পাল্টাপাল্টি হামলার পর যুক্তরাষ্ট্রের সাথে ইরানের চলমান পরমাণু আলোচনা বাতিল করা হয়েছে। ইরান ও দুই দেশের মধ্যে মধ্যস্থতাকারী ওমানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পরবর্তী ধাপের আলোচনা এখন আর এগোবে না বলে বিবিসি ও আলজাজিরাকে নিশ্চিত করেছেন। রোববার ওমানের রাজধানী মাস্কটে যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে ষষ্ঠ দফার এ আলোচনা হওয়ার কথা ছিল।
তেহরানের পারমাণবিক কর্মসূচি বন্ধ করতে দীর্ঘদিন থেকে চেষ্টা চালিয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র। এর অংশ হিসেবে চলছে এ আলোচনা। এর আগে রোমে পঞ্চম দফা পরমাণু আলোচনা হয়। তবে তাতে কোনো অগ্রগতি হয়নি। ইরান যাতে পরমাণু অস্ত্র বানাতে না পারে তা নিশ্চিত করতে দেশটির একাধিক পারমাণবিক ও সামরিক স্থাপনা এবং সামরিক বাহিনীর কমান্ডার ও পরমাণু বিজ্ঞানীদের ওপর হামলা চালায় ইসরাইল। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের খবর ইরান পরমাণু অস্ত্র বানানোর খুব কাছে পৌঁছে গিয়েছিল।
ইরানের নজিরবিহীন ইসরাইলি হামলায় শীর্ষস্থানীয় সামরিক কর্মকর্তা ও বেসামরিক ব্যক্তিদের নিহত হওয়ার পর এ আলোচনা থেকে নিজেদের সরিয়ে নিয়েছে তেহরান। পরমাণু আলোচনা থেকে সরে গেলে পরিণতি মারাত্মক হবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের হুমকির পরও ইরান এখন আর আলোচনায় থাকতে চায় না বলে সংবাদমাধ্যমে খবর এসেছে।
বিবিসি ওমানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বদর আলবুসাঈদির এক্স পোস্টকে উদ্ধৃত করে বলেছে, রোববারের নির্ধারিত পরবর্তী মার্কিন-ইরান পারমাণবিক আলোচনা আর হবে না। এক্স পোস্টে তিনি বলেন, রোববারের আলোচনা আর হবে না। ‘তবে কূটনৈতিক পদক্ষেপ ও সংলাপের মাধ্যমে স্থায়ী শান্তির একমাত্র পথ খোলা রয়েছে।’
এর আগে ইসরাইলের একের পর এক হামলার পর তার ‘সহযোগী’ যুক্তরাষ্ট্রের সাথে পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে আলোচনার ‘কোনো অর্থ নেই’ বলে মন্তব্য করেছিলেন ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ইসমাইল বাঘাই। তিনি বলেন, ‘আরেক পক্ষ (যুক্তরাষ্ট্র) এমনভাবে আচরণ করেছে, যাতে সংলাপের কোনো মানে থাকে না। আপনি এক দিকে সংলাপের কথা বলবেন, আর অন্য দিকে ইসরাইলকে দিয়ে ইরানের ভূখণ্ডে হামলার সুযোগ করে দেবেন, এটা একসাথে চলতে পারে না।’
এর কয়েক ঘণ্টা পর রোববার মাস্কটের আলোচনা বাতিল হওয়ার খবর এলো। ইসরাইল শুক্রবার তার দীর্ঘদিনের আঞ্চলিক প্রতিপক্ষ ইরানের ওপর স্মরণকালের সবচেয়ে ভয়াবহ হামলা চালায়। এতে ২০ জনের বেশি শীর্ষস্থানীয় সামরিক কমান্ডার ও পরমাণু বিজ্ঞানীসহ ৭৮ জন বেসামরিক ব্যক্তি ও তিন শতাধিক মানুষ আহত হন। এ হামলায় যুক্তরাষ্ট্রেরও সম্পৃক্ততা ছিল বলে অভিযোগ তেহরানের।
পরে এর জবাবে ইরান ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ে ইসরাইলে, যাতে একজন নিহত হওয়াসহ বেশ কয়েকজন ইসরাইলি আহত হওয়ার খবর এসেছে। এ হামলার প্রেক্ষাপটে শনিবার ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি বলেন, বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনা করে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে আলোচনা চালিয়ে যাওয়া ‘অযৌক্তিক’। এর কয়েক ঘণ্টা পর ষষ্ঠ দফার আলোচনা বাতিল করার বিষয়টি তিনি আলজাজিরাকে নিশ্চিত করেন। তার কাছে রোববারের বৈঠক বাতিল করার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, হ্যাঁ।
এ বিষয়ে মার্কিন প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বিবিসিকে বলেন, ‘রোববার কোনো আলোচনা না হলেও আমরা আলোচনার মাধ্যমে সমাধানে অঙ্গীকারবদ্ধ এবং আমাদের আশা তারা আলোচনার টেবিলে ফিরবেন।’ এর আগে শনিবার সকালে ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বাঘাই বলেন, ইসরাইল কূটনৈতিক প্রক্রিয়াকে ‘প্রভাবিত করতে সফল হয়েছে’ এবং ওয়াশিংটনের অনুমতি ছাড়া ইরানে তেল আবিব এ হামলা করত না।
ইরান আগেও শুক্রবারের ইসরাইলের হামলায় যুক্তরাষ্ট্রের সম্পৃক্ততা ছিল বলে অভিযোগ করেছে তবে ওয়াশিংটন তা উড়িয়ে দিয়েছে। জাতিসঙ্ঘ নিরাপত্তা পরিষদে তারা তেহরানকে বলেছে, পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা চালিয়ে যাওয়াই ইরানের জন্য ‘বুদ্ধিমানের কাজ’ হবে।
ইরানের পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে একটি চুক্তি করতে ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন গত কয়েক মাস ধরে চেষ্টা চালিয়ে আসছিল। তেহরানের সাথে তাদের পাঁচ দফা আলোচনাও হয়েছে। ষষ্ঠ দফার আলোচনা রোববার ওমানের মাস্কটে হওয়ার কথা। কিন্তু ইসরাইলের হামলার পর এ আলোচনা আদৌ হবে কি না, তা নিয়ে সন্দেহ দেখা দিয়েছে।
ইসরাইলের ধারণা, ইরান ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের মাত্রা বাড়িয়ে গোপনে পারমাণবিক অস্ত্র বানানোর চেষ্টা করছে। তেহরান এ অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে বলছে, তাদের পারমাণবিক কর্মসূচির উদ্দেশ্য পুরোপুরি বেসামরিক। যুক্তরাষ্ট্র ইসরাইলের হামলার সাথে যোগসাজশের অভিযোগ উড়িয়ে দিলেও ট্রাম্প বলেছেন, তিনি ও তার দল ইসরাইলের ‘আসন্ন’ হামলা সম্পর্কে জানতেন, তবে এর পরও তারা ইরানের সাথে চুক্তির সুযোগ দেখছে।



