আবদুল কাইয়ুম শেখ
ইহলৌকিক কল্যাণ ও পারলৌকিক মুক্তি অর্জনের লক্ষ্যে আমরা বিভিন্ন সময়ে নেক আমল করি। নামাজ, রোজা, হজ, জাকাত প্রভৃতি আদায়ে আমাদের অনেক কষ্ট স্বীকার করতে হয়; কখনো কখনো প্রচুর অর্থও ব্যয় হয়। জান-মাল খরচ করে কোনো আমল করার পর যদি তার সুফল পাওয়া যায়, তাহলে কষ্ট সার্থক হয়। পরিশ্রম করে ইবাদত-বন্দেগি করার পর যদি পুণ্য অর্জিত হয়, তাহলে তা অর্থবহ হয়। কিন্তু কিছু কাজ এমন রয়েছে যেগুলো করলে নেক আমল নষ্ট হয়ে যায়। কষ্ট করে আমল করার পরও কোনো প্রতিদান পাওয়া যায় না।
শিরক করা : যেসব কাজ মানুষের সৎকর্ম নষ্ট করে তার মধ্যে সবচেয়ে ভয়ঙ্কর ও গুরুতর হলো শিরক। যদি কোনো ব্যক্তি আল্লাহকে এক বলে বিশ্বাস না করে কিংবা তার সাথে অন্য কাউকে শরিক সাব্যস্ত করে, তাহলে সে যত নেক আমলই করুক না কেন সব বরবাদ হয়ে যাবে। কাফির, মুশরিক ও পৌত্তলিক সম্প্রদায়ের সব কর্ম নিষ্ফল বলে গণ্য হবে। মহান আল্লাহ বলেন- ‘তোমার ও তোমার পূর্ববর্তীদের প্রতি অবশ্যই ওহি হয়েছে, তুমি আল্লাহর শরিক স্থির করলে তোমার কর্ম নিষ্ফল হবে। আর তুমি অবশ্যই ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’ (সূরা জুমার-৬৫) নাস্তিক মুরতাদদের আমলও বাতিল বলে গণ্য হবে। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন- ‘তোমাদের মধ্যে যে কেউ স্বীয় দ্বীন থেকে ফিরে যায় আর কাফিররূপে মৃত্যুমুখে পতিত হয়, দুনিয়া ও আখিরাতে তাদের কর্ম নিষ্ফল হয়ে যায়।’ (সূরা বাকারা-২১৭)
লোক দেখানো আমল : যদি কেউ কারো সাথে আন্তরিক আচরণ করে, তাহলে সে খুশি হয়। পক্ষান্তরে কারো সাথে কৃত্রিমতাপূর্ণ আচরণ করা হলে সে অসন্তুষ্ট হয়। ঠিক তেমনিভাবে আল্লাহ তায়ালাকে রাজি-খুশি করার জন্য ইখলাস ও নিষ্ঠার সাথে কোনো আমল করা হলে মহান আল্লাহ খুশি হন এবং সেই আমল কবুল করে তার প্রতিদান দেয়া হয়। পক্ষান্তরে যদি আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করার নিমিত্তে আমল না করে রিয়া বা লোক দেখানোর জন্য আমল করা হয়, তাহলে সেই আমল নষ্ট হয়ে যায়। এমন আমল আল্লাহ তায়ালার দরবারে গৃহীত হয় না এবং তার কোনো প্রতিদানও তিনি দেন না। মহাগ্রন্থ আল কুরআনে এসেছে- ‘যে কেউ পার্থিব জীবন ও এর শোভা কামনা করে, দুনিয়ায় আমি এদের কর্মের পূর্ণ ফল দান করি। সেখানে তাদেরকে কম দেয়া হবে না। এদের জন্য আখিরাতে দোজখ ব্যতীত অন্য কিছুই নেই। এরা যা করে তা নিষ্ফল এবং এরা যা করে থাকে তা বাতিল।’ (সূরা হুদ : ১৫-১৬) তাই সব ধরনের ইবাদত হতে হবে নিরেট আল্লাহর জন্য। প্রদর্শনের উদ্দেশ্যে সম্পাদিত আমল গোপন শিরক বলে গণ্য। লোক দেখানোর জন্য কৃত আমল আল্লাহ তায়ালার কাছে প্রত্যাখ্যাত ও ঘৃণ্য। হজরত আবু হুরায়রা রা: বলেন, রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘মহান আল্লাহ বলেন, আমি শরিকদের শিরক হতে সম্পূর্ণ মুক্ত। যদি কোনো লোক কোনো কাজ করে ও তাতে আমি ছাড়া অন্য কাউকে শরিক করে, তাহলে আমি তাকে ও তার শিরকি কাজকে প্রত্যাখ্যান করি।’ (মুসলিম-৭৩৬৫)
তাকদিরকে অস্বীকার করা : মহাবিশ্বে যা কিছু হয় ও ঘটে তার সবই মহান আল্লাহর জ্ঞাতসারে ও তাঁর পরিকল্পনার অধীনে নিষ্পন্ন হয়। চালক ছাড়া যেমন গাড়ি চলে না এবং পরিচালক ছাড়া যেমন প্রতিষ্ঠান পরিচালিত হয় না, ঠিক তেমনি মহা ক্ষমতাধর আল্লাহর অভিপ্রায় ও ইচ্ছা ছাড়া পৃথিবীও চলে না এবং তার মধ্যকার কোনো কিছু সম্পন্নও হয় না। পৃথিবীর গতি ও স্থিতি আল্লাহর নির্ধারিত ছকেই আবর্তনশীল রয়েছে। যদি কেউ আল্লাহর নির্ধারণ-তাকদিরকে অস্বীকার করে, তাহলে তার সব নেক আমল বরবাদ হয়ে যাবে- যার পরিণতিতে সে জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে। হজরত জায়েদ ইবনে সাবিত রা: বলেন, আল্লাহর রাসূল সা: বলেছেন, ‘যদি তোমাদের কাছে উহুদ পাহাড় পরিমাণ বা উহুদ পাহাড়ের মতো সোনা থাকে এবং তুমি তা আল্লাহর রাস্তায় খরচ করতে থাকো, তাহলে তোমার সেই দান কবুল হবে না, যতক্ষণ না তুমি তাকদিরের ওপর ঈমান আনো। অতএব তুমি জেনে রাখো! যা কিছু তোমার ওপর আপতিত হয়েছে তা তোমার ওপর আপতিত হতে কখনো ভুল হতো না এবং যা তোমার ওপর আপতিত হওয়ার ছিল না তা ভুলেও কখনো তোমার ওপর আপতিত হবে না। তুমি যদি এর বিপরীত বিশ্বাস নিয়ে মারা যাও তাহলে জাহান্নামে যাবে।’ (ইবনে মাজাহ-৭৭)
জ্যোতিষীর কাছে প্রশ্ন করা : আল্লাহ রাব্বুল আলামিন মহাজ্ঞানী। তিনি অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যতের সব বিষয় পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে জানেন। তার জানার বাইরে কিছুই নেই। অদৃশ্যের সব বিষয় তাঁর নখদর্পণে রয়েছে। তিনি আলিমুল গায়েব তথা অদৃশ্যের জ্ঞানী। মহান আল্লাহ ছাড়া আর কেউ অদৃশ্যের জ্ঞানে জ্ঞানী নয়। যদি কেউ কোনো জ্যোতিষী, জাদুকর, গণক ও তান্ত্রিককে অদৃশ্যের জ্ঞানে জ্ঞানী মনে করে, তাহলে সে কাফের হয়ে যাবে। আর যদি নিছক কৌতূহলবশত এসব লোকের কাছে অলৌকিক কোনো বিষয়ে প্রশ্ন করে, তাহলে মারাত্মক অপরাধে অপরাধী হবে। মহানবী সা: বলেন, ‘যে লোক কোনো গণকের কাছে গিয়ে তাকে অলৌকিক কোনো ব্যাপারে প্রশ্ন করবে ৪০ রাত পর্যন্ত তার কোনো নামাজ কবুল হবে না।’ (মুসলিম-৫৭১৪)
আসরের নামাজ বর্জন করা : আল্লাহ তায়ালা নির্দেশিত পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ নামাজের সবগুলোই গুরুত্বপূর্ণ। এসব নামাজের প্রত্যেকটিকেই যথাসময়ে আদায় করা অপরিহার্য। কিন্তু আসরের সময়টি যেহেতু মানুষের কর্মব্যস্ততার তাই এই নামাজে বিশেষভাবে যতœবান হওয়ার প্রতি গুরুত্বারোপ করে আল্লাহ তায়ালা বলেন- ‘তোমরা সালাতের প্রতি যতœবান হবে, বিশেষত মধ্যবর্তী সালাতের।’ (সূরা বাকারা-২৩৮) হাদিস শরিফে আসরের নামাজ ছেড়ে দেয়াকে আমল বিনষ্ট হওয়ার কারণ উল্লেখ করা হয়েছে। হজরত বুরাইদা রা: বলেন, মহানবী সা: বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আসরের নামাজ ছেড়ে দেয় তার আমল বিনষ্ট হয়ে যায়।’ (বুখারি-৫৫৩) অন্য একটি হাদিসে এসেছে, হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রা: বলেন, আল্লাহর রাসূল সা: বলেছেন, ‘যদি কোনো ব্যক্তির আসরের নামাজ ছুটে যায়, তাহলে যেন তার পরিবার-পরিজন ও মাল-সম্পদ সব ধ্বংস হয়ে গেল।’ (বুখারি-৫৫২)
নির্জনে পাপ করা : লোকলজ্জার ভয়ে মানুষ অনেক সময় প্রকাশ্যে পাপ করা থেকে বিরত থাকে। কিন্তু নির্জনে পাপ করলে সম্মানহানি ও চক্ষুলজ্জার কোনো ভয় থাকে না। এ জন্য মানুষ লোকচক্ষুর আড়ালে মারাত্মক সব অপরাধে জড়িয়ে পড়ে। গুনাহ যত বড় হয় তার অশুভ পরিণতিও তত ভয়ঙ্কর। নির্জনে গুনাহ করার অর্থ হলো আল্লাহর চেয়ে মানুষকে বেশি ভয় করা। এ কারণে নির্জনে করা গুনাহ আমলের প্রতিদানকে বিনষ্ট করে দেয়। হজরত সাওবান রা: বলেন, মহানবী সা: বলেছেন, ‘আমি আমার উম্মতের কতক দল সম্পর্কে অবশ্যই জানি যারা কিয়ামতের দিন তিহামার শুভ্র পর্বতমালার সমতুল্য নেক আমলসহ উপস্থিত হবে। মহামহিম আল্লাহ সেগুলোকে বিক্ষিপ্ত ধূলিকণায় পরিণত করবেন। সাওবান রা: বলেন, হে আল্লাহর রাসূল! তাদের পরিচয় পরিষ্কারভাবে আমাদের কাছে বর্ণনা করুন, যাতে অজ্ঞাতসারে আমরা তাদের অন্তর্ভুক্ত না হই। তিনি বলেন, ‘তারা তোমাদেরই ভ্রাতৃগোষ্ঠী ও তোমাদের সম্প্রদায়ভুক্ত। তারা রাতের বেলা তোমাদের মতোই ইবাদত করবে। কিন্তু তারা এমন লোক যে, একান্ত গোপনে আল্লাহর হারামকৃত বিষয়ে লিপ্ত হবে।’ (ইবনে মাজাহ-৪২৪৫)
পরনিন্দা করা : জিহ্বার ব্যবহার এতটাই প্রভাবশালী যে, তা অনেক গুনাহ মুছে ফেলতে পারে, আবার যদি জিহ্বা গিবত, মিথ্যা, অপবাদ ইত্যাদির জন্য ব্যবহৃত হয়, তাহলে তা পাহাড়সম পুণ্যকেও নষ্ট করে দিতে পারে। অনেক সময় মানুষ অন্যায়ভাবে অন্যের নিন্দা ও দোষচর্চায় জড়িয়ে পড়ে। যার নিন্দা করা হয় তার সম্মান বিনষ্ট হয় ও মর্যাদা খাটো হয়। গিবত ও পরনিন্দার মাধ্যমে কারো মানহানি করা হলে নিন্দুকের নেক আমল নিন্দিতের আমলনামায় যুক্ত হওয়ার সমূহ আশঙ্কা রয়েছে। হজরত আবু হুরায়রা রা: বলেন, আল্লাহর রাসূল সা: বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি তার ভাইয়ের সম্ভ্রমহানি বা অন্য কোনো বিষয়ে জুলুমের জন্য দায়ী থাকে, সে যেন আজই তার কাছ থেকে মাফ করিয়ে নেয়, সে দিন আসার আগে যে দিন তার কোনো দিনার বা দিরহাম থাকবে না। সে দিন তার কোনো সৎকর্ম থাকলে তার জুলুমের পরিমাণ তার সৎকর্ম থেকে নেয়া হবে। আর তার কোনো সৎকর্ম না থাকলে তার প্রতিপক্ষের পাপ থেকে নিয়ে তা তার উপর চাপিয়ে দেয়া হবে।’ (বুখারি-২৪৪৯) ইমাম ইবনুল কাইয়্যিম রহ. বলেন, ‘একজন বান্দা কিয়ামতের দিন পাহাড়সম পুণ্য নিয়ে হাজির হবে কিন্তু দেখতে পাবে, তার জিহ্বা সেই সব পুণ্যকে ধ্বংস করে দিয়েছে। আবার সে পাহাড়সম গুনাহ নিয়ে আসবে, কিন্তু দেখতে পাবে তার জিহ্বা সেসব গুনাহকে মুছে দিয়েছে।’
হিংসা করা : কারো মান-সম্মান, সন্তান-সন্ততি, আরাম-আয়েশ, সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য ও ভোগ-বিলাসের অপসারণ কামনা করার নাম হিংসা। অপরের ক্ষতি চাওয়ার মানসেই হৃদয়ে হিংসার উৎপত্তি ঘটে। অন্যের ক্ষতিসাধনের বাসনা ও পরশ্রীকাতরতা ব্যক্তির নিচ মানসিকতার পরিচয় বহন করে। হিংসুক অন্যের নিয়ামত ও সফলতা দেখে অহেতুক জ্বলতে থাকে। হিংসা একদিকে হিংসুকের ভেতরকে অনবরতভাবে জ্বালাতে থাকে এবং অপর দিকে তার নেক আমলগুলোকেও বরবাদ করে দেয়। হজরত আবু হুরায়রা রা: বলেন, আল্লাহর রাসূল সা: বলেছেন, ‘তোমরা অবশ্যই হিংসা পরিহার করবে। কারণ আগুন যেভাবে কাঠকে খেয়ে ফেলে, তেমনি হিংসাও মানুষের নেক আমল খেয়ে ফেলে।’ (আবু দাউদ-৪৯০৩)
জুলুম করা : হাদিসের ভাষ্য অনুযায়ী, জুলুম কিয়ামতের দিন অন্ধকারের রূপ পরিগ্রহ করবে। এ জন্য কথা, কাজ, আচরণ ও উচ্চারণে মানুষকে অন্যায়ভাবে কষ্ট দেয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। অত্যাচার, নির্যাতন, নিগ্রহ ও নিপীড়নের যত প্রকার রয়েছে সব বর্জন করতে হবে। যদি ন্যায়বিরুদ্ধ পন্থায় কারো সাথে নিপীড়নমূলক আচরণ করা হয় বা অকারণে কারো ওপর কোনো ধরনের জুলুম করা হয়, তাহলে মজলুমের আমলনামায় জালেমের নেক আমলের সওয়াব চলে যায়। অনেক সময় নির্যাতিতের পাপের বোঝাও বহন করতে হয়। হজরত আবু হুরায়রা রা: বলেন, আল্লাহর রাসূল সা: বলেছেন, ‘তোমরা কি বলতে পারো অভাবী লোক কে? তারা বললেন, আমাদের মধ্যে যার টাকাকড়ি ও ধন-সম্পদ নেই সে অভাবী লোক। তখন তিনি বললেন, আমার উম্মতের মধ্যে প্রকৃত অভাবী সে, যে কিয়ামতের দিন নামাজ, রোজা ও জাকাত নিয়ে আসবে। অথচ এ অবস্থায় আসবে যে, সে কাউকে গালি দিয়েছে, কাউকে অপবাদ দিয়েছে, অমুকের সম্পদ ভোগ করেছে, অমুককে হত্যা করেছে ও আরেকজনকে প্রহার করেছে। এরপর সেই ব্যক্তিকে তার নেক আমল থেকে দেয়া হবে, এরপর যদি পাওনাদারের হক তার নেক আমল দ্বারা পূরণ করা না যায়, তাহলে ঋণের পরিবর্তে তাদের পাপের একাংশ তার প্রতি নিক্ষেপ করা হবে। এরপর তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।’ (মুসলিম-৬৪৭৩)
খোঁটা দেয়া : আল্লাহপ্রদত্ত সম্পদ তারই পথে খরচ করা প্রভূত কল্যাণ ও পুণ্য লাভের কারণ। কিন্তু টাকা-পয়সা ও ধন-সম্পত্তির মাধ্যমে কাউকে সাহায্য করার পর যদি নিজের দানের কথা লোকদের মধ্যে বলে বেড়ানো হয় বা খোঁটা দিয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে কষ্ট দেয়া হয়, তাহলে আল্লাহর কাছে এমন দান মূল্যহীন হয়ে যায়। খোঁটা দেয়ার কারণে এই দানের কোনো প্রতিদান আল্লাহ তায়ালা দেন না। পবিত্র কুরআনে এসেছে- ‘যারা আল্লাহর পথে ধনৈশ্বর্য ব্যয় করে এরপর যা ব্যয় করে তার কথা বলে বেড়ায় না আর ক্লেশও দেয় না, তাদের পুরস্কার তাদের প্রতিপালকের কাছে আছে। তাদের কোনো ভয় নেই, তারা দুঃখিতও হবে না।’ (সূরা বাকারা-২৬২) ইমাম কুরতুবি রহ. তার তাফসিরে বলেন, এই আয়াত সম্পর্কে অধিকাংশ আলেম বলেছেন, যে সদকার ব্যাপারে সদকা দানকারী ব্যক্তি মানুষের ওপর অনুগ্রহ জাহির করে বা তাদেরকে কষ্ট দেয়, তাহলে সে সদকা কবুল হয় না।
আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করা : রক্ত সম্পর্কিত আত্মীয়দের সাথে সম্পর্ক বজায় রাখা অপরিহার্য। আত্মীয়স্বজনের সাথে সুসম্পর্ক বজায় না রেখে যদি তাদের পাশ কাটিয়ে চলা হয়, উপেক্ষা করা হয়, তাদের খোঁজ-খবর নেয়া না হয় কিংবা তাদের বিপদ-আপদে সামর্থ্য অনুযায়ী সহযোগিতা না করা হয়, তাহলে এমন লোকের আমল কবুল না হওয়ার আশঙ্কা প্রবল। হজরত আবু হুরায়রা রা: বলেন, মহানবী সা: বলেছেন, ‘আদম সন্তানের আমলসমূহ আল্লাহর কাছে প্রতি বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে পেশ করা হয়। কিন্তু আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারীর আমল কবুল হয় না।’ (আল আদাবুল মুফরাদ-৬১) যারা অন্যায়ভাবে আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করে তাদের প্রতি আল্লাহর লানত বর্ষিত হয় মর্মে আল কুরআনে এসেছে- ‘ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হলে সম্ভবত তোমরা পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি করবে আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করবে। আল্লাহ এদেরকেই লানত করেন এবং বধির ও দৃষ্টিশক্তিহীন করেন।’ (সূরা মুহাম্মাদ : ২২-২৩)
লেখক : মুহাদ্দিস জামিয়া ইসলামিয়া ইসলামবাগ, পোস্তা, চকবাজার, ঢাকা