ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ও কর্মী সমর্থকদের মাঝে উত্তাপ ছড়িয়ে পড়েছে। বিএনপির একসময়ের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। তবে ৩০ বছর পর বগুড়ার সাতটি আসনে বিএনপির জোর প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে নির্বাচনী মাঠ দাপিয়ে বেড়াচ্ছে জামায়াতে ইসলামী। এই জেলায় ভিআইপি প্রার্থী বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পক্ষে মাঠে নেতাকর্মীরা। অন্য দিকে জামায়াতের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য অধ্যক্ষ শাহাবুদ্দিন সশরীরে ভোটের মাঠে প্রচারণায় ব্যস্ত রয়েছেন। নবগঠিত এনসিপি, সিপিবি, বাসদসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলের প্রার্থীর কথা শোনা গেলেও তাদের তৎপরতা চোখে পড়েনি। এ ছাড়া ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এর আগে প্রার্থী ঘোষণা করলেও আটদলীয় জোটে নির্বাচনী সমঝোতায় তৎপরতা নেই মাঠে।
বগুড়া বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের জন্মস্থান হওয়া ১৯৯১ সালে একটি বাদে (বগুড়া-২ জামায়াত) ছয়টিতে এবং ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে সাতটি আসনের সব ক’টিতে জয় পায় বিএনপি। ২০০১ সালের নির্বাচনে বিএনপির সাথে জামায়াত জোটবদ্ধ নির্বাচনে বিএনপি সাতটি আসনেই জয়লাভ করে। এরপর ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিএনপি সাতটির মধ্যে পাঁচটিতে এবং আওয়ামী লীগ দু’টি আসনে জয়লাভ করে। বিগত ৩০ বছর একক কোনো নির্বাচনে অংশ নেয়নি জামায়াত। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতনের পর জামায়াত দলের প্রার্থী ঘোষণা দিয়ে চমক আনে। তারা নির্বাচনী প্রচারণায় এক ধাপ গিয়ে যায়। বিএনপি সম্প্রতি খসড়া প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করলেও বগুড়া-২ (শিবগঞ্জ) আসন ফাঁকা রয়েছে। সেখানে নির্বাচনী জোটের শরিক নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর মান্নাকে প্রার্থী করা হতে পারে।
বগুড়া-১ (সারিয়াকান্দি-সোনাতলা) আসন : এ আসনে বিএনপির প্রার্থী সাবেক সংসদ সদস্য আলহাজ কাজী রফিকুল ইসলাম। তিনি মাঠে থাকলেও অপর মনোনয়নপ্রত্যাশী সোনাতলা উপজেলা বিএনপির সভাপতি আহসানুল তৈয়ব জাকির দলের পক্ষে এখনো মাঠে নামেননি। জামায়াত মনোনীত প্রার্থী দলের কেন্দ্রীয় পরিষদ সদস্য ও সারিয়াকান্দি ডিগ্রি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ শাহাবুদ্দিন পুরো এলাকা চষে বেড়াচ্ছেন।
বগুড়া-২ (শিবগঞ্জ) আসন : আসনটিতে বিএনপি এখনো চূড়ান্ত প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেনি। এ আসনে বিএনপির নির্বাচনী জোটসঙ্গী নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্নাকে ছাড় দিতে পারে বিএনপি এমন আলোচনা চরছে। তবে মনোনয়নপ্রত্যাশী মীর শাহে আলম দৌড়ঝাঁপ করছেন। তবে আসনটিতে জামায়াতের প্রার্থী সাবেক সংসদ সদস্য ও সাবেক অধ্যক্ষ মাওলানা শাহাদাতুজ্জামান ব্যক্তি ইমেজে কাজে লাগিয়ে ভোটারদের মাঝে জনপ্রিয় হয়ে উঠছেন।
বগুড়া-৩ (দুপচাঁচিয়া-আদমদীঘি) আসন : এ আসনে বিএনপির প্রার্থী হয়েছেন আদমদীঘি উপজেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল মুহিত তালুকদার, জামায়াতের প্রার্থী দুপচাঁচিয়া উপজেলার গুনাহার ইউপি চেয়ারম্যান তরুণ নেতা নূর মোহাম্মদ আবু তাহের। তিনি ব্যক্তিগত কারিশমায় নিজেকে ইতোমধ্যে শক্তপোক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে অলোচনায় রয়েছেন।
বগুড়া-৪ (নন্দীগ্রাম-কাহালু) আসন : বিএনপির প্রার্থী মোশারফ হোসেন জেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক। জামায়ত প্রার্থী ছাত্রশিবিরের ঢাকা মহানগরীর সাবেক সভাপতি ড. মোস্তফা ফয়সাল পারভেজ। তিনি তুরস্কের একটি সরকারি বিশ^বিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক এবং আন্তর্জাতিক ছাত্র সংগঠন ইফসুর সেক্রেটারি জেনারেল। এ আসনের বিএনপির সাবেক এমপি ডা: জিয়াউল হক মোল্লা স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার শ্রুতি কথা রয়েছে সমর্থকদের মুখে।
বগুড়া-৫ (শেরপুর-ধুনট) আসন : এ আসনে বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম মোহাম্মদ সিরাজকে মনোনয়ন দিয়েছে বিএনপি। পক্ষান্তরে, জামায়াত প্রার্থী ঘোষণা করেছে শেরপুর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা জামায়াতের আমির বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আলহাজ দবিবুর রহমানকে। বিএনপির প্রার্থী মাঠে প্রচারণায় থাকলেও দলের অন্যান্য মনোনয়নপ্রত্যাশী এখনো দলীয় প্রার্থীর পাশে নেই। তবে জামায়াত নেতাকর্মীরা একযোগে মাঠে প্রচারণায় ব্যস্ত।
বগুড়া-৬ আসন (সদর) আসন : বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী ১৯৯১ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত সব নির্বাচনে দলের প্রার্থী হয়ে বিপুল ভোটে জয়লাভ করেছেন। আসন্ন নির্বাচনে এ আসনে প্রথমবারের মতো প্রার্থী হয়েছেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তারেক রহমানের পক্ষে মাঠে নেমেছেন নেতাকর্মীরা। সাবেক জেলা সভাপতি ভিপি সাইফুল ইসলামসহ সাবেক ও বর্তমান নেতাকর্মীরা প্রতিটি ওয়ার্ড ও পাড়া-মহল্লায় ধানের শীষের পক্ষে গণসংযোগ করছেন। এ আসনে জামায়াতের প্রার্থী শহর আমির ও সাবেক ছাত্রনেতা অধ্যক্ষ আবিদুর রহমান সোহেল। প্রথমবারের মতো প্রার্থী হয়ে ভোটারদের মাঝে ব্যাপক সাড়া ফেলেছেন। তিনি দাঁড়িপাল্লায় ভোট চেয়ে গণসংযোগ, পথসভা অব্যাহত রেখেছেন।
বগুড়া-৭ (গাবতলী-শাজাহানপুর) আসন : দুই উপজেলা নিয়ে গঠিত এ আসনে বিএনপির প্রার্থী দলের চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। তিনি এর আগেও এ আসন থেকে ১৯৯১, ১৯৯৬, ২০০১ ও ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিপুল ভোটে জয়ী হন। আসনের গাবতলী উপজেলার বাগবাড়ী গ্রাম শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের জন্মস্থান হওয়ায় জিয়া পরিবারের প্রতি মানুষের এখনো দুর্বলতা রয়েছে। কিন্তু এবারের প্রেক্ষাপট অনকটা ভিন্ন। খালেদা জিয়া অসুস্থ থাকায় তার পক্ষে সাবেক এমপি হেলালুজ্জামান তালুকদার লালুসহ স্থানীয় নেতাকর্মীরা ধানের শীষের পক্ষে গণসংযোগ করছেন। এ আসনে জামায়াতের প্রার্থী শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি ও বগুড়া জেলা জামায়াতের সাবেক আমির গোলাম রব্বানী। তিনি নেতাকর্মীদের সাথে দিনরাত ভোটারদের দুয়ারে দুয়ারে ছুটছেন। ইতোমধ্যে তিনি প্রতিটি এলাকায় শক্ত অবস্থান তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন।
আসনগুলোর ভোটাররা বলছেন, বগুড়া জেলার সাতটি আসনে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে জামায়াত ও বিএনপির মধ্যে। বগুড়া বিএনপির ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত হলেও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে জামায়াত শক্তিশালী হয়ে উঠেছে। তাই প্রতিটি আসনে বিএনপির সাথে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে জামায়াতের। বর্তমান অবস্থায় উভয় দলের জনসমর্থন প্রায় সমানে সমান।



