আসন্ন ডাকসু নির্বাচন-২০২৫কে ঘিরে ক্যাম্পাসজুড়ে এখন সরগরম পরিবেশ। দীর্ঘ ছয় বছর পর আবারো শিক্ষার্থীরা কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) নেতৃত্ব বেছে নেয়ার সুযোগ পাচ্ছে। ভোটগ্রহণ আগামী ৯ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনী প্রচারণা যত গতি পাচ্ছে, ততই আলোচনার কেন্দ্রে উঠে আসছে একটি বড় সঙ্কট সাইবার বুলিং। বিশেষ করে নারী প্রার্থীদের বিরুদ্ধে অনলাইন হয়রানি এখন নির্বাচনের অন্যতম প্রধান প্রতিবন্ধকতা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
নির্বাচনে নারী প্রার্থীর অংশগ্রহণ এইবার তুলনামূলক বেশি। দুই একটি বাদে সবগুলো প্যানেলের মধ্যে নারী নেতৃত্ব রয়েছে। শীর্ষ নেতৃত্বের ভিপি পদে দুইজন, জিএস পদে একজন এবং এজিএস পদে আরো দুইজন নারী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। কিন্তু এই অংশগ্রহণকে স্বাগত জানানোর পাশাপাশি বাস্তবতার মুখে দাঁড়িয়ে তাদের লড়াই এখন কেবল ভোট নয়, বরং মানসিক নিরাপত্তারও।
এবারের ডাকসু নির্বাচনে ইসলামী, বাম ও প্রগতিশীল বিভিন্ন সংগঠন থেকে প্রার্থী হওয়া একাধিক নারী জানিয়েছেন, ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাদের বিরুদ্ধে ধারাবাহিকভাবে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। এই অপপ্রচার কখনো ধর্মীয়, কখনো রাজনৈতিক, আবার কখনো ব্যক্তিগত আক্রমণের আকারে প্রকাশ পাচ্ছে।
ভিপি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা উমামা ফাতেমা বলেন, আমাদের ওপর মূলত চরিত্রহননমূলক প্রচারণা চালানো হচ্ছে। আমাকে নিয়ে বিভিন্ন ফেসবুক পেজে বিদ্বেষ ছড়ানো হচ্ছে। এসব আক্রমণের উদ্দেশ্য স্পষ্ট মেয়েরা যেন রাজনীতিতে আসতে না পারে।
ভিপি পদে আরেক প্রতিদ্বন্দ্বী তাসনিম আফরোজ ইমি অভিযোগ করে বলেন, হয়রানিটা আসলে সবচেয়ে বেশি হচ্ছে অনলাইনে। আর এটা নারী প্রার্থীদের বিরুদ্ধেই বেশি। আমরা যখন প্রচারণায় ব্যস্ত, তখন দেখছি ফেসবুকে বট আইডি থেকে আমাদের ছবি এডিট করে ছড়ানো হচ্ছে, শরীর নিয়ে অশ্লীল মন্তব্য করা হচ্ছে। এগুলো আমাদের মানসিকভাবে ভেঙে দিতে চাচ্ছে।
সাইবার বুলিংয়ের শিকারদের তালিকায় রয়েছেন ছাত্রশিবির সমর্থিত প্যানেলের মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক ফাতিমা তাসনিম জুমা। নির্বাচনী প্যানেল ঘোষণা হওয়ার পর থেকেই ফেসবুক ও একাধিক অনলাইন গ্রুপে তাকে নিয়ে কটূক্তি, ব্যঙ্গাত্মক পোস্ট দেয়া হচ্ছে।
বিশেষ করে তার সাংগঠনিক পরিচয় এবং মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক পদে থাকার কারণে তাকে টার্গেট করে নানা মন্তব্য করা হচ্ছে। কেউ তার রাজনৈতিক অবস্থানকে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করছে, আবার কেউ সরাসরি ব্যক্তিগত আক্রমণে নেমেছে।
জুমা অভিযোগ করে বলেন, আমি একজন প্রার্থী হিসেবে শিক্ষার্থীদের আস্থা অর্জনের জন্য প্রচারণা চালাচ্ছি। কিন্তু অনলাইনে আমাকে নিয়ে অযথা কটূক্তি করা হচ্ছে, যা শুধু আমার মানসিক কষ্টই বাড়াচ্ছে না, বরং ভোটারদের মাঝেও বিভ্রান্তি তৈরি করছে।
তিনি আরো বলেন, আমাকে নিয়ে মিথ্যা তথ্য ছড়ানো হচ্ছে, যেন আমি মুক্তিযুদ্ধবিরোধী অবস্থানে আছি। অথচ আমি মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী এবং সেই কারণেই সংগঠনের মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি।
বট আক্রমণ ও অপপ্রচার : এই নির্বাচনে নতুনভাবে যুক্ত হয়েছে বট আক্রমণের ঘটনা। ক্যাম্পাসের বিভিন্ন গ্রুপ ও পেজে বট অ্যাকাউন্ট (মিথ্যা তথ্য ব্যবহার করে বানানো ফেসবুক অ্যাকাউন্ট) ব্যবহার করে প্রচুর ভুয়া তথ্য ছড়ানো হচ্ছে। প্রার্থীদের ছবি বিকৃত করে তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা তথ্য প্রচার করা হচ্ছে। এতে শিক্ষার্থীরা বিভ্রান্ত হচ্ছেন, আবার অনেক ভোটার সরাসরি হেনস্তার শিকার প্রার্থীদের পাশে দাঁড়াতে সংকোচ বোধ করছেন।
একজন প্রার্থী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, এবারের ডাকসু নির্বাচনে দেখা যাচ্ছে, বাস্তব প্রচারণার চেয়ে অনলাইনের যুদ্ধই বড় হয়ে উঠেছে। যারা অর্থ ও প্রযুক্তিতে শক্তিশালী, তারা বট ব্যবহার করে প্রতিপক্ষকে টার্গেট করছে।
প্রশাসনের পদক্ষেপ : বারংবার অভিযোগ ও সঙ্কটের পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ইতোমধ্যে কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। তন্মধ্যে প্রশাসনের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনকে (বিটিআরসি) চিঠি পাঠিয়ে একাধিক ফেসবুক পেজ বন্ধ করার অনুরোধ জানানো হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নিরাপত্তা মঞ্চ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী সংসদ-১, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীর সংসদ-২, ডিউ আপডেট নামের পেজগুলো বন্ধ রয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্ট অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম গ্রুপগুলো পর্যবেক্ষণে রয়েছে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সাইফুদ্দিন গণমাধ্যমকে বলেন, আমরা কোনোভাবেই চাই না, সাইবার বুলিং বা অপপ্রচারের কারণে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ কমে যাক। এজন্য আমরা বিটিআরসির কাছে নির্দিষ্ট কিছু পেজ বন্ধ করার অনুরোধ করেছি। পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সাইবার মনিটরিং সেল গঠনেরও প্রক্রিয়া শুরু করেছে।
সাইবার বুলিং আটকাতে প্রার্থীদের দাবি : বিভিন্ন প্যানেল থেকে প্রার্থীরা নির্বাচন কমিশন ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে লিখিতভাবে বেশ কিছু দাবি তুলেছেন। এর মধ্যে কমন দাবিরগুলো হলো : ১. একটি কার্যকর সাইবার সিকিউরিটি সেল গঠন করা, যেখানে ডিএমপির সাইবার ইউনিটও যুক্ত থাকবে। ২. যেসব ফেসবুক পেজ বা গ্রুপ থেকে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে, তাদের অ্যাডমিনদের পরিচয় প্রকাশ করা। ৩. বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম ব্যবহার করে ভুয়া পেজ চালানো বন্ধ করা। ৪. অনলাইন বুলিংকে আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনী আচরণবিধির লঙ্ঘন হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা।
‘ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থীর জোট’ প্যানেলের ভিপি প্রার্থী সাদিক কায়েম বলেন, আমরা একটি প্রজন্ম তৈরি করতে চাই যারা ভয়ের রাজনীতিকে প্রত্যাখ্যান করবে। কিন্তু অনলাইন হয়রানি সেই ভয়কেই জিইয়ে রাখছে। আমরা চাই প্রশাসন শক্ত হাতে ব্যবস্থা নিক।
বিশ্লেষকদের মতে, ডাকসু নির্বাচন শুধু ক্যাম্পাস রাজনীতির নয়, দেশের সামগ্রিক গণতান্ত্রিক চর্চার সাথেও যুক্ত। অথচ সাইবার বুলিংয়ের মতো সমস্যার কারণে নারী প্রার্থীরা যখন মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছেন, তখন সেটি গণতান্ত্রিক পরিবেশের জন্যও বড় হুমকি।
আসন্ন ডাকসু নির্বাচন বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্মের জন্য এক নতুন রাজনৈতিক অধ্যায়। কিন্তু এই নির্বাচনে সাইবার বুলিং একটি অস্বস্তিকর বাস্তবতা তৈরি করেছে। নারী প্রার্থীরা অনলাইন হয়রানির মুখে দাঁড়িয়ে তাদের অংশগ্রহণ অব্যাহত রাখার চেষ্টা করছেন। প্রশাসন কিছু পদক্ষেপ নিলেও তা এখনো পর্যাপ্ত নয় বলে মনে করছেন অনেকে।
প্রার্থী ও ভোটারদের প্রত্যাশা, একটি নিরাপদ ও স্বচ্ছ নির্বাচনী পরিবেশ গড়ে তোলা হবে, যেখানে শিক্ষার্থীরা মুক্তভাবে মতামত প্রকাশ করতে পারবেন এবং প্রার্থীরা ভয়মুক্ত হয়ে প্রচারণা চালাতে পারবেন। এই নির্বাচনের সাফল্য কেবল ভোটের মাধ্যমে নয়, বরং কতটা নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ পরিবেশে শিক্ষার্থীরা অংশ নিতে পারলো- সেই হিসেবেই মূল্যায়িত হবে।
ডাকসুর নির্বাচনে ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট মনোনীত ছাত্রশিবির সমর্থিত প্যানেলের জিএস প্রার্থী এস এম ফরহাদের প্রার্থিতার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রিট করা হয়েছে।
বামজোট মনোনীত প্যানেলের মুক্তিযুদ্ধ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলন বিষয়ক সম্পাদক প্রার্থী বিএম ফাহমিদা আলম রোববার এ রিট করেন।
নিজের প্রার্থিতাকে চ্যালেঞ্জ করে রিট দায়েরকারী বামজোটের নেত্রীকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন এস এম ফরহাদ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির সমর্থিত প্যানেলের সাধারণ সম্পাদক (জিএস) এস এম ফরহাদের প্রার্থিতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন ‘অপরাজেয় ৭১, অদম্য ২৪’ প্যানেলের মুক্তিযুদ্ধ ও গণ-আন্দোলন বিষয়ক সম্পাদক বি এম ফাহমিদা আলম।
প্রতিক্রিয়ায় ফরহাদ বলেছেন, আমার প্রার্থিতাকে চ্যালেঞ্জ করে রিট দায়েরকারী বামজোটের নেত্রীকে তার উদ্যোগের জন্য শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। বিভিন্ন দল কর্তৃক দীর্ঘ সময় ধরে ছবি এডিট করে, ভিডিও বানিয়ে আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার করার চেয়ে আপনার আইনি উদ্যোগ তুলনামূলক ভালো অ্যাপ্রোচ। তিনি আরো বলেন, বাধা, ষড়যন্ত্র কিংবা অপকৌশল মাড়িয়েই আমাদের নিয়মিত পথচলা। এই যাত্রায় আমরা থামব না, ইনশা আল্লাহ।
শিবিরের সমালোচনা করা একটি পক্ষের অ্যাজেন্ডা হয়ে দাঁড়িয়েছে : ফরহাদ
ডাকসু নির্বাচনে শিবির সমর্থিত ‘ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট’ প্যানেলের সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদপ্রার্থী এস এম ফরহাদ বলেছেন, বেশ কয়েকটি পক্ষ তাদের জনবিচ্ছিন্নতার কারণে, শিক্ষার্থী বিচ্ছিন্নতার কারণে নিজেদের কোনো অ্যাজেন্ডা না পেয়ে শিক্ষার্থীদের কাছে প্রকাশ করার মতো নিজেদের কোনো ইতিবাচক কার্যক্রম না পেয়ে, কোনো অ্যাজেন্ডা না পেয়ে তাদের একটাই অ্যাজেন্ডা হয়ে দাঁড়িয়েছে, সকাল-বিকেল ও সন্ধ্যা সবসময় ছাত্রশিবিরের ব্যাপারে সমালোচনা করা। সবসময় সেই আওয়ামী ন্যারেটিভ নিয়ে পুরনো অ্যাজেন্ডা নিয়ে এখানে নিজেদের ঠিকাদারি করা।
গতকাল রোববার বিশ্ববিদ্যালয়ের ডাকসু ভবনের সামনে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন তিনি।
তিনি বলেন, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, মানচিত্র ও সংস্কৃতি দেশের সব মানুষের। একটি নির্দিষ্ট পক্ষকে দায়িত্ব দিয়ে দেয়া হয় নাই সেটিকে নিয়ে ঠিকাদারি করার। কোনো নির্দিষ্ট পক্ষকে দায়িত্ব দিয়ে দেওয়া হয় নাই মুজিববাদী বয়ান তাদের মতো করে হাজির করার জন্য। বাংলাদেশের প্রত্যেক মানুষ স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধ ওউন করে। ২৪ এর গণ-অভ্যুত্থান সেই ’৭১ এর সম্প্রসারিত রূপ। ’৭১ এর মধ্যে দিয়ে যেমন আমরা স্বাধীন ভূমি পেলেও আধিপত্যবাদের হাত থেকে মুক্তি পাইনি। গণ-অভ্যুত্থানের মধ্যে দিয়ে আমরা সে মুক্তি পেয়েছিলাম।
তার বিরুদ্ধে রিট করার বিষয়ে ফরহাদ বলেন। এ ধরনের রিট আরো আগে করতে পারতেন। আইনি প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে যাওয়াটা আমরা ইতিবাচক হিসেবে দেখছি। রিটকারীর দ্বিমতের বিষয়ে রেসপেক্ট জানাই। পাশাপাশি নির্বাচন উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস পরীক্ষা বন্ধের বিষয়ে তিনি বলেন, ক্লাস বন্ধ করার কোনো যৌক্তিকতা আমিও দেখি না, শুধু পরীক্ষার বিষয়টি বিবেচনায় নিতে পারত।
সংবাদ সম্মেলনে প্যানেলের সহসভাপতি (ভিপি) পদপ্রার্থী সাদিক কায়েম বলেন, আমাদের কাজগুলো দেখে অনেকে ঈর্ষান্বিত হয়ে পড়ছেন। তাই তারা ক্রমাগত আমাদের প্যানেলের সবার আইডিতে গিয়ে গালাগালি করছেন। এমনকি নারী প্রার্থীদের নিয়মিত সাইবার বুলিং করা হচ্ছে। নির্বাচনী প্রচারণার প্রথম দিনেই আমাদের প্যানেলের নারী শিক্ষার্থীদের ছবি বিকৃত করা হয়। আমরা নির্বাচন কমিশনারের কাছে লিখিত অভিযোগ দিলেও এখন পর্যন্ত তারা কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। নির্বাচন কমিশনের এমন পক্ষপাতিত্বমূলক আচরণে আমরা আশঙ্কা প্রকাশ করছি। তারা যদি কারো আদর্শ দ্বারা প্রভাবিত হয়ে এ ধরনের কাজ করে তবে তারা শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে অবস্থান নেবে।
বারবার আচরণবিধি লঙ্ঘনের মাধ্যমে নির্বাচনের লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড ক্ষুণœ হচ্ছে -আবিদুল ইসলাম খান
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে বারবার আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলেছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেল। এ নিয়ে তাদের প্রার্থীরা এবং ডাকসু নির্বাচনে ছাত্রদলের আইন ও অভিযোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্যরা চিফ রিটার্নিং অফিসারের কাছে লিখিত অভিযোগ জমা দেন। রোববার বিকেল ৪টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনে চিফ রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়ে অভিযোগ জানানোর পর সাড়ে ৪টায় সংবাদ সম্মেলন করেন তারা।
সংবাদ সম্মেলনে ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেলের ভিপিপ্রার্থী আবিদুল ইসলাম খান বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির ও ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট সমর্থিত প্যানেলের বিরুদ্ধে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ করেন।
আবিদুল অভিযোগ করেন, ফোকাস বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি কোচিং থেকে ভর্তি হয়ে আসা শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনার নামে ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোটের ভিপি, জিএস, এজিএস প্রার্থীসহ অন্য সদস্যরা খাবার ও উপঢৌকন দিয়ে ভোট চাইছেন।
ঢাবির ফেসবুক গ্রুপ নিয়েও তিনি অসন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী সংসদ ১ ও শিক্ষার্থী সংসদ ২’ গ্রুপকে কেন্দ্র করে আমরা বারবার নির্বাচন কমিশনের কাছে অভিযোগ করেছি। আজ আবারো জানালাম যে এই গ্রুপগুলো নির্বাচনের লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড ক্ষুণœ করছে। অথচ এ বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না।
এ ছাড়া ডাকসু নির্বাচন সামনে রেখে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ঘোষিত টানা ছয় দিনের ছুটি (শুক্র ও শনিবারের সরকারি ছুটিসহ) অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের ভোট দানে নিরুৎসাহিত করার শামিল বলেও উল্লেখ করেন তিনি। এ বিষয়ে পুনর্বিবেচনার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানান।
ডাকসু নির্বাচনে ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধের সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবি ‘অপরাজেয় ৭১’ ও ‘অদম্য ২৪’ পরিষদের
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ক্লাস-পরীক্ষা চার দিন বন্ধ ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। এই সিদ্ধান্তকে দুরভিসন্ধিমূলক আখ্যা দিয়ে অতি দ্রুত তা বাতিলের আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন (একাংশ), সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট (বাসদ) এবং বাংলাদেশ ছাত্রলীগ-বিসিএলের সমন্বয়ে গঠিত ‘অপরাজেয় ৭১, অদম্য ২৪’ প্যানেল।
গতকাল বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিন এলাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে এই দাবি জানান তারা।
লিখিত বক্তব্য পাঠ করে ভিপি পদপ্রার্থী মো: নাইম হাসান হৃদয় বলেন, আমরা এর আগেও সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলাম নির্বাচনকে উৎসবমুখর করার জন্য একটা নির্দিষ্ট সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ধরনের পরীক্ষা বন্ধ রাখা যেতে পারে। বিভিন্ন প্যানেলের পক্ষ থেকেও একই দাবি করা হলেও প্রশাসন সে বিষয়ে কর্ণপাত করেনি।
ভিপি প্রার্থী বলেন, এখন এসে নির্বাচনের ঠিক আগ মুহূর্তে ক্লাস বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নির্বাচনের উৎসবমুখর পরিবেশকে ব্যাহত করবে। আমরা অবিলম্বে ক্লাস বন্ধের এই সিদ্ধান্ত বাতিলের আহ্বান জানাই।
ফরহাদের জিএস প্রার্থিতা চ্যালেঞ্জ করে রিট, শুনানি মঙ্গলবার
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট মনোনীত জিএস পদে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের এসএম ফরহাদের প্রার্থিতা চ্যালেঞ্জ জানিয়ে করা রিট শুনানি আগামী মঙ্গলবার (২ সেপ্টেম্বর) দিন ধার্য করেছেন হাইকোর্ট।
গতকাল রোববার বিচারপতি মো: হাবিবুল গণি ও এসকে তাহসিন আলীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ দিন ধার্য করেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন আইনজীবী মো: শিশির মনির। তিনি এ রিট আবেদনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে লড়বেন।
এদিন সকালে ফরহাদের জিএস প্রার্থিতা চ্যালেঞ্জ জানিয়ে রিট করেন বামজোট মনোনীত ‘অপরাজেয় ৭১, অদম্য ২৪’ প্যানেলের মুক্তিযুদ্ধ ও গণ-আন্দোলন বিষয়ক সম্পাদক বিএম ফাহমিদা আলম। তার পক্ষে রিটটি করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার জ্যোর্তিময় বড়ুয়া।
রিট আবেদনে বলা হয়, ৫ আগস্টের আগে ছাত্রলীগের কমিটিতে ছিলেন এসএম ফরহাদ। এরপরও তিনি কিভাবে ইসলামী ছাত্রশিবিরের প্যানেলে প্রার্থিতা পান; এমন প্রশ্ন তুলে চ্যালেঞ্জ করা হয়।