পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে নেয়া প্রকল্পগুলোর মতো উপজেলা কমপ্লেক্স সম্প্রসারণ দ্বিতীয় পর্যায়ের প্রকল্পে খরচ বাড়ছে ৫৩১ কোটি টাকা। পৌনে ৬ বছরে যেখানে প্রকল্পটি শেষ করার কথা ছিল, সেটা এখন প্রায় ১০ বছরে উন্নীত হচ্ছে। আওয়ামী লীগ সরকারের নেয়া প্রকল্প শেষ করতে এখন বাড়তি খরচ গুনতে হচ্ছে। এক দফা মেয়াদ বাড়িয়ে ৭ বছর পর এসে নির্মাণকাজের ডিজাইন পরিবর্তন ও ৪৯টি লিফট যুক্ত করা হচ্ছে। নির্ধারিত মেয়াদে কাজ শেষ না করায় এখন নতুন রেট শিডিউলে প্রকল্পের বাস্তবায়ন খরচ ২ হাজার ১৮ কোটি টাকা থেকে বেড়ে ২ হাজার ৫৪৯ কোটি টাকায় উন্নীত হচ্ছে। আজ জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির সভায় (একনেক) প্রকল্পটির বাড়তি ব্যয় ও মেয়াদ বৃদ্ধির প্রস্তাব উপস্থাপন করা হচ্ছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে।
স্থানীয় সরকার বিভাগের সংশোধিত প্রস্তাবনা থেকে জানা গেছে, বাংলাদেশে বর্তমানে ৬৪টি জেলার আওতায় পুরনো ও নতুন মিলে ৪৯২টি উপজেলা রয়েছে। আশির দশকে এদেশে উপজেলা ব্যবস্থা চালু হয় এবং সেবাদানকারী বেশিরভাগ অধিদফতরের অফিস উপজেলা পর্যায়ে চালুর উদ্যোগ নেয়া হয়। সে পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৮২ সালে ৪০ হাজার বর্গফুটের উপজেলা কমপ্লেক্স ভবনের ডিজাইন অনুমোদিত হয়। কিন্তু অধিকাংশ উপজেলায় অফিস স্পেস অনুমোদিত ডিজাইনের চেয়ে অনেক কম। কিছু কিছু উপজেলা কমপ্লেক্সে অফিসের আকার ১০ হাজার বর্গফুট বা তার চেয়েও কম। ভবনের আয়তন চাহিদার তুলনায় কম হওয়াতে দাফতরিক কাজে ব্যাঘাত ঘটছে। তা ছাড়া উপজেলা পরিষদ আইন-২০১১ অনুসারে প্রতিটি উপজেলায় চেয়ারম্যান ও ২ জন ভাইস চেয়ারম্যানের পদ সৃষ্টি হয়। এ পরিপ্রেক্ষিতে সারা দেশে স্থাপত্য অধিদফতর কর্তৃক প্রণীত ও বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক অনুমোদিত নতুন ডিজাইনে উপজেলা কমপ্লেক্স নির্মাণ ও বিদ্যমান কমপ্লেক্স সম্প্রসারণের কাজ চলছে। প্রকল্পের আওতায় কাজগুলো হলো- ২৩৫টি উপজেলায় আবাসিক ও প্রশাসনিক ভবনের হলরুম নির্মাণ ও লিফট ক্রয়। ড্রেন নির্মাণ, জমি অধিগ্রহণ জমি উন্নয়ন।
ব্যয় বাড়ার কারণ: ব্যয় আবারো বাড়ার কারণ হিসেবে স্থানীয় সরকার বিভাগ বলছে, উপজেলা পরিষদের বিদ্যমান সম্প্রসারিত প্রশাসনিক ভবনে সব দফতরের স্থান সঙ্কুুলান না হওয়ায় নতুন নকশায় ৮তলাভিত্তি বিশিষ্ট ৬তলা ৪৯টি ভবন নির্মাণের সংস্থান করা। প্রস্তাবিত নতুন ভবনের ডিজাইনের আলোকে নির্মাণকাজ বাস্তবায়নে মেয়াদ বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। ৮তলাভিত্তি বিশিষ্ট ৬তলা ৪৯টি ভবনের জন্য লিফটের সংস্থানসহ রাজস্ব খাতের কয়েকটি অঙ্গের অন্তর্ভুক্তি করা হয়েছে। এ ছাড়া রেট শিডিউল পরিবর্তনের কারণে ভবন ও অন্যান্য পূর্ত কাজের নির্মাণ ব্যয় বাড়ছে।
এলজিইডি সূত্রে জানা গেছে, মাদারীপুর জেলার ডাসার ও সুনামগঞ্জ জেলার মধ্যনগর উপজেলা (প্রশাসনিক ভবন নির্মাণসহ অন্যান্য সুবিধাদি সৃষ্টি) এবং কক্সবাজারের ঈদগাঁও উপজেলা (ভূমি অধিগ্রহণ ও সীমানা প্রাচীর নির্মাণ) অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে নতুন করে।
পৌনে ৮ বছরে ৬১ শতাংশ অগ্রগতি : প্রকল্পে পৌনে ৬ বছরে শেষ করার কথা ছিল। কিন্তু এখন পৌনে ৮ বছরে অর্থাৎ ২০২৪ সালের এপ্রিল পর্যন্ত প্রকল্পটির ৬১ শতাংশ কাজ বাস্তবায়নে খরচ হয়েছে এক হাজার ২৩২ কোটি ৬৫ লাখ ৯৮ হাজার টাকা। এখানে আর্থিক অগ্রগতি ৫১.৬৬ শতাংশ।
আইএমইডির পর্যবেক্ষণ তথ্য : আইএমইডির তথ্য বলছে, প্রকল্পটি মূল পর্যায়ে ২ হাজার ১৮ কোটি টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে অক্টোবর ২০১৭ হতে জুন ২০২২ পর্যন্ত বাস্তবায়নের জন্য একনেকে ২০১৭ সালে অনুমোদিত হয়। পরবর্তীতে ১ম সংশোধনী হিসেবে ২ হাজার ৬৬ কোটি টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে অক্টোবর ২০১৭ হতে জুন ২০২৫ পর্যন্ত বাস্তবায়নকাল নির্ধারণ করা হয়। এতে মূল পর্যায়ের তুলনায় সময় অতিরিক্ত ৩ বছর এবং ব্যয় ২.৩৮ শতাংশ বাড়ে। প্রকল্পটির মার্চ ২০২৪ পর্যন্ত বাস্তব অগ্রগতি ৫০.৫১ শতাংশ। ফলে আবার মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাব।
আরডিপিপি অনুযায়ী প্রকল্পের আওতায় মোট ৬৯৯টি প্যাকেজের মধ্যে ৯টি পণ্য, ৬৮৯টি কার্য এবং ১টি সেবা কার্যক্রম রয়েছে। মার্চ ২০২৪ পর্যন্ত সকল পণ্য ক্রয় প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে এবং পর্যবেক্ষণকৃত ৮৮টি কার্য প্যাকেজের মধ্যে ৩০টির কাজ শেষ এবং ৫৮টির কাজ চলমান। উল্লিখিত, কার্য প্যাকেজের দরপত্র প্রক্রিয়াকরণে আরডিপিপিতে উল্লিখিত উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়নি। আরডিপিপির সংস্থানকৃত ব্যয় থেকে প্রাক্কলিত ব্যয় বেশি পাওয়া গেলেও যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদনক্রমে তা করা হয়েছে। সেবা ক্রয়ের ক্ষেত্রে কনসালটেন্সি খাতে সংস্থানকৃত (১৭৬.৪০ লাখ) অর্থের ৩০.৬৮ শতাংশ (৫৪.১৩ লাখ) ব্যয় হয়েছে। উল্লেখ্য, ক্রয় কার্যক্রমসমূহ আরডিপিপি অনুযায়ী নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে সম্পন্ন হয়নি। প্রকল্পটির ৮টি অর্থবছরের মধ্যে ৬টি ইতোমধ্যে অতিবাহিত হলেও এখন পর্যন্ত কোনো অডিট কার্যক্রম পরিচালিত হয়নি। অতিক্রান্ত সময় বিবেচনায় প্রকল্পটি অনেকাংশে পিছিয়ে আছে। এর মূল কারণসমূহ হচ্ছে- ডিপিপি অনুযায়ী অর্থছাড় না হওয়া, করোনা মহামারি, পুরনো স্থাপনা ও গাছ অপসারণে বিলম্ব, স্থান নির্ধারণজনিত জটিলতা, দুর্গম যোগাযোগ ব্যবস্থা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ইত্যাদি।
প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে উপজেলা কমপ্লেক্সে অতিরিক্ত অফিস স্পেসসহ আনুষঙ্গিক সুবিধা বাড়বে এবং সরকার প্রদত্ত সব সেবা এক জায়গা থেকে পাওয়া যাবে। ফলে সেবা দেয়ার কাজে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বৃদ্ধির মাধ্যমে জনগণকে সেবা প্রদান কার্যক্রম সহজতর হবে। এ ছাড়া উপজেলা পর্যায়ে আবাসিক সুবিধা সম্প্রসারণের মাধ্যমে সরকারি কর্মকর্তা/কর্মচারীদের কর্মস্পৃহা বাড়বে, কাজের অগ্রগতি এবং জনগণের কাক্সিক্ষত সেবার মান বাড়বে।
পরিকল্পনা কমিশনের কৃষি, খনি সম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগে সদস্য (সচিব) ড. মো: মোস্তাফিজুর রহমানের সাথে প্রকল্পের ব্যাপারে তার মুঠোফোনে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, রেট শিডিউল পরিবর্তনে ব্যয় বাড়ছে। আগেরগুলোর টেন্ডার হয়ে গেছে। সেগুলোর কাজ চলমান। নতুন করে কিছু যুক্ত হয়েছে, সেগুলোর টেন্ডার হবে। এগুলো এখন একটু আপগ্রেডেট হচ্ছে। অনেক সময় দেখা যায় যে, অল্প কিছু কাজ থেকে যায়, তা শেষ করা জরুরি। তখন নো কস্ট এক্সটেনশন হয়। তখন সেটা করা হয়। আশা করি এটা বর্ধিত মেয়াদে শেষ হবে।