মুফতি আহমাদুল্লাহ মাসউদ
আমাদের সমাজে এমন অনেক বিষয় প্রচলিত আছে, যেগুলো নিয়ে নানা ভ্রান্ত ধারণা ও বিশ্বাস বিদ্যমান। এর মধ্যে অন্যতম হলো ‘বদনজর’। কখনো হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়া। কখনো ভালো ব্যবসায় হঠাৎ মন্দা হওয়া। আবার কখনো সুখী পরিবারে অপ্রত্যাশিত অশান্তি দেখা, এই সবের পেছনে অনেকেই বলে, ‘নজর লেগেছে’। আধুনিক যুক্তিবাদী মন হয়তো এটিকে হাস্যকর মনে করতে চাইবে; কিন্তু ইসলামের দৃষ্টিকোণ থেকে বদনজর কোনো কুসংস্কার নয়; বরং এটি একটি প্রতিষ্ঠিত সত্য ও বাস্তবতা।
বদনজর বা ‘আল-আইন’ হলো এমন এক অদৃশ্য প্রভাব, যা কোনো হিংসুক বা অতিমাত্রায় আগ্রহী ব্যক্তির দৃষ্টি থেকে অন্যের প্রতি প্রেরিত হয় এবং তার জীবনে ক্ষতি করতে পারে। আজকের সময়ে, বিশেষ করে সোশ্যাল মিডিয়ার যুগে, যেখানে প্রতিটি মুহূর্তের সুখ, সাফল্য ও সৌন্দর্য যেন সবার সামনে প্রদর্শনের বস্তু হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই বদনজরের প্রভাব আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। ছোট্ট ঈর্ষা, অনিচ্ছাকৃত আগ্রহ বা প্রশংসার দৃষ্টি, সবই বদনজরের মাধ্যমে ক্ষতির কারণ হতে পারে। তাই ইসলামী শিক্ষা আমাদের সতর্ক করে, আল্লাহর সাহায্য ও দোয়ার মাধ্যমে আমরা এই প্রভাব থেকে নিজেদের রক্ষা করতে পারি।
বদনজর কিভাবে হয় : বদনজর বা নজর মূলত দুই ধরনের হয়। প্রথমটি হিংসা থেকে উদ্ভূত। অর্থাৎ যখন কেউ অন্যের কোনো নিয়ামত দেখে ঈর্ষা অনুভব করে এবং মনে মনে সেটি হারিয়ে যাওয়ার কামনা করে, তখন তার দৃষ্টিতে ক্ষতি থাকতে পারে। এ ধরনের নজরই প্রকৃত হিংসাপূর্ণ বদনজর।
দ্বিতীয়টি অতি-প্রশংসা বা বিস্ময় থেকে উদ্ভূত। কখনো কখনো কেউ অন্যের কোনো গুণ বা নিয়ামত দেখে অতিমাত্রায় মুগ্ধ হয় বা বিস্মিত হয়। যদি সে আল্লাহর প্রশংসা যেমন ‘মাশাআল্লাহ’ বা ‘বারাকাল্লাহু ফিক’ না করে, তখন এমন দৃষ্টি থেকেও বদনজর জন্ম নিতে পারে। এমনকি একজন ভালো মানুষও অনিচ্ছাকৃতভাবে এমন নজর দিতে পারেন।
কুরআনের আলোকে বদনজরের বাস্তবতা : ইসলামী আকিদার একটি মূলনীতি হলো ‘গায়েবের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন’। বদনজরও সেই অদৃশ্য বিষয়গুলোর একটি, যার অস্তিত্ব কুরআন ও হাদিসে স্বীকৃত।
১. সূরা আল-ফালাক (১-৫) আল্লাহ আমাদের শিখিয়েছেন হিংসুকের ক্ষতিকর দৃষ্টির হাত থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করতে। বদনজর হলো হিংসুকের অনিষ্টের এক প্রকাশ।
২. সূরা আল-কালাম (৫১) কাফিররা যখন রাসূলুল্লাহ সা:-এর প্রতি হিংসাপূর্ণ দৃষ্টি প্রেরণ করত, আল্লাহ তা উল্লেখ করেছেন। এটি বদনজরের প্রকৃতির স্পষ্ট নিদর্শন।
৩. সূরা ইউসুফ (৬৭) ইয়াকুব আ: তার সুদর্শন পুত্রদের একসাথে একই দরজা দিয়ে না পাঠিয়ে সতর্ক করেছিলেন। কারণ একসাথে উপস্থিত হলে মানুষের হিংসাপূর্ণ বা অতিমাত্রা মুগ্ধ দৃষ্টির (বদনজর) সম্ভাবনা থাকে। এটি বদনজর থেকে রক্ষা পাওয়ার একটি শিক্ষণীয় ব্যবস্থা।
হাদিসের আলোকে বদনজরের বাস্তবতা : ১. বদনজর সত্য ও বাস্তব- আবু হুরায়রা রা: থেকে বর্ণিত- নবী সা: বলেছেন. ‘বদনজর সত্য’। উল্কি অঙ্কনও এ থেকে বাঁচার জন্য নিষিদ্ধ। (বুখারি-৫৭৪০, ইবনে মাজাহ-৩৫০৮)
২. তাকদির অতিক্রম করার ক্ষমতা : বদনজরের প্রভাব এত শক্তিশালী যে, এটি ভাগ্যকে অতিক্রম করতে পারে। (তিরমিজি-২০৫৯)
৩. প্রভাবের উদাহরণ ও প্রতিকার : আবু উমামা রা: বর্ণনা করেছেন- এক ব্যক্তির দৃষ্টিতে সাহল রা: অসুস্থ হয়ে যান। নবী সা: পানি ও দোয়ার মাধ্যমে প্রতিকার নির্দেশ করেন। (ইবনে মাজাহ-৩৫০৯)
শিক্ষা : বদনজর শুধু হিংসুকের নয়, কোনো মুগ্ধ দৃষ্টিও প্রভাব ফেলতে পারে।
৪. ভয়াবহতা : নবী সা: সতর্ক করেছেন, উম্মতের মধ্যে মৃত্যুর ক্ষেত্রে বদনজরের কারণে মৃত্যুর ঘটনা তাকদিরের পর সর্বাধিক। (মুসনাদে বাযযার)
এই হাদিসগুলো থেকে স্পষ্ট বোঝা যায়, বদনজর কেবল মানসিক বা কাল্পনিক বিষয় নয়, এটি একটি শারীরিক ও বাস্তবসম্মত ক্ষতি, যা আল্লাহর হুকুমে মানুষের জীবন, স্বাস্থ্য, সম্পদ ও সম্পর্কের ও পরমাত্মায় প্রভাব ফেলতে পারে।
বর্তমানে সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে বদনজরের বিস্তার : প্রাচীনকালে বদনজর লাগানোর জন্য সরাসরি দেখার প্রয়োজন হতো। কিন্তু আজকের প্রযুক্তিনির্ভর যুগে, বিশেষ করে ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, টিকটক ইত্যাদির মাধ্যমে বদনজরের প্রভাব অনেকগুণ বেড়ে গেছে।
১. অবিরাম প্রদর্শনীর সংস্কৃতি : সোশ্যাল মিডিয়া একটি ‘প্রদর্শনীর মঞ্চ’ হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এখানে মানুষ তাদের জীবনের সুন্দর মুহূর্তগুলো; দামি খাবার, নতুন গাড়ি, বিলাসবহুল অবকাশ, সন্তানের সাফল্য, নতুন চাকরি ইত্যাদি প্রচারের মাধ্যমে শেয়ার করে।
২. অদৃশ্য হিংসুকের আক্রমণ : যখন কেউ নিজের আনন্দের মুহূর্ত শেয়ার করে, তখন হাজারো ফ্রেন্ড বা ফলোয়ার তা দেখে। এর মধ্যে কারো দৃষ্টিতে হিংসা বা নানাভাবে ক্ষতিকর অভিপ্রায় যে আছে তা বলাই বাহুল্য। অনেকে নিজের জীবনের অভাব বা দুঃখের সাথে তুলনা করে হিংসা বা আফসোস অনুভব করতে পারেন। এই অদৃশ্য হিংসুকদের দৃষ্টি বদনজরের কারণ হয়।
৩. ‘পারফেক্ট লাইফ’ সিনড্রোম : সোশ্যাল মিডিয়ায় সবাই নিখুঁত জীবনের ছবি তুলে ধরেন। এটি অন্যদের মধ্যে হতাশা এবং অবচেতনভাবে সেই নিয়ামতগুলো হারিয়ে যাওয়ার কামনা সৃষ্টি করতে পারে, যা বদনজরের প্রক্রিয়াকে আরো ত্বরান্বিত করে।
৪. বাস্তব উদাহরণ : সোশ্যাল মিডিয়ায় সুখী দম্পতি হিসেবে পরিচিতদের কিছুদিন পর বিচ্ছেদ। সফল ব্যবসার ছবি পোস্ট করার পর হঠাৎ ব্যবসায় ক্ষতি বা শিশুর ভাইরাল ছবি দেখার পর তার অসুস্থতা। এসবই বদনজরের সম্ভাব্য প্রভাবের উদাহরণ।
মুআয বিন জাবাল রা: রাসূল সা: থেকে বর্ণনা করেন- ‘তোমরা তোমাদের প্রয়োজন পূরণে সফলতা লাভের জন্য তা গোপন রেখে আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করো; কারণ প্রত্যেক নিয়ামতপ্রাপ্ত ব্যক্তি হিংসার শিকার হয়।’ (হাদিস সম্ভার-২১৯১)
সোশ্যাল মিডিয়া এই হাদিসের সম্পূর্ণ বিপরীত পথ অনুসরণ করে। এখানে গোপনীয়তার বদলে জীবনের প্রতিটি নিয়ামত প্রকাশ্যভাবে প্রদর্শন করা হয়, যা মানুষকে সহজেই হিংসুক ও বদনজরের লক্ষ্য বানিয়ে দেয়।
বদনজরের ভয়াবহতা ও ক্ষতিসমূহ : বদনজর এমন এক অদৃশ্য বাস্তবতা, যার প্রভাব শুধু শরীরেই সীমাবদ্ধ নয়; বরং এটি মানুষের মন, পরিবার, অর্থনীতি, এমনকি ঈমান ও আখিরাত পর্যন্ত গভীরভাবে আঘাত হানতে পারে। আমাদের সমাজে প্রায়ই দেখা যায়, কেউ হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ছে, কাজকর্মে আগ্রহ হারাচ্ছে, ব্যবসায় লোকসান হচ্ছে, পরিবারে অশান্তি বাড়ছে। অনেক সময় এসবের পেছনে বদনজরের প্রভাবই কাজ করে। রাসূল সা: স্পষ্টভাবে বলেছেন, ‘বদনজর সত্য’। (বুখারি, মুসলিম)
শারীরিক ক্ষতি : বদনজর প্রথম আঘাত করে দেহে। মানুষ হঠাৎ করে দুর্বল হয়ে পড়ে, তার প্রাণশক্তি যেন নিঃশেষ হয়ে যায়। অনেক সময় এমন রোগ দেখা দেয় যার কোনো চিকিৎসাগত কারণ খুঁজে পাওয়া যায় না। চিকিৎসা নেয়া সত্ত্বেও আরোগ্য হয় না।
মানসিক ক্ষতি : বদনজরের দ্বিতীয় প্রভাব পড়ে মানুষের অন্তরে। মন ভারী হয়ে যায়, আনন্দ হারিয়ে যায়। কোনো কাজেই মন বসে না, ইবাদতে মনোযোগ থাকে না, নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাস কমে যায়। বিষণœতা, অস্থিরতা, ভয়, সন্দেহ, ক্রোধ ও হতাশা- এসব অনুভূতি ক্রমে ব্যক্তির চিন্তা ও চরিত্রকে দুর্বল করে ফেলে। এমনকি সে নিজের কাছেও অচেনা হয়ে যায়। এই মানসিক ভারসাম্যহীনতা তার সামাজিক ও পারিবারিক সম্পর্ককেও নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত করে।
আর্থিক ক্ষতি : বদনজর অনেক সময় মানুষের রুজি-রোজগার ও জীবিকার ওপরও প্রভাব ফেলে। হঠাৎ করে ব্যবসায় লোকসান হয়, চাকরি চলে যায়, বা কোনো সুযোগ হাতছাড়া হয়ে যায়। এমনও দেখা যায়, কারো উদ্যোগ খুব সুন্দরভাবে চলছিল; কিন্তু কারো ঈর্ষণীয় দৃষ্টির পর থেকে সব কিছু ব্যর্থ হতে শুরু করে।
সম্পর্কের ক্ষতি : বদনজর শুধু দেহ বা অর্থকেই নয়, সম্পর্ককেও বিষাক্ত করে তোলে। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে অকারণ ঝগড়া। পরিবারের সদস্যদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি। বন্ধুত্বে দূরত্ব। এসব অনেক সময় বদনজরের কারণে ঘটে। এমনকি একজন মানুষ যিনি সবার প্রিয় ছিলেন, হঠাৎ করে তার প্রতি মানুষের মনোভাব বদলে যায়। বাড়িতে শান্তি নষ্ট হয়, ভালোবাসা ও সম্মান কমে যায়। বদনজর যেন এক অদৃশ্য আগুন, যা ভালোবাসার সম্পর্কগুলো ধীরে ধীরে পুড়িয়ে ফেলে।
শিক্ষাক্ষেত্রে ক্ষতি : শিক্ষার্থী বা গবেষকরা অনেক সময় বদনজরের শিকার হয়। একজন মেধাবী ছাত্র হঠাৎ পড়াশোনায় অমনোযোগী হয়ে পড়ে। স্মৃতিশক্তি দুর্বল হয়ে যায়। পরীক্ষায় মনোযোগ হারায়। কেউ কেউ বারবার চেষ্টা করেও সফল হতে পারে না। বদনজরের প্রভাবে তার মনোযোগ, চিন্তাশক্তি ও অধ্যাবসায় নষ্ট হয়ে যায়। ফলে তার ভবিষ্যৎ সাফল্য বাধাগ্রস্ত হয়।
আধ্যাত্মিক ক্ষতি, সবচেয়ে ভয়াবহ দিক : বদনজরের সবচেয়ে বড় ক্ষতি হলো এটি মানুষের দুনিয়া ও আখিরাত উভয়কেই ধ্বংস করতে পারে। দুনিয়ায় সে তার নিয়ামত, শান্তি, স্বাস্থ্য ও সফলতা হারায়; আর যদি এই বিপদের সময় সে আল্লাহর ওপর আস্থা হারায়, হতাশ হয়, অভিযোগ করে, ধৈর্য হারায়, তাহলে আখিরাতেও সে ক্ষতির মুখে পড়ে। বদনজর অনেক সময় মানুষকে নামাজ, জিকির ও ইবাদত থেকে দূরে সরিয়ে দেয়। সে অলস হয়ে যায়, দ্বীনি জীবনে আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। আর এভাবেই বদনজর তার আত্মিক জীবনের গভীর ক্ষতি ডেকে আনে।
বদনজরের প্রতিরোধ ও প্রতিকার : বদনজরের এই ভয়াবহতা থেকে বাঁচতে হলে আত্মশুদ্ধি এবং ইসলামী নির্দেশিত প্রতিরোধ ও প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা অপরিহার্য।
প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা : আত্মশুদ্ধি : বদনজর প্রতিরোধের প্রথম ধাপ হলো নিজের অন্তরকে হিংসা ও ঈর্ষা থেকে মুক্ত করা। অন্যের সাফল্য, সৌন্দর্য বা নিয়ামত দেখে অন্তর থেকে তার জন্য বরকতের দোয়া করা উচিত, ‘আল্লাহ তাঁকে আরো বরকত দিন।’ এ বিশ্বাস দৃঢ় রাখতে হবে যে, সব কিছুর প্রকৃত রক্ষাকারী একমাত্র আল্লাহ তায়ালা। তিনিই উপকার বা ক্ষতি করার মালিক।
নিয়মিত জিকির ও দোয়া : সকাল-সন্ধ্যার দোয়া- রাসূল সা:-এর নির্দেশিত সকাল ও সন্ধ্যার দোয়াগুলো প্রতিদিন পাঠ করা বদনজরের বিরুদ্ধে সবচেয়ে শক্তিশালী প্রতিরক্ষা। এই দোয়াগুলো একসাথে বই আকারে পাওয়া যায়। সূরা ইখলাস, সূরা ফালাক, নাস, আয়াতুল কুরসি তিলাওয়াত করা। যখন নিজের বা অন্যের কোনো সুন্দর জিনিস, সাফল্য বা নিয়ামত দৃষ্টিগোচর হবে তখন ‘মাশাল্লাহ ও বারাকাল্লাহ’ পড়া।
নিয়ামত গোপন রাখা : নিজের সুখ, সাফল্য, সম্পদ বা জীবনের বিশেষ আনন্দঘন মুহূর্তগুলো অহেতুক প্রকাশ না করা। বিশেষ করে সোশ্যাল মিডিয়ায়। সবাই আপনার জন্য শুভাকাক্সক্ষী নয়; অনেকে অজান্তেই হিংসা বা নজরের কারণ হতে পারে। তাই নিয়ামত গোপন রাখলে আল্লাহ তায়ালা আরো বরকত দেন।
প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা : বদনজর প্রতিরোধ ও প্রতিকার করা একান্ত জরুরি।
প্রথমত : বদনজরের চিকিৎসা বা প্রতিকার হলো রুকইয়াহ শারইয়্যাহ, অর্থাৎ- শরিয়তসম্মত ঝাড়ফুঁক। এর পদ্ধতি হলো সূরা ফাতিহা, আয়াতুল কুরসি, সূরা ইখলাস, ফালাক ও নাস পাঠ করে আক্রান্ত স্থানে ফুঁ দেয়া বা আক্রান্ত ব্যক্তির ওপর নির্ধারিত দোয়াগুলো পড়া।
দ্বিতীয়ত : অজু বা গোসলের পানি দিয়েও প্রতিকার করা যায়। সাহল ইবনে হুনাইফ রা:-এর ঘটনায় প্রমাণিত, যার কারণে বদনজর লেগেছিল, তার অজুর পানি আক্রান্ত ব্যক্তির ওপর ঢেলে দেয়া হয়েছিল এবং আল্লাহর ইচ্ছায় তিনি আরোগ্য লাভ করেন।
তৃতীয়ত : সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো তাওয়াক্কুল, অর্থাৎ- দৃঢ় বিশ্বাস রাখা যে, একমাত্র আল্লাহই আরোগ্য দানকারী ও রক্ষাকারী। কোনো প্রতিকার বা চিকিৎসা নিজে থেকে কার্যকর হয় না; বরং আল্লাহর অনুমতিতে তাতে প্রভাব সৃষ্টি হয়। তাই মুমিন কখনো কুসংস্কারে বিশ্বাস করে না; বরং আল্লাহর ওপর পূর্ণ ভরসা রাখে। বদনজর কোনো কল্পনা নয়, এটি বাস্তব এবং প্রমাণিত বিষয়। বর্তমান যুগে বিশেষ করে সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রদর্শনের সংস্কৃতি, নিজের সাফল্য, সন্তান, সম্পদ বা সুখী জীবনের অতিরিক্ত প্রদর্শন। এই অদৃশ্য বিপদকে আরো বৃদ্ধি করছে। অনেকে না বুঝেই নিজের সুখ-সৌন্দর্য অন্যের নজরে এনে বিপদ ডেকে আনে। আল্লাহ আমাদেরকে হিফাজত করুন।
লেখক : শিক্ষক, জামিয়া নুরিয়া ইসলামিয়া, কামরাঙ্গির চর, ঢাকা।



