অবৈধ নিয়োগে দাপুটে কর্মকর্তা: ২

জনপ্রশাসন, প্রাণিসম্পদের মতো গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ে এখনো বহাল

শামছুল ইসলাম
Printed Edition

ছাত্রলীগ কর্মীদের নিয়োগ দিতে ২০১২ সালে এসআরও জারি করে আওয়ামী লীগ সরকার। এসআরও অনুযায়ী স্বাস্থ্য পরীক্ষায় অনুপস্থিতিজনিত শূন্য ক্যাডার পদে মুক্তিযোদ্ধা কোটার প্রার্থী নিয়োগ দেয়ার নিয়ম চালু করা হয়। তৎকালীন পাবলিক সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যান এ টি আহমেদুল হক চৌধুরী এসব ছাত্রলীগ কর্মীকে নিয়োগ দিতে সুপারিশ করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠাতেন। সেই সুপারিশ বাস্তবায়ন করতেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের তৎকালীন সিনিয়র সচিব আব্দুস সোবহান শিকদার। ২৮তম বিসিএস থেকে এসআরও কার্যকর করা হলেও এটি বাস্তবায়ন করা হয় ২৯ বিসিএস থেকে। ২৯তম বিসিএস-এ ৩১ জন প্রার্থীকে নিয়োগের জন্য সুপারিশ করে পাবলিক সার্ভিস কমিশন (পিএসসি)। এরপর ৩০তম বিসিএস-এ ১৯ জনকে নিয়োগ দেয়া হয়। অবৈধভাবে নিয়োগ পাওয়া এই কর্মকর্তারা গত ১২ বছর দাপটের সাথে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে কাজ করেছেন। আওয়ামী সরকার পতনের পরও বহাল রয়েছেন জনপ্রশাসন এবং মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ে। প্রশাসন ক্যাডারে নিয়োগ পাওয়া চার কর্মকর্তা এখন উপসচিব হওয়ার জন্য প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ৩০তম বিসিএসে নিয়োগের প্রথম গেজেট হয় ২০১২ সালের ১৭ মে। এর পাঁচ মাস পর একই বছরের ২৩ অক্টোবর এই ভুয়া ক্যাডারদের নিয়োগ দিয়ে গেজেট প্রকাশ করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। নিয়োগপ্রাপ্ত ১৮ জনের মধ্যে প্রশাসন ক্যাডারের চারজন, পুলিশ ক্যাডারে দু’জন, নিরীক্ষা ও হিসাব ক্যাডারে দু’জন, আনসার ক্যাডারে দু’জন, শুল্ক ও আবগারি ক্যাডারে একজন, পরিবার পরিকল্পনা তিনজন, তথ্য (অনুষ্ঠান) ক্যাডারে চারজন নিয়োগ পেয়েছেন।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, এই নিয়োগে প্রশাসন ক্যাডারে যোগদানকৃতদের মধ্যে বর্তমানে রুবাইয়াৎ ফেরদৌসী নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে সহকারী কমিশনার হিসেবে দীর্ঘ পাঁচ বছর দায়িত্ব পালন করেন। কিশোরগঞ্জের কুলিয়ার চর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে পদায়ন ছিলেন প্রায় আড়াই বছর। এরপর তিন বছর ধরে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে কর্মরত আছেন। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়ার পরও এই কর্মকর্তা একই মন্ত্রণালয়ে বহাল রয়েছেন। চাকরিজীবনে ঢাকা বিভাগের বাইরে তাকে যেতে হয়নি। একইভাবে নিয়োগ পাওয়া পারভীন সুলতানা তিন বছরের বেশি সময় ধরে কর্মরত আছেন খোদ জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর জনপ্রশাসনে অনেক পরিবর্তন হলেও বহাল তবিয়তে রয়েছেন এই কর্মকর্তা।

পারভীন সুলতানা এর আগে মানিকগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে সহকারী কমিশনার, খুলনার দাকোপ উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি), ফুলতলা উপজেলা নির্বাহী অফিসার, খুলনা বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ের সিনিয়র সহকারী কমিশনার হিসেবে কাজ করেছেন।

রাজশাহী ওয়াসার সচিব সুবর্ণা রানী সাহা একইভাবে ৩০তম বিসিএসে প্রশাসন ক্যাডারে যোগদান করেছেন। এর আগে তিনি রাজবাড়ী জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক, ঝিনাইদহের কালীগঞ্জের উপজেলা নির্বাহী অফিসার, কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা, মিরপুর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। একইভাবে নিয়োগ পান বাংলাদেশ কর্মচারী কল্যাণ বোর্ডের খুলনা বিভাগীয় কার্যালয়ের উপপরিচালক নাসরিন আক্তার। খুলনা বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে সহকারী কমিশনার হিসেবে চাকরিতে যোগদান করেন। ফুলতলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) হিসেবে দায়িত্ব পালনের পর আবারো বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে সিনিয়র সহকারী কমিশনার হিসেবে যোগদান করেন। উপজেলা নির্বাহী অফিসার হিসেবে রূপসায় পদায়ন করা হয় এই কর্মকর্তাকে। এরপর প্রায় তিন মাস জনপ্রশাসনে ন্যস্ত থাকার পর আবারো বাংলাদেশ কর্মচারী কল্যাণ বোর্ডের খুলনা বিভাগীয় কার্যালয়ের উপপরিচালক হিসেবে পদায়ন করা হয় তাকে।

এ ছাড়াও পুলিশ ক্যাডারে দু’জন মোছা: সুলতানা রাজিয়া ও শামিমা নাসরিন; নিরীক্ষা ও হিসাব ক্যাডারে দু’জন পাপিয়া মনোয়ারা এবং শর্মীলা নাজনীন; আনসার ক্যাডারে দু’জন হোসনে আরা হাসি এবং মৌসুমী আক্তার; পরিবার পরিকল্পনায় তিনজন- ইন্দ্রানী দেবনাথ, সাহেদা হোসেন ও কাজী মমতাজ বেগম; তথ্য ক্যাডারে চারজন- শামীমা ইয়াসমীন স্মৃতি, উম্মে ফারহানা হোসেন শিমু, শাহিদা মঞ্জুরী ও জিনাত আরজু মুক্তা; এবং জুবাইদা খানম (শুল্ক ও আবগারি) নিয়োগপ্রাপ্ত হয়েছিলেন।