয়, কোনো বংশের নয়

বন্ধুত্ব তৈরি হয় জানাজানিতে ও মান্যতায়,

অভিজ্ঞতায় ও দীর্ঘ প্রতীক্ষায়,

বন্ধুত্ব পাকাপোক্ত হয় সময়ের পরীক্ষায়।

আর যদি একবার তাই হয়, তাহলে বার বার সে আলো জ্বালে,

মৃত্যুর পরও সে আলো ম্লান হয় না।


সৈয়দ রনো

জুলাই যোদ্ধা

জুলাই হলো অগ্নিশপথ রক্তে ভেজা কলি,

বীর শহীদের লাশের কসম ন্যায়ের পথে চলি।

গণতন্ত্র উত্তরণে শহীদ হলেন যারা

দেশ দরদের বাস্তবতায় হলাম আত্মহারা।

ফ্যাসিবাদের পতন করে রাখছে দেশের মান,

কেউ দিয়েছে জীবন কিংবা হাত পা ও চোখ কান।

স্মৃতির পটে জুলাই যোদ্ধা মস্তবড় বীর

ইতিহাসে থাকবে লেখা বুলেটবিদ্ধ শির।

আবু সাঈদ, মুগ্ধ, ওয়াসিম শহীদ হলেন যারা,

ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে স্বপ্ন সাধক তারা।

বিদেশ প্রীতি বন্ধ করে বাসবো ভালো দেশ,

ঘুষের টাকা পাচার করার কায়দা কানুন শেষ।

বুকের ভেতর লিখবো সবাই জুলাই যোদ্ধা-নাম

ন্যায় বিচার আর সুশাসনে বাড়বে দেশের দাম।


শাহনাজ পারভীন

কিছু বাজে স্মৃতি

কিছু দুর্ব্যবহারের বাজে স্মৃতি একান্ত প্রিয় সময়েও হাহাকার হয়ে বাজে

মনের সাথে শরীরেও বাসা বাঁধে দুর্ভেদ্য ঢেউয়ের কলস।

মুহূর্তেই সবকিছু হারিয়ে ফেলি অর্ফিয়ুসের মতো

ফিরে তাকানোর অভ্যাসের কারণেই

ইউরিদিসকে হারিয়ে ফেলেছিল সে।

তেমনি আমিও ফিরে তাকাতেই যাপনের শৈল্পিক

সাইটেশন প্লেট, নস্টালজিয়ার তুলিতে অঙ্কিত

রঙিন স্মৃতিগুলো ভুলে যাই।

তবু আশা বাঁধি,

আসুক ঝড়, খড়কুটো উড়ে যাক

নির্ঘুম রাত শেষে সূর্য উঠুক ফের সোনামুখি।


মুহাম্মদ রফিক ইসলাম

পূর্ব-নির্ধারিত এজেন্ডা

হস্তরেখার ভাষা পড়তে চাই,পারি না

মানুষের চোখ সবকিছুই দৃশ্যায়ন করতে পারে?

ক্যালেন্ডারের পাতা দেয়ালে ঝুলিয়ে রেখে

দিন মাস বছর গণনা করা গেলেও

আয়ুরেখার দৈর্ঘ্য মাপতে পারি না তবু।

ভাগ্যরেখা নিয়েও অধ্যয়ন করতে চাই

পারি না,

কলমের অদৃশ্য ভাষা অনুবাদ করা যায়?

নিয়তির লিখনও ভাষান্তর করা যায় না,

যা নির্ধারিত অবধারিত তা ঘটবেই

খণ্ডন করার সাধ্য কার?

পূর্ব-নির্ধারিত এজেন্ডা বাস্তবায়ন শেষে

ডাক এলেই দূরপাল্লার পরিবহনে উঠে যাই!


মুহম্মদ আবুল হাসান

শেষতক হবো প্রজাপতি

পাল তুলেছে একদল জাহাজ,

উথাল সাগরের বুকে সাহসী ফ্লোটিলা, সুমুদ।

জাহাজ বোঝাই একদল মানবিক মানুষ,

মানুষ নয় প্রজাপতি!

রঙিন ডানা মেলে উড়াল দিয়েছে ওরা গাজায়,

মুছে দেবে কান্নার কালো দাগ, রঙ ছড়াবে বলে,

হাজারো শিশুর কপোলে।

প্রভাতের সূর্য আঁকবে, মুক্তি-আনন্দের চুম্বন।

স্বপ্নপূরণের সেই প্রত্যয়ে

ডানা মেলেছে ফ্লোটিলার নাবিকেরা

যৌবনদীপ্ত শহিদুল, কিশোরী গ্রেটা,

আরও শত শত মানবিক মানুষ

দেশ, কাল, পাত্র ভুলে একাকার,

গাজার শিশুদের নিয়ে নাচবে রঙিন নৃত্য।

জাহাজ ভরেছে খাবার,ভালবাসা বোঝাই

কী আনন্দের বন্যাই না বয়ে যাবে

প্রজাপতির পাখায়!

কিন্তু গাজার আকাশে কালো মেঘ;

শোষকের যন্ত্রদানব উড়তে দেবে না প্রজাপতি।

হয় ধরে ধরে পাঠাবে ফেরত

না হয় পুরবে খাঁচায়।

ফ্লোটিলা, আবার কবে যাত্রা তোমার ?

আমিও প্রজাপতি হবো তখন-

গাজার শিশুদের তরে হবো রঙিন প্রজাপতি।