টাকা পাচারের অন্যতম মাধ্যম আন্তর্জাতিক ক্রেডিট কার্ড

বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে আন্তর্জাতিক ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে ব্যয়ের বিষয়টি বিশেষ নজরদারির মধ্যে নিয়ে আনা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে এসব বিষয়েও বিশেষ নজরদারির মধ্যে আনার। ফলে পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে যেখানে হরহামেশাই টাকা পাচার হতো তা অনেকটাই নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। বন্ধের পথে হুন্ডি তৎপরতাও। ফলে এক দিকে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়ছে, অপর দিকে বৈধপথে রেমিট্যান্স প্রবাহও বেড়ে গেছে।

আশরাফুল ইসলাম
Printed Edition
বাংলাদেশ ব্যাংকের কঠোর নজরদারি
বাংলাদেশ ব্যাংকের কঠোর নজরদারি

পণ্যের প্রকৃত দাম কম দেখিয়ে রফতানির মাধ্যমে এবং পণ্যের দাম বেশি দেখিয়ে আমদানির মাধ্যমে দেশ থেকে অর্থ পাচার ছিল পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে অনেকটা ওপেন সিক্রেট ঘটনা। তবে, এর বাইরে আন্তর্জাতিক ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমেও বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচার হয়ে যায় দেশ থেকে। কোনো প্রকার নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করেই লাখ লাখ ডলার ব্যয়ের নামে বিদেশে পাচার করেছে প্রভাবশালীরা। বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রা পরিদর্শন বিভাগ থেকে সাম্প্রতিক কিছু অনুসন্ধানে এসব ঘটনা বের হয়ে এসেছে। এ জন্য একটি ব্যাংককে ৩০ লাখ টাকা জরিমানাও গুনতে হয়েছে। এর পর থেকেই বিদেশে ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে ব্যয় করার তথ্য কঠোর নজরদারির মধ্যে নেয়া হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের এক দায়িত্বশীল সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রা নীতিমালা অনুযায়ী একজন ব্যক্তি বিদেশে এক বছরে কী পরিমাণ অর্থ ব্যয় করতে পারে তার জন্য সীমা বেঁধে দেয়া আছে। সাধারণত বাংলাদেশের কোনো নাগরিক বিদেশে বছরে ১২ হাজার ডলার ব্যয় করতে পারবে। কোনো ব্যক্তি বিদেশে ১২ হাজার ডলার নিয়ে গেলে এবং ১০ হাজার ডলার ব্যয় হলে দেশে আসার এক মাসের মধ্যে ২ হাজার ডলার ব্যাংকে জমা দিয়ে দেশী মুদ্রা নেয়ার বিধান রয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুসন্ধানে দেখা যায়, বিদেশ থেকে আসেন নাই অ্যাকাউন্ট হোল্ডার, অথচ দেশে ওই কার্ডধারীর অ্যাকাউন্টে ১০ হাজার ডলার জমা দেয়া হয়েছে। আবারও ওই অ্যাকাউন্ট হোল্ডার বিদেশে বসে ডলার ব্যয় করছে। এভাবে আন্তর্জাতিক ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে বছরে লাখ লাখ ডলার বিদেশে পাচার করার প্রমাণ পেয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

এমনিভাবে বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রা পরিদর্শন বিভাগের সাম্প্রতিক এক পরিদর্শনে ব্যাংক এশিয়া পিএলসির দুটি রেসিডেন্ট ফরেন কারেন্সি ডিপোজিট (আরএফসিডি) হিসাবে অনিয়মের তথ্য উদ্ঘাটিত হয়েছে। তদন্তে দেখা গেছে, ২০২৩ থেকে ২০২৪ সময়কালে নিয়মবহির্ভূতভাবে বিপুল পরিমাণ নগদ মার্কিন ডলার জমা নেয়া হয়েছে এবং সেই অর্থ বিদেশে ব্যবহার করা হয়েছে।

বিদ্যমান বৈদেশিক মুদ্রা ব্যবস্থাপনা বিধান অনুযায়ী, একজন বাংলাদেশী নাগরিক প্রতি ক্যালেন্ডার ইয়ারে সর্বোচ্চ ১২ হাজার মার্কিন ডলার পর্যন্ত বিদেশে ব্যয় করতে পারেন। তবে আরএফসিডি হিসাবে জমাকৃত অর্থ পুরোটা বিদেশে ব্যবহার করা যায়। নিয়ম অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তি বিদেশ ভ্রমণ শেষে দেশে ফেরার সময় সাথে আনীত বৈদেশিক মুদ্রা যদি ১০ হাজার মার্কিন ডলারের কম হয়, তবে তা নিজের কাছে রাখা, ব্যাংকে বা অনুমোদিত মানিচেঞ্জারে বিক্রি করা, কিংবা আরএফসিডি হিসাবে জমা দেয়ার সুযোগ রয়েছে। কিন্তু ১০ হাজার ডলারের বেশি বৈদেশিক মুদ্রা দেশে আনলে নির্দিষ্ট ফরমে ঘোষণা দেয়া এবং দেশে আগমনের ৩০ দিনের মধ্যে তা ব্যাংকে জমা দেয়ার নিয়ম রয়েছে। কিন্তু তদন্তে দেখা গেছে, সংশ্লিষ্ট গ্রাহকরা নিয়মটি উপেক্ষা করে একই আরএফসিডি হিসাবে বারবার এবং নিয়মবহির্ভূতভাবে নগদ ডলার জমা দিয়েছেন বিদেশে খরচের উদ্দেশ্যে, যা নিয়মের ব্যত্যয়। এভাবে একজন গ্রাহক দেড় লাখ ডলার পাচার করেছেন। এ ঘটনা ব্যাংকটিকে সম্প্রতি ৩০ লাখ টাকা জরিমানা করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, এ ঘটনা উদঘাটনের পর বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে আন্তর্জাতিক ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে ব্যয়ের বিষয়টি বিশেষ নজরদারির মধ্যে নিয়ে আনা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে এসব বিষয়েও বিশেষ নজরদারির মধ্যে আনার। ফলে পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে যেখানে হরহামেশাই টাকা পাচার হতো তা অনেকটাই নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। বন্ধের পথে হুন্ডি তৎপরতাও। ফলে এক দিকে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়ছে, অপর দিকে বৈধপথে রেমিট্যান্স প্রবাহও বেড়ে গেছে।