সরকারের মাঠ প্রশাসনের প্রতিনিধি উপজেলা নির্বাহী অফিসারদের (ইউএনও) সাথে আজ বুধবার অনলাইন সভায় বসছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোটে শতভাগ সততা, নিরপেক্ষতা ও নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি একগুচ্ছ নির্দেশনা দিতে এই সভার আয়োজন করা হয়েছে। বেলা ১১টায় শুরু হতে যাওয়া এ সভায় মন্ত্রিপরিষদ সচিব ড. শেখ আব্দুর রশীদ এতে সভাপতিত্ব করবেন। মন্ত্রিপরিষদ সূত্র জানায়, প্রধান উপদেষ্টার সাথে মাঠ প্রশাসনের এই সভার সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। বৈঠকের প্রস্তুতির মহড়াও গতকাল মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৯টায় অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৈঠকে অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে গত ৭ ডিসেম্বর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের চিঠি দেয় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। ওই চিঠিতে বলা হয়, আগামী ১০ ডিসেম্বর বেলা ১১টায় ভিডিও কনফারেন্স সিস্টেমে প্রধান উপদেষ্টার সাথে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হবে। ওই সভায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের পাশাপাশি কমিশনার ও জেলা প্রশাসকরাও অংশগ্রহণ করবেন। ওই সভায় কমিশনাররা কমিশনার কার্যালয় থেকে, জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা তাদের নিজ নিজ কার্যালয় থেকে এবং যে সব উপজেলায় ভিডিও কনফারেন্স সিস্টেম কার্যকর নয় সেসব উপজেলার নির্বাহী অফিসাররা সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে উপস্থিত থেকে সভায় অংশগ্রহণ করবেন।
মন্ত্রপরিষদ সূত্র জানায়, সরকারের মাঠ প্রশাসনের প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করেন উপজেলা নির্বাহী অফিসাররা। নাগরিকদের সেবা নিশ্চিত করাসহ জাতীয় নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন তারা। নির্বাচনের সহকারী রিটার্নিং অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করায় নিরপেক্ষ নির্বাচন অনেকটা তাদের ওপর নির্ভর করে। এজন্য মাঠ প্রশাসনের এই গুরুত্বপূর্ণ কর্তাব্যক্তিদের নির্দেশনা দিবেন প্রধান উপদেষ্টা। সেই সাথে তাদের একগুচ্ছ নির্দেশনা দেয়া হবে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের পক্ষ থেকে। এসব নির্দেশনা ইতোমধ্যে প্রস্তুত করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।
এর আগে গত ১৭ নভেম্বর প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে পদায়ন করা ৫০ জেলা প্রশাসকসহ ৬৪ জেলার প্রশাসকদের নির্দেশনা দেন প্রধান উপদেষ্টা। জেলা প্রশাসকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আগামী নির্বাচন শুধু পাঁচ বছরের সরকার গঠনের একটি নির্বাচন নয়; এটি সম্পূর্ণ ভিন্নধর্মী একটি নির্বাচন। জাতি বহু প্রহসনের নির্বাচন দেখেছে, সেই স্মৃতি ছাপিয়ে যেতে আমাদের ভূমিকা রাখতে হবে। এটা গণ-অভ্যুত্থান পরবর্তী নির্বাচন; এই নির্বাচন গণ-অভ্যুত্থানকে পূর্ণতা দেয়ার নির্বাচন। এই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে জাতির জন্য নির্ধারিত হবে শতাব্দীর গতিপথ।
এই নির্বাচনে জেলা প্রশাসকদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, কোনোভাবেই ব্যর্থ হওয়ার সুযোগ নেই। এই নির্বাচনের মাধ্যমে জাতি নবজন্ম লাভ করবে এবং জেলা প্রশাসকেরা থাকবেন ধাত্রীর ভূমিকায়। মনে রাখতে হবে বিপুলসংখ্যক তরুণ ও নারী ভোটার রয়েছেন, যারা ভোট দেয়ার উপযুক্ত হলেও গত ১৫ বছর ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেননি। আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকেরা ইতোমধ্যে আগামী নির্বাচনের বিষয়ে গভীর উৎসাহ দেখাচ্ছেন। তারা দেখতে চান কেমন নির্বাচন হচ্ছে। এটা নিয়ে তাদের গভীর আগ্রহ। এই নির্বাচনকে সার্থক করা গণ-অভ্যুত্থানের প্রতি আমাদের প্রতিশ্রুতি। এই নির্বাচন একটি বিরাট অভিযান, এ অভিযানে আমাদের জিততেই হবে। স্বাধীন জাতি হিসেবে টিকে থাকতে হলে এ লড়াইয়ে আমাদের জিততেই হবে।
এর আগে গত ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত জেলা প্রশাসক সম্মেলন ২০২৫-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টা জেলা প্রশাসক ও বিভাগীয় কমিশনারদের ১২ দফা নির্দেশনা প্রদান করেন।
নির্দেশনাগুলো হলো- স্তূতিবাক্য পরিহারপূর্বক মূল কাজে মনোনিবেশ, সমন্বয়জনিত সমস্যা থাকলে তা সমাধানপূর্বক বাস্তবায়ন, নারী, শিশু ও সংখ্যালঘুদের অধিকার নিশ্চিতকরণ, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণসহ সব ভালো কাজে প্রতিযোগিতা, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়নসহ জনগণের সেবা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ, নিজস্ব সৃজনশীলতা দিয়ে নিজেকে প্রকাশ, দুর্নীতি ছাড়াই জনগণের জন্মনিবন্ধন, পাসপোর্ট, এনআইডি সেবাপ্রাপ্তি নিশ্চিতকরণ, পাসপোর্টের ক্ষেত্রে পুলিশ ভেরিফিকেশন রহিতকরণের বিষয়ে জনগণের মধ্যে প্রচার, জমি রেজিস্ট্রি, অনলাইনে খাজনা দেয়ার সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে জনগণকে সেবাগুলো সহজে দেয়ার ব্যবস্থা গ্রহণ, ডিজিটালাইজড সেবাগুলো অফলাইনের পরিবর্তে অনলাইনে প্রদানের ব্যবস্থা, ভয়ভীতির ঊর্ধ্বে থেকে আইন মেনে কর্মসম্পাদন, প্রাথমিক শিক্ষার উন্নতির জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ।



