২০২৪ সালের ৩৬ জুলাই (৫ আগস্ট)। সেনা প্রধানের ভাষণে শেখ হাসিনার বিদায়ের খবর শুনে বাঁধ ভাঙ্গা উল্লাসে ফেটে পড়ে রাজধানীবাসী। আনন্দের নগরীতে পরিণত হয় গোটা ঢাকা। লাখ লাখ মানুষের ঢল নামে রাস্তা, অলিগলি ফুটপাথে। শিশু থেকে শুরু করে বিভিন্ন বয়সী নারী-পুরুষ বাসা ছেড়ে নেমে আসেন রাস্তায়। শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে পালিয়েছেন; এমন খবরে উল্লাসে মেতে ওঠে গোটা রাজধানী। অনেকেই রাস্তায় দাঁড়িয়ে আদায় করেন শুকরানা নামাজ। নানা স্লেøাগানে মুখরিত করে তোলা হয় পাড়া-মহল্লা। ১৬ বছর বুকের ভেতর জমে থাকা নানা আঘাত যন্ত্রণা কষ্টগুলো যেন আনন্দে পরিণত হয় তাদের। আনন্দে কেঁদে ফেলেন অনেকে। একে-অপরকে জড়িয়ে ধরে বিজয় উল্লাস প্রকাশ করেন। পায়ে হেঁটে, বাইকে-রিকশায় করে উল্লাস প্রকাশ করে মিষ্টি বিতরণ করেন অনেকে।
সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান জনগণের উদ্দেশে দেয়া ভাষণে যখন শেখ হাসিনার পদত্যাগের কথা উল্লেখ করেন তখনই আনন্দে ফেটে পড়েন দেশের মানুষ। সেই মুহূর্তে শেখ হাসিনার ক্ষমতার আধিপত্য এবং আওয়ামী লীগের কথিত রাজনৈতিক দুর্গ এক মুহূর্তেই ভেঙে পড়ে। উল্লাসে মেতে ওঠে গোটা রাজধানী। মতিঝিল থেকে শুরু করে পল্টন, প্রেস ক্লাব, মৎস্য ভবন, নয়াপল্টন, ফকিরাপুল, আরামবাগ, কাকরাইল, শাহবাগ, ফার্মগেট, বিজয় সরণি, মিরপুর, পল্লবী, উত্তরা। অপর দিকে কুড়িল, রামপুরা, বনশ্রী, মালিবাগ, ধানমন্ডি, মোহাম্মদপুর, লালমাটিয়া, নিউমার্কেট, আজিমপুর, যাত্রাবাড়ী, ডেমরাসহ প্রতিটি এলাকার অলিগলিতে বিজয় মিছিল করা হয়।
রাজধানীর রামপুরা ব্রিজ এলাকায় আনন্দ উল্লাস করেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় তারা সেনা সদস্যদের উদ্দেশ্য করে থ্যাংক ইউ, থ্যাংক ইউ বলে স্লোগান দেন। সরেজমিন দেখা যায়, শিক্ষার্থীরা সেনাবাহিনী প্রধানের ভাষণ দেয়ার সংবাদ শুনে উল্লাসে ফেটে পড়ে। এ সময় তারা একে-অন্যের সাথে কোলাকুলি করেন। একইসাথে তারা কর্তব্যরত সেনাবাহিনীর সদস্যদের সাথে কোলাকুলি করেন। অবেগ ধরে রাখতে না পেরে অনেকেই কান্নায় ভেঙে পড়েন। মার্চ টু ঢাকা কর্মসূচিতে যোগ দিতে সকাল থেকে বাড্ডা, রামপুরা এলাকায় উপস্থিত ছিলেন ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি, ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি, নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি, ইন্ডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি, আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, সাউথইস্ট ইউনিভার্সিটি, আহসানউল্লাহ ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি, কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি, ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, প্রেসিডেন্সি ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি অব স্কলার্স, ভিকারুননিসা নূন কলেজ, ইম্পেরিয়াল কলেজ এবং রামপুরার আশপাশের অন্য সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা।
মতিঝিলে হাজার হাজার লোক রাস্তায় নেমে আসেন। তারা বাঁশি, ঢোল, ভাঙা পানির জার, টিন পিটিয়ে আনন্দ উল্লাস করেন। স্ত্রী-সন্তানদের নিয়েও বের হয়েছেন অনেকে। তারা রিকশায়, বাইকে করে বিভিন্ন এলাকা ঘুরে বেড়িয়েছেন।
তারা সেদিন বলেছিলেন শেখ হাসিনা সরকারের প্রচণ্ড নির্যাতনের শিকার হয়ে পথে পথে কুকুরের মতো ঘুরে বেড়াতে হয়েছে। বিনা কারণে দেশের মানুষের বাক্স্বাধীনতা হরণ করা হয়েছে। লাখ লাখ মানুষ বাবা-মা, স্ত্রী-সন্তান ফেলে বাড়িছাড়া হয়ে যাযাবরের মতো জীবনযাপন করেছেন। ১৬ বছরে কত মায়ের বুক খালি করা হয়েছে, গুম হয়েছে অসংখ্য মানুষ। তার অনেক হিসাব বাকি রয়েছে। এর হিসাব না দিয়ে পালিয়ে গেলে তো হবে না।
শেখ হাসিনার পদত্যাগের খবর নিশ্চিত করার পর জনতার উল্লাসে চারদিক মুখরিত হয়ে ওঠে। রাজধানীর রাজপথ দখলে নেয় লাখ লাখ মানুষ। তাদের মধ্যে হাজার হাজার বিক্ষুব্ধ মানুষ শেখ হাসিনার বাসভবন গণভবনে প্রবেশ করে বিজয় উদ্যাপন করে। শুধু গণভবন নয়; অসংখ্য মানুষ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও জাতীয় সংসদেও প্রবেশ করে। দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত শিশু, বৃদ্ধ, শ্রমজীবী মানুষ, শিক্ষার্থী সবাই রাজপথে নেমে দীর্ঘদিনের একনায়কতান্ত্রিক শাসনের পতন উদ্যাপন করে।