ডিফেন্স চেরা পাসের নিখুঁত কারিগর

রফিকুল হায়দার ফরহাদ
Printed Edition
উমেলা মারমা
উমেলা মারমা

১৩ জুলাইয়ের ম্যাচ। ২-০তে পিছিয়ে থাকা নেপাল স্কোর ২-২ করে ফেলেছে। যেকোনো মুহূর্তে তৃতীয় গোল পেয়ে যাবে। এই হারে অনিশ্চিত হয়ে যাবে লাল-সবুজ নারীদের ট্রফি জয়। গ্যালারিতে বসা দর্শকদের মতো টিভি পর্দায় চোখ রাখা বাংলাদেশী দর্শকরা গভীর দুশ্চিন্তায়। ঠিক তখনই ৯৭ মিনিটে ডান প্রান্ত থেকে নিখুঁত এক সেন্টার। তাতে পা লাগিয়ে লাল-সবুজদের উল্লাসে ভাসান তৃষ্ণা রানী। ২১ জুলাই ফিরতি ম্যাচে ১-০তে এগিয়ে থাকা বাংলাদেশ দল। নেপালিদের চাপে ফেলে সুবিধাজনক অবস্থানে থাকতে আরেকটি গোল দরকার। তখনই আবারো সেই নিখুঁত পাস। দুই ডিফেন্ডারের ফাঁক গলে চমৎকার এক পাস। এবার গোলের দেখা পেলেন সাগরিকা। আগের ম্যাচ শেষে মাতামাতি তৃষ্ণা রানীকে নিয়ে। আর সাগরিকা শেষ ম্যাচসহ পুরো আসরে দুই হ্যাটট্রিক আর ৮ গোল করে টুর্নামেন্ট সেরা। কিন্তু ডিফেন্স চেরা পান দেয়া সেই মিডফিল্ডারটির খবর ক’জনে রেখেছেন। তিনি উমেলা মারমা। রাঙ্গামাটির এই মেয়ে দারুণ দারুণ সব থ্রুস পাস দিয়ে কোচ পিটার বাটলারের মন জয় করে নিয়েছেন। একাদেশ জায়গা হারালেও আবার তা পুনরুদ্ধার করেছেন। তার এই কামব্যাকই বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-২০ নারী দলকে শিরোপা ধরে রাখতে সাহায্য করেছে।

উমেলা মারমা যে প্রতিভাবান সেই ইঙ্গিত মিয়ানমারে যাওয়ার আগেই দিয়েছিলেন কোচ পিটার বাটলার। বাদ পড়া সাবিনা, মাছুরা এবং সানজিদাদের নিয়ে যখন প্রশ্ন বানে জর্জরিত বাটলার, তখন বিরক্ত হয়েই এই ব্রিটিশ কোচ জানান, ‘আপনারা তো উমেলার সম্পর্কে কোনো প্রশ্ন করছেন না। সে তো খুবই প্রতিভাবান ফুটবলার।’ মিয়ানমারে সেভাবে জ্বলে উঠতি পারেননি শেষ ম্যাচে বিরতির পর নামায়। তবে অনূর্ধ্ব-২০ নারী সাফে ছড়িয়েছেন দ্যুতি। ডান পা বাম পা দুই পায়েই তার অসাধারণ সব পাস। শেষ ম্যাচে তার এই গরম কাবাবের মতো পাস থেকে আরো দু’টি গোল মিস করেছেন সাগরিকা।

শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে বিরতির পর তাকে তুলে নেন কোচ। সুবিধা করতে পারছিলেন না। এরপর নেপালের বিপক্ষে একাদশে জায়গা হারান। তবে বদলি হিসেবে নেমে জয়সূচক গোলের জোগান দাতা। এরপর ফের চলে আসেন একাদশে। ভুটানের বিপক্ষে তার ক্রস থেকেই হ্যাটট্রিক পূর্ণ করা গোল শান্তি মার্ডির। পরে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে তার পাস থেকে তৃষ্ণার শট পোস্টে প্রতিহত হয়।

রাঙ্গামটির কাউখালী উপজেলার মেয়ে উমেলা। বাবা অটো রিকশাচালক। সংসার চালাতে মা একটি দোকান দিয়েছেন। উমেলারা দুই বোন এক ভাই। বোনদের মধ্যে উমেলা বড়। ‘২০২১ সালে ওমেন্স ডেতে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের টার্ফে ম্যাচ খেলতে আসি। তখনই আমার খেলা দেখে পছন্দ করেন বাফুফের কোচরা।’ জানান উমেলা। পরের বছরই অনূর্ধ্ব-১৫ জাতীয় দলে ডাক পান। কোচ গোলাম রাব্বানী ছোটনের আস্থা ছিল তার ওপর। ফলে অনূর্ধ্ব-১৫ সাফে তাকে নামিয়ে দেন ভুটানের বিপক্ষে। কমলাপুর স্টেডিয়ামে সেই ম্যাচেই জোড়া গোল তার। এরপর এ বছরই সিনিয়র জাতীয় দলে ডাক পান। আর সিনিয়র দলে প্রথম খেলা মিয়ানমারের মাঠে এশিয়ান কাপের বাছাইয়ে তুর্কমেনিস্তানের বিপক্ষে। সদ্য সমাপ্ত অনূর্ধ্ব-২০ সাফে বাংলাদেশ দলের সাত সিনিয়র দলের ফুটবলারের একজন ছিলেন এই উমেলা।

উমেলা জানান, আমার খুব ভালো লাগে যখন দারুণ দারুণ সব পাস দেই। আর সেই পাস থেকে গোল গুলো হয়। এবার অনূর্ধ্ব-২০ সাফে গোল না পেলেও একাধিক গোলের জোগানদাতা। গত বছর নারী লিগে খেলেছিলেন সিরাজ স্মৃতি ক্লাবে। সেখানেও ছিল না গোল করা ও করানোর দক্ষতা। গত লিগে তার করা গোল একটি। আর অ্যাসিস্ট পাঁচটি।

দেশে উমেলার প্রিয় খেলয়োড় ঋতুপর্ণা চাকমা, মণিকা চাকমা এবং ছোট শামসুন্নাহার। আর বিদেশে নিওনেল মেসি। সতীর্থরা বিদেশী লিগে খেলছেন। ভুটান লিগে তো এখন বাংলাদেশীদের ঢল।

উমেলা জানান, আমরাও স্বপ্ন বিদেশে লিগে খেলা।