ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞ বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মেহেদী আহমেদ আনসারী বলেন, ৫.৭ মাত্রার যে কয়টা ভবনের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বা দেবে গেছে সেটা যদি ৭ মাত্রার বা আরো বেশি মাত্রার হয় তাহলে আরো অনেক বেশি ভবনের ক্ষয়ক্ষতি হবে, দেবে যাবে। আমাদের একটি প্রেডিকশন আছে যে ঢাকার অদূরে ১০০ কিলোমিটারের মধ্যে যদি ৭ মাত্রার ভূমিকম্প হয় তাহলে দুই থেকে তিন লাখ মানুষ হতাহত হবে। ঢাকার প্রায় ৩০ শতাংশ মানুষ অথবা এক তৃতীয়াংশ ভবন পড়ে যেতে পারে। এগুলোকে প্রতিরোধ করার জন্য ভবন চেকিংয়ের ব্যাপার আছে। দৈনিক নয়া দিগন্তের সাথে সাক্ষাৎকারে তিনি গতকাল এ কথা বলেন।
প্রশ্ন: আপনি যে ভূমি চেকিংয়ের কথা বললেন, সেটি কিভাবে হবে?
ড. মেহেদী : আমরা যদি মানুষকে বলি ভবনগুলোকে চেকিং করতে হবে। ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলো নির্দিষ্ট করে আমরা যদি মানুষকে বলি এই বিল্ডিংগুলো ঝুঁকিপূর্ণ এই বিল্ডিংগুলো ইমিডিয়েট রিপেয়ার করতে হবে। এইগুলো চেকিং করে আমরা কালার সার্টিফিকেশন করতে পারি। একটি গ্রিণ কালার। এই কালার মার্ক করা হলে বুঝতে হবে এই বিল্ডিংগুলোতে কোনো ঝুঁকি নেই, এগুলো নিরাপদ। এগুলো পুরোপুরি বিল্ডিং মেনে করা হয়েছে। দ্বিতীয়ত: হচ্ছে ইয়েলো কালার বিল্ডিং, এগুলো অরেঞ্জ কালারও বলা যেতে পারে। এগুলোতে কম-বেশি ঝুঁকি রয়েছে। এই বিল্ডিংগুলো আমাদেরকে নিরাপদ করতে হবে। আরেক ধরনের বিল্ডিংয়ের কালার হবে রেড। এই রেড কালারের বিল্ডিংগুলোকে যথেষ্ট পরিমাণ টাকা খরচ করে ইমিডিয়েটলি ইভাকুয়েট করতে হবে মজবুতিকরণ করার জন্য। কালার কোড দিয়ে এই ভবনগুলোকে চিহ্নিত করতে হবে।
নয়া দিগন্ত : এভাবে আর কোনো দেশে কি ভবন চেকিং হয়েছে?
ড. মেহেদী : আমেরিকাতে, জাপানে এমনকি ভারতেও অনিরাপদ ও নিরাপদ এবং মাঝামাঝি ধরনের ভবনগুলোকে কালারকোড দেয়া হয়েছে। এই প্রসিডিউরগুলো আমাদের দেশে রানাপ্লাজাসহ বিভিন্ন গার্মেন্টে করা হয়েছে।
আমি বলতে চাচ্ছি, অনিরাপদ ভবনগুলোকে নিরাপদ করার প্রস্তুতি অর্থাৎ মজবুতিকরণের প্রস্তুতি আমাদের আছে, এখন এগুলো এক্সিকিউট করা দরকার। রানাপ্লাজা দুর্ঘটনার পর বাংলাদেশে ৫০টির মতো কোম্পানিকে মজবুতিকরণের প্রশিক্ষণ আমরা দিয়েছি। আরো প্রফেশনাল ইঞ্জিনিয়ার ও প্রফেশনাল আর্কিটেক্ট ও প্রফেশনাল প্ল্যানারদের প্রশিক্ষণ শুরু করতে হবে। আমাদের মধ্যে প্রফেশনালিজমটা একেবারেই নেই। আমাদের এখানে আইইবির (ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউট) মেম্বারশিপ নিয়ে আমরা মনে করি আমরা অনেক কিছু জেনে গেছি। কিন্তু আইইবির মেম্বারশিপ নিয়েই শেষ হয়ে গেল না, রেগুলার বেসিসে যে বিল্ডিংকোড রয়েছে এবং বিল্ডিংকোডের মধ্যে যে চেঞ্জ আনা হয়েছে সেগুলোকে শর্টকোর্সের মাধ্যমে ইঞ্জিনিয়ারদের ট্রেইনডআপ করবে মানুষের মধ্যে জানানো।
প্রশ্ন : ঝুঁকিপূর্ণ ভবন চিহ্নিত করতে কোনো প্রাতিষ্ঠানিক দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থা রয়েছে কি?
ড. মেহেদী : এখনো পর্যন্ত সেভাবে নেই। তবে- এখন এটার জন্য ন্যাশনাল লেভেলের (জাতীয় পর্যায়ে) একটি ইনস্টিটিউট করার খুবই প্রয়োজন। এটা শুধু আমাদের ইউনিভার্সিটিগুলো করতে পারবে না। এটার জন্য বিশ্বব্যাংক ২০১৫ সালে রাজউককে অর্থায়ন করে। তবে রাজউক থেকে এটা বের করে এনে আলাদা ইনস্টিটিউট করার পদক্ষেপ সরকারের আছে। কিন্তু এটা স্থবির হয়ে আছে। রাজউকের বাইরে গিয়ে একটি ১০তলা বিল্ডিং তৈরি করা হচ্ছে ৮০ কোটি টাকায়। এগুলোকে আমরা এই মুহূর্তে ইনস্টিটিউশনালাইজ করতে পারি, সিজিএসের মতো একটি প্রতিষ্ঠান তৈরি করতে পারি। এটা করতে পারলে আমাদের যে ইনস্টিটিউটগুলো আছে এর বাইরেও কাজ করা যায়। কিন্তু একই সাথে প্রফেশনাল ইঞ্জিনিয়ারদের টেনিংগুলো চালু করতে হবে। এটা করা আমাদের জন্য এখন হাইটাইম (উপযুক্ত সময়)। কারণ বড় ভূমিকম্প হওয়ার পর ১০০ বছর পার হয়ে গেছে। এগুলো আমাদের করতে হবে, আমাদের নিজেদের নিরাপত্তার জন্য, নিরাপদ নগরী গড়ে তোলার জন্য।



