অস্ট্রেলিয়াকেও অস্বস্তিতে রাখতে চায় টাইগ্রেসরা

জসিম উদ্দিন রানা
Printed Edition

বিশ্বকাপের মঞ্চ থেকে বাংলাদেশ নারী দলের বিদায়টা হয়তো এসেছে আগেই, কিন্তু তাদের গল্প শেষ হয়নি; বরং শুরু হয়েছে। প্রতিটি পরাজয়ের পেছনে লুকিয়ে আছে একেকটি শিক্ষা, একেকটি জয়ের বীজ। নিগার সুলতানা জ্যোতিরা মাঠে হেরেছে, কিন্তু মন জয় করেছে কোটি মানুষের। এই বিশ্বকাপ তাদের জন্য ছিল আত্মপরিচয়ের লড়াই। কেউ ভাবেনি ইংল্যান্ড বা দক্ষিণ আফ্রিকার মতো দলকে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত চাপে রাখবে বাংলাদেশ। কিন্তু তারা রেখেছে। প্রতিপক্ষকে ঘাম ঝরাতে বাধ্য করেছে। হারের পরও গ্যালারির চোখে হতাশার চেয়ে গর্ব বেশি।

বিশ্বকাপের অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে খেলার আগের দিন সুখবর পেল নারী ক্রিকেট দল। দৈনিক ভাতা ও ট্যুর ফি ছেলেমেয়ে সমান হবে। সিদ্ধান্ত কার্যকর হলে পুরুষ ক্রিকেটারদের সমান আর্থিক সুবিধা পাবেন বাংলাদেশ নারী ক্রিকেটাররাও।

নারী ওয়ানডে বিশ্বকাপে নিজেদের চতুর্থ ম্যাচে আজ অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে মাঠে নামছে বাংলাদেশ। টানা তিন হারের পর জয়ের খোঁজে নিগার সুলতানা জ্যোতির দল। ভারতের বিশাখাপাত্তমে ম্যাচটি শুরু হবে বেলা ৩টা ৩০ মিনিটে। এখন পর্যন্ত চার ম্যাচে তিন জয়ে ৭ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের শীর্ষে অসিরা। অন্য দিকে সমান ম্যাচে মাত্র এক জয়ে ছয়ে অবস্থান করছে বাংলাদেশ। আসরের প্রথম ম্যাচে দুর্দান্ত জয় পেলেও এরপর টানা হারে দিশেহারা টাইগ্রেসরা। অসিদের বিপক্ষে হারলে সেমিফাইনালের রেস থেকে অনেকটাই ছিটকে যাবে জ্যোতিরা। টুর্নামেন্টে টিকে থাকতে এই ম্যাচে তাই জয়ের বিকল্প নেই স্বর্ণা-মারুফা-রাবেয়াদের সামনে।

জ্যোতির শান্ত নেতৃত্ব, মারুফার আগুনে বোলিং, ফারজানার দৃঢ়তা আর শারমিনের অধ্যবসায়, সব মিলিয়ে এই দলটা যেন এক যাত্রাপথের প্রতীক। যেখানে গন্তব্য এখনো দূরে, কিন্তু পথচলা শুরু হয়েছে সাহস নিয়ে। নারী ক্রিকেট এখন আর শুধু খেলার জায়গা নয়, এটি হয়ে উঠেছে বাংলাদেশের গর্ব এবং অনুপ্রেরণার গল্প। হয়তো আজ তারা সেমিফাইনালে ওঠা নিয়ে দুশ্চিন্তায়, কিন্তু তাদের এই পথই এক দিন নিয়ে যাবে শীর্ষে। মাঠে প্রতিটি ছোট জয়, প্রতিটি সংগ্রাম একদিন মিলিত হবে এক বড় স্বপ্নে। যে দিন বাংলাদেশের মেয়েরা বিশ্বকাপের মঞ্চে চুম্বন এঁকে দিবে ট্রফির শীর্ষভাগে।

এই বিশ্বকাপ তাই শেষ নয়। এটি এক শুরুর নাম। যেখানে আফসোস মিলেমিশে গেছে আশার আলোয়। জ্যোতির দলের চোখে এখনো যে আগুন জ্বলছে, সেটিই আগামী দিনের আলোকবর্তিকা। তারা হেরেও শেখাচ্ছে, কিভাবে লড়তে হয় শেষ পর্যন্ত, কিভাবে স্বপ্নকে ছুঁয়ে দিতে হয় পরিশ্রমের ঘামে। বাংলাদেশের নারী ক্রিকেট শুধু পরিসংখ্যান নয়, এটি এক আবেগের নাম, এক বিশ্বাসের নাম। জ্যোতির কথায়, ‘আমরা তো আমাদের মতোই, চাইলেই তো এক দিনে তাদের মতো হতে পারব না। তবে মাঠে কাউকে ছাড় নয়, আমাদের সাধ্যের মধ্যে কাউকে স্বস্তিতে রাখা যাবে না।’

অস্ট্রেলিয়া নারী দল, অধিনায়ক অ্যালিসা হিলির নেতৃত্বে, পুরো টুর্নামেন্টজুড়ে দুর্দান্ত ফর্মে আছে। হিলির বিধ্বংসী ব্যাটিং এবং অভিজ্ঞতা ও তরুণ শক্তির দারুণ ভারসাম্য তাদের দলকে করেছে অন্যতম শক্তিশালী। এলিস পেরি, বেথ মুনি ও অ্যাশলেই গার্ডনারের সাম্প্রতিক পারফরম্যান্স অস্ট্রেলিয়ার অলরাউন্ড দক্ষতাকে আরো শক্ত করেছে।

অন্য দিকে নিগার সুলতানার নেতৃত্বে বাংলাদেশ নারী দল নিজেদের ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াইয়ে নামবে। এ ছাড়া ফারজানা হক, সোহানা মোস্তারি ও স্বর্ণা আখতার চাপের মুহূর্তে দলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ রান এনে দিচ্ছেন। এ ম্যাচে দেখা যাবে দু’টি ভিন্ন ধাঁচের খেলা, অস্ট্রেলিয়ার শৃঙ্খলিত ব্যাটিং-বোলিং শক্তি বনাম বাংলাদেশের জয়ের তীব্র আকাক্সক্ষা ও লড়াকু মানসিকতা।