বিতরণের জন্য প্রস্তুত প্রাথমিকের পাঠ্যবই অনিশ্চয়তায় মাধ্যমিক

শাহেদ মতিউর রহমান
Printed Edition

নির্ধারিত সময়ের আগেই প্রাথমিক স্তরের সব পাঠ্যবই বিতরণের জন্য শতভাগ প্রস্তুত হয়েছে। ২০২৬ শিক্ষাবর্ষে বিনামূল্যে বিতরণের লক্ষ্যে প্রাথমিক স্তরের (প্রাক-প্রাথমিক থেকে পঞ্চম শ্রেণী) জন্য মোট আট কোটি ৫৯ লাখ ২৪ হাজার ৮৫৩ কপি পাঠ্যবই মুদ্রণ সম্পন্ন করা হয়েছে। চলতি বছরের ১৫ ডিসেম্বরের আগেই এসব বই বিতরণের প্রস্তুতি শেষ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে অধিকাংশ বই জেলা ও উপজেলাপর্যায়ে পৌঁছে গেছে। সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন, নতুন বছরের প্রথম দিনেই প্রাথমিকের শতভাগ শিক্ষার্থী একসাথে সব বই হাতে পাবে।

তবে প্রাথমিকের বিপরীতে মাধ্যমিক স্তরের পাঠ্যবই মুদ্রণে ব্যত্যয় ঘটেছে। একাধিক দফা দরপত্র প্রক্রিয়ায় জটিলতা, চুক্তি বিলম্ব এবং বই মুদ্রণে ব্যবহৃত কাগজের মান নিয়ে আপত্তির কারণে পয়লা জানুয়ারির আগে মাধ্যমিকের বই মুদ্রণ নিয়ে আশাব্যঞ্জক কোনো তথ্য দিতে পারছে না জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। এ দিকে প্রেস মালিকরা বকেয়া বিল পরিশোধের দাবিতে নিয়মিত ধরনা দিচ্ছেন। জানা গেছে, অনেক প্রেস মালিক বকেয়া বিল পরিশোধ না হলে ইচ্ছাকৃতভাবেই মাধ্যমিকের বই মুদ্রণে বিলম্ব করছেন।

এ ছাড়া তুলনামূলক কম মূল্যে বই মুদ্রণের কাজ পাওয়ায় পাঠ্যবইয়ের মান নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্টরা। ইতোমধ্যে নিম্নমানের বই সরবরাহের অভিযোগও পাওয়া যাচ্ছে। অভিযোগ রয়েছে, কিছু প্রেস হোয়াইটপ্রিন্টের পরিবর্তে নিউজপ্রিন্ট কাগজ ব্যবহার করছে, যা রিসাইকেলড পাল্প থেকে তৈরি। ফলে বইয়ের জিএসএম, ব্রাইটনেস, ব্রাস্টিং ফ্যাক্টর ও অপাসিটি মানসম্মত নয়। অনেক বই ঝাপসা, কাগজ খসখসে এবং ছাপা লেপ্টে যাওয়ার মতো অবস্থা দেখা যাচ্ছে। এমনকি কিছু বইয়ের মলাটে ইউভি (আলট্রা ভার্নিশ) প্রলেপও দেয়া হয়নি।

এনসিটিবির নিয়মিত মনিটরিং সত্ত্বেও কিছু প্রেসের বইয়ের মান উন্নত করা যাচ্ছে না বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। এনসিটিবির চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মো: মাহবুবুল হক পাটওয়ারী বলেন, নিম্নমানের বই সরবরাহ করলে বিধি অনুযায়ী রিপ্লেস করার নির্দেশ দেয়া হয়; কিন্তু অনেক প্রেস মালিক তা মানেন না। তাই এ শাস্তি যথেষ্ট কার্যকর নয়। এ কারণে ২০২৬ শিক্ষাবর্ষে নিম্নমানের বই সরবরাহ করলে শুধু রিপ্লেস নয়, সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে এবং ভবিষ্যতে দরপত্রে অংশগ্রহণ থেকে বিরত রাখতে কালো তালিকাভুক্ত করা হবে।

বাংলাদেশ মুদ্রণশিল্প সমিতির সাবেক সভাপতি তোফায়েল খান অভিযোগ করেন, বিগত বছরগুলোতে একটি দুর্নীতিবাজ সিন্ডিকেট নিম্নমানের বই সরবরাহ করেছে, যা এখনো সক্রিয়। তিনি নিম্নমানের বই সরবরাহকারীদের তদন্তসাপেক্ষে কালো তালিকাভুক্ত করার দাবি জানান।

এনসিটিবির উৎপাদন নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক মো: আবু নাসের টুকু নয়া দিগন্তকে জানান, প্রাথমিকের বই নিয়ে কোনো জটিলতা নেই। ইতোমধ্যে মুদ্রণ, কাটিং ও প্রি-ডেলিভারি ইনস্পেকশন (পিডিআই) সম্পন্ন হয়েছে এবং শিগগিরই শতভাগ বই উপজেলাপর্যায়ে পৌঁছে যাবে।

অন্য দিকে বিতরণ নিয়ন্ত্রক মোহাম্মদ মতিউর রহমান পাঠান জানান, মাধ্যমিকের কিছু বইয়ের টেন্ডার বিলম্ব হওয়ায় চুক্তি করতে দেরি হয়েছে। তবে বর্তমানে দায়িত্বপ্রাপ্ত ১০৩টি প্রেসে নিয়মিতভাবে মুদ্রণকাজ চলছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই শিক্ষার্থীদের হাতে বই পৌঁছে দেয়ার আশা প্রকাশ করেন তিনি।