ডাম্পিং স্টেশন নেই, ময়লার ভাগাড়ে পরিণত জুড়ী নদী

Printed Edition
আবর্জনা ফেলে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে জুড়ী নদীর প্রবাহ: নয়া দিগন্ত
আবর্জনা ফেলে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে জুড়ী নদীর প্রবাহ: নয়া দিগন্ত

মৌলভীবাজার প্রতিনিধি

মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলা সদরে নির্দিষ্ট ডাম্পিং স্টেশন না থাকায় বাজারের ব্যবসায়ীরা যত্রতত্র ময়লা-আবর্জনা ফেলছেন। এতে বাজারের মাঝখান দিয়ে বয়ে যাওয়া শতবর্ষী জুড়ী নদী পরিণত হয়েছে ময়লার ভাগাড়ে। স্থানীয়রা দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন। পরিবেশবিদরা জানিয়েছেন, দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে নদীটি সম্পূর্ণ মৃতপ্রায় হয়ে পড়বে এবং স্থানীয় পরিবেশেও নেমে আসবে ভয়াবহ বিপর্যয়।

জানা যায়, উজানের পাহাড়-টিলা থেকে নেমে আসা স্রোতস্বিনী এ নদী কামিনিগঞ্জ ও ভবানিগঞ্জ বাজারের মাঝখান দিয়ে প্রবাহিত হয়ে গিয়ে মিলিত হয়েছে হাকালুকি হাওরে। বাজারের দুই পাশেই প্রতিনিয়ত ফেলা হচ্ছে পলিথিন, প্লাস্টিক, পচনশীল বর্জ্যসহ নানা আবর্জনা। এসব বর্জ্য নদী হয়ে হাকালুকিতে জমা হচ্ছে, যার মারাত্মক প্রভাব পড়ছে জলজ প্রাণী, উদ্ভিদ ও জীববৈচিত্র্যে।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে রাতের অন্ধকারে ব্যবসায়ীরা নদীতে ময়লা ফেলেন। ফলে নদীর প্রস্থ কমে আসছে, নষ্ট হচ্ছে এর স্বাভাবিক প্রবাহ। পরিবেশ সচেতন মহল বলছে, পরিস্থিতি সামাল দিতে দ্রুত ডাম্পিং স্টেশন স্থাপন জরুরি। কামিনিগঞ্জ বাজারের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী হাসান আহমদ বলেন, নদীটি এক সময় অনেক বড় ছিল। এখন বাজারের সব ময়লা নদীতে ফেলায় এটা প্রায় ভরাট হয়ে গেছে।

জুড়ী মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের ১০ম শ্রেণির শিক্ষার্থী রাইয়ান আহসান জানান, বিদ্যালয়ে আসা-যাওয়ার পথে প্রতিদিনই তীব্র দুর্গন্ধে হাঁটতে হয়। এটা আমাদের জন্য খুবই বিরক্তিকর। বাজারের প্রবীণ ব্যক্তি মানিক মিয়া বলেন, অসচেতনভাবে ময়লা ফেলার কারণে জুড়ী নদী ঐতিহ্য হারাচ্ছে। মানুষই নদীটিকে মেরে ফেলছে। ভবানিগঞ্জ বাজার সমিতির সভাপতি এম এ মহসীন মুজিব বলেন, ডাম্পিং স্টেশন স্থাপনের চেষ্টা চলছে। আইনশৃঙ্খলা সভায় জমি খেঁাঁজার সিদ্ধান্ত হয়েছে; কিন্তু জমি না পেলে ময়লা ব্যবস্থাপনার বিকল্প উপায় থাকবে না।

পরিবেশ আন্দোলনের নেতা খুরশেদ আলম বলেন, ডাম্পিং স্পট না থাকায় সেতুর পাশে জমে থাকা বর্জ্য স্রোতের সাথে হাকালুকিতে গিয়ে পড়ছে। হাওরের মাছ এসব বর্জ্য খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করছে। সাম্প্রতিক গবেষণায় মাছের পেটে মাইক্রো প্লাস্টিক পাওয়া গেছে, যা মানুষের শরীরেও প্রবেশ করে স্বাস্থ্যঝুঁঁঁকি বাড়াচ্ছে। উপজেলা ইউএনও বাবলু সূত্রধর বলেন, পৌরসভা থাকলে বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় সুবিধা হতো। তবুও আমরা স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সাথে কথা বলে চেষ্টা করছি। জমি পাওয়া গেলে ডাম্পিং স্টেশন করার উদ্যোগ নেয়া হবে।