চট্টগ্রাম বন্দর

এনবিআর কর্তাদের কলমবিরতি ও ঈদের ছুটির প্রভাবে কনটেইনার জট

স্বাভাবিক সময়ে দিনে গড়ে চার হাজারের বেশি কনটেইনার খালাস হয়। কিন্তু ছুটির সময় প্রতিদিন গড়ে মাত্র দেড় হাজার কনটেইনার খালাস হয়েছে।

বাসস
Printed Edition
চট্টগ্রাম বন্দর
চট্টগ্রাম বন্দর |সংগৃহীত

এনবিআর কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের কলমবিরতি এবং ঈদুল আজহার দীর্ঘ ছুটির প্রভাবে চট্টগ্রাম বন্দরে আবারো কনটেইনার জট তৈরি হয়েছে। ছুটির সময় বন্দর সচল থাকলেও আমদানি-রফতানির সাথে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও অধিকাংশ শিল্পকারখানা বন্ধ থাকায় কনটেইনার খালাসের গতি কমে যায়। এর আগে এনবিআর বিভক্ত করার প্রতিবাদে একনাগাড়ে বেশ কয়েকদিন দেশব্যাপী কলমবিরতি পালন করেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

বন্দরের কর্মকর্তারা জানান, স্বাভাবিক সময়ে দিনে গড়ে চার হাজারের বেশি কনটেইনার খালাস হয়। কিন্তু ছুটির সময় প্রতিদিন গড়ে মাত্র দেড় হাজার কনটেইনার খালাস হয়েছে। ফলে বন্দরের বহির্নোঙরে পণ্য খালাসের অপেক্ষায় রয়েছে ৪৫টি বিদেশগামী জাহাজ, এর মধ্যে ১২টি কনটেইনারবাহী।

গতকাল রোববার সর্বশেষ কনটেইনার রয়েছে ৪৪ হাজার ৫৪৮ টিইইউস। বন্দরের অভ্যন্তরে কনটেইনার কমলেও বহির্নোঙরে ১২টি কনটেইনারবাহী জাহাজ অবস্থান করছে। এসব জাহাজে আছে প্রায় ১২ হাজার কনটেইনার। পাশাপাশি বন্দর জেটিতেও ১১ জাহাজ কনটেইনার ওঠানামা হচ্ছে। মূলত গত ১১ দিনে বন্দরের স্বাভাবিক অপারেশনাল কার্যক্রম চললেও বেসরকারি ১৯ ডিপো থেকে বেশি কনটেইনার আসায় নতুন করে জট তৈরি হয়েছে।

চট্টগ্রাম বন্দর সূত্রে জানা গেছে, বেসরকারি ১৯ ডিপো থেকে বেশি কনটেইনার বন্দরে এলেও সে অনুপাতে কনটেইনার ডিপোতে না যাওয়াতে বন্দরের অভ্যন্তরে কনটেইনার জট তৈরি হয়েছে।

বন্দরের তথ্য অনুযায়ী, ঈদুল আজহার ছুটির আগে ৪ জুন চট্টগ্রাম বন্দরে কনটেইনার ছিল ৩৬ হাজার ২১৫ টিইইউস। এর মধ্যে ১১ দিনে চট্টগ্রাম বন্দরে আমদানি করা কনটেইনার নেমেছে ৪২ হাজার ৭৯৫ টিইইউস এবং রফতানি পণ্যবাহী কনটেইনার জাহাজীকরণ হয়েছে ৪২ হাজার ৪২ টিইইউস।

একই সময়ে বেসরকারি ডিপোগুলো থেকে রফতানিপণ্য ভর্তি কনটেইনার আসে ১৫ হাজার ৯৪৮ টিইইউস আর খালি কনটেইনার আসে ছয় হাজার ৬২৫ টিইইউস। পাশাপাশি আমদানি পণ্যভর্তি ৯ হাজার ৮০২ টিইইউএস এবং খালি পাঁচ হাজার ২৮৩ টিইইউস কনটেইনার ডিপোগুলোতে পাঠানো হয়।

সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রাম বন্দর অভ্যন্তরে আট হাজার ৮৮৮ টিইইউস কনটেইনার হ্যান্ডলিং হয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দরের জেটি ও বহির্নোঙর মিলে পণ্য ও কনটেইনারবাহী ৯৮টি জাহাজ বর্তমানে অবস্থান করছে। এর মধ্যে ৫৫টি জাহাজ থেকে কনটেইনার ও বাল্ক পণ্য খালাস চলছিল। অন্যদিকে গত ৪ জুন চট্টগ্রাম বন্দরে জেটি ও বহির্নোঙরে জাহাজ ছিল ১৪৭টি।

বন্দরের তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় জাহাজ থেকে কনটেইনার বন্দরে নেমেছে পাঁচ হাজার ২০৬ টিইইউস, ঢাকা আইসিডি (ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপো) থেকে এসেছে ১৮৬ টিইইউস। অফডকগুলো থেকে রফতানি পণ্যভর্তি কনটেইনার এসেছে দুই হাজার ৩২৪ টিইইউস এবং খালি কনটেইনার এসেছে ৮৩৭ টিইইউস।

একইভাবে তিন হাজার ৬৮২ টিইইউস কনটেইনার জাহাজীকরণ হয়েছে। ৮৯ টিইইউস কনটেইনার ঢাকা আইসিডিতে পাঠানো হয়েছে। অফডকগুলোতে আমদানি পণ্যভর্তি কনটেইনার পাঠানো হয়েছে এক হাজার ২১১ টিইইউস। বন্দর থেকে ৯৯২ টিইইউস খালি কনটেইনার অফডকগুলোতে পাঠানো হয়েছে।

৪৩৭ টিইইউস আমদানিপণ্যবাহী কনটেইনার অনচেচিজ সরাসরি আমদানিকারকদের ডেলিভারি দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি বন্দর অভ্যন্তর থেকে ৭৮৮ টিইইউস কনটেইনার পণ্য খালাস দেয়া হয়েছে।

বন্দরে আমদানি-রফতানির সাথে সংশ্লিষ্টরা বলেন, শুরুতে এনবিআরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কলমবিরতির কারণে বন্দরে কনটেইনার জট তৈরি হয়। পরে গত ৫ জুন থেকে শুরু হয় কোরবানির ঈদের টানা আট দিনের সরকারি ছুটির সাথে সাপ্তাহিক ছুটি দুই দিন।

এ সময়ে চট্টগ্রাম বন্দরের অপারেশনাল কার্যক্রম সচল থাকলেও আমদানি-রফতানির সাথে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন কোম্পানি, শিল্পকারখানা, ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রতিষ্ঠানের বেশির ভাগ বন্ধ থাকায় কনটেইনার খালাস কম হয়েছে।

শিপিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের পরিচালক খায়রুল আলম সুজন বলেন, সবকিছু স্বাভাবিক থাকলে সামনের কর্মদিবসগুলোতে সব স্টেকহোল্ডাররা কাজে ফিরলে সরবরাহ বাড়বে এবং বন্দরে জমে থাকা কনটেইনারের পরিমাণ কমে আসবে।

চট্টগ্রাম বন্দরের সদস্য (হারবার ও মেরিন) ক্যাপ্টেন আহমেদ আমিন আবদুল্লাহ বলেন, অতীতের অভিজ্ঞতায় এবার ঈদের ছুটিকে সামনে রেখে আগেই বন্দরের ইয়ার্ড খালি করার চেষ্টা ছিল। বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারদের সাথে সভা করে বিভিন্ন নির্দেশনা দেয়া হয়েছিল। সেকারণে এবারের ঈদের বন্ধে অন্যবারের তুলনায় ভালো অবস্থায় ছিল বলে জানান তিনি।