- পাইলটসহ নিহত ২৩, অধিকাংশই শিশু
- দগ্ধ ও আহত ১৭১ জন বিভিন্ন হাসপাতালে
উত্তরার দিয়াবাড়ি মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে ছুটি হয় গতকাল সোমবার বেলা ১টায়। ছুটি শেষে কোমলমতি শিশুরা কেউ ব্যস্ত খাওয়া-দাওয়া নিয়ে, আর কেউ কোচিংয়ের রুমে যাওয়ার অপেক্ষায়। ঠিক তার ১০ মিনিটের মধ্যে হঠাৎ বিমানবাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমান স্কুলের একটি দোতলা ভবনে বিকট শব্দে আছড়ে পড়ে বিধ্বস্ত হয়। কেউ কিছু বুঝে উঠার আগেই বিস্ফোরণে পুরো এলাকায় ধোঁয়া ও আগুনের লেলিহান শিখা দাউ দাউ করে জ্বলতে থাকে। ততক্ষণে অনেক ছোট্ট শিশুর কচি শরীর আগুনে পুড়ে অঙ্গার হয়ে যায়। অনেকে পোড়া শরীর নিয়ে জীবন বাঁচাতে দৌড়ে চিৎকার করে কান্না করছে। এমনই হৃদয়বিদারক দৃশ্য যখন একের পর এক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও গণমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে তখন দেশজুড়ে শোকের ছায়া নেমে আসে। অবিশ্বাস্য বিপর্যয়ের এই ট্র্যাজেডিতে স্তব্ধ হয়ে পড়ে সারা দেশের মানুষ। বিমান বিধ্বস্ত ও হতাহতের খবর আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমেও গুরুত্ব দিয়ে প্রচার করা হয়।
গতকাল রাত সাড়ে ১১টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ২৩ জনের মৃত্যুর সংবাদ পাওয়া গেছে। তার মধ্যে শিশুর সংখ্যাই বেশি। বিমানটির পাইলট ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট তৌকির ইসলাম সাগর সিএমএইচে মৃত্যুবরণ করেন। আহত ও দগ্ধ হয়েছেন অন্তত ১৭১ জন। তাদের মধ্যে ৭০ জনকে জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়েছে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন ভর্তি কমপক্ষে ৫১ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। তাদের মধ্যেও বেশির ভাগই শিশু বলে জানিয়েছেন জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটের পরিচালক ডা: নাসির উদ্দীন।
আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদফতর (আইএসপিআর) জানায়, বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর এফ-৭বিজিআই প্রশিক্ষণ বিমান উত্তরায় বিধ্বস্ত হয়। বিমানটি বেলা ১টা ৬ মিনিটে এ কে খন্দকার ঘাঁটি থেকে উড্ডয়ন করে।
এ দিকে রাজধানীর মাইলস্টোন স্কুলে হতাহতের ঘটনায় রাষ্ট্রপতি, প্রধান উপদেষ্টা, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টাগণ ও সশস্ত্রবাহিনীর প্রধানগণ শোক জানিয়েছেন। এ ছাড়াও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও জামায়াতে ইসলামীর আমিরসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ শোকাহত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন। এ ছাড়া আজ দেশে এক দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করেছে সরকার।
সরেজমিন দেখা গেছে, মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের একটি ভবনে বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্তের পর শিক্ষার্থীদের পোড়া দগ্ধ শরীর, অঙ্গার হয়ে যাওয়া লাশ, আগুনের লেলিহান শিখায় শ্রেণিকক্ষেই পুড়ে মারা যাওয়ার বীভৎস দৃশ্য, ঝলসানো শরীরে বেঁচে থাকতে প্রতিটি নিঃশ্বাস নেয়ার সংগ্রাম, শরীরের মাংস ও জামাকাপড় পোড়া অবস্থায় হেঁটে বের হওয়ার মতো হৃদয়বিদারক ঘটনাগুলো আবেগতাড়িত করছে সবাইকে। সেই সাথে হতাহতদের স্বজনের আর্তনাদে ভারী হয়ে ওঠে ঘটনাস্থলসহ বিভিন্ন হাসপাতালের পরিবেশ। কেউ দগ্ধ স্বজনের জন্য আর্তনাদ করছে, কেউ স্বজনের অঙ্গার হওয়া লাশের খবরে কাঁদছে, আবার কেউ কান্না করতে করতে নিখোঁজদের সন্ধানে দৌড়ঝাঁপ করছেন এক হাসপাতাল থেকে আরেক হাসপাতালে। গতকাল বিভিন্ন হাসপাতালে এমন মর্মান্তিক চিত্র দেখা গেছে। এমন ঘটনা যাতে আর কারো সাথে না ঘটে- সেই আকুতি জানিয়ে দেশবাসীর কাছে দোয়া কামনা করছেন ভুক্তভোগী স্বজনদের অনেকে।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, হতাহতদের জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল, সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল (ঢাকা), কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল, উত্তরা আধুনিক মেডিক্যাল কলেজ, ইস্টওয়েস্ট হাসপাতাল, লুবনা জেনারেল হাসপাতাল অ্যান্ড কার্ডিয়াক সেন্টারে, কুয়েত মৈত্রী হাসপাতাল, উত্তরা বাংলাদেশ মেডিক্যাল, ক্রিসেন্ট হাসপাতাল ও ইবনে সিনা হাসপাতালে নেয়া হয়। আইএসপিআর গতকাল বিকেলে জানিয়েছে, এ ঘটনায় এ পর্যন্ত ১৯ জন নিহত ও ১৭১ জন আহত হয়েছেন। সন্ধ্যায় ঘটনাস্থল থেকে আরেক জনের লাশ উদ্ধার করেন ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা। আহতদের মধ্যে এরমধ্যে কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে ভর্তি আছেন ৮ জন, বার্ন ইনস্টিটিউটে ৭০ জন, সেখানে মারা গেছেন স্কুলটির শিক্ষিকাসহ ৫ জন, সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) মারা গেছেন ১২ জন ও ভর্তি রয়েছেন ১৭ জন, লুবনা জেনারেল হাসপাতাল অ্যান্ড কার্ডিয়াক সেন্টারে ১১ জন, উত্তরা আধুনিক হসপিটালে ৬০ জন, সেখানে মারা গেছেন একজন, উত্তরা ক্রিসেন্ট হাসপাতালে ভর্তি আছেন একজন। কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে নেয়ার পর মারা গেছে দুইজন, ভর্তি আছে একজন। ঢাকা মেডিক্যালে মারা গেছে একজন, ভর্তি তিনজন। এ ছাড়া ত
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, বিমান দুর্ঘটনায় আগুনের তীব্রতা এতটাই বেশি ছিল যে সেখানকার প্রতিটি হাসপাতালে এখন দগ্ধ রোগীতে ভরে গেছে। এর মধ্যে গুরুতর অবস্থায় থাকা রোগীদের অ্যাম্বুলেন্সে দ্রুত জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটে পাঠানো হয়। স্থানীয় প্রান্ত নামে একজন বলেন, আমার ভাবি নওরিন মাইলস্টোন কলেজের শিক্ষক। দুর্ঘটনার সময় কলেজ ভবনের ভেতরেই ছিলেন। আগুনে দগ্ধ হন তিনিও। আমরা প্রথমে তাকে স্থানীয় হাসপাতালে নিই, পরে অবস্থা খারাপ হওয়ায় বার্ন ইউনিটে পাঠানো হয়। তিনি আরো বলেন, শুধু আমার ভাবি নয়, কলেজের আশপাশে থাকা শিক্ষার্থী, অভিভাবক, পথচারী অনেকেই দগ্ধ হয়েছেন। শিশুরা মাঠে খেলছিল, তারাও আগুনের গ্রাসে পড়ে। স্থানীয় হাসপাতালগুলোর পরিস্থিতি এখন ভয়াবহ। প্রতিটি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার দগ্ধ রোগীতে উপচে পড়ছে।
ঘটনার পর আহতদের অনেককেই নেয়া হয় উত্তরা আধুনিক মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। দুর্ঘটনার খবর পাওয়ার পর অনেকেই ঘটনাস্থলে গিয়ে নিজের স্বজন ও সন্তানের খোঁজে আহাজারিতে ভেঙে পড়েন। অনেকে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে স্বজনের খোঁজ না পেয়ে আশপাশের হাসপাতালগুলোতে ভিড় করেন। মাইলস্টোন স্কুলের তৃতীয় শ্রেণীর শিক্ষার্থী আফিয়ার খোঁজে উত্তরা আধুনিক হাসপাতালে আসেন তার মা। এই হাসপাতালে তার কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। জরুরি বিভাগের সামনে মেডিক্যালের শিক্ষার্থীরা মেয়ের ছবি দেখে জানান, আফিয়াকে বার্ন ইনস্টিটিউটে নেয়া হয়েছে। কাঁদতে কাঁদতে আফিয়ার মা বলেন, আমার মেয়ে তৃতীয় শ্রেণীতে পড়ে, আমি আমার মেয়েকে কোথাও খুঁজে পাচ্ছি না। একটু বলেন আমার মেয়ে কোথায় আছে?
প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার পর থেকে মাইলস্টোন স্কুলের শিক্ষার্থীদের অনেক অভিভাবক উত্তরা আধুনিক হাসপাতালে সামনে ভিড় করায় এক শোকাবহ দৃশ্যের অবতারণ হয়। সবার চোখে সন্তান হারানোর আশঙ্কা, কণ্ঠে প্রার্থনা আর অন্তরে অজানা আতঙ্ক।
লিওন মীর নামে এক ব্যক্তি ফেসবুক লাইভে এসে আহাজারি করতে করতে বলেন, আমার মামা আর নেই। সিএমএইচে আছি। ও নাকি দগ্ধ হয়ে মারা গেছে। ওরে নিয়ে আর ঘুমাতে পারব না। তুমি ফিরে আসো আম্মু, আমাদের ছেড়ে চলে যেও না। তার লাইভে আরো স্বজনদের আহাজারি করতে দেখা যায়। এ ঘটনায় আহত মাইলস্টোন কলেজের এক শিক্ষক বলেন, কিছু বুঝে ওঠার আগেই বিমানে আগুন ধরে যায়। এতে অনেক শিক্ষার্থীর শরীর ঝলসে গেছে। তিনি আরো বলেন, কিছু বুঝে ওঠার আগেই দেখি আগুন। একটা আগুনের গোলা আমার শরীরে এসে লাগল, হাত-মুখ সাথে সাথে পুড়ে গেছে। অনেককে দেখেছি শরীরের পুরো কাপড় পুড়ে গেছে। অনেকেই চোখের সামনে হতাহত হয়েছেন।
এ দিকে হতাহতদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি গুরুতরদের নেয়া হয়েছে জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটে। আহতদের শরীরের ক্ষতের যন্ত্রণার কান্না আর স্বজনদের আহাজারিতে সবচেয়ে বেশি হৃদয়বিদারক পরিবেশ তৈরি হয়েছে এখানে।
জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের ৫২০ নম্বর কক্ষের মেঝেতে মেয়েকে ধরে হাউমাউ করে কাঁদছিলেন ইয়াসমিন আক্তার। তার ১১ বছর বয়সী পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ুয়া মেয়ে নুরে জান্নাত ইউশা বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় পুড়ে গেছে।
ইয়াসমিন আক্তার জানান, আমার মেয়ের কপাল পুড়ে গেছে, মুখ ঝলসে গেছে, মাথা ফেটে গেছে, পিঠও পুড়ে গেছে। আমার মেয়ে আমার সাথে কথা বলেছে। মেয়ে বলে যে ‘মা, আমার সব জ্বলে। বার্ন ইনস্টিটিউটের সামনে বসে কাঁদছিলেন ঝর্না আক্তার। তার ছোট ছেলে জুনায়েদ তৃতীয় শ্রেণীর শিক্ষার্থী, এ দুর্ঘটনায় গুরুতর দগ্ধ হয়ে ভর্তি হয়েছে। কাঁদতে কাঁদতে তিনি বলেন, আমার ছেলে খুব ভালো ছিল। মাঠে খেলতে গিয়েছিল, এখন বার্ন ইনস্টিটিউটে। আমি দেশবাসীর কাছে দোয়া চাই, মহান আল্লাহ যেন আমার জুনায়েদসহ সবাইকে সুস্থ করে দেন।
একইভাবে কান্নায় ভেঙে পড়েন মুসলিম উদ্দিন, যিনি তার একমাত্র নাতিকে নিয়ে এসেছেন বার্ন ইনস্টিটিউটে। তার নাতিও তৃতীয় শ্রেণীতে পড়ে এবং আজকের দুর্ঘটনায় গুরুতর দগ্ধ হয়েছে।
চোখ মুছতে মুছতে বলছিলেন, আপনারা দোয়া করেন, আমার নাতি যেন বাঁচে। একমাত্র নাতি আমার- কী কষ্টে আছে তা বলে বোঝাতে পারব না। বিভিন্ন হাসপাতালে ঘুরতে দেখা যায় রাশেদা খানম নামে এক নারীকে। তিনি বলেন, আমার ভাতিজা মারুফ সপ্তম শ্রেণীতে পড়ে। স্কুলের সামনে ছুটে এলাম। কেউ কিছু জানে না। একবার বলছে বার্ন ইনস্টিটিউটে, আবার বলছে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে। কোথায় যাবো বুঝতে পারছি না। স্থানীয় কোনো হাসপাতালে খোঁজ মিলছে না।
বিমান বিধ্বস্তের ঘটনাটি প্রত্যক্ষভাবে দেখেছিলেন বলে জানিয়েছেন মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের একাদশ শ্রেণীর শিক্ষার্থী সাইমুন খান।
তিনি বলেন, ঘটনার সময় ক্লাসে ছিলাম। তারপর বিকট শব্দ শুনে দেখি আগুন, অবস্থা খারাপ। এ সময় জুনিয়রদের শিফটটা চলছিল। মুহূর্তেই দেখতে পাই আগুন ও ধোঁয়া। এর কিছুক্ষণের মধ্যেই সেনাবাহিনীর সদস্যরা এসে উদ্ধারকাজ শুরু করে। তারপর ফায়ার সার্ভিস আসে। এর মধ্যে এক আন্টি বলেন, বাবা, আমার মেয়েকে একটু ধরো, তার দুই হাত পুড়ে গেছে। পরে তাকে নিয়ে হাসপাতালে এসেছি।
বন্ধুর বোনকে দগ্ধ অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে আসনে ওই কলেজের একাদশ শ্রেণীর শিক্ষার্থী সাজ্জাদ আহম্মেদ আদি। তিনি বলেন, মাইলস্টোন স্কুলের তৃতীয় শ্রেণীর শিক্ষার্থী রাদিয়ার ডান হাত পুড়ে গেছে। ওর হাতের অবস্থা খারাপ। জানি না কী হবে। বিমান বিধ্বস্তের সময় কলেজেই ছিলেন আদি। পুর ঘটনার বিষয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, কলেজে একটু পড়েই পরীক্ষা ছিল আমার। স্কুলের ইংরাজি ভার্সন ছুটি হলেও বাংলা ভার্সনের ক্লাস চলছিল। এমন সময় দেখলাম বিমান যাচ্ছে, এরই মধ্যে কিছু একটা পড়ছে বুঝতে পাড়ছি। সবচেয়ে ছোট মাঠ ও কলেজের মেইন গেটের সামনে পড়ছিল বিমানটি। সেখানে বাংলা ভার্সন, কলেজ হোস্টেল ও ক্যন্টিন ছিল।
আইসিইউতে মৃত্যুর সাথে লড়ছে অনেকে : বিধ্বস্তের ঘটনায় শতাধিক শিক্ষার্থীদের ঢাকা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি রয়েছে। তাদের মধ্যে অনেকেই আইসিইউতে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে। বার্ন ইনস্টিটিউটের তথ্য মতে, দগ্ধদের সবার বয়স ৯ থেকে ১৯ বছরের মধ্যে। তাদের মধ্যে আশরাফুল ইসলামের ১৫ ভাগ, রোহান ৫০ ভাগ, শ্রেয়া ৫ ভাগ, কাব্য ২০ ভাগ, চাঁন মিয়া ৪০ ভাগ, ইউশা ৬ ভাগ, মেহেরিন চৌধুরী ১০০ ভাগ, মেহরীন ৪ ভাগ, রুপি বড়ুয়া ৬ ভাগ, তাসমিয়া ৫ ভাগ, ইমন (জানা যায়নি), নাজিয়া ৮০ ভাগ, জায়ানা ৮ ভাগ, এরিকসন ১০০ ভাগ, সায়েবা ৮ ভাগ, পায়েল ১০ ভাগ, আবির ২০ ভাগ, কাফি ১০ ভাগ, মুনতাহা ১০ ভাগ, আলভিনা ৫ ভাগ, নিলয় ১৮ ভাগ, মাসুম ৬০ ভাগ, আয়েন ৬০ ভাগ, মাহতাব ৪০ ভাগ, আরিয়ান ৫৫ ভাগ, মকিন ৬২ ভাগ, আবির ৯০ ভাগ ও আনিজন ১০০ ভাগ দগ্ধ হয়েছে। এ ছাড়া আইসিইউতে আছে নাফিস, শামীম, শায়ান ইউসুফ, মাহিয়া, আফনান, ফাইয়াজ ও সামিয়া নামে আরো অনেকে। এদের সবার অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানান চিকিৎসকরা।
অ্যাম্বুলেন্স দেখলেই ছুটছেন স্বজনরা : হাসপাতালে আহত-নিহতের স্বজনরা শোকে পাথর হয়ে গেছেন। একে একে অ্যাম্বুলেন্স আসছে, সাথে সাথে শত শত মানুষ ছুটে যাচ্ছেন সেটির পেছনে, যেন এই গাড়িটিতেই আছে তার দগ্ধ শিশুটি বা স্বজন। অ্যাম্বুলেন্স এলেই হাসপাতাল স্টাফদের মাকিং- পাশে যান, রোগীদের ভেতরে ঢুকতে দিন। রক্তের প্রয়োজনের বিষয়টিও বারবার ঘোষণা করা হচ্ছে। কখনো মাইকিং, কখনো কাগজে লিখে জানানো হচ্ছে- দগ্ধ শিশুদের রক্ত লাগবে। কেউ কেউ আবার চিৎকার করে জানাচ্ছেন, রক্ত লাগবে, অমুক গ্রুপের রক্ত দরকার। অনেকে নিজেরা কাগজে লিখে জানাচ্ছেন তারা রক্ত দিতে চান। বিশেষ করে ও এবং এ নেগিটিভ রক্ত সংগ্রহে চলে মাইকিং। ইমার্জেন্সি রেসকিউ টিমের সদস্যরা বলেন, অ্যাম্বুলেন্সে করে দেড় থেকে দুই হাজার ডোনার হাসপাতালে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। নেগিটিভ রক্ত সংগ্রহে চলছে মাইকিং।
ফেসবুকজুড়ে ‘মাইলস্টোনের জন্য প্রার্থনা’: ২০ জনের মৃত্যু ও দেড় শতাধিক আহত হওয়ার ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমজুড়ে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। এই মর্মান্তিক ঘটনায় কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, প্রাক্তন শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন স্তরের মানুষ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাদের গভীর শোক ও সমবেদনা প্রকাশ করেছেন। বিমান দুর্ঘটনার খবরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকজুড়ে দেখা যায় শোকের ছাপ। মাইলস্টোন কলেজের অনেকেই নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে আবেগঘন স্ট্যাটাস ও প্রোফাইল ছবি পরিবর্তন করেছেন। ‘প্রে ফর মেইলস্টোন’ শিরোনামে নিহতদের মাগফিরাত কামনা এবং আহতদের দ্রুত সুস্থতা কামনায় শত শত পোস্ট শেয়ার করা হচ্ছে। আবার অনেকে শোক প্রকাশের পাশাপাশি আহদের জন্য প্রয়োজনীয় রক্তসহায়তা চেয়ে পোস্ট দিচ্ছেন।
দুর্ঘটনার কারণ যান্ত্রিক ত্রুটি : আইএসপিআর জানিয়েছে, রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ক্যাম্পাসে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর যে প্রশিক্ষণ বিমানটি বিধ্বস্ত হয়েছে সেটি যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে হয়েছে। আইএসপিআর জানায়, বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর এফটি-৭ বিজিআই যুদ্ধবিমান নিয়মিত প্রশিক্ষণের অংশ হিসেবে আজ সোমবার বেলা ১টা ৬ মিনিটে ঢাকার কুর্মিটোলাস্থ বাংলাদেশ বিমানবাহিনী ঘাঁটি এ কে খন্দকার থেকে উড্ডয়নের পর যান্ত্রিক ত্রুটির সম্মুখীন হয় (যার বিস্তারিত তদন্তসাপেক্ষে জানানো হবে)। দুর্ঘটনা মোকাবেলায় এবং বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে ওই বিমানের বৈমানিক ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মো: তৌকির ইসলাম বিমানটিকে ঘনবসতি এলাকা থেকে জনবিরল এলাকায় নিয়ে যাওয়ার সর্বাত্মক চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত বিমানটি ঢাকার দিয়াবাড়িতে মাইলস্টোন স্কুল ও কলেজের দোতলা একটি ভবনে অনাকাক্সিক্ষত দুর্ঘটনায় বিধ্বস্ত হয়েছে।
অনাকাঙ্খিত দুর্ঘটনায় বাংলাদেশ বিমানবাহিনী গভীরভাবে মর্মাহত এবং হতাহতদের সর্বাত্মক চিকিৎসাসহ সার্বিক সহযোগিতায় তৎপর রয়েছে। বিমানবাহিনী প্রধান সরকারি সফরে দেশের বাইরে থাকায় সহকারী বিমানবাহিনী প্রধান (প্রশাসন), বিমানবাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ও উদ্ধারকারী দল দুর্ঘটনাস্থলে উপস্থিত রয়েছেন। সেনাবাহিনী প্রধান, প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার, সশস্ত্রবাহিনী বিভাগসহ সামরিক বাহিনীর এবং ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
সেনাবাহিনী, বিমানবাহিনী, পুলিশ, র্যাব ও ফায়ার সার্ভিস দুর্ঘটনাস্থলে উদ্ধারতৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে এবং পরিস্থিতি উত্তরণের সর্বাত্মক চেষ্টা করছে। দুর্ঘটনার কারণ উদঘাটনের জন্য ইতোমধ্যে বিমানবাহিনীর একটি উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। বিমানবাহিনী প্রধান বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় নিহত শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর শোক ও সমবেদনা প্রকাশ করেছেন এবং আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করেছেন।
রক্তদানের জন্য আইএসপিআরের অনুরোধ : বিভিন্ন হাসপাতালে রক্তদাতাদের পাঠাতে প্রয়োজনীয় সমন্বয়ের জন্য বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর রেকর্ড অফিসে একটি জরুরি সেল (২৪/৭) খোলা হয়েছে; মোবাইল-০১৭৬৯৯৯৩৫৫৮ (হোয়াটসঅ্যাপ) নম্বরে যোগাযোগের জন্য অনুরোধ করা হলো।
নেগেটিভ গ্রুপের রক্তের জন্য হাহাকার : বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় দগ্ধ হওয়া দেড় শতাধিক প্রাণ বাঁচাতে প্রয়োজন হয় রক্তের। ঘটনার কিছুক্ষণ পরই সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে ঘটনাস্থলে মাইকিং করে রক্তদাতাদের হাসপাতালগুলোতে যোগাযোগ করার অনুরোধ জানানো হয়। রক্তে দিতে ইচ্ছুক লোকদের যোগাযোগ করার অনুরোধ জানায় জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট কর্তৃপক্ষ। ‘রক্ত লাগবে’ এমন মানবিক পোস্টে ছেয়ে যায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলো। এতে বিপুলসংখ্যক রক্তদাতা হাসপাতালগুলোতে ভিড় করেন। তবে বিপুলসংখ্যক রক্তদাতার মধ্যেও সঙ্কট দেখা দিয়েছে নেগেটিভ গ্রুপের রক্তের। যার জন্য চলছে হাহাকার। বিশেষ করে যেসব গ্রুপের রক্ত রেয়ার যেমন ‘এবি’ নেগেটিভ, ‘ও’ নেগেটিভ, ‘এবি’ পজিটিভ- এসব গ্রুপের রক্তের জন্য হিমশিম খেতে হয় হাসপাতালগুলোকে। অনেকে হাতে প্লাকার্ড নিয়ে রক্তের গ্রুপ লিখে আকুতি জানান।
আহতদের বেশির ভাগই বর্তমানে জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন রয়েছে। রক্তের আকুতিতে হাসপাতাল চত্বরে এক হৃদয়বিদারক দৃশ্য দেখা গেছে। গতকাল সোমবার বেলা বাড়ার সাথে সাথে একের পর এক অ্যাম্বুলেন্স এসে থামছে বার্ন ইউনিটের সামনের সড়কে। স্ট্রেচারে করে নামানো হয় দগ্ধ শিশু-কিশোরদের। একজন থরথর কাঁপা কণ্ঠে বলেছেন, রক্ত না পেলে ছেলেটা বাঁচবে না। অ্যাম্বুলেন্স থামলেই অভিভাবকরা তাদের সন্তানকে খুঁজে পাওয়ার আকুতি নিয়ে ছুটে যাচ্ছেন। কেউ কেউ আশঙ্কাজনক অবস্থায় সন্তানকে দেখে জ্ঞান হারাচ্ছেন। একজন বাবার চিৎকার এখনো কানে বাজছে ‘আমার ছেলেটা কোথায়? অ্যাম্বুলেন্সে আমার ছেলেটা আছে?’ এদিকে আহতদের চিকিৎসায় জরুরি প্রয়োজনে নেগেটিভ গ্রুপের রক্ত চেয়ে গতকাল বিকেলে রক্তদাতাদের অনুরোধ জানিয়েছিল বার্ন ইনস্টিটিউট কর্তৃপক্ষ। এতে সাড়া দিয়েছেন অসংখ্য রক্তদাতা। পরে হাসপাতালের সামনে ঘোষণা করা হয় আর রক্তের প্রয়োজন নেই। এ কারণে রক্তদাতাদের রক্তের গ্রুপ উল্লেখ করে রেজিস্ট্রেশন করে বার্ন ইনস্টিটিউট এলাকা ত্যাগ করার অনুরোধ জানানো হয়।
সরেজমিন দেখা যায়, চিকিৎসা নিতে আসা আহতদের স্বজনদের থেকে উৎসুক জনতার ভিড় বেশি। মানুষের ভিড় ঠেলে আহত রোগী বহনকারী অ্যাম্বুলেন্স প্রবেশ করতে পারছে না। অনেকে আবার স্বেচ্ছায় রক্ত দিতে এসেছেন। ফলে জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটের আশপাশে হাজারও জনতার ভিড়ে ব্যাহত হয় চিকিৎসাসেবা। স্বেচ্ছাসেবী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী পাভেল আহমেদ হ্যান্ড মাইকে ঘোষণা দেন, ‘আজ আর ব্লাড লাগবে না। অহেতুক হাসপাতালের সামনে ভিড় করবেন না। দরকার হয় আপনারা ব্লাড ডোনেশনের জন্য নিবন্ধন করে চলে যান। তারপরও সময়ের সাথে সাথে বেড়েই চলেছে উৎসুক জনতা ও ডোনারদের ভিড়। অনেকে ফেসবুকে লাইভ করছেন। এসব উৎসুক জনতাকে সরাতে হিমশিম খাচ্ছেন স্বেচ্ছাসেবকরা।
ফায়ার সার্ভিসের ডিজি যা বললেন : বিকেল সাড়ে ৪টায় ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মুহাম্মদ জাহেদ কামাল সংবাদ সম্মেলনে জানান, বিমানবাহিনীর একটি বিমান উড্ডয়নের কিছুক্ষণের মধ্যেই উত্তরার মাইলস্টোন কলেজের একটি ভবনে আছড়ে পড়ে। প্রচণ্ড শব্দ আর আগুনের গোলায় পুরো এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। তিনি বলেন, উত্তরার দিয়াবাড়ি এলাকায় মাইলস্টোন কলেজে বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১৯ জন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় ৫০ জনের বেশি আহত হয়েছেন। আহত সবাইকে উদ্ধার করেছে ফায়ার সার্ভিস, সেনাবাহিনী এবং উদ্ধারকর্মীরা। তাদের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। তিনি জানান, এ কাজে ফায়ার সার্ভিসের নয়টি ইউনিট এবং ছয়টি অ্যাম্বুলেন্স কাজ করছে। উদ্ধার কাজ এখনো চলমান। রাত সাড়ে ৮টায় ফায়ার সার্ভিস থেকে জানানো হয়, প্রথমে আগুনের সংবাদ পাওয়া যায় ১টা ১৮ মিনিটে। প্রথম ইউনিট পৌঁছায় ১টা ২২ মিনিটে। ফায়ার সার্ভিসকর্মীরা ১৬ জনের লাশ উদ্ধার করে। আহতদের উদ্ধার করে ১৬ জন। আহতদের মধ্যে কলেজটির সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি এবং শিক্ষার্থীরা রয়েছেন। তবে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা বেশি আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।
লাশ শনাক্তের পরপরই হস্তান্তর : প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়ে হতাহতের ঘটনায় নিহতদের মধ্যে যাদের পরিচয় শনাক্ত করা যাবে তাদের লাশ অতিসত্বর পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে। এছাড়া যাদের পরিচয় তাৎক্ষণিকভাবে শনাক্ত করা যাবে না তাদের লাশ ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে শনাক্ত করে পরবর্তীতে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং এক বার্তায় এ তথ্য জানায়। বার্তায় বলা হয়, আহতদের চিকিৎসার বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টা সার্বক্ষণিক খোঁজখবর রাখছেন।
আজ রাষ্ট্রীয় শোক : বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়ে একটি বিদ্যালয়ে পতিত হওয়ার ফলে কোমলমতি শিশুসহ অনেক মানুষের মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গভীরভাবে শোকাহত। এই পরিপ্রেক্ষিতে আজ মঙ্গলবার রাষ্ট্রীয়ভাবে শোক পালন করা হবে। দেশের সব সরকারি, আধা সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ সব সরকারি ও বেসরকারি ভবন এবং বিদেশস্থ বাংলাদেশ মিশনসমূহে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত থাকবে।
নিহতদের মাগফিরাত এবং আহতদের সুস্থতা কামনায় আজ বাংলাদেশের সব মসজিদে বিশেষ দোয়া অনুষ্ঠিত হবে। অন্যান্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানেও বিশেষ প্রার্থনার আয়োজন করা হবে। গতকাল মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে জারিকৃত প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে এ তথ্য জানানো হয়।
বিভিন্ন মহলের শোক
উত্তরায় স্কুল ভবনে বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়ে হতাহতের ঘটনায় বিভিন্ন ব্যক্তি ও সংগঠন গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছে। পৃথক শোক বার্তায় তারা নিহতদের রূহের মাগফেরাত ও আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করেন।
প্রধান উপদেষ্টা : অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বিমান বিধ্বস্তে হতাহতের ঘটনায় গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন। তিনি গতকাল সোমবার এক শোকবার্তায় বলেন, বিমান বিধ্বস্তে হতাহতের ঘটনায় আমি গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করছি।
এই দুর্ঘটনায় বিমানসেনা ও মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষক-কর্মচারীসহ অন্যদের যে ক্ষতি হয়েছে তা অপূরণীয়। জাতির জন্য এটি একটি গভীর বেদনার ক্ষণ। তিনি আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা এবং সংশ্লিষ্ট হাসপাতালসহ সকল কর্তৃপক্ষকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে পরিস্থিতি মোকাবেলার নির্দেশ দেন। প্রধান উপদেষ্টা বলেন, সরকার দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ এবং সব ধরনের সহায়তা নিশ্চিত করবে।
ধর্ম উপদেষ্টা : এক শোকবার্তায় ধর্ম উপদেষ্টা নিহতদের রূহের মাগফিরাত কামনা করেন ও শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা জানান। এর আগে উপদেষ্টা খবর পেয়ে জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনিস্টিউটে আহত ও অগ্নিদগ্ধ শিক্ষার্থীদের দেখতে যান এবং তাদের চিকিৎসার খোঁজখবর নেন। তিনি সেখানে নিহতদের রূহের মাগফিরাত ও আহতদের সুস্থতা কামনা করে দোয়া করেন।
হেফাজতে ইসলাম : হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমির আল্লামা শাহ্ মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী ও মহাসচিব আল্লামা শায়েখ সাজিদুর রহমান গভীর শোক প্রকাশ করে বলেন, বিমান বিধ্বস্ত হয়ে যে মর্মান্তিক প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে, তা অত্যন্ত হৃদয়বিদারক ও বেদনাদায়ক। আমরা নিহতদের রূহের মাগফিরাত কামনা করছি এবং আহতদের দ্রুত আরোগ্য লাভের জন্য দোয়া করছি। তারা বলেন, এ শোকাবহ মুহূর্তে নিহতদের শোকসন্তপ্ত পরিবারবর্গ, আহতদের স্বজন ও গোটা জাতির প্রতি আমরা গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি।
খেলাফত মজলিস : গভীর শোক ও সমবেদনা জ্ঞাপন করে খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা আব্দুল বাছিত আজাদ ও মহাসচিব ড. আহমদ আবদুল কাদের বিবৃতিতে বলেন, এই দুর্ঘটনায় বিমানসেনা ও মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষক-কর্মচারীসহ অন্যদের যে ক্ষতি হয়েছে তা অপূরণীয়। জাতির জন্য এটি একটি গভীর বেদনার ক্ষণ। যারা নিহত হয়েছেন মহান আল্লাহর দরবারে মাগফিরাত কামনা করছি। শোককসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করছি।
জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম : সভাপতি শাইখুল হাদিস মাওলানা উবায়দুল্লাহ ফারুক ও মহাসচিব মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী নিহতদের রূহের মাগফিরাত কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবার-পরিজনের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করেন। তারা আহতদের অবিলম্বে উন্নত চিকিৎসা নিশ্চিত করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
খেলাফত আন্দোলন : আমির মাওলানা হাবিবুল্লাহ নিয়াজী ও মহাসচিব মাওলানা ইউসুফ সাদেক হক্কানী নিহতদের শাহাদাত কামনা করেন এবং অগ্নিদগ্ধ হয়ে আহতদের সুস্থতা কামনা করে নেক দোয়া করেন। হতাহতদের শোকাহত পরিবারের সাথে সমবেদনা প্রকাশ করেন। অপর অংশের প্রধান আমিরে শরিয়ত আল্লামা আবু জাফর কাসেমী ও মহাসচিব মুফতি ফখরুল ইসলাম গভীর দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, অগ্নিদগ্ধ হয়ে যারা মারা গিয়েছেন মহান আল্লাহ তায়ালা তাদের শাহাদাতের সুমহান মর্যাদা দান করুন এবং তাদের পরিবারকে ধৈর্য ধারণ করার তাওফিক দান করুন।
ইসলামী ঐক্যজোট : ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির সভাপতি মাওলানা আব্দুর রকিব অ্যাডভোকেট যুগ্ম মহাসচিব ও মুখপাত্র মাওলানা মো: ইলিয়াস আতহারী এক যৌথ বিবৃতিতে নিহতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করেন।
আন্তর্জাতিক মজলিসে তাহাফফুজে খতমে নবুওয়ত বাংলাদেশ : মহাসচিব মাওলানা মুহিউদ্দীন রাব্বানী বলেন, যে হৃদয়বিদারক প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে তা অত্যন্ত মর্মান্তিক, বেদনাদায়ক এবং গভীর উদ্বেগের বিষয়। এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় নিহতদের রূহের মাগফিরাত কামনা করছি এবং আহতদের দ্রুত সুস্থতা লাভের জন্য আল্লাহ তায়ালার দরবারে দোয়া করছি।
বাউবি ভিসি : মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ক্যাম্পাসের ওপর সোমবার প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়ে শিক্ষার্থী নিহত ও আহতের মর্মান্তিক ঘটনায় বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. এ বি এম ওবায়দুল ইসলাম গভীর শোক ও সমবেদনা প্রকাশ করেছেন।
মুসলিম লীগ : বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণ বিমান দুর্ঘটনায় পাইলটসহ নিহতদের রূহের মাগফিরাত ও আহতদের আশু আরোগ্য কামনা করে বাংলাদেশ মুসলিম লীগের সভাপতি বেগম জোবায়দা কাদের চৌধুরী, নির্বাহী সভাপতি আব্দুল আজিজ হাওলাদার স্থায়ী কমিটির সদস্য আতিকুল ইসলাম ও আনোয়ার হোসেন আবুড়ী, ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব অ্যাডভোকেট আফতাব হোসেন মোল্লা ও অতিরিক্ত মহাসচিব তারেক জমির সজীব এক বিবৃতি দিয়েছেন।