- ইরানের সাথে সঙ্ঘাতের মধ্যেও গাজায় মারাত্মক হামলা অব্যাহত রেখেছে ইসরাইল
- ক্ষুধার্ত ফিলিস্তিনিদের ‘বিকল্প ফুরিয়ে যাচ্ছে’
- পর্যবেক্ষকদের মতে, ইসরাইলি হামলার পেছনে ‘হামাস নিধন’ যতটা না উদ্দেশ্য, তার চেয়ে বেশি লক্ষ্য গাজার অবকাঠামো সম্পূর্ণ ধ্বংস
ইরানের সাথে ইসরাইলের সঙ্ঘাতের মধ্যেও ইসরাইলি বাহিনী গাজায় মারাত্মক আক্রমণ অব্যাহত রেখেছে। জাতিসঙ্ঘের মানবাধিকার প্রধান ভলকার তুর্ক জেনেভায় ৫৯তম মানবাধিকার কাউন্সিলে অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরাইলের আচরণের নিন্দা জানিয়েছেন। বার্ষিক রিপোর্ট উপস্থাপন করার সময় তিনি এ নিন্দা জানান বলে জানিয়েছে আলজাজিরা।
তিনি বলেন, ইসরাইল যুদ্ধের কৌশল হিসেবে গাজায় ফিলিস্তিনিদের ওপর ভয়াবহ, অযৌক্তিক দুর্ভোগ ডেকে আনছে। ইসরাইল খাদ্যকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে এবং অতি প্রয়োজনীয় ত্রাণ আটকে দিচ্ছে। ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, ১৯ মাসেরও বেশি সময় ধরে ইসরাইলি হামলায় কমপক্ষে ৫৫ হাজার ৩৬২ জন নিহত হয়েছে, যার মধ্যে হাজার হাজার শিশুও রয়েছে। চিকিৎসা সূত্র আলজাজিরাকে জানিয়েছে যে, গতকাল সোমবার ভোর থেকে গাজাজুড়ে কমপক্ষে ২০ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন যার মধ্যে রাফায় বিতরণ কেন্দ্রের কাছে ১৫ জন ত্রাণপ্রার্থীও রয়েছেন। রাফাহ ত্রাণকেন্দ্রটি বিতর্কিত গাজা হিউম্যানিটেরিয়ান ফাউন্ডেশন (জিএইচএফ) দ্বারা পরিচালিত, যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইসরাইল সমর্থিত। উত্তর গাজায় আরো তিনজন ও গাজা সিটিতে হামলায় দু’জন নিহত হয়েছেন।
তিনি বলেন, খাদ্য বিতরণ কেন্দ্রে পৌঁছাতে মরিয়া বেসামরিক নাগরিকদের ওপর মারাত্মক হামলার ঘটনায় আমি অবিলম্বে, নিরপেক্ষ তদন্তের আহ্বান জানাচ্ছি। তিনি আরো বলেন ‘ইসরাইলি সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বিরক্তিকর, অমানবিক বক্তব্য জঘন্যতম অপরাধের কথা মনে করিয়ে দেয়।’
ভলকার তুর্ক গাজা উপত্যকায় ক্রমবর্ধমান মানবিক সঙ্কটের আলোকে বিশ্বব্যাপী সরকারগুলোকে পদক্ষেপ নেয়ার জন্য জরুরি আবেদন জানিয়েছেন। তিনি বলেন, গাজায় যা ঘটছে তা সম্পর্কে সরকারের সবাইকে জেগে উঠতে হবে। প্রভাবশালী সবাইকে এই অসহনীয় দুর্ভোগের অবসান ঘটাতে ইসরাইল ও হামাসের ওপর সর্বাধিক চাপ প্রয়োগ করতে হবে। গাজা ভবিষ্যতের ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের অংশ হয়ে উঠবে এমন দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধানের মাধ্যমেই স্থায়ী শান্তি সম্ভব।
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা বলছে, মাঠপর্যায়ের বিশ্লেষণে স্পষ্ট যে, ইসরাইলের লক্ষ্য এখন আর শুধু হামাস নয়; বরং যতটা সম্ভব আবাসিক এলাকা ধ্বংস করে বেসামরিক মানুষকে গাজা শহরের পশ্চিম প্রান্তে ঠেলে দেয়া। দেইর আল-বালাহ ও আশপাশের অঞ্চলগুলো থেকে দিনের পর দিন বিস্ফোরণের আওয়াজ, ধোঁয়ার কুণ্ডলী ও বিধ্বস্ত ভবনের চিত্র পাওয়া যাচ্ছে। গাজা সরকারের মিডিয়া অফিস জানিয়েছে, ইসরাইলি বাহিনীর ধারাবাহিক হামলায় এখন পর্যন্ত গাজার ৬০ শতাংশ ভবন সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে। আহত ও নিহতের প্রকৃত সংখ্যা নিরূপণ করা কঠিন হয়ে পড়ছে, কারণ বহু পরিবার ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে আছে।
স্থানীয় পর্যবেক্ষকদের মতে, এই হামলার পেছনে ‘হামাস নিধন’ যতটা না উদ্দেশ্য, তার চেয়ে বেশি লক্ষ্য হলো গাজার সামাজিক অবকাঠামো সম্পূর্ণভাবে ভেঙে ফেলা। এ দিকে আন্তর্জাতিক মহল এখনো কার্যকর কোনো হস্তক্ষেপ করতে পারেনি, বরং ইসরাইল-ইরান উত্তেজনায় দৃষ্টি সরিয়ে ফেলেছে গাজার চলমান সঙ্কট থেকে। এই হামলার ধারা যদি এভাবেই চলতে থাকে, তাহলে গাজা হবে শুধুই ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া এক মানবিক বিপর্যয়ের প্রতীক- বিশ্লেষকরা এমনটাই বলছেন।
ক্ষুধার্ত ফিলিস্তিনিদের ‘বিকল্প ফুরিয়ে যাচ্ছে’
মে মাসের শেষের দিকে ইসরাইল খাদ্য, ওষুধ ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের ওপর থেকে প্রায় তিন মাসের অবরোধ আংশিকভাবে তুলে নেয়ার পর জিএফএইচ গাজায় সাহায্য বিতরণ শুরু করে। জাতিসঙ্ঘ ও প্রধান মানবিক গোষ্ঠীগুলো জিএফএইচ-এর সাথে সহযোগিতা করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে, কারণ তারা মানবিক চাহিদার চেয়ে ইসরাইলি সামরিক লক্ষ্যকে অগ্রাধিকার দেয় বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
এই মাসের শুরুতে, রাফাহ ও নেটজারিম করিডোরে ইসরাইলি বাহিনী ত্রাণপ্রত্যাশীদের ওপর গুলি চালানোর ঘটনার পর জিএইচএফ ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রগুলোর কার্যক্রম সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল। শনিবার গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে যে, জিএইচএফ কার্যক্রম শুরু করার পর থেকে ত্রাণ বিতরণ স্থানের কাছে এখন পর্যন্ত কমপক্ষে ২৭৪ জন নিহত এবং দুই হাজারেরও বেশি আহত হয়েছেন।



