আহমদ মতিউর রহমান
বসনিয়ার লেখিকা মিহায়েলা সুমিচের একটি উপন্যাস এ বছর ইউরোপীয় ইউনিয়ন সাহিত্য পুরস্কারের জন্য মনোনীত হলে তিনি লাইম লাইটে চলে আসেন। তার লেখার ও বসনিয়ার সাহিত্যের ব্যাপারে অনেকের আগ্রহ সৃষ্টি হয়। উপন্যাসটির নাম ‘দ্য উলফ ম্যান’। ইউরোপের মুসলিম দেশ বসনিয়া-হার্জেগোভিনা ও সে দেশের সাহিত্যের বিষয়ে বাংলাদেশসহ মুসলিম বিশে^র দেশগুলোর লেখক ও পাঠকদের আগ্রহ রয়েছে। ১৯৯২-৯৫ সালে বসনিয়ায় সার্ব বাহিনীর বর্বরতার চিত্র সাহিত্যে চলচ্চিত্রে উঠে এসেছে। সে সময় সারাজেভো, স্রেব্রেনিৎসা ও বানিয়া লুকাসহ সারা বসনিয়ায় এক লাখেরও বেশি মুসলিম হত্যার শিকার হন। মিহায়েলা সুমিচ ১৯৯৮ সালে সেই বানিয়া লুকায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ক্যাথলিক স্কুল সেন্টার ‘ব্লাজেনি ইভান মের্জ’-এর জেনারেল জিমনেসিয়াম থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। ২০১২ সালে তিনি মেক্সিকান এলইউএফ ম্যাগাজিনের জন্য কবিতা ও কলাম লিখেছিলেন। তিনি তার কবিতা প্রকাশ করেছেন, পাশাপাশি ইংরেজি, স্প্যানিশ, পর্তুগিজ ও ক্রোয়েশিয়ান ভাষায় অনুবাদ করেছেন বেশ কয়েকটি পোর্টালে। তিনি বানিয়া লুকায় ‘ইম্পেরেটিভ’ ও পানচেভোতে ‘রুকোপিসি’ সাহিত্য উৎসবে পাঠকদের সামনে নিজেকে উপস্থাপন করেছেন। ‘এ ফিউ লিটল স্ট্যাবস’ কবিতার সঙ্কলন তার প্রথম বই। ‘আ ফিউ লিটল স্ট্যাবস’ খুব ছোট বই। শিরোনামের বাক্যাংশটি ফ্রিদা কাহলোর একই নামের চিত্রকর্মের স্পষ্ট ইঙ্গিত। ফ্রিদা সংবাদপত্রের নিবন্ধ দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন যেখানে একজন খুনি তার স্ত্রীর হত্যার ওপর মন্তব্য করেছিলেন, যাকে তিনি একাধিকবার ছুরি দিয়ে আঘাত করেন, আর বলেছিলেন : ‘এটি কেবল কয়েকটি ছোট ছুরিকাঘাত ছিল।’ কবি মিহায়েলা এই বাক্যটিকে প্রতীকবাদে পরিণত করেছেন এবং বইয়ের শিরোনামে এটি প্রতিস্থাপন করেছেন।
মিহায়েলা সুমিচকে ‘দ্য উলফ ম্যান’ (বসনীয় নাম ‘কভজেক ভুক’) বইয়ের জন্য ইইউ পুরস্কারের জন্য নির্বাচিত করা হয়েছে। মিহায়েলা লেখিকা ও অনুবাদক; যার কবিতার পটভূমি রয়েছে। এটি তার প্রথম উপন্যাস। এর মাধ্যমে তিনি তার প্রতিভাকে একটি নতুন সাহিত্যিকরূপে তুলে ধরেছেন এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন সাহিত্য পুরস্কারের জন্য নির্বাচিত হন। ‘দ্য উলফ ম্যান’ মানব প্রকৃতির অন্ধকারকে প্রায় সুন্দরভাবে চিত্রিত করেছে, অন্বেষণ করেছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন সাহিত্য পুরস্কার ২০০৯ সালে চালু হওয়া একটি বার্ষিক উদ্যোগ যা সেরা ইউরোপীয় উদীয়মান লেখকদের স্বীকৃতি প্রদান করে এবং সৃজনশীল ইউরোপ প্রোগ্রামে অংশগ্রহণকারী দেশগুলোতে সাহিত্যের ভাষাগত বৈচিত্র্য ও শ্রেষ্ঠত্ব দান করে। ফাইনাল সিলেকশন রাউন্ডে মিহায়েলার বইসহ মোট ১৩টি বই স্থান পায়, যা ফাইনালিস্ট পরিচিতি অর্জন করে। তবে বিজয়ী হন ইতালির নিকোলিটা ভার্না।
হত্যা, মৃত্যু ও বেদনা মিহায়েলার কবিতায় উঠে এসেছে। তার কবিতার যে নারীদের কথা বলা হয়েছে, যাদের মধ্যে কয়েকজনকে হত্যা করা হয়েছে। বেদনাদায়ক সাক্ষ্যের মাধ্যমে তারই কিছু প্রকাশ করা হয়েছে সহযোগী শিল্পী ফ্রিদা কাহলোর ক্ষেত্রে চিত্রকলায় এবং মিহায়েলার ক্ষেত্রে কবিতায়। তারা উভয়েই সহিংসতায় পূর্ণ বাস্তবতা জানেন এবং চিনতে পারেন এবং এর সাক্ষ্য দিতে দ্বিধা করেন না। সমালোচক তানজা স্টুপার ত্রিফুনোভিচ তার বই সম্পর্কে এসব কথা বলেন।
আর ‘উলফ ম্যান’ উপন্যাসে বনের ধারে অবস্থিত প্রত্যন্ত গ্রাম সেলভান্তোতের কাহিনী বর্ণিত। ছায়া অন্ধকার গোপন রহস্য লুকিয়ে রাখে এবং নেকড়ে-মানবের ফিসফিসানি মুখে মুখে চলে আসে। যখন দুর্ভাগ্য আসে এবং প্রাণহীন দেহ দেখা দিতে শুরু করে, তখন ভয় ও লোককাহিনী একে অপরের সাথে মিশে যায়; কিন্তু কিংবদন্তির আড়ালে লুকিয়ে থাকে আরো ভয়ঙ্কর সত্য। বহু বছর আগে স্থানীয় স্কুল শিক্ষক ডন আলিরিও এমন কিছু প্রত্যক্ষ করেছিলেন; যা তাকে চিরতরে বদলে দিয়েছিল। এখন যখন সেলভান্তোর রাজনৈতিক অভিজাতরা তাদের ক্ষমতার খেলায় মেতে ওঠে এবং গির্জা তাদের পাপগুলোকে কবর দেয়, তখন তিনি এগারো বছর বয়সী সাবিনা অর্ডোনেজের নিখোঁজ রাতের স্মৃতিতে তাড়িত থাকেন। সেলভান্তোর হৃদয়ে কী লুকিয়ে আছে? নেকড়ে-মানব কি একজন দানব- নাকি গ্রামের সবচেয়ে অন্ধকার সত্যের প্রতিফলন? তার প্রকাশ আছে বইতে। বইটি গত বছর প্রকাশিত হয়।



