ইসলামের দৃষ্টিতে বিজয় : আমাদের দায়িত্ব

Printed Edition
ইসলামের দৃষ্টিতে বিজয় : আমাদের দায়িত্ব
ইসলামের দৃষ্টিতে বিজয় : আমাদের দায়িত্ব

মুফতি জহির রাইহান

ডিসেম্বর এলে বাংলার বাতাসে অদ্ভুত এক অনুভূতি ভেসে ওঠে। সকাল বেলার কুয়াশার মধ্যে যেন কোথাও লুকিয়ে থাকে লাল-সবুজের দৃপ্ততার হাসি। শহরের রাস্তা, গ্রাম্য পথ, মানুষের হৃদয়- সব জায়গাতেই তখন একটি শব্দ বাজতে থাকে নিঃশব্দ সুরে- বিজয়। কিন্তু আমরা কি শুধু এই বিজয়কে আনন্দের পোশাকে সাজিয়ে উদযাপন করি, নাকি এর গভীর অর্থও উপলব্ধি করি? ইসলাম আমাদের মনে করিয়ে দেয়- বিজয় হলো দায়িত্বের বীজবপন, আত্মশুদ্ধির সূচনা এবং সত্যের পাশে দাঁড়ানোর অঙ্গীকার।

বিজয় ইসলামের দৃষ্টিতে মুক্তির চেয়েও বড় কিছু : ইসলামের ভাষায় বিজয় মানে শুধু শক্তির জয় নয়; এটি আত্মার জয়। কুরআন বলে- ‘বিজয় আল্লাহর পক্ষ থেকেই আসে’। অর্থাৎ- সত্যের ওপর অবিচল থাকা এবং অন্যায়ের সামনে ঘাড় না ঝোঁকানো, এটিই বিজয়ের মূল পরিচয়। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধও ছিল এমনই এক লড়াই। এ লড়াই ছিল মানুষের মর্যাদা রক্ষার লড়াই। এ লড়াই ছিল স্বাধীনভাবে বাঁচার অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াই। শহীদরা তাদের রক্ত দিয়ে প্রমাণ করেছিলেন, মানুষ চাইলে যেকোনো অত্যাচারের বাঁধ ভেঙে দাঁড়াতে পারে।

ইসলামের বিজয়-দর্শন : শুধু বাহ্যিক নয়, আধ্যাত্মিকও

ইসলাম বিজয়ের ব্যাখ্যা দেয় আয়াত ও ঐতিহাসিক দৃষ্টান্তে। আল্লাহ বলেন- ‘আল্লাহ তোমাদের সাহায্য করলে তোমাদের পরাজিত করার কেউ নেই।’ অর্থাৎ- বিজয়ের প্রকৃত মালিক মানুষ নয়, আল্লাহ। মানুষ কেবল তাঁর সন্তুষ্টির পথে হাঁটলে বিজয় লাভ করে। বারবার কুরআনে একটি সত্য পুনরাবৃত্ত হয়েছে- বিজয় চরিত্রের ফসল, সংখ্যার নয়। বদরের ৩১৩ জন মুমিন ছিলেন অল্প, কিন্তু বিজয় হয়েছে; হুনাইনের বিশাল সেনাবাহিনীও প্রাথমিক পর্যায়ে হেরে যায়। এ শিক্ষা আজও সত্য- নৈতিক পরাজয়ই প্রকৃত পরাজয়। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে যারা জীবন দিয়েছেন, তারা কেবল দেশকে স্বাধীন করেননি; তারা প্রমাণ করেছিলেন যে- অন্যায়, জুলুম, নিপীড়ন কোনো দিন মানবিক মর্যাদাকে বন্দী রাখতে পারে না। ইসলামী পরিভাষায় তারা ছিলেন ‘মুসলিম হৃদয়ের ইজ্জত রক্ষার সংগ্রামী’। কারণ ইসলাম কখনো আত্মসমর্পণের ধর্ম নয়; ইসলাম সত্যের সামনে মাথা তুলে দাঁড়ানোর শিক্ষা দেয়।

আমাদের বিজয় : রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতা

একাত্তরে বিজয় ছিল এক ধর্ম-বর্ণ মানবধারার সংগ্রাম- নৈতিকতা বনাম বর্বরতা, মানবিকতা বনাম ঘৃণা, স্বাধীনতা বনাম নিপীড়ন। শহীদদের রক্তে রচিত এই মাটি আল্লাহর কাছে বিশেষ মর্যাদাপ্রাপ্ত। শহীদরা জাতির স্মৃতিতে অমর; তাদের রক্ত আমাদের হৃদয়ে প্রতিদিন একটি প্রশ্ন রেখে যায়, ‘আমরা কি সেই বাংলাদেশে বসবাস করছি, যে বাংলাদেশের জন্য তারা জীবন দিয়েছেন?’ এ প্রশ্ন এড়িয়ে যাওয়া যায় না; কারণ শহীদদের রক্ত কেবল যুদ্ধক্ষেত্রে প্রবাহিত হয়নি, তা আমাদের প্রতিটি প্রজন্মের বিবেকের ওপর অর্পিত হয়েছে একটি জাতীয় আমানত হিসেবে।

বিজয় দিবস : উৎসবের দিন নয়, আত্মার জাগরণের দিন : আজ বিজয় দিবসকে আমরা দেখি নানা সাজসজ্জা, আনুষ্ঠানিকতা এবং উদযাপনে ভরা একটি দিন হিসেবে। কিন্তু ইসলাম শেখায়- একটি জাতির বিজয় তখনই পবিত্র হয়, যখন তা উদযাপনের চেয়ে শিক্ষা দেয় বেশি। মক্কা বিজয়ের দিন নবী সা:-এর চোখে যে বিনম্রতা ছিল, তা আমাদের জন্য পথনির্দেশ। তিনি প্রতিশোধ নেননি; বরং ক্ষমার দরজা খুলে দিয়েছিলেন সবার জন্য। এটিই বিজয়ের মূল সৌন্দর্য-বিনম্রতা। বিজয় দিবস তাই শুধু একটি স্মরণদিবস নয়; এটি হলো ভুলগুলো সংশোধনের দিন, নৈতিকতার প্রতি নতুন করে প্রতিশ্রুতির দিন, শহীদের রক্তের সামনে মাথা নত করার দিন, ভবিষ্যতের স্বপ্ন লিখে নেয়ার দিন।

বিজয় দিবস উদযাপন ইসলামের সঠিক রূপরেখা

১. অতিরিক্ততা ছাড়া আনন্দ : ইসলাম আনন্দকে অনুমোদন করে; বরং উৎসাহ দেয় কিন্তু বাড়াবাড়িকে নয়। শহীদদের স্মরণ, ইতিহাসের পাঠ, দোয়া-মুনাজাত, দান- এসবই ইসলামী চেতনার আনন্দ।

২. শহীদদের অধিকারের প্রতি সম্মান : একজন শহীদ ইসলামেই সর্বোচ্চ মর্যাদার অধিকারী। শহীদদের প্রতি সম্মান শুধু কিছু পুষ্পস্তবক নয়; বরং তাদের আদর্শ রক্ষা করা। দেশপ্রেম, আত্মত্যাগ, সততা, ঐক্য, সত্য প্রতিষ্ঠা, এগুলোই শহীদদের প্রতি সত্যিকারের শ্রদ্ধা।

৩. দেশপ্রেমের ইসলামী সংজ্ঞা : দেশপ্রেম কখনোই ইসলামে নিষিদ্ধ নয়। প্রিয় নবী সা: মক্কা ত্যাগের সময় শহরটির প্রতি যে মমতা প্রকাশ করেছেন, এটি প্রমাণ করে- মুসলিম হওয়া মানেই দেশকে ভালোবাসা।

দেশপ্রেম ইসলামের দৃষ্টিতে তিন ভাগ : ১. মাটি ও মানুষকে ভালোবাসা; ২. দেশের নৈতিক ভিত্তি রক্ষা; ৩. অন্যায় থেকে দেশকে মুক্ত রাখা।

যদি কোনো জাতি শুধু গান গেয়ে দেশকে ভালোবাসে; কিন্তু সমাজে জুলুম চলতেই থাকে, তবে সে ভালোবাসা নয়, ভণ্ডামি।

স্বাধীনতার স্তরসমূহ : ইসলামী মানদণ্ডে আমাদের অবস্থান : ইসলামের মতে স্বাধীনতা চারটি স্তরে সম্পন্ন হয়- ১. আধ্যাত্মিক স্বাধীনতা : আল্লাহ ছাড়া কারো দাস না হওয়া। আজ আমরা কি অর্থ, দুনিয়াবি চাকচিক্য, জনপ্রিয়তা বা নৈতিক নিম্নতার দাস হয়ে যাইনি? ২. নৈতিক স্বাধীনতা : সততা, ন্যায়বিচার, মানবিকতা- এগুলোই স্বাধীন সমাজের মূল স্তম্ভ। দুর্নীতি, হিংসা, অনৈতিকতা- এসব যদি রাষ্ট্র ও সমাজে বিস্তৃত হয়, তবে কাগজের স্বাধীনতা আমরা পেলেও, নৈতিক স্বাধীনতা হারাই। ৩. জ্ঞানগত স্বাধীনতা : অজ্ঞতা, ভুল তথ্য, বিভাজনমূলক রাজনীতি- এগুলো মানুষের চিন্তা বন্দী করে। জ্ঞান, গবেষণা, সত্য অনুসন্ধান- এসব স্বাধীন জাতির পরিচয়। যে জাতি বই থেকে দূরে, বিভ্রান্তির কাছে নত, সে জাতির স্বাধীনতা বিপন্ন হয়ে পড়ে। ৪. রাষ্ট্রিক স্বাধীনতা : বহিরাগত প্রভাব ও দখল থেকে মুক্ত থাকা। ১৯৭১ আমাদের এটি দিয়েছে; কিন্তু অন্য তিন স্তর পূর্ণ না হলে রাষ্ট্রিক স্বাধীনতা টিকে না। আমাদের প্রশ্ন- স্বাধীনতার চার স্তরের মধ্যে আমরা কয়টি রক্ষা করছি?

আজকের সবচেয়ে বড় যুদ্ধ : দৃশ্যমান নয়, অদৃশ্য শত্রুর বিরুদ্ধে : একাত্তরের শত্রু দৃশ্যমান ছিল। আজকের শত্রু-নৈতিক অবক্ষয়, আত্মপরিচয়ের সঙ্কট, বিদেশী সাংস্কৃতিক আগ্রাসন, মিডিয়ার মাধ্যমে মূল্যবোধের ধ্বংস, লোভ, মদ, মাদক, ভোগবাদ- এসব শত্রু বন্দুক ধরে না; কিন্তু জাতির আত্মাকে হত্যা করে। ইসলাম বলেছে, ‘যে জাতি নিজের অবস্থার পরিবর্তন আনে না, আল্লাহ তাদের অবস্থা পরিবর্তন করেন না।’ আমাদের আজকের বিজয় এই অভ্যন্তরীণ যুদ্ধেই নির্ভর করছে।

বিজয়ের নৈতিকতা : পাঁচটি ইসলামী মূল্যবোধ

আজ যদি আমরা বিজয়ের আলোকে সত্যিকারভাবে পুনরাবিষ্কার করতে চাই, তাহলে ইসলামের পাঁচটি মূল মূল্যবোধকে বুঝতে হবে- এ মূল্যবোধই একাত্তরের বিজয়কে পবিত্র করে এবং আজকের বাংলাদেশকে পথ দেখায়।

১. ন্যায়-স্বাধীনতার প্রথম শর্ত : ইসলাম বলে, ‘আল্লাহ ন্যায়বিচারের আদেশ দেন’। ন্যায় যেখানে নেই, সেখানে বিজয় অর্ধেক। আজ যদি আমরা সমাজে ন্যায় প্রতিষ্ঠা না করি- দুর্নীতি, চাঁদাবাজি, ক্ষমতার অপব্যবহার, বিচারহীনতা যদি চলতেই থাকে তাহলে আমাদের বিজয় মূলত কাগজের ওপরের স্বাধীনতা মাত্র। সত্যিকারের বিজয় হলো সেই জাতির, যে জাতি ন্যায়কে সবচেয়ে বড় সম্পদ হিসেবে দেখে, ক্ষমতা নয়।

২. সত্য বিজয়ের পথের প্রথম আলো : সত্য লুকানো হলে বিজয় জং ধরে যায়। মিথ্যা, গুজব, অপরের চরিত্রহনন- এ সবগুলো জিনিস জাতিকে আত্মিকভাবে পরাজিত করে। ইসলাম সত্যকে শুধু চারিত্রিক গুণ হিসেবে নয়; বরং উম্মাহর অস্তিত্বের শর্ত হিসেবে ঘোষণা করেছে। যে জাতি ইতিহাসের সত্য লুকায়, শহীদের গল্প বিকৃত করে বা নতুন প্রজন্মকে বিভ্রান্ত করে, তারা কখনো বিজয় ধরে রাখতে পারে না।

৩. মানবিকতা যেখানে দুর্বলরাও নিরাপদ : ইসলাম যে জাতিকে বিজয় দেয়, সেই জাতির হৃদয়ে থাকে মানবিকতার আলো। প্রতিবেশীর ক্ষুধা, নারীর নিরাপত্তা, শিশুর ভবিষ্যৎ, বয়োবৃদ্ধের সম্মান- এসবই একটি দেশের প্রকৃত স্বাধীনতার সূচক। একাত্তরের মূল কারণগুলোর একটি ছিল মানবিক মর্যাদার দাবি। আজ আমরা কি সেই মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছি? যদি রাস্তার মানুষ অনাহারে থাকে, যদি দুর্বলরা নির্যাতিত হয়, যদি নারীরা ভীত হয়ে বাঁচে- তাহলে বিজয় মূলত কাকে বলে?

৪. দায়িত্ববোধ-স্বাধীনতার প্রকৃত পরিচয় : স্বাধীনতা মানে দায়িত্ব। যে জাতি দায়িত্বহীন হয়ে পড়ে, সে জাতি আবারো পরাজয়ের দিকে এগিয়ে যায়। ইসলাম প্রতিটি মানুষকে দায়িত্বের অধিকারী করে নিজের পরিবার, প্রতিবেশী, সমাজ, রাষ্ট্র- সব জায়গায় দায়িত্ব আছে। আজ যদি আমরা দায়িত্ব ভুলে যাই, শুধু অধিকার নিয়ে চেঁচাই, তাহলে নৈতিক পতন অবশ্যম্ভাবী।

৫. শোকর ও বিনম্রতা-বিজয়ের সোনালি আভা : বিনম্রতা না থাকলে বিজয় ধ্বংস ডেকে আনে। ইসলাম একটি কথা বারবার বলে, ‘যে শোকর করে না, সে স্বাধীনতার যোগ্য নয়।’ আমরা কি সত্যিই শহীদের রক্তের প্রতি কৃতজ্ঞ? আমরা কি স্বাধীনতার মূল্য বুঝি? নাকি স্বাধীনতাকে আমরা কেবল রাজনৈতিক স্লোগান বানিয়ে ফেলেছি?

আজকের বাংলাদেশ : আমরা কোথায় দাঁড়িয়ে?

স্বাধীনতার ৫৪ বছরে এসে আমরা দাঁড়িয়েছি। আমরা কি সেই নৈতিক বিজয়ের পথে আছি? কাগজে-কলমে স্বাধীনতা আছে; কিন্তু সামাজিক ন্যায় কি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে? দুর্নীতি কি কমেছে, নাকি বেড়েছে? সত্য কথা বলা কি সহজ? মানুষ কি পরস্পরের প্রতি মানবিক? ইসলাম এখানে আমাদের প্রশ্ন করতে শেখায়, ‘আমরা কি সেই মুক্তচেতা জাতি, যার স্বপ্ন শহীদরা দেখেছিলেন?’ যদি না হয়ে থাকি, তাহলে বিজয় দিবস আমাদের জাগিয়ে তোলে- নিজেকে বদলানোর দায়িত্ব এখন আমাদের হাতেই।

আমাদের করণীয় : বিজয়কে হৃদয়ে ধারণ করা

বিজয় দিবসের প্রকৃত শিক্ষা তখনই পূর্ণ হয়, যখন আমরা কিছু দায়িত্ব পালনকে জীবনযাপনের অংশ করি-

১. নতুন প্রজন্মকে সত্য ইতিহাস শেখানো : শহীদের গল্প, দেশপ্রেম, মূল্যবোধ- এ সবই পরিবারে, স্কুলে, সমাজে শেখাতে হবে। যে জাতি তার ইতিহাস ভুলে যায়, সে জাতি ভবিষ্যৎ গড়তে পারে না।

২. নৈতিকতার জায়গায় অবস্থান নেয়া : দুর্নীতি দেখলে নীরব থাকা নয়; অন্তত নিজের জায়গায় সত্যের ওপর দাঁড়ানো। এটিই ইসলামী শিক্ষা।

৩. সমাজে নৈতিক নেতৃত্ব গড়ে ওঠা : পরিবার, শিক্ষা, রাজনীতি- সবখানেই নৈতিক মানুষ দরকার। যে নেতৃত্ব মানুষের হাতে হাত রেখে এগিয়ে যাবে।

৪. ব্যক্তিগত জীবনে আত্মশুদ্ধি : মিথ্যা ত্যাগ, দায়িত্ব পালন, সময়ের মূল্য- এগুলো ছোট বিষয় মনে হলেও, এগুলোই জাতিকে নির্মাণ করে।

৫. দেশকে ভালোবাসাকে কর্মে রূপ দেয়া : আবেগে দেশপ্রেম সহজ; কাজে দেশপ্রেম কঠিন। নিজের দায়িত্ব ঠিকমতো পালন করাই হচ্ছে দেশের জন্য সবচেয়ে বড় অবদান।

৬. শহীদ পরিবারগুলোর দায়িত্ব নেয়া : যারা প্রিয়জন হারিয়েছেন, তারা কেবল রাষ্ট্রের নয়, আমাদের প্রত্যেকের দায়িত্ব।

৭. দুর্নীতির বিরুদ্ধে সর্বজনীন আন্দোলন : বিজয়ের সবচেয়ে বড় হুমকি হলো দুর্নীতি। যে দেশে ঘুষ স্বাভাবিক হয়, সেই দেশের স্বাধীনতা অভিশাপে পরিণত হয়।

৮. তরুণ প্রজন্মকে নৈতিক শিক্ষা দেয়া : তরুণের চরিত্রই দেশের ভবিষ্যৎ। তাদের শেখাতে হবে, দেশপ্রেম মানে শুধু পতাকা নয়; ন্যায়, সততা, দায়িত্ব- এগুলোই প্রকৃত দেশপ্রেম।

৯. রাষ্ট্রে ন্যায়বিচারের সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠা : ইসলাম ঘোষণা দেয়, ‘আল্লাহ ন্যায় প্রতিষ্ঠার আদেশ দেন’। ন্যায়বিচারহীন রাষ্ট্রে বিজয় টেকে না।

১০. পরিবারে মহান মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠা করা : পরিবার হলো নৈতিকতার প্রথম পাঠশালা। সন্তান যদি ঘরে সততা না দেখে, দেশকে ভালোবেসে কিভাবে গড়বে?

১১. আধ্যাত্মিক সংস্কার, ঈমান ও মানবিকতায় ফিরে আসা : স্বাধীনতার প্রকৃত রূপ আধ্যাত্মিক শক্তি ছাড়া টেকে না। ঈমান, দয়া, নম্রতা, সত্য- এগুলো জাতিকে শক্তিশালী করে।

বিজয়ের আলো যেন অন্তরে জ্বলে : বিজয় দিবসের সকালটা যখন লাল-সবুজের আলোয় ঝলমল করে, সেটি শুধু পতাকার উৎসব নয়; এটি শহীদদের অশ্রু-রক্তে লেখা এক প্রতিশ্রুতির দিন, স্বাধীনতার যোগ্য মানুষ হয়ে ওঠো। বিজয়ের আলো রাস্তায় সাজসজ্জায় সীমাবদ্ধ থাকলে লাভ নেই; এই আলোকে আমাদের হৃদয়ের অন্ধকারে ছড়িয়ে দিতে হবে- সত্যের আলো, ন্যায়ের আলো, মানবিকতার আলো। তাহলেই আমরা বলতে পারব, আমাদের বিজয় কেবল একাত্তরে অর্জিত হয়নি; আমরা আজও সেই বিজয়কে বাঁচিয়ে রেখেছি, হৃদয়ের গভীরে।

লেখক : মুহাদ্দিস ও নায়েবে মুফতি দারুল উলুম, মিরপুর-১৩, ঢাকা