এক ছাতার নিচে আসছে দেশের সার ব্যবস্থাপনা। থাকবে না খুচরা বিক্রেতা কিংবা তৃতীয় পক্ষ। কৃষক সরাসরি ডিলার কিংবা ডিলার মনোনীত দোকান থেকে সরকার নির্ধারিত দামে সার পাবেন। বর্তমান নীতিমালায় বিসিআইসি ও বিএডিসির আলাদা ডিলার রয়েছে। ফলে ইউরিয়া ও নন ইউরিয়া সারের আলাদা ডিলার রয়েছে। ‘সার ডিলার নিয়োগ ও সার বিতরণ সংক্রান্ত সমন্বিত নীতিমালা-২০০৯’ সংশোধন করছে কৃষি মন্ত্রণালয়। নতুন নীতিমালায় বিএডিসি বা বিসিআইসির আলাদা ডিলারশিপ থাকছে না। সব ডিলার কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীন থাকবে। ইউরিয়া ও নন ইউরিয়া সার একই ডিলারের কাছ থেকে পাবেন কৃষক। সেক্ষেত্রে ডিলারের সংখ্যাও বাড়ছে। বর্তমান নীতিমালা অনুযায়ী প্রতি ইউনিয়নে তিনজন করে ডিলার থাকলেও নতুন নীতিমালায় প্রতি ওয়ার্ডে একজন তথা প্রতি ইউনিয়নে ৯ জন করে ডিলার নিয়োগ করা হতে পারে।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের সূত্র বলছে, ‘সার ডিলার নিয়োগ ও সার বিতরণ সংক্রান্ত সমন্বিত নীতিমালা-২০০৯’ সংশোধনের কাজ ইতোমধ্যে অনেক দূর এগিয়েছে। আগামী ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগেই নীতিমালা উপদেষ্টা পরিষদে পাস হতে পারে।
বর্তমানে দেশে সার ডিলার সংখ্যা ৭ হাজার ১৫০ জন। এর মধ্যে বিএডিসি (বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন) ৫ হাজার ২২ জন এবং বিসিআইসি (বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশন) অনুমোদিত সার ডিলার আছেন ২ হাজার ১১৮ জন।
গত বছর থেকে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সার সঙ্কট দেখা দিয়েছে। কোনো কোনো জায়গায় প্রায় দ্বিগুণ দামেও সার বিক্রির খবর আসছে গণমাধ্যমে। সরকারি মূল্যে কৃষক সার না পেয়ে দেশের বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষোভও করছেন। কৃষি মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্টরা দাবি করছেন, দেশে সারের কোনো ঘাটতি নেই। স্থানীয় ডিলাররা সিন্ডিকেট করে দাম বাড়িয়ে দিচ্ছেন।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট উইং থেকে জানা যায়, বর্তমান সার ডিলারদের তালিকা সংগ্রহ করছে কৃষি মন্ত্রণালয়। ইতোমধ্যে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সার ডিলারদের নামের তালিকা আসছে। তাতে দেখা যাচ্ছে, একই পরিবারে একাধিকজন সারের ডিলারশিপ নিয়েছেন। কোনো কোনো ক্ষেত্রে স্বামী-স্ত্রী, পিতা-ছেলে বা নিকটাত্মীয়ের নামে ডিলারশিপ নিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। সার ডিলারশিপ পরিবারের মধ্যে আটকে রয়েছে। এ ছাড়া মাঠ পর্যায়ে বিএডিসি ও বিসিআইসির ডিলারশিপ নিয়েও বিড়ম্বনা রয়েছে। ডিলাররা সরকার নির্ধারিত মূল্যে সার বিক্রির জন্য বরাদ্দ পেলেও তা কৃষকের হাতে সরাসরি পৌঁছে না। সাব ডিলার বা কয়েক হাত বদলে খুচরা বিক্রেতার কাছ থেকে বেশি দামে সার নিতে হয়। তাই নতুন নীতিমালা করতে উদ্যোগ নিয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয়।
কৃষি সচিব ড. মুহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়ান এ বিষয়ে নয়া দিগন্তকে জানান, মাঠ পর্যায়ে সারের দাম নিয়ে বিএডিসি ও বিসিআইসি- দুই ধরনের ডিলারশিপ রয়েছে। ডিলারদের নীতিমালার মধ্যে পার্থক্য ছিল। আমরা সমন্বিত একটি নীতিমালা তৈরি করে কৃষি মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধায়নে পরিচালনা করব। আমরা চাচ্ছি সমন্বিত নীতিমালা করে পুরো ডিলার সিস্টেমটাকে কৃষকবান্ধব করার উদ্যোগ নিয়েছি। এমনভাবে করছি যাতে সারের যে অচল অবস্থা, সাব ডিলার বা খুচরা বিক্রেতা বলে কোনো কিছু থাকবে না। ডিলার আমাদের কাছে দায়বদ্ধ থাকবে। তিনি কার মাধ্যমে সার কৃষককে দিলেন বা বিক্রি করলেন সেটা তার ব্যাপার। আমরা ডিলারকেই ধরবো। ডিলার রেটেই কৃষক সার পাবেন। তিনি বলেন, এখন তো ইউরিয়া আলাদা, নন ইউরিয়া আলাদা ডিলার রয়েছেন। নতুন নীতিমালায় একই ডিলারের কাছে ইউরিয়া ও নন ইউরিয়া সার পাবেন কৃষক। বিসিআইসির কোনো ডিলার থাকবে না। সব কৃষি মন্ত্রণালয়ের ডিলার হবে।