বিদেশী চিকিৎসকদের রোগী দেখা বন্ধ করার সক্ষমতা নেই বিএমডিসির

হামিম উল কবির
Printed Edition

বাংলাদেশে বিদেশী চিকিৎসকরা রোগী দেখলে তা বন্ধ করার কার্যকর কর্তৃত্ব বা সক্ষমতা বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের (বিএমডিসি) হাতে নেই। চিকিৎসা ও শিক্ষার মান নিয়ন্ত্রণকারী এই সংস্থার অনুমোদন নেয়ার বাধ্যবাধকতা থাকলেও বাস্তবে বিদেশী চিকিৎসকদের বড় একটি অংশ নানা কৌশলে বিএমডিসিকে এড়িয়ে রোগী দেখছেন।

বিদেশী চিকিৎসকদের ফাঁকফোকর

বিশেষত ভারতীয় চিকিৎসকরা দেশীয় এজেন্টদের মাধ্যমে এই অবৈধ কার্যক্রমে বেশি সক্রিয়। তারা কখনো মূলধারার গণমাধ্যমে বিজ্ঞাপন দিয়ে, আবার কখনো বিকল্প প্রচারপত্র বা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে রোগী আকৃষ্ট করছেন। এমনকি ট্যাক্স না দিয়ে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা দেশে বাইরে পাচার করাও হচ্ছে। অভিযোগ রয়েছে- দেশীয় এজেন্টদের সহযোগিতায় অনেক ক্ষেত্রেই রোগী বিদেশে পাচার করা হচ্ছে।

বিএমডিসির সীমাবদ্ধতা

বিদেশী চিকিৎসকদের এভাবে অনিয়ন্ত্রিত কার্যক্রম চালানো ঠেকাতে ব্যর্থ হওয়ার কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে বিএমডিসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা: মুহাম্মদ সাইফুল ইসলাম নয়া দিগন্তকে বলেন, ‘বাংলাদেশে বিদেশী চিকিৎসকদের রোগী দেখতে হলে যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে বিএমডিসির অনুমোদন নিতে হবে। কিন্তু বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই তারা অনুমোদন প্রক্রিয়া এড়িয়ে নানা ছল-চাতুরির আশ্রয় নেন। বিএমডিসির হাতে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার মতো কোনো আইনি ক্ষমতা বা ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা নেই।’

তিনি আরো বলেন, বিদেশী চিকিৎসকদের অবৈধভাবে রোগী দেখা বন্ধ করতে হলে বিএমডিসিকে পর্যাপ্ত লোকবল দিতে হবে এবং কাউন্সিলকে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা প্রদান করতে হবে।

সাম্প্রতিক ঘটনা

কিছু দিন আগে বাংলাদেশ চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে ভারতীয় একটি বন্ধ্যত্ব চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান প্রকাশ্যে রোগী নেয়ার ঘোষণা দেয়। একইভাবে প্রশান্ত ফার্টিলিটি রিসার্চ সেন্টার এ মাসেই বসুন্ধরা কনভেনশন সেন্টারে রোগী নেয়ার উদ্যোগ নেয়। বিষয়টি নজরে আসার পর বিএমডিসি বসুন্ধরা কনভেনশন সেন্টারের কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়ে স্পষ্টভাবে জানায়, এ নামে কোনো বিদেশী চিকিৎসক রোগী দেখতে পারবে না।

গত ১৪ আগস্ট পাঠানো চিঠিতে বিএমডিসি শুধু ওই কার্যক্রম বাতিল করতেই বলেনি, বরং ভবিষ্যতে এ ধরনের বুকিং না দেয়ারও নির্দেশ দিয়েছে। চিঠিতে ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার ডা: মো: লিয়াকত হোসেন উল্লেখ করেন- ‘বাংলাদেশে কোনো চিকিৎসক বা চিকিৎসক দল চিকিৎসা কার্যক্রম পরিচালনা করতে চাইলে বিএমডিসি আইন ২০১০ অনুযায়ী সাময়িক রেজিস্ট্রেশন নেয়া বাধ্যতামূলক। সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক কোনো রেজিস্ট্রেশন নেননি, ফলে তার কার্যক্রম অবৈধ।’

দেশীয় বিশেষজ্ঞদের প্রতিক্রিয়া

অবসট্রেটিক্যাল অ্যান্ড গাইনিকোলজিক্যাল সোসাইটি অব বাংলাদেশের (ওজিএসবি) সভানেত্রী ও প্রখ্যাত ফার্টিলিটি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা: ফিরোজা বেগম এ প্রসঙ্গে বলেন- ‘বন্ধ্যত্ব চিকিৎসার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা বাংলাদেশেই রয়েছে। এ চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই, আবার বিদেশ থেকে চিকিৎসক আনারও দরকার নেই।’

তিনি প্রশান্ত ফার্টিলিটি রিসার্চ সেন্টারের নামে বিদেশী চিকিৎসকের চিকিৎসা কার্যক্রম সম্পূর্ণভাবে বন্ধের দাবি জানান।

দেশের ভেতরে বিদেশী চিকিৎসকদের কার্যক্রম বন্ধ করার কার্যকর ক্ষমতা বিএমডিসির হাতে নেই। ফলে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার সহযোগিতা এবং আইন সংশোধনের মাধ্যমেই এ অবৈধ চর্চা বন্ধ করা সম্ভব হবে।