আগামী সেপ্টেম্বরে আরব আমিরাতে এবারের এশিয়া কাপ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে টি-২০ ফরম্যাটে। টাইগারদের সাথে রয়েছে শ্রীলঙ্কা, আফগানিস্তান ও হংকং। অন্য দিকে দ্বিতীয় গ্রুপে আছে ভারত, পাকিস্তান, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও ওমান। প্রতিপক্ষের মান ও সাম্প্রতিক পারফরম্যান্স বিবেচনায় বাংলাদেশের সামনে কঠিন চ্যালেঞ্জ অপেক্ষা করছে। নিজেদের গ্রুপে উতরে গেলেও সুপার ফোরে যে অপেক্ষা করছে ভারত ও পাকিস্তান।
সম্প্রতি পাকিস্তানের বিপক্ষে ঘরের মাঠে ২-১ ব্যবধানে সিরিজ জয় বাংলাদেশের আত্মবিশ্বাসে বড় রকমের টনিক যোগ করেছে। শক্তিশালী প্রতিপক্ষের বিপক্ষে এমন জয় দলের আত্মবিশ্বাস বাড়িয়েছে। বিশেষ করে তরুণ খেলোয়াড়দের পারফরম্যান্স এবং ডেথ ওভারে বোলিংয়ের উন্নতি ছিল চোখে পড়ার মতো।
তবে শ্রীলঙ্কা ও আফগানিস্তানের বিপক্ষে অতীত রেকর্ড এবং সাম্প্রতিক পারফরম্যান্সে মিশ্র চিত্রই ধরা পড়ে। শ্রীলঙ্কার সাথে শেষ সফরে টেস্ট ও ওয়ানডে সিরিজে হেরে গেছে বাংলাদেশ, যদিও টি-২০ সিরিজে ২-১ ব্যবধানে জয় পেয়েছে। আফগানিস্তান বাংলাদেশকে চাপে ফেলতে পারে তাদের স্পিন আক্রমণ দিয়ে। রশিদ খান ও মুজিব উর রহমানের মতো বিশ্বমানের স্পিনাররা টি-২০ ফরম্যাটে বড় প্রভাব ফেলতে সক্ষম।
হংকং তুলনামূলক দুর্বল প্রতিপক্ষ হলেও টি-২০ ফরম্যাটে ছোট দলগুলোও চমকে দিতে পারে, বিশেষ করে যদি তারা শুরুতে কিছু উইকেট তুলে নিতে সক্ষম হয়। এ কারণে প্রতিটি ম্যাচেই পূর্ণ মনোযোগ ও কৌশলী ক্রিকেট খেলা জরুরি। বাংলাদেশের শক্তি হিসেবে রয়েছে অভিজ্ঞ ব্যাটাররা। তবে ধারাবাহিক হওয়া জরুরি। আছে তরুণ ফাস্ট বোলারদের আত্মবিশ্বাসী বোলিং। তবে মিডল অর্ডারে ধারাবাহিকতা এবং ফিনিশিং সমস্যাগুলো এখনো রয়ে গেছে।
সব মিলিয়ে এশিয়া কাপের গ্রুপ পর্বে প্রতিটি ম্যাচই হবে বাংলাদেশের জন্য কঠিন পরীক্ষা। সেমিফাইনালে উঠতে হলে অন্তত দু’টি ম্যাচে জয় পেতেই হবে। কন্ডিশন, টস ও ইনফর্ম খেলোয়াড়দের পারফরম্যান্স বড় ভূমিকা রাখবে এই যাত্রায়। সঠিক কৌশল ও চাপ সামাল দেয়ার দক্ষতা থাকলে বাংলাদেশ টুর্নামেন্টে অনেকদূর যেতে পারে।
বর্তমান টি-২০ স্কোয়াড
বাংলাদেশের বর্তমান টি-২০ স্কোয়াড একটি রূপান্তরের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। অভিজ্ঞতার সাথে তরুণদের মিশেলে দলটি ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত হওয়ার চেষ্টা করছে। তানজিদ হাসান তামিম, পারভেজ হোসেন ইমন, লিটন দাস ও তাসকিন আহমেদের মতো অভিজ্ঞ ক্রিকেটাররা স্কোয়াডে ভারসাম্য বজায় রাখছেন। অন্য দিকে তৌহিদ হৃদয়, জাকের আলি অনিক, রিশাদ হোসেন, তানজিম হাসান সাকিব ও শরিফুল ইসলামরা হয়ে উঠছেন ভবিষ্যতের স্তম্ভ।
সাম্প্রতিক সময়ে দলের সবচেয়ে বড় ইতিবাচক দিক হলো বোলিং ইউনিটের উন্নতি। তাসকিন, শরিফুল ও মোস্তাফিজুর রহমান একটি ধারাবাহিক পেস আক্রমণ গড়ে তুলেছেন। স্পিন বিভাগে মিরাজ ও রিশাদ হোসেন ভালোই প্রভাব রাখছেন, বিশেষ করে মাঝের ওভারগুলোতে।
তবে দলের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ব্যাটিং অর্ডারের স্থিতিশীলতা। ওপেনিংয়ে তানজিদ ও পারভেজ ভালো শুরু দিলেও মিডল অর্ডারে এখনো ফিনিশার সংকট রয়েছে। আফিফ হোসেন, সোহান বা মাহমুদুল্লাহরা মাঝে মধ্যে ভালো করলেও দিলেও আস্থার প্রতিক হয়ে উঠতে পারছেন না; যে কারণে কখনো দলে সুযোগ পাচ্ছেন, আবার বাদও পড়ছেন। টি-২০ তে ম্যাচ জেতাতে এমন খেলোয়াড়ের প্রয়োজন যারা শেষ কয়েক ওভারে দ্রুত রান তুলতে পারেন। হালনাগাদ জায়গা তৈরি করে নিয়েছেন জাকের আলি, শামীম পাটোয়ারি।
বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড এখন তরুণদের ওপর ভরসা রেখে একটি আক্রমণাত্মক, আধুনিক টি-২০ দল গড়ার চেষ্টা করছে। এ লক্ষ্যে ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে অভিজ্ঞতা অর্জন, বিশ্লেষণভিত্তিক দল নির্বাচন এবং টি-২০ স্পেশালিস্ট তৈরি করা জরুরি। যদি এই পরিবর্তনের পরিকল্পনা ধরে রাখা যায়, তবে আগামী কয়েক বছরে বাংলাদেশ টি-২০ বিশ্বমঞ্চে আরো প্রতিযোগিতামূলক দল হয়ে উঠতে পারে।
নেতৃত্ব ও অভিজ্ঞতা : তিন বিভাগে তিনজনকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল। টেস্ট অধিনায়কত্ব পরিহার করেছেন নাজমুল হোসেন শান্ত। তার জায়গায় দায়িত্ব সামলাচ্ছেন মেহেদী হাসান মিরাজ। ওয়ানডেও সামলাচ্ছেন তিনি। টি-২০ লিটন দাসের নেতৃত্বে শুরুতে খারাপ করলেও শেষ দিকে ভক্তদের আস্থা অর্জন করতে পেরেছেন।
ব্যাটিং বিভাগ : প্রধান ওপেনার হিসেবে তরুণদের জায়গা বিনির্মাণে সাহসী পদক্ষেপ। তৌহিদ হৃদয় দ্রুত উন্নতির পথে, বিশেষ করে মিডল অর্ডার ও ফিনিশিংয়ে রানের দায় বয়ে নিতে সক্ষম।
বোলিং ইউনিট : মোস্তাফিজুর রহামন ‘ডেথ ওভারে ডট বলের রাজা’ হিসেবে পরিচিত, তানভির, তাসকিন, শরিফুল, তানজিম সাকিব তরুণ শক্তির প্রতিনিধিত্ব করছে। রিশাদ হোসেন স্পিন বিভাগে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখবেন। টি-২০ ফরম্যাটে দ্রুত প্রতিক্রিয়া ও শক্তিশালী ফিল্ডিং ফলাফল প্রভাবিত করতে পারে।



