বিএনপি-জামায়াতসহ বিভিন্ন দল মাঠ গোছাতে ব্যস্ত

জামালপুরের ৫ আসনে ভোটের হাওয়া

মাঠ গোছাতে ব্যস্ত সময় পার করছে বিএনপি-জামায়াত। পাশাপাশি এনসিপিসহ অন্য দলগুলোও প্রস্তুতি নিচ্ছে।

খাদেমুল বাবুল, জামালপুর
Printed Edition
বিএনপি-জামায়াতসহ বিভিন্ন দল মাঠ গোছাতে ব্যস্ত
বিএনপি-জামায়াতসহ বিভিন্ন দল মাঠ গোছাতে ব্যস্ত

আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জামালপুরের পাঁচটি সংসদীয় আসনে ইতোমধ্যে নির্বাচনী হাওয়া বইতে শুরু করেছে। মাঠ গোছাতে ব্যস্ত সময় পার করছে বিএনপি-জামায়াত। পাশাপাশি এনসিপিসহ অন্য দলগুলোও প্রস্তুতি নিচ্ছে। এ জেলায় পাঁচটি সংসদীয় আসন হলো জামালপুর-১ (দেওয়ানগঞ্জ-বকশিগঞ্জ), জামালপুর-২ (ইসলামপুর), জামালপুর-৩ (মেলান্দহ-মাদারগঞ্জ), জামালপুর-৪ (সরিষাবাড়ী) এবং জামালপুর-৫ (সদর)।

বর্তমান সরকারের প্রধান উপদেষ্টার আশ্বাসের ভিত্তিতে আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে নির্বাচনে বিএনপির মনোনয়ন পেতে মাঠে নেমেছেন একাধিক প্রার্থী। পাশাপাশি সব ক’টি আসনে জামায়াতের রয়েছে একক প্রার্থী। অন্য দিকে নতুন রাজনৈতিক দল এনসিপিসহ প্রস্তুতি নিচ্ছেন অন্য দলগুলোও।

জামালপুর-১ (দেওয়ানগঞ্জ-বকশিগঞ্জ) : এই আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশীরা হলেন সাবেক এমপি ও বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির কোষাধ্যক্ষ এম রশিদুজ্জামান মিল্লাত এবং চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এবং পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক এম এ কাইয়ুম। এখানে জামায়াতের একক প্রার্থী মাওলানা অ্যাডভোকেট নাজমুল হক সাঈদী। ২০০১ সালে এ আসনে এমপি নির্বাচিত হয়ে দুই উপজেলায় বৈষম্যহীনভাবে উন্নয়নের দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন এম রশিদুজ্জামান মিল্লাত, যা মানুষ এখনো মনে রেখেছেন। সাধারণ ভোটারদের সাথে কথা বলে জানা যায়, এম এ কাইয়ুমের বাড়ি বকশিগঞ্জ উপজেলায় হলেও তার গ্রহণযোগ্যতা তুলনামূলক কম।

জামায়াতের একক প্রার্থী কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও সাবেক জেলা আমির মাওলানা অ্যাডভোকেট নাজমুল হক সাঈদী। তিনি দীর্ঘদিন ধরে দেওয়ানগঞ্জে বাস করছেন এবং স্থানীয় জনসংযোগ ও সাংগঠনিক কাজের মাধ্যমে তার দলের জন্য ভোটব্যাংক গড়ে তুলেছেন। এনসিপি এখানেও প্রার্থী চূড়ান্ত করেনি। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ থেকে মাওলানা মো: আব্দুল মজিদ, আরিফ খান রাসেল ও মাহবুবুর রহমান জিহাদী মনোনয়ন প্রত্যাশী। জাতীয় পার্টির (জাপা) সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী এম এ সাত্তার এ আসনে একসময় নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও বর্তমানে দলীয়ভাবে কোনো শক্ত অবস্থানে নেই। ভোটারদের মতে এ আসনে বিএনপি-জামায়াতের মধ্যেই হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে।

জামালপুর-২ (ইসলামপুর) : স্বাধীনতার পর থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত এই আসনটি আওয়ামী লীগেরই দখলে ছিল। সেক্টর কমান্ডার খালেদ মোশারফের ছোট ভাই রাশেদ মোশারফ এখানে বার বার এমপি হয়েছেন। কিন্তু তার দীর্ঘ সময়ে এ অঞ্চলে উন্নয়নের কোনো ছোঁয়া লাগেনি। এ আসনে বিএনপির সম্ভাব্য দুই প্রার্থী বর্তমানে বেশ সক্রিয়। তারা হলেন সাবেক এমপি সুলতান মাহমুদ বাবু এবং সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও বর্তমান হাউজ বিল্ডিং ফাইন্যান্স করপোরেশনের চেয়ারম্যান এ এস এম আব্দুল হালিম।

বাবু দীর্ঘদিন রাজনীতিতে সক্রিয়। ২০০১ সালে এমপি নির্বাচিত হয়ে ইসলামপুরের অবহেলিত উন্নয়নে ভূমিকা রেখেছেন। অন্য দিকে, এ এস এম হালিম কিছু দিন উপজেলা বিএনপির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি পশ্চিমাঞ্চলের ভোটারদের মাঝে প্রভাব তৈরির চেষ্টা করছেন এবং রাজনৈতিক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন।

অপর দিকে জামায়াতের একক প্রার্থী ড. সামিউল হক ফারুকী চিনাডুলী ইউনিয়নের বাসিন্দা। পূর্বে দুইবার দাঁড়িপাল্লা প্রতীকে নির্বাচন করে সম্মানজনক ভোট পেয়েছেন। এলাকায় একজন সৎ, হাস্যোজ্জ্বল এবং নির্যাতিত নেতা হিসেবে পরিচিত। ৫ আগস্টের পর জামায়াতের নেতৃবৃন্দ ব্যাপকভাবে দলীয় কর্মসূচির পাশাপাশি নানা সামাজিক কর্মকাণ্ড চালাচ্ছেন। ইসলামী আন্দোলন থেকে সুলতান মাহমুদের নাম শোনা গেলেও প্রার্থী চূড়ান্ত হয়নি। এখানে এনসিপি এখনো কোনো প্রার্থী ঘোষণা করেনি।

ভোটাররা মনে করেন এ আসনে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে সাবেক এমপি সুলতান মাহমুদ বাবু ও জামায়াতের প্রার্থী ড. সামিউল হক ফারুকীর মধ্যে।

জামালপুর-৩ (মেলান্দহ-মাদারগঞ্জ), জামালপুর-৪ (সরিষাবাড়ী) ও জামালপুর-৫ (সদর) : এ আসনগুলোতেও প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি, জামায়াত এবং অন্যান্য দল। তবে এখন পর্যন্ত এই আসনগুলোতে তেমনভাবে নাম প্রকাশ করে মাঠে নামেনি কোনো হেভিওয়েট প্রার্থী। আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে বিরোধী রাজনৈতিক জোটগুলোর অবস্থান স্পষ্ট হলেও স্থানীয় প্রার্থীদের জনপ্রিয়তা এবং সাংগঠনিক ভিত্তির ওপর নির্ভর করবে প্রার্থী নির্বাচন ও তাদের নির্বাচনী প্রতিযোগিতা।

বিএনপি ও জামায়াতের তরফে ঘন ঘন বৈঠক ও সাংগঠনিক তৎপরতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। জেলা শহর এবং প্রত্যন্ত এলাকায় লিফলেট বিতরণ, কর্মিসভা এবং সামাজিক কর্মসূচি চালাচ্ছেন সম্ভাব্য প্রার্থীরা। এনসিপিও জেলা পর্যায়ে সমন্বয় কমিটি গঠন করে সাংগঠনিক তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। তারা জেন জি প্রজন্মের তরুণ ভোটারদের মন জয় করতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ সক্রিয় ভূমিকা রাখছেন।