গণঅভ্যুত্থানে ছাত্র-জনতার ওপর গুলিবর্ষণের পর হত্যা মামলার আসামি ও হবিগঞ্জের সাবেক সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ খলিলুর রহমানকে গাজীপুরের শিল্প পুলিশের অতিরিক্ত দায়িত্ব দেয়া স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। খলিলুর রহমানের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মামলার তদন্ত চলমান এবং আরো দুইটি মামলা রয়েছে। এ সময় গাজীপুরের শিল্প নগরীতে এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার খলিলুর রহমানকে দায়িত্ব দেয়ায় খোদ শিল্প মালিকরাও অনিরাপদ মনে করছেন। খলিলুর রহমান বর্তমানে গাজীপুর ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ-২ এর অপস অ্যান্ড ইন্টে দায়িত্বরত।
সম্প্রতি গোয়েন্দাদের প্রতিবেদনে আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচন বানচালে শিল্প এলাকায় শ্রমিক অসন্তোষ ও নাশকতার আশঙ্কা করা হয়েছে। ছাত্র-জনতার ওপর হামলাকারী ও একজন হত্যা মামলার আসামি শ্রমিকদের অসন্তোষে কতটা নিরাপত্তা দিবেন তা নিয়ে পুলিশের মধ্যেই নানা প্রশ্ন জন্ম দিয়েছে। একই সাথে গোয়েন্দা ও অপারেশন শাখায় দায়িত্বে থাকায় নানা ষড়যন্ত্র করারও আশঙ্কা করা হচ্ছে। খলিলুর রহমানের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, হবিগঞ্জে দায়িত্বরত থাকাকালীন সময়ে জামায়াত-বিএনপির নেতাকর্মীদের রাতে তুলে নিয়ে বেদম নির্যাতনের পর মিথ্যা মামলা দিয়ে বছরের পর বছর জেল খাটিয়েছেন। এ ছাড়াও এলাকায় তার বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের আমলে সাধারণ মানুষের ওপর নিপীড়ন নির্যাতরে অভিযোগ রয়েছে।
হবিগঞ্জের একটি মামলার বিবরণে জানা যায়, ২০২৩ সালের ১৯ আগস্ট সন্ধ্যায় বিএনপি নেতা আলহাজ জি কে গউছের বাসার বৈঠকখানায় শান্তিপূর্ণ সমাবেশ চলাকালে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ খলিলুর রহমানের নেতৃত্বে পুলিশ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বেপরোয়াভাবে লাঠিচার্জ, গুলিবর্ষণ ও টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে। এতে অসংখ্য নেতাকর্মী গুলিবিদ্ধ ও আহত হন। এ সময় বিএনপি নেতা আউয়ালের চোখেমুখে ও সারা শরীরে গুলি লাগে এবং তার চোখ নষ্ট হয়। এ ছাডাও আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতাকর্মীরা আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে পুলিশের সাথে মিলে বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর গুলি বর্ষণ করে। এ ঘটনায় হবিগঞ্জ সদর থানায় পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এস এম আওয়াল বাদি হয়ে মামলাটি দায়ের করেন।
এ ছাড়াও গত বছরের ২ আগস্ট শহীদ মোস্তাক আহমেদ (২৫) বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে অংশগ্রহণের জন্য দুপুরে হবিগঞ্জ শহরের তিন কোনা পুকুর পাড় এলাকায় মিছিল ও আন্দোলন করেন। আনুমানিক এ সময় গুলিতে ঘটনাস্থলেই মৃত্যুবরণ করেন। এ ঘটনায় হবিগঞ্জ সদর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। পরে শহীদ মোস্তাকের ভাই ময়না মিয়া বাদি হয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার খলিলুর রহমানসহ ৩২ জনের নাম ও অজ্ঞাত ৩০০ জনের বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর বরাবরে একটি অভিযোগ দায়ের করেন।
এ ছাড়াও ২০২৩ সালের ১৯ আগস্ট বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ও উন্নত চিকিৎসার দাবিতে কেন্দ্র ঘোষিত পদযাত্রা কর্মসূচি ছিল বিএনপির। বিকেল ৫টার দিকে শহরের শায়েস্তানগর ঈদগার সামনে থেকে বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ও হবিগঞ্জ পৌরসভার পদত্যাগকারী মেয়র আলহাজ জি কে গউছের নেতৃত্বে পদযাত্রা কর্মসূচি শুরু করে হবিগঞ্জ জেলা বিএনপি।
শায়েস্তানগরস্থ বিএনপির কার্যালয়ের সামনে গিয়ে পদযাত্রা কর্মসূচি শেষ হয়। এ সময় পুলিশ বিএনপি নেতাকর্মীদেরকে প্রধান সড়ক ছেড়ে ভেতরের রাস্তায় চলে যেতে বলে। কিন্তু হাজার হাজার লোক সমাগম হওয়ায় ভেতরের রাস্তায় জায়গা না হওয়ায় নেতাকর্মীরা প্রধান সড়কে অবস্থান করছিল। এ সময় নেতাকর্মীদের ছত্রভঙ্গ করতে গেলে পুলিশের সাথে বিএনপি নেতাকর্মীদের দফায় দফায় ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। প্রায় ২ ঘণ্টাব্যাপী সংঘর্ষে হবিগঞ্জ পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এস এম আওয়ালসহ বিএনপির শতাধিক নেতাকর্মী আহত হয়।
স্থানীয় সূত্র জানায়, সম্প্রতি গাজীপুরের শ্রীপুরে আর এ কে সিরাকের কারখানার শ্রমিকরা আন্দোলন করে। ওই সময় সাংবাদিকরা দায়িত্ব পালন করতে গেলে তাদের ওপর চড়াও হয়। তখন প্রতিবাদ করলে কয়েকজন সাংবাদিককে লাঞ্ছিত করেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো: খলিলুর রহমান।



