দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে আজ ১১ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে বহুল প্রত্যাশিত জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ ও ২১টি হল সংসদ নির্বাচন। এ দিন সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। টানা ৩৩ বছর পর এ নির্বাচনের আয়োজন হওয়ায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিরাজ করছে উৎসবমুখর পরিবেশ। নির্বাচন কমিশনের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, এবার জাকসুর ২৫টি পদে চূড়ান্ত প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ১৭৮ জন আর হল সংসদসহ মোট প্রার্থী ৪৭৫ জন। নির্বাচনে মোট ভোটার ১১ হাজার ৮৯৭ জন। সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন সম্পন্ন করতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখাসহ নানা পদক্ষেপ নিয়েছে প্রশাসন। নির্বাচনের মধ্য দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে গণতান্ত্রিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনার পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ে জাকসু কার্র্যকর ভূমিকা পালন করবে বলে প্রত্যাশা সবার।
শীর্ষপদে এগিয়ে আছেন যারা : জাকসু নির্বাচনে কেন্দ্রীয় সংসদে মোট আটটি প্যানেল এবং স্বতন্ত্রভাবে লড়ছেন ১৭৭ প্রার্থী। নির্বাচনে একক আধিপত্য বিস্তার করতে পারবেন না কোনো প্রার্থী বলে মনে করছেন ভোটাররা। জাকসুতে সবথেকে বেশি আলোচনায় রয়েছেন চার ভিপি (সহসভাপতি) প্রার্থী। জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেলের শেখ সাদী, ছাত্রশিবির সমর্থিত প্যানেল ‘সমন্বিত শিক্ষাথী জোট’ থেকে আরিফউল্লাহ, বাসছাস সমর্থিত শিক্ষার্থী ঐক্য ফোরাম প্যানেলের প্রার্থী আরিফুজ্জামান উজ্জ্বল, ‘স্বতন্ত্র শিক্ষা সম্মিলন’ প্যানেলের আব্দুর রশিদ জিতু।
ভিপি প্রার্থী শেখ সাদী জাবির ৪৮ ব্যাচের বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী। তিনি ছাত্রদলের মীর মশাররফ হোসেন হলের সভাপতি। জুলাই আন্দোলনে তিনিও জাবি ক্যাম্পাসে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। জুলাই আন্দোলনের ভূমিকার কারণে দলীয় পরিচয়ের বাইরেও তার ব্যাপক পরিচিতি রয়েছে। ‘সমন্বিত শিক্ষাথী জোট’-এর ভিপি প্রার্থী আরিফুউল্লাহ। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগের ৪৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থী এবং বিশ্ববিদ্যালয় শাখা শিবিরের সদস্য। তিনি চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থানে সামনে থেকে আন্দোলন করেছেন। গত ৩৫ বছর শিবির প্রকাশ্যে জাবিতে রাজনীতি করতে না পারলেও জাকসু নির্বাচনে তাদের সমর্থিত প্যানেল অন্যান্য প্যানেল থেকে এগিয়ে আছে বলে জানা গেছে। শিবির প্রকাশ্যে আসার পর গত এক বছরে তাদের অভ্যন্তরীণকোন্দল দেখা যায়নি। কল্যাণমূলক কাজের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সাথে সম্পর্ক বৃদ্ধি ভোট টানতে কৌশলগত প্রভাব ফেলবে বলে অনেকের ধারণা। গত ১ বছরে বিতর্কিত কোনো কাজ করতেও দেখা যায়নি সংগঠনটির নেতাকর্মীদের। এ ছাড়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে আগের তুলনায় ধর্মীয় অনুভূতি বৃদ্ধি অনেকটা স্বস্তি দেবে শিবিরকে। দলের বাইরে বিভিন্ন নির্দলীয় ও সামাজিক সংগঠনের ভোট টানতে তাদের প্রতিনিধিদের প্যানেলে রাখা ভোটের রাজনীতিতে এগিয়ে রেখেছে শিবিরকে।
‘শিক্ষার্থী ঐক্য ফোরাম’ প্যানেলের ভিপি প্রার্র্থী আরিফুজ্জামান উজ্জ্বল মার্কেটিং বিভাগের ৪৭ ব্যাচের শিক্ষার্থী। বিগত জুলাই আন্দোলনে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। তিনি জাবি সাংবাদিক সমিতির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। সেই সাথে আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী সমন্বয়ক ও আন্দোলনকারীদের তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করেন। কখনো সামনে থেকে এবং কখনো পর্দার আড়ালে থেকে আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন তিনি। ৫ আগস্ট-পরবর্তী সময়ে ক্যাম্পাসে যৌক্তিক আন্দোলনগুলোতে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন এবং শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ে সর্বদা সোচ্চার ছিলেন। পাশাপাশি তিনি গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ জাবি শাখার আহ্বায়কের দায়িত্ব পালন করছেন।
‘স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী সম্মিলন’ প্যানেলের ভিপি প্রার্থী আব্দুর রশিদ জিত বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনামূলক সাহিত্য ও সংস্কৃতি ইনস্টিটিউটের ৪৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থী। তিনি গণ-অভ্যুত্থানে জাবি ক্যাম্পাসে সামনের সারিতে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। এ ছাড়াও তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক ছিলেন। গণ-অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে তিনি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানার থেকে বেরিয়ে আসেন। পরবর্তী সময়ে তিনিসহ আরো কয়েকজন সমন্বয়ক মিলে ‘গণ-অভ্যুত্থান রক্ষা আন্দোলন’ নামে একটি প্ল্যাটফর্ম গড়ে তোলেন।
বুথ এবং ভোট গ্রহণ পদ্ধতি : বিশ্ববিদ্যালয়ে ২১টি আবাসিক হল ভোটকেন্দ্র এবং ২১টি ভোটকেন্দ্রে বুথ থাকবে ২২৪টি। ২১ জন রিটার্নিং কর্মকর্তা, ৬৭ জন পোলিং কর্মকর্তা ও ৬৭ জন সহকারী পোলিং কর্মকর্তা দায়িত্ব পালন করবেন। নির্বাচনে ওএমআর ব্যালট পদ্ধতিতে ভোট গ্রহণ করা হবে। তবে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের জন্য প্রচলিত ‘ব্রেল’ পদ্ধতির ব্যালট থাকবে না। দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ভোটাররা নির্বাচনী কর্মকর্তার সহায়তায় ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। নির্বাচনী ব্যালট পেপার ছাপা হয়েছে ভোট গ্রহণের দিন আজ সকালে। জাকসুর জন্য তিন পৃষ্ঠার এবং দু’টি হলের জন্য দুই পৃষ্ঠার এবং বাকি হলগুলোর জন্য এক পাতার ব্যালট পেপার ছাপানো হয়েছে।
জাকসু নির্বাচন কমিশনের সদস্য অধ্যাপক মাফরুহী সাত্তার বলেন, একজন ভোটার কোনো কারণে ব্যালট পেপারে ভুল করলে তা সাথে সাথে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের জানালে তাকে নতুন ব্যালট পেপারে ভোট দেয়া হবে। এ কারণে কিছু অতিরিক্ত ব্যালট ছাপানো হয়েছে। এ ছাড়া ব্যালট সরবরাহকারীরা ১০০টি ব্যালটকে এক সেট হিসাব করেন। এ কারণে সেট হিসেবে ব্যালট দেয়ায় কিছু ব্যালট বেশি আনতে হয়েছে। তবে কেন্দ্রগুলোতে ভোটার সংখ্যা অনুযায়ী ব্যালট পেপার দেয়া হবে। অতিরিক্ত ব্যালট পেপারের প্রয়োজন হলে নির্বাচন কমিশন সিদ্ধান্ত নেবে। প্রার্থীর সংখ্যা বিবেচনায় ব্যালট পেপার তিন পৃষ্ঠা, দুই পৃষ্ঠা ও এক পৃষ্ঠা ছাপানো হয়েছে।
ভোটকেন্দ্র ও ক্যাম্পাসের নিরাপত্তায় সিসি ক্যামেরা : কেন্দ্রের নিরাপত্তা পর্যবেক্ষণে ২১টি ভোটকেন্দ্রে প্রায় ৮০টি সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ফটকসহ গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় এক হাজার ৫০০ পুলিশ, সাত প্লাটুন পুলিশ এবং সাত প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন থাকবে। তাদের অধিকাংশই ক্যাম্পাসের বাইরে অবস্থান করবেন। ভোটকেন্দ্রগুলোতে আনসার সদস্যরা দায়িত্ব পালন করবেন। নির্বাচন কমিশনের তত্ত্বাবধানে এসব সিসিটিভি ক্যামেরা দিয়ে কেন্দ্রের পরিবেশ নজরদারি করা হবে। জ্যেষ্ঠ শিক্ষকদের সমন্বয়ে একটি টিম, প্রক্টরিয়াল বডি ও ক্যাম্পাসের নিরাপত্তা কর্মকর্তারা পুরো ক্যাম্পাসে দায়িত্ব পালন করবেন। দু’জন ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্বে থাকবেন।
বহিরাগত প্রবেশ নিষিদ্ধ : বহিরাগত বা সাবেক শিক্ষার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে গতকাল থেকে আগামীকাল পর্যন্ত প্রবেশ নিষিদ্ধ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এ ছাড়াও ক্যাম্পাসে সুষ্ঠু নির্বাচনী পরিবেশ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে আবাসিক হলে অবস্থিত সব সাবেক শিক্ষার্থীর ১০-১২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত অবস্থান করতে নিষেধ রয়েছে। নির্বাচনকালীন পর্যবেক্ষক ও পেশাগত দায়িত্ব পালনের জন্য সাংবাদিকদের জাতীয় পরিচয়পত্রসহ পাসপোর্ট সাইজের ছবি এবং পেশাগত পরিচয়পত্র বহন করতে বলা হয়েছে। আগামীকাল ১২ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের সব গেট জনসাধারণের জন্য বন্ধ থাকবে। এ ছাড়াও নির্বাচন চলাকালীন জাকসু নির্বাচন কমিশন কর্তৃক অনুমোদিত যানবাহন ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ে সবধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকবে।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও নির্বাচন কমিশনের সদস্যসচিব অধ্যাপক রাশিদুল আলম বলেন, আমরা নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে আয়োজনের জন্য পূর্বপ্রস্তুতি সম্পন্ন করেছি। আমরা আশা রাখছি যে, একটা উৎসবমুখর পরিবেশে আমরা নির্বাচন শেষ করতে পারব।
প্রার্থীদের ডোপ টেস্ট : জাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনে সব প্রর্থীর জন্য বাধ্যতামূলক ডোপ টেস্ট করা হয়েছিল। গত মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৯টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসাকেন্দ্রে ডোপ টেস্ট নেয়া শুরু হয়। সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত সময় নির্ধারণ করা থাকলেও রাত ৮টা পর্যন্ত প্রার্থীদের ডোপ টেস্ট নেয়া হয়। চিকিৎসাকেন্দ্রের তথ্যমতে, মঙ্গলবার রাত ৮টা পর্যন্ত ডোপ টেস্ট সম্পন্ন করেছেন মোট ৫৬৫ জন। এর মধ্যে ১৬৩ জন কেন্দ্রীয় সংসদের প্রার্থী এবং ৪০২ জন হল সংসদের প্রার্থী। তবে চূড়ান্ত প্রার্থীর তালিকা অনুযায়ী কেন্দ্রীয় সংসদের মোট প্রার্থী ১৭৯ জন এবং হল সংসদের মোট প্রার্থী ৪৪৩ জন। প্রথম দিনে কেন্দ্রীয় সংসদের ১৬ জন প্রার্থী এবং হল সংসদের ৪১ জন প্রার্থী ডোপ টেস্ট করেননি।
জাকসু নির্বাচনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক মো: মনিরুজ্জামান বলেন, ‘ডোপ টেস্টে যাদের পজিটিভ আসবে, তাদের যেমন প্রার্থিতা বাতিল হবে ঠিক তেমনিভাবে যারা অংশগ্রহণ করবেন না, তাদের প্রার্থিতাও বাতিল হবে।’
বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হবেন ১২৪ জন, কোনো প্রার্থী নেই ৬৫ পদে
জাকসু নির্বাচনে হল সংসদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হবেন ১২৪ জন প্রার্থী এবং অন্য দিকে ৬৫ পদে কোনো প্রার্থী নেই। ২১টি হল সংসদে ৩১৫টি পদের বিপরীতে প্রার্থী ৪৪৩ জন। যেখানে ১১টি ছাত্র হলে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী ৬৫ জন প্রার্থী, ৯টি পদে নেই কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী। অপর দিকে ১০টি ছাত্রী হলে ৫৯টি পদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হবেন প্রার্থীরা, কোনো প্রার্থী নেই ৫৬টি পদে। গত ২৯ আগস্ট জাকসু নির্বাচন কমিশনের প্রকাশিত চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা থেকে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের ১১টি ছাত্র হলে পদ রয়েছে ১৬৫। যেখানে ১০ নম্বর ছাত্র হল সংসদে ছয়জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয় লাভ করবেন। ২১ নম্বর হলে একটি আসন শূন্য ও পাঁচ পদে একাধিক প্রার্থী নেই। আ ফ ম কামাল উদ্দিন হলে আটজন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হতে চলেছেন। আল বেরুনী হলে চার পদে কোনো প্রার্থী নেই ও পাঁচজন বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হতে যাচ্ছেন ১০ জন, ফাঁকা আছে আরো একটি পদ। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম হলে একটি পদে একাধিক প্রার্থী নেই। মওলানা ভাসানী হলে ছয় পদে একাধিক প্রতিদ্বন্দ্বী নেই। মীর মশাররফ হোসেন হলে পাঁচটি পদে একাধিক প্রার্থী নেই। শহীদ রফিক-জব্বার হলে ছয়জন প্রতিনিধি নির্ধারিত হবেন বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায়। শহীদ সালাম বরকত হলে দুই পদে কোনো প্রার্থী পাওয়া যায়নি ও ৯ পদে কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী নেই। শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ হলে একটি পদ ফাঁকা রয়ে গেছে, অপর দিকে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হবেন চারজন প্রার্থী।
এ ছাড়া মেয়েদের ১০ হলের মধ্যে বেগম সুফিয়া কামাল হলে ১০ জন প্রার্থী বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয় লাভ করবেন, যেখানে বাকি পাঁচ পদে কোনো প্রার্থী নেই। বীরপ্রতীক তারামন বিবি হলে চারটি পদে একাধিক প্রার্থী নেই; ছয় পদ শূন্য। রোকেয়া হলে ছয় পদ শূন্য, চার পদে একাধিক প্রার্থী নেই। প্রীতিলতা হলে ১১টি পদে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় প্রার্থীরা জয়ী হতে যাচ্ছেন, শূন্য পদ রয়েছে তিনটি। নওয়াব ফয়জুন্নেসা হলে ছয় পদে একাধিক প্রার্থী নেই, ৯ পদ শূন্য ফজিলতুন্নেছা হলে ৯ পদে একাধিক প্রার্থী নেই, তিন পদ শূন্য। বেগম খালেদা জিয়া হলের সাত পদ শূন্য, ছয় পদে একাধিক প্রার্থী নেই। ১৫ নম্বর হলে পাঁচ পদে প্রার্থী নেই, আটটি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হবেন। সবচেয়ে বেশি প্রার্থী সঙ্কটে রয়েছে জাবির ১৩ নম্বর ছাত্রী হল সংসদ। যেখানে ১২টি পদে কোনো প্রার্থী নেই একজন প্রার্থী সরাসরি জয় লাভ করবেন। অর্থাৎ হল সংসদে ৩১৫ পদের ৬৫ পদে নেই কোনো প্রার্থী, আর ১২৪ পদে প্রার্থীরা জয় লাভ করবেন বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায়। বহু দিন পর প্রাপ্তি জাকসু নির্বাচনে প্রার্থী সঙ্কটে রয়েছে শিক্ষার্থীরা, বিশেষ করে ছাত্রী হলে।
প্রার্থিতা কমেছে দুইজন : চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা অনুযায়ী, ১৭৯ জন প্রার্থীর প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার কথা ছিল। তবে ভিপি পদে একজনের প্রার্থিতা বাতিল ও জিএস পদে একজন সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন। সেই হিসাবে জাকসুতে মোট ১৭৭ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। নির্বাচন কমিশন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, নিয়মিত ছাত্রত্ব না থাকায় প্রগতিশীল শিক্ষার্থীদের একাংশের প্যানেল সম্প্রীতির ঐক্য প্যানেলের ভিপি প্রার্থী অমর্ত্য রায়ের প্রার্থিতা বাতিল ঘোষণা করা হয়েছে। অন্য দিকে ছাত্রদলের প্যানেলে জায়গা না পেয়ে প্যানেল ঘোষণার দিন বিদ্রোহ করে জিএস পদে প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সৈয়দা অনন্যা ফারিয়া। তবে গত মঙ্গলবার বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন। জানা যায়, ছাত্রদল নেতৃবৃন্দ এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সাথে একাধিকবার আলোচনার পর তিনি এ সিদ্ধান্ত নেন।
সবার প্রত্যাশা অনেক : গণতান্ত্রিক চর্চায়, শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সাথে শিক্ষার্থীদের সম্পর্ক উন্নয়ন, শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ে জাকসু গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে প্রত্যাশা করেছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ সবাই। জাকসুতে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মাধ্যমে শিক্ষার পরিবেশ উন্নয়নে শিক্ষার্থীদের মতামত প্রতিফলিত হবে বলে তারা প্রত্যাশা করেন।
ডেপুটি রেজিস্ট্রার আবদুর রহমান বলেন, শিক্ষার্থীবান্ধব জাকসুর প্রত্যাশা। শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী সবাই মিলে তারা এক পরিবার। সেই পরিবারের সবার মধ্যে সৌহার্দ্র্যপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলতে জাকসুর নির্বাচিত প্রতিনিধিরা কাজ করবেন। এ ছাড়া আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ছাত্রলীগ কোনো নিয়মনীতি না মেনে ক্যাম্পাসে আধিপত্যবাদ কায়েমের লক্ষ্যে কর্মকর্তাদের সাথে বাজে ব্যবহার করেছেন। তারা চান জাকসুর মাধ্যমে এসব সঙ্কট দূর হবে। সবার মধ্যে পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ ও ভালোবাসা গড়ে উঠবে।



