দেশের সম্ভাবনাময় খাতে বিনিয়োগের আহ্বান

সিলেটে পর্তুগিজ রাজপরিবারের সাথে মতবিনিময়

আবদুল কাদের তাপাদার, সিলেট ব্যুরো
Printed Edition

পর্তুগিজ রাজপরিবারের সদস্যদের সাথে সিলেটের ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষের এক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

বৃহস্পতিবার রাতে নগরীর মিরবক্সটুলার হোটেল রয়েল মার্কে আয়োজিত এ মতবিনিময় সভায় বক্তারা রাজপরিবারের মাধ্যমে সিলেটসহ দেশের সম্ভাবনাময় খাতে বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন।

মতবিনিময়ে সিলেটের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী, সমাজকর্মী ও শিক্ষকসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ উপস্থিত ছিলেন। সভায় বারাকা পাওয়ার লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফাহিম আহমেদ চৌধুরী সিলেটের ব্যবসাবাণিজ্যের সম্ভাবনা নিয়ে প্রেজেন্টেশন উপস্থাপন করেন।

তিনি সিলেট অঞ্চলে বিনিয়োগের সম্ভাবনাময় খাতগুলো তুলে ধরে রাজপরিবারের মাধ্যমে পর্তুগিজ ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানান।

সভায় শিশুশ্রমের ওপর প্রেজেন্টেশন উপস্থাপন করেন আকবেটের ইডি আসাদুজ্জামান সায়েম আহমদ।

তিনি শিশুশিক্ষা ও শিশুশ্রম নিরসনে আকবেটের অবদান তুলে ধরেন।

বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের পরিচালক রাহাত শামস এই অঞ্চলের খেলাধুলার সম্ভাবনা ও তরুণদের নানা উদ্যোগের গল্প তুলে ধরেন।

অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পর্তুগালের ব্রাগানজা রাজপরিবারের সদস্য ডিউক অব ব্রাগানজা ডোম ডুয়ার্তে পিও, তার সহধর্মিণী ইসাবেল ইনেস ডি কাস্ত্রো সি. ডি এবং ছেলে আফোনসো ডি সান্তা মারিয়া ডি ব্রাগানজা।

এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন- স্যার আসিফ নিসার বাজওয়া, স্যার শেখ আলিউর রহমান ওবিই, দি সিলেট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সাবেক সভাপতি খন্দকার সিপার আহমেদ, এবিএম গ্রুপের চেয়ারম্যান আতাউল করিম সেলিম, মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্সের সহসভাপতি ফেরদৌস আলম, পরিচালক মাহবুব আহমেদ, সিলেট সাইবার ট্রাইব্যুনালের পিপি অ্যাডভোকেট মো: এজাজ উদ্দিন, বিশিষ্ট আইনজীবী মাসরুর চৌধুরী শওকত, প্রাইভেট ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার অ্যাসোসিয়েশন সিলেটের সভাপতি ডা: নূরুল হাসান, সিলেট সিটি করপোরেশন কন্ট্রাক্টর ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মাসুম ইফতিখার রসুল সিহাব, হোটেল নূরজাহান গ্র্যান্ডের এমডি শাফি মোহাম্মদ নাহিয়ান, এম. আহমদ টি কোম্পানির স্বত্বাধিকারী সাবেত নাঈম চৌধুরী, রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির কোষাধ্যক্ষ আমিনুল ইসলাম, বিশিষ্ট চিকিৎসক ডা: জাকির হোসেন তাপু, কমলা ভাণ্ডারের স্বত্বাধিকারী নেহার কুমার রায়, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী লিবন আহমেদ ও আহমেদ রাজিব, রোটারিয়ান মাসুমা চৌধুরী, ইউরো কিডস স্কুলের সেন্টার হেড রুশিনা চৌধুরী প্রমুখ।

অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করেন রুহেনা সুলতানা এবং রাজপরিবারের জীবনী তুলে ধরেন জিনাত মুস্তাফা।

এর আগে বৃহস্পতিবার বিকেলে নগরীর সুবিদবাজারে রাইজ স্কুল পরিদর্শন করেন পর্তুগালের ব্রাগানজা রাজপরিবারের সদস্যরা। এ উপলক্ষে স্কুল প্রাঙ্গণে আয়োজন করা হয় ‘রয়্যাল ভিজিট অ্যান্ড ফার্স্ট টার্ম সেলিব্রেশন’ শীর্ষক বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠান।

অনুষ্ঠানে সিলেটের ঐতিহ্যবাহী নৃত্য, গানসহ নানা সাংস্কৃতিক পরিবেশনা তুলে ধরা হয়। রাজপরিবারের সদস্যরা এসব উপস্থাপনা মুগ্ধ হয়ে দেখেন।

তাদের আগমনে স্কুল প্রাঙ্গণ মুখর হয়ে ওঠে। রাজপরিবারের সদস্যরা বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশে ঘুরতে এসেছি। এই দেশের আবহাওয়া, প্রকৃতি ও মানুষ আমাদের মুগ্ধ করছে। কোমলমতি শিক্ষার্থীরা যে ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক আয়োজন উপস্থাপন করেছে, তা আমাদের অভিভূত করেছে। এই স্কুলের পাঠদান পদ্ধতি অত্যন্ত কার্যকর ও সমৃদ্ধ।’

‘রয়্যাল ভিজিট অ্যান্ড ফার্স্ট টার্ম সেলিব্রেশনে’ বিশেষভাবে সম্মান জানানো হয় লন্ডন টি এস্টেটের দুই উদ্যোক্তা স্যার শেখ আলিউর রহমান ও স্যার আসিফ নিসার বাজওয়াকে।

রাইজ স্কুলের পরিচালক ফাহিম আহমেদ চৌধুরী, প্রি-স্কুল বিভাগের প্রধান রুশিনা চৌধুরী, রাইজ অ্যাডমিন জিনাত মুস্তাফা, শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

শুরুতেই রাইজ স্কুলের শিক্ষার্থীরা রাজপরিবারের অতিথিদের ফুল দিয়ে অভ্যর্থনা জানায়। রঙিন ব্যানার, পতাকা ও শিশুদের হাসিতে মুখর হয়ে ওঠে পুরো স্কুল প্রাঙ্গণ। বক্তারা বলেন, ‘আজকের দিনটি রাইজ স্কুল পরিবারের জন্য এক গৌরবের দিন। ব্রাগানজা রাজপরিবারের মানবতা, সমতা ও শিক্ষার প্রতি অবদান বিশ্বজুড়ে অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে।’

রাইজ স্কুলের পরিচালক ফাহিম আহমেদ চৌধুরী বলেন, ‘এই সফর আমাদের শিক্ষার্থীদের বড় স্বপ্ন দেখতে, মহৎভাবে বাঁচতে এবং জীবনের প্রতিটি কাজে মানবতার মূল্যবোধ ধারণ করতে অনুপ্রাণিত করবে।’

প্রসঙ্গত, ডিউক অব ব্রাগানজা ডোম ডুয়ার্তে পিও ‘হাউজ অব ব্রাগানজা’র বর্তমান প্রধান।

তিনি ইউরোপীয় রাজপরিবারের নেটওয়ার্কে ব্যাপকভাবে স্বীকৃত এবং পর্তুগালের প্রতিনিধিত্ব করেন।

তার স্ত্রী ইসাবেল ইনেস ডি কাস্ত্রো কার্ভেলো ডি হেরেডিয়া, ডাচেস অব ব্রাগানজা, একজন ব্যবসায়ী এবং পর্তুগিজ অভিজাত পরিবারের সদস্য। তিনি ১৯৯৫ সালে ডোম ডুয়ার্তে পিওকে বিয়ে করেন, যা ছিল ১৮৮৬ সালের পর পর্তুগালে অনুষ্ঠিত প্রথম রাজকীয় বিয়ে।

তিনি বর্তমানে বেশ কয়েকটি পর্তুগিজ দাতব্য সংস্থা ও অলাভজনক ফাউন্ডেশনের পৃষ্ঠপোষকতা করছেন।

আর বেইরার রাজপুত্র আফোনসো দে সান্তা মারিয়া দে ব্রাগানজা ডোম ডুয়ার্তে পিওর জ্যেষ্ঠ পুত্র এবং পর্তুগিজ সিংহাসনের দাবিদার উত্তরাধিকারী।