অনিবন্ধিত স্মার্টফোন হ্যান্ডসেটের ব্যবহার রোধ ও টেলিযোগাযোগ খাতে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আগামী ১৬ ডিসেম্বর থেকে চালু করার পরিকল্পনা চলছে ন্যাশনাল ইকুইপমেন্ট আইডেন্টিটি রেজিস্টার (এনইআইআর) ব্যবস্থা। এটি চালু হলে দেশের মোবাইল নেটওয়ার্কে নিবন্ধনবিহীন, চুরি হওয়া বা আমদানি অননুমোদিত ফোনের ব্যবহার সম্পূর্ণ বন্ধ হবে বলে আশা করছে সরকার। এনইআইআর এমন একটি কেন্দ্রীয় ব্যবস্থা, যা প্রতিটি মুঠোফোন হ্যান্ডসেটের আন্তর্জাতিকভাবে অনুমোদিত আইএমইআই নম্বরকে ব্যবহারকারীর জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) ও ব্যবহৃত সিমের সাথে যুক্ত করে নিবন্ধিত করবে। ফলে বৈধ ও অবৈধ হ্যান্ডসেট সহজেই চিহ্নিত করা সম্ভব হবে।
এনইআইআর চালুর মাধ্যমে দেশের টেলিযোগাযোগ খাতে নতুন অধ্যায়ের সূচনা হবে উল্লেখ করে ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, এই ব্যবস্থা চালু হলে অবৈধভাবে আমদানি করা বা নকল স্মার্টফোনের ব্যবহার বন্ধ হয়ে যাবে। এতে সরকারের রাজস্ব ক্ষতি কমবে এবং দেশীয় স্মার্টফোন উৎপাদনশিল্প আরও সুরক্ষিত হবে। পাশাপাশি চুরি হওয়া বা অপরাধমূলক কাজে ব্যবহৃত ডিভাইস দ্রুত শনাক্ত ও ব্লক করা সম্ভব হবে। এর মাধ্যমে অপরাধ দমনেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে এই ব্যবস্থা।
বর্তমানে দেশের স্মার্টফোন উৎপাদনের হার প্রায় ৬৩ শতাংশ। বাকি অংশ আমদানি নির্ভর। তবে আমদানি করা ফোনের ওপর আরোপিত ভ্যাট ও শুল্ক বেশি হওয়ায় স্থানীয় উৎপাদকরা প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ছেন। এমন পরিস্থিতিতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে উৎপাদিত ও আমদানি করা ফোনের ওপর কর কাঠামো যৌক্তিকভাবে পুনর্বিবেচনা করার লিখিত প্রস্তাব দিয়েছে বিটিআরসি। চিঠিতে মোবাইল ফোন উৎপাদনে ব্যবহৃত যন্ত্রাংশের ওপর কর ছাড়ের ব্যবস্থাও বিবেচনায় আনার সুপারিশ করা হয়েছে। বর্তমানে বিদেশ থেকে আমদানি করা মোবাইল ফোন হ্যান্ডসেটের আমদানি শুল্ক ৫৮.৬ শতাংশকে নামানোর প্রস্তাব দেয়া হয়েছে।
দেশে দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে আমদানি করা মোবাইল হ্যান্ডসেট বাজারে বিক্রি হচ্ছে, যার কারণে সরকার বছরে প্রায় ২,০০০ কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে।
এনইআইআর চালু হলে শুধুমাত্র বৈধভাবে উৎপাদিত ও আমদানি করা মোবাইল ফোনই নেটওয়ার্কে ব্যবহার করা যাবে, অবৈধ ফোনগুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে বন্ধ হয়ে যাবে। সরকারি বিভিন্ন সংস্থার যৌথ প্রচেষ্টায় এই সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ, বিটিআরসি, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এবং মোবাইল ফোন ইন্ডাস্ট্রি ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (এমআইওবি) মধ্যে একাধিক পত্রব্যবহারের পর বিষয়টি চূড়ান্ত হয়।
চালুর অনুমোদন দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিবিষয়ক বিশেষ সহকারীর কার্যালয়। দেশের বাজারে দীর্ঘসময় ধরে একটি উল্লেখযোগ্য সংখ্যক স্মার্টফোন অবৈধ পথে আসছে। এই খাতের সংশ্লিষ্টদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, দেশের বাজারে যে সংখ্যক অননুমোদিত হ্যান্ডসেট রয়েছে তার একটি বিশাল অংশ আগামী ১৬ ডিসেম্বর অবিক্রীত থেকে যাবে এবং পরবর্তীতে হ্যান্ডসেটসমূহ নেটওয়ার্কে ব্যবহারের সুযোগ থাকবে না। বিশাল আর্থিক লোকসান থেকে রক্ষা পেতে তারা বিটিআরসিকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানিয়েছে। কারিগরি দিক বিবেচনায় অননুমোদিত হ্যান্ডসেটগুলোর আইএমইআই বিটিআরসির ডাটাবেজে সংযুক্তকরণের সুযোগ রয়েছে। অননুমোদিত হ্যান্ডসেটগুলো বিটিআরসির ডাটাবেজে সংযুক্ত করা হলে সেক্ষেত্রে প্রযোজ্য শুল্কায়নের বিষয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের মতামতসহ সিদ্ধান্ত প্রয়োজন।
দেশের গ্রে মার্কেটের ব্যবসায়ীদের ভাষ্য বর্তমানে দেশের ব্যবহারকারীদের হাতে থাকা ৯০ শতাংশ হ্যান্ডসেটই টানা পার্টির মাধ্যমে আনা, যাকে বিটিআরসি অবৈধ বলছে। এই হ্যান্ডসেটের সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেলে দেশের বাজারে দাম বেড়ে যাওয়াসহ ‘মনোপলি’র শঙ্কা গ্রে মার্কেটের ব্যবসায়ীদের। তবে দেশি মোবাইল ফোন উৎপাদনকারীরা বলছেন, তারা এখন বাংলাদেশে আইফোন ছাড়া সব মডেলের ফোন উৎপাদন করছেন এবং দেশী চাহিদা মেটাতে সক্ষম। এনইআইআর কার্যকর হলে দেশের বাজারে মোবাইল ফোনের দাম এক টাকাও বাড়বে না বলে আশ্বস্ত করেছেন দেশি মোবাইল উৎপাদকদের সংগঠন এমওআইবির সভাপতি জাকারিয়া শহীদ।
বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ যেমন ভারত, পাকিস্তান, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া ও তুরস্কে এনইআইআর বা অনুরূপ ব্যবস্থা চালু রয়েছে। এসব দেশে এই ব্যবস্থা চালুর পর অবৈধ ফোনের ব্যবহার ৯০ শতাংশেরও বেশি কমে গেছে, সরকারের রাজস্ব বেড়েছে এবং স্থানীয় শিল্পে বিনিয়োগ বৃদ্ধি পেয়েছে। বাংলাদেশেও একই ফলাফল প্রত্যাশা করা হচ্ছে।



