- আরো ৬০ হাজার ৩৫৮টি বিও খালি
- পরিচালনযোগ্য বিও আরো ১৬ হাজার ৬৬৮টি কমেছে
আস্থাহীনতায় দেশের পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের বাজার ছেড়ে যাওয়ার স্রোত থামছে না। হু হু করে বাড়ছে নিষ্ক্রিয় বেনিফিশিয়ারি ওনার (বিও) হিসাবের পরিমাণ। নতুন করে প্রতি মাসেই বিও হিসাব শেয়ারশূন্য ও ব্যালান্সহীন হচ্ছে। পটপরিবর্তনের পর গত ১৩ মাসেও কোনো ধরনের উন্নতি হয়নি পুঁজিবাজারের। ফলে নতুন করে আরো ৮২ হাজার বিও হিসাবের শেয়ারশূন্য হয়েছে। আস্থাহীনতার কারণে নতুন করে ৬০ হাজার ৩৫৮টি বিও হিসাবের বিনিয়োগকারী বাজারবিমুখ হয়েছে। ওই সব বিও এখন ব্যালান্সশূন্য বলে সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেডের (সিডিবিএল) হালনাগাদ তথ্য-উপাত্ত থেকে জানা গেছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, বড় ধরনের ক্ষতি গত সরকারের আমলে করে গেছে, যার রেশ এখনো ভোগ করতে হচ্ছে। তবে এটা কাটিয়ে উঠতে সময় লাগবে।
সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেডের (সিডিবিএল) উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, পটপরিবর্তনের পর গত ২০২৪ সালের ৮ আগস্ট বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা গ্রহণ করেন। ওই দিন পুঁজিবাজারে মোট পরিচালনরযাগ্য বিও হিসাবধারীর সংখ্যা ছিল ১৬ লাখ ৬৮ হাজার ৮৯৫টি। ক্ষমতার তের মাসে গত ৩০ সেপ্টেম্বর শেষে যা কমে হয়েছে ১৬ লাখ ৫২ হাজার ২২৭টি। পরিচালনযোগ্য বিও হিসাব কমেছে আরো ১৬ হাজার ৬৬৮টি।
শেয়ারশূন্য বিও ৬.৩৫ শতাংশ বেড়েছে
সিডিবিএলের সর্বশেষ হালনাগাদ উপাত্ত বলছে, চলতি ২০২৫ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত শেয়ার আছে এমন বিও হিসাব বর্তমানে ১২ লাখ ৯ হাজার ২০৭টি। গত ২০২৪ সালের ৮ আগস্ট এ ধরনের বিও হিসাবের সংখ্যা ছিল ১২ লাখ ৯১ হাজার ২০৮টি। ফলে গত ১৩ মাসের বেশি ব্যবধানে শেয়ারশূন্য হয়েছে আরো ৮২ হাজার ১টি বিও হিসাব। এ শেয়ারহীন বিও হিসাব ১৩ মাসে বেড়েছে ৬.৩৫ শতাংশ। আর একই সময় ব্যবহার হয়নি এমন বিও হিসাব বেড়েছে চার হাজার ৯৭৫টি। যেখানে বর্তমান সরকার প্রধানের শপথের দিন ব্যবহার হয় না এমন বিও ছিল ৬২ হাজার ১৬৮টি, সেটা বেড়ে এখন ৭৬ হাজার ১৬১টিতে পৌঁছেছে।
বিও হিসাব খোলা ১.০৪ শতাংশ বেড়েছে
সিডিবিএল থেকে জানা গেছে, সার্বিকভাবে শেয়ারবাজারে বিও হিসাব খোলার পরিমাণ বেড়েছে। এ বৃদ্ধির সংখ্যা প্রায় ৮২ হাজার বা ১.০৩৬ শতাংশ। গত বছর ৮ আগস্ট শেয়ারবাজারে বিনিয়োগকারীদের বিও হিসাবের সংখ্যা ছিল ৭৯ লাখ আট হাজার ৭৮৬টি, যা হাসিনা সরকার পতনের পর গত ৭ আগস্ট ২০২৪ সালে ছিল ৭৯ লাখ ৮ হাজার ২৪৮টি। আর ২০২৫ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর ১৩ মাস পরে ৭৯ লাখ ৯০ হাজার ৭২৫টি উন্নীত হয়।
বিও হিসাব খালি ১৯.১৩ শতাংশ বেড়েছে
গত ১৩ মাসে প্রত্যাশার সাথে প্রাপ্তি না হওয়ায় দেশের পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীরা তাদের বিও থেকে শেয়ার বিক্রি করে হিসাব খালি করেছে। এ হার ১৩ মাসে ১৯.১৩ শতাংশ বেড়েছে। ২০২৪ সালের ৮ আগস্ট ব্যালেন্স-শূন্য বিও হিসাবের সংখ্যা ছিল তিন লাখ ১৫ হাজার ৫০১টি, যা বেড়ে হয়েছে তিন লাখ ৭৫ হাজার ৮৫৯টিতে; অর্থাৎ নতুন করে বিও ব্যালেন্স-শূন্য হয়েছে ৬০ হাজার ৩৫৮টি।
বাজার ছাড়ার স্রোতে বিনিয়োগকারীরা
ধরে রাখা যাচ্ছে না পুঁজিবাজারের স্থানীয় ও প্রবাসী বিনিয়োগকারীদের। বিদেশী ও প্রবাসী বিনিয়োগকারীদের পুঁজিবাজার ছাড়ার প্রবণতা ২০২৩ সালের নভেম্বরে শুরু হয়। গত দু’বছরের বেশি সময় ধরে প্রতিনিয়ত তাদের বিও হিসাবের সংখ্যা কমছে বা নিষ্ক্রিয়তা ক্রমেই বাড়ছে। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পরও সেই প্রবণতা কমেনি। তবে বিদেশী ও প্রবাসী বিনিয়োগকারীরা শেয়ারবাজার ছাড়ার সাথে স্থানীয় বিনিয়োগকারীরাও বাজার ছেড়েছে। ১৩ মাসের বেশি সময়ে স্থানীয় বিনিয়োগকারী বাজার ছেড়েছে ১৩ হাজার ৯৬৩টি বা ০.৮৭ শতাংশ। আর প্রবাসী বা বিদেশী বিনিয়োগকারী বাজার ছেড়েছে ৬.৯৭ শতাংশ। সিডিবিএল-এর তথ্য থেকে জানা গেছে প্রবাসী বিও হিসাব কমেছে তিন হাজার ২৮০টি।
বর্তমানে বিদেশী ও প্রবাসী বিনিয়োগকারীদের বিও হিসাব আছে ৪৩ হাজার ৮০১টি। ২০২৪ সালের ৮ আগস্ট বিদেশী ও প্রবাসীদের বিও হিসাব ছিল ৪৭ হাজার ৮১টি। বর্তমান সরকারের সময়ে বিদেশী ও প্রবাসীদের বিও হিসাব কমেছে তিন হাজার ২৮০টি। বিদেশী ও প্রবাসী বিনিয়োগকারীদের বিও হিসাব ধারাবাহিকভাবে কমেছে। কারণ তারা আস্থা পাচ্ছে না। আর সার্বিকভাবে পুরুষ বিনিয়োগকারী ও নারী বিনিয়োগকারীও কমেছে। একক বিও বেড়েছে।
ব্রোকারেজ হাইজের সংশ্লিষ্টরা জানান, তৎকালীন বিএসইসি চেয়ারম্যানের কিছু সিদ্ধান্ত বাজারকে ও বিনিয়োগকারীদেরকে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বাজার গত ১৩ মাসে তেমন কোনো উন্নতি করতে পারছে না। ব্যাংকগুলো টাকা দিতে পারছে না। ফলে পদক্ষেপ নিলেও সময় লাগবে এর ফল পেতে।
ঢাকা স্টকের বর্তমান পরিচালক এম. শাকিল রিজভীর সাথে বাজারের ব্যাপারে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি নয়া দিগন্তকে বলেছেন, গত সরকারের আমলে লুটপাটের মাধ্যমে যে ক্ষতি হয়েছে তার রেশ একনো কাটেনি। আগে যে সব অন্যায় হয়েছে তার প্রতিফলন। মানুষ বিও বন্ধ করে চলে গেছে। এটা কাটতে সময় লাগবে। তিনি বলেন, আগে খারাপ শেয়ার ঢুকানো হয়েছে। আর্থিক খাতে লুটপাট হওয়া। ভুয়া ব্যালেন্স শিট দিয়ে আগে শেয়ার ছাড়া হয়েছে। দুর্বল কোম্পানিগুলোকে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে।
প্রত্যাশা জানিয়ে তিনি বলেন, এখন রিকোভারি হবে। কারণ এখন বাজারে কোনো ধরনের ঘটনা ঘটছে না। খারাপ শেয়ারও আসছে না। সময় লাগছে, কারণ ক্ষতিটা অনেক বড় ছিল। গত এক বছরে কোনো আইপিও আসেনি। এখন যা আছে সবই সেকেন্ডারি শেয়ার। তিনি বলেন, প্রথম কাজ হলো কোম্পানিগুলোর অডিট রিপোর্ট যেন ঠিক আসে। বাজারকে ভালো করতে হলে এটার ওপরই তো সব নির্ভর করে। তিনি বলেন, অনেক বিও হয়েছিল ওই আইপিও-কেন্দ্রিক।