ক্রীড়া প্রতিবেদক
হলো না বাংলাদেশের নারী ফুটবলে আরেকটি রেকর্ড। এবার সিনিয়র নারী ফুটবল এবং অনূর্ধ্ব-২০ নারী দল ইতিহাস গড়ে প্রথমবারের মতো এএফসির আসরের চূড়ান্ত পর্বে উঠেছে। অথচ যে দলটি প্রথম বাংলাদেশ নারী দলকে এএফসি অনূর্ধ্ব-১৬ ফুটবলের চূড়ান্ত পর্বে খেলার রাস্তা দেখিয়েছিল তারাই পারেনি আরেকটি রেকর্ড গড়তে। গত পরশু জর্দানের আকাবা শহরে অনুষ্ঠিত এএফসি অনসূর্ধ্ব-১৭ ফুটবলে ০-৫ গোলে হেরেছে চাইনিজ তাইপের কাছে। আর তাতেই বাংলাদেশের তিন দলের এএফসির আসরের ফাইনাল রাউন্ডে খেলার রেকর্ড হলো না। উল্লেখ্য এর আগে বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৬ নারী দল ২০১৬ ও ২০১৯ সালে এএফসি অনূর্ধ্ব-১৬ ফুটবলের চূড়ান্ত পর্বে উঠেছিল।
মূলত এবার বাংলাদেশ দল যখন প্রথম ম্যাচে জিততে ব্যর্থ হয়েছিল দুর্বল জর্দানের বিপক্ষে তখনই বুঝা গিয়েছিল এদের দিয়ে আশা কম। ওই ম্যাচে তিন মিনিটে লিড নিয়েও উদ্দেশ্যহীন খেলা উপহার দিয়ে ৮৯ মিনিটে গোল হজম করে বাংলাদেশ। এতে ম্যাচ ১-১-এ ড্র হয়। অথচ অর্পিতা বিশ^াসদের সেই ম্যাচে পাঁচ-ছয় গোলে জেতার কথা ছিল। পরের ম্যাচে জর্দানকে ১-৬ গোলে হারায় চাইনিজ তাইপে। পরশু এই হারের ফলে ‘এইচ’ গ্রুপে দ্বিতীয়ও হতে পারেনি সাইফুল বারী টিটুর দল। জর্দানের সাথে সমান ১ পয়েন্ট ভাণ্ডারে জমা করলেও গোল পার্থক্যে হয়েছে তিন দলের মধ্যে তৃতীয়। ২০২৩ সালেও বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৭ দল এএফসি অনূর্ধ্ব-১৭ ফুটবলের দ্বিতীয় রাউন্ডে চার দলের মধ্যে চতুর্থ হয়েছিল।
বাফুফের নারী উইংয়ের চেয়ারম্যান মাহফুজা আক্তার কিরণ, ‘আগেই বলেছিলেন, তারা অনূর্ধ্ব-১৭ দলকে যেভাবে ট্রেনিংয়ে রাখা দরকার তা করতে পারেনি।’ আসলে বাফুফে সিনিয়র নারী দল এবং অনূর্ধ্ব-২০ দলকেই বেশি গুরুত্ব দিয়েছিল। এর পরও এই অনূর্ধ্ব-১৭ দল সাফে ছয়টি ম্যাচ খেলেছে। শেষ ম্যাচে চ্যাম্পিয়ন ভারতকে চার-তিন গোলে হারিয়ে রানার্সআপ হয়েছে। জর্দানে যাওয়ার আগে সিরিয়া ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিপক্ষে দুই প্রস্তুতি ম্যাচ খেলেছিল। সেখানে ২-০ ও ৩-০তে জয়।
কিন্তু এএফসির আসরে প্রথম ম্যাচেই হতাশা জনক পারফরম্যান্স। ঠিক যেমন এবারের অনূর্ধ্ব-১৭ সাফে তারা বিস্ময়কর ড্র করেছিল ভুটানের সাথে। নারী দলের সাথে সম্পৃক্ত একজনের মতে, এই দলটিকে আরো সময় দিতে হবে। দলের খেলোয়াড়দের কেউ ভালো খেলেছেন। কেউ সেভাবে পারফর্ম করতে পারেননি। গোল মিসতো ছিলই।
এবারের দলে মাত্র দুইজন নতুন খেলোয়াড়। অধিকাংশই গত বছর অনূর্ধ্ব-১৬ নারী সাফে চ্যাম্পিয়ন দলের সদস্য। এরপরও ব্যর্থ। এখানে সাফের ছয় ম্যাচে বাংলাদেশকে চার জয় এনে দেয়া কোচ মাহাবুবুর রহমান লিটুকে সরিয়ে দেয়াটা যুক্তিযুক্ত ছিল কি না- সেটা প্রশ্ন। লিটু কিন্তু এই দলকে একটি পর্যায়ে নিয়ে গেছেন। তিনি সবাইকে বুঝে গেছেন। সেখানে অনূর্ধ্ব-২৩ পুরুষ দলের কোচ সাইফুল বারী টিটুকে টেনে এনে হঠাৎ অনূর্ধ্ব-১৭ নারী দলের কোচ করা ঠিক হয়নি। যদিও টিটুর অধীনেই গত বছর অনূর্ধ্ব-১৯ নারী সাফ এবং অনূর্ধ্ব-১৬ নারী সাফে বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। নতুন করে এদের পেয়ে টিটু কি সেভাবে দলকে গোছাতে পেরেছিলেন?
সেই সাথে অনূর্ধ্ব-১৭ ফুটবলারদেরও দায়িত্ববোধের অভাব ছিল। তারা গোল মিস করেছে। বিপক্ষ দলকে গোল উপহার দিয়েছে। নিজেরাই গোল করতে গিয়ে ব্যর্থ হয়েছে। সাফে ছয়টি এবং দুই প্রীতিম্যাচ খেলার অভিজ্ঞতা নিয়েও তারা কিন্তু আসল লড়াইয়ে চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন। পোস্ট ছেড়ে বেরিয়ে গোলরক্ষক মেঘলা রানীর গোল খাওয়ানোর পুরনো অভ্যাস তো ছিলই। তাতেই সৌরভী আকন্দ প্রীতি, আলপি আক্তার, মামনি চাকমরা ব্যর্থ মিশন শেষ করলো জর্দানের মাটিতে।



