- বৈদেশিক রিজার্ভ : ২৬.৭৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার (+৩০.২৬%)
- রেমিট্যান্স : ৩০.৩২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার (+২৬.৮৩%)
- রফতানি : ৪৩.৯৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার (+৭.৭২%)
- আমদানি : ৬৮.৩৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার (+২.৪৪%)
- মুদ্রাস্ফীতি : ৮.২৯% (পয়েন্ট-টু-পয়েন্ট)
- খেলাপি ঋণ : ২৪.১৩% (+১১৭ %)
- জিডিপি প্রবৃদ্ধি (পূর্বাভাস) : ৩.৯৭%
পতিত ফ্যাসিবাদের ব্যাংকের টাকা চুরি ও দুর্নীতির প্রভাব পড়ছে প্রবৃদ্ধিতে। এক বছরে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ১১৭ শতাংশ। আরেকটি বছর ঘোরার আগেই ব্যাংক আমানতের অর্ধেকই খেলাপি হয়ে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা সংশ্লিষ্টদের। এর মধ্যে কিছুটা সুখবর রয়েছে বৈদেশিক খাতে। একদিকে রফতানি ও রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়ছে যার প্রভাব পড়ছে লেনদেনের ভারসাম্য ও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে। অন্যদিকে মূল্যস্ফীতি কমতে শুরু করেছে। কিন্তু কাঠামোগত সংস্কার, দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ এবং বিনিয়োগবান্ধব নীতি ছাড়া এই সঙ্কট কাটানো কঠিন হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
গতকাল রোববার প্রকাশিত বাংলাদেশ ব্যাংকের সাপ্তাহিক অর্থনৈতিক সূচকে এ পরিস্থিতি দেখা যায়।
বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে চাপ : বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালের জুন শেষে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ২৬.১৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার (বিপিএম৬)। যা এক বছর আগের তুলনায় প্রায় ২৭ শতাংশ বেশি। গত কয়েক বছরে ধারাবাহিক পতনের পর রিজার্ভ স্থিতিশীল হয়ে আসছে।
ডলার সঙ্কট ও টাকা অবমূল্যায়ন : ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বরে আন্তঃব্যাংক বাজারে গড়ে ১২১.৭২ টাকা দিতে হচ্ছে এক ডলারের বিপরীতে। এক বছর আগে এই বিনিময় হার ছিল ১২০ টাকা। ডলারের এই মূল্যবৃদ্ধি আমদানির খরচ বাড়িয়ে দিয়েছে, একই সঙ্গে মুদ্রাস্ফীতির চাপ অব্যাহত রেখেছে। তবে ২৪ এর জুলাই বিপ্লবের আগে যেভাবে ডলারের দরে অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছিল তা এখন নেই।
প্রবাসী আয়ে রেকর্ড প্রবৃদ্ধি : ২০২৫ অর্থবছরে রেমিট্যান্স এসেছে ৩০.৩২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা আগের বছরের তুলনায় ২৬.৮৩% বেশি। সরকার হুন্ডি দমন ও শ্রমবাজার সম্প্রসারণে উদ্যোগ নেয়ার ফলে এ প্রবৃদ্ধি সম্ভব হয়েছে।
আমদানি-রফতানি : আমদানি ও রফতানি খাতে লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হলেও প্রবৃদ্ধি ইতিবাচক ধারায় ফিরেছে। ২০২৫ অর্থবছরে আমদানি হয়েছে- ৬৮.৩৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ২.৪৪% বেশি। একই সময়ে রফতানি হয়েছে ৪৩.৯৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, বৃদ্ধি পেয়েছে ৭,৭২%। আমদানি প্রবৃদ্ধি কম হওয়ার কারণে ঘাটতি কিছুটা সঙ্কুচিত হলেও মূলধনী যন্ত্রপাতি ও কাঁচামাল আমদানি কমে শিল্প প্রবৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
খেলাপি ঋণে রেকর্ড : ব্যাংক খাতের সঙ্কট বড় সঙ্কট হয়ে দেখা দিয়েছে খেলাপি ঋণে রেকর্ড সৃষ্টি। ২০২৫ সালের মার্চ শেষে মোট খেলাপি ঋণের হার দাঁড়িয়েছে ২৪.১৩%। এটি ১ বছর আগের তুলনায় ১১৭ শতাংশ বেশি। এ সময়ে নিট খেলাপি ঋণ দ্বিগুণেরও বেশি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৫%-এ। ফলে ব্যাংক খাতের ওপর আস্থা আরও কমছে।
মুদ্রাস্ফীতি ও জীবনযাত্রা : আগস্ট ২০২৫-এ জাতীয় ভোক্তা মূল্যসূচক ভিত্তিক মুদ্রাস্ফীতি দাঁড়িয়েছে ৯.৫৮% (১২ মাসের গড়) এবং ৮.২৯% (পয়েন্ট-টু-পয়েন্ট)। ফলে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে যেভাবে যাচ্ছিল তা কিছুটা নমনীয় হতে শুরু করেছে।
পুঁজিবাজারে উত্থান : ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূচক বেড়েছে ৭.৭১%। চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই) বেড়েছে ৯.১০%। তবে বিশ্লেষকদের মতে, মৌলভিত্তিক পরিবর্তন না থাকায় এই উত্থান অস্থায়ী হতে পারে।
কৃষি, এসএমই ও শিল্প খাত : কৃষি ঋণ বিতরণ জুলাই ২০২৫-এ দাঁড়িয়েছে মাত্র ২১৫৪ কোটি টাকা, যা বার্ষিক লক্ষ্যের ৫.৫২%। এসএমই খাতে অর্থবছর২৫-এর প্রথম প্রান্তিকে ঋণ বিতরণ হয়েছে ৪৪,২০২ কোটি টাকা, যা আগের প্রান্তিকের চেয়ে কম। শিল্পখাতে মেয়াদি ঋণও হ্রাস পেয়েছে। প্রবৃদ্ধি শ্লথগতি : ২০২৫ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি নামতে পারে ৩.৯৭%-এ, যা গত দুই দশকের মধ্যে সর্বনি¤œ। এর ফলে কর্মসংস্থান ও আয় বৈষম্য নিয়ে আরো সঙ্কট তৈরি হবে।