- আরেকটি এফ-৩৫ ধ্বংস
- ইরানে হামলার ‘পরিণতি হতে পারে ভয়াবহ’ : কাতার
- ইরান-ইসরাইল সঙ্ঘাতে ‘ঘি ঢালছেন’ ট্রাম্প : চীন
- তেহরান, জেরুসালেম ও তেলআবিবে বিস্ফোরণ
ইসরাইল ও ইরানের মধ্যে টানা পঞ্চম দিনের মতো পাল্টাপাল্টি হামলা অব্যাহত রয়েছে। মারাত্মক ক্ষেপণাস্ত্র ও বিমান হামলায় ক্ষণে ক্ষণে কেঁপে উঠছে তেহরান ও তেলআবিবসহ দেশ দু’টির বিভিন্ন অঞ্চল। ইরানি গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, ইসরাইলের মাটিতে সবচেয়ে বড় এবং তীব্র ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চলছে। এদিকে ইরানের যুদ্ধকালীন চিফ অব স্টাফকে হত্যার দাবি করেছে ইসরাইলি সেনাবাহিনী। রয়টার্স, বিবিসি ও আলজাজিরা।
ইরানের অভিজাত ইসলামিক রেভুল্যুশনারি গার্ড কোর (আইআরজিসি) বলেছে, তারা ইসরাইলে একটি সামরিক গোয়েন্দা সেন্টার ও মোসাদের একটি অপারেশন পরিকল্পনা কেন্দ্রে হামলা চালিয়েছে। ইরানের আধা সরকারি তাসনিম নিউজ এজেন্সিতে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে এই দাবি করেছে আইআরজিসি। এর আগে ইসরাইলি গণমাধ্যমে বলা হয়, ইসরাইলের মধ্যাঞ্চলের শহর হার্জলিয়ায় ক্ষেপণাস্ত্র হামলা হয়েছে। উপকূলীয় শহরটিতে অবস্থিত একটি ‘স্পর্শকাতর’ স্থান নিশানা করা এই ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানো হয়। ‘স্পর্শকাতর’ স্থান বলতে সাধারণত কোনো সামরিক বা কৌশলগত স্থানের ইঙ্গিত দেয় বলে খবর আলজাজিরার।
আরেকটি এফ-৩৫ ধ্বংস, ইসরাইলের জন্য অন্ধকার পূর্বাভাস : ইরানের বিমান প্রতিরক্ষা বাহিনী আবারো তাদের সক্ষমতার এক প্রমাণ দিলো। গতকাল মঙ্গলবার তাবরিজ শহরের আকাশে ভূপাতিত হয়েছে আরো একটি ইসরাইলি এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান। বিশ্বের সর্বাধুনিক ও স্টেলথ প্রযুক্তিসম্পন্ন এ যুদ্ধবিমানকে গর্ব করে ‘অদৃশ্য ঘাতক’ বলে থাকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইল। এটি ছিল ইরানের হাতে ধ্বংস হওয়া চতুর্থ এফ-৩৫, যা এক নতুন সামরিক বাস্তবতার দিকে ইঙ্গিত দিচ্ছে। মেহের নিউজ জানায়, তাবরিজে এফ-৩৫ ভূপাতিত হওয়ার অর্থ হচ্ছে- ইরান এখন শুধু কৌশলগতভাবেই নয়, প্রযুক্তিগতভাবেও যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের বিরুদ্ধে একই স্তরে প্রতিযোগিতা করছে। রাশিয়ান এস-৩০০ ও দেশীয়ভাবে উন্নত বোয়ার্দ-৩৭৩ সিস্টেমের পাশাপাশি ‘খোরামশাহর’ ও ‘সাইয়েদ আল-শোহাদা’ রাডার সিস্টেম ইরানকে এমন এক প্রতিরক্ষা ব্যূহ দিয়েছে, যা ইসরাইল ও যুক্তরাষ্ট্রের ‘নো-ফ্লাই’ ইমেজ চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছে। ইসরাইল দীর্ঘদিন ধরে এফ-৩৫-কে মধ্যপ্রাচ্যে তাদের ফাইটার জেট শক্তির কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। এ যুদ্ধবিমানগুলো মূলত মার্কিন প্রযুক্তির নির্যাস। যার মূল্য ইউনিট প্রতি ৮০-১০০ মিলিয়ন ডলার। এমন শক্তিশালী স্টেলথ জেট ভূপাতিত হওয়া মানে শুধু অর্থনৈতিক ক্ষতি নয়, কৌশলগত এক কঠিন বার্তাও। ইরানের তরফ থেকে এমন সুনির্দিষ্টভাবে এফ-৩৫ টার্গেট করা একটি সামরিক আত্মবিশ্বাসেরও পরিচায়ক, যা আগে এতটা স্পষ্ট ছিল না। এটি একটি অঘোষিত বার্তা যে, ইরান যদি চায়, ইসরাইলের আকাশও নিরাপদ নয়। এখন পর্যন্ত এই চতুর্থ এফ-৩৫ ধ্বংসের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র বা ইসরাইলের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক কোনো প্রতিক্রিয়া আসেনি। তবে অতীত অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, এ ধরনের ঘটনাগুলোতে প্রথমে অস্বীকার, পরে ধীরে ধীরে ‘গোয়েন্দা তথ্য ভুল’ বা ‘দুর্ঘটনা’ বলে ব্যাখ্যা দেয়া হয়। বাস্তবতা হচ্ছে- যুদ্ধক্ষেত্রে ইরান এখন শুধু প্রতিরক্ষা নয়, আক্রমণ ও প্রতিরোধের ভারসাম্য রক্ষা করতে পারছে। এর অর্থ দাঁড়ায়- মধ্যপ্রাচ্যে এক নতুন সামরিক ভারসাম্য গড়ে উঠছে, যার নিয়ন্ত্রণ আর কেবল ওয়াশিংটন বা তেলআবিবের হাতে থাকবে না। এই যুদ্ধবিমান ভূপাতিত হওয়ার ঘটনাটি ইরানের জন্য সাময়িক একটি সফলতা নয়; এটি এক কূটনৈতিক প্রতিচ্ছবিও বটে। এটি বোঝায় যে, মধ্যপ্রাচ্যের আকাশে ইরানের নিয়ন্ত্রণ এখন পুরোপুরি বাস্তব। আর ইসরাইলের জন্য এটি ভবিষ্যতের এক অন্ধকার পূর্বাভাস।
ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইসরাইলের ‘মস্তিষ্ক’ গুঁড়িয়ে দিলো ইরান : মধ্য ইসরাইলের রেহোভোতে অবস্থিত ওয়েইজম্যান বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট। বহু বছর ধরে এটি ইসরাইলের সামরিক গবেষণার কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত। সোমবার রাতে ইরানের এক ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় প্রতিষ্ঠানটি ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ইরান এ হামলাকে তাদের বেসামরিক নাগরিকদের ওপর পরিচালিত ইসরাইলি হামলার জবাব হিসেবে ব্যাখ্যা করেছে। ইসরাইলের হিব্রু ভাষার প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম হারেৎজ গ্রুপের আওতাধীন দৈনিক দ্য মার্কার জানিয়েছে, প্রতিষ্ঠানটির একাধিক ভবনে সরাসরি আঘাত লাগে এবং একটি গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা কমপ্লেক্স সম্পূর্ণভাবে আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। এই গবেষণাগারগুলোতে জীবনবিজ্ঞান, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) এবং অণুজীববিজ্ঞানের ওপর অত্যাধুনিক গবেষণা চলত, যেগুলোর ফলাফল ইসরাইলের নজরদারি প্রযুক্তি, টার্গেটিং সিস্টেম এবং অস্ত্র ব্যবস্থাপনায় সরাসরি প্রয়োগ হয়েছে। এসব প্রযুক্তি গাজা, লেবানন, ইয়েমেন ও সম্প্রতি ইরানের ভূখণ্ডে পরিচালিত হামলায় ব্যবহৃত হয়েছে।
ওয়েইজম্যান ইনস্টিটিউটকে অনেক সময় ‘ইসরাইলের বৈজ্ঞানিক ও সামরিক মস্তিষ্ক’ বলে আখ্যা দেয়া হয়। কেননা, এখান থেকেই মূলত পরিচালিত হয়েছে ড্রোন প্রযুক্তি, এয়ারস্ট্রাইক কন্ট্রোল সিস্টেম এবং যুদ্ধক্ষেত্রের মেডিক্যাল টেকনোলজির গবেষণা যা বহুবার বিভিন্ন বেসামরিক জনপদের বিরুদ্ধে ব্যবহৃত হয়েছে। ধ্বংসপ্রাপ্ত গবেষণাগারগুলোর মধ্যে একটি পরিচালনা করতেন ইসরাইলি অধ্যাপক এলদাদ জাহোর। তিনি আণবিক কোষ জীববিদ্যার একজন প্রবীণ গবেষক। অপরদিকে অধ্যাপক এরান সেগালের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা গবেষণাগারেও সরাসরি আঘাত লেগেছে। তিনি জানান, মিলিয়ন ডলারের যন্ত্রপাতি পানিতে ও কাঠামোগত ক্ষতিতে একেবারে ধ্বংস হয়ে গেছে। তার গবেষণাগার মূলত যুদ্ধক্ষেত্রের রিয়েল-টাইম সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও নজরদারি অ্যালগরিদম উন্নয়নে কাজ করত।
ইসরাইলি গণমাধ্যমে প্রকাশিত ছবিগুলোতে দেখা গেছে আগুনে পুড়ে যাওয়া ল্যাবের ভেতর, ধসে পড়া মেঝে, পুড়ে যাওয়া বৈদ্যুতিক লাইন ও সম্পূর্ণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত কাঠামো। সূত্রগুলো বলছে, এটি ছিল ইরানের একটি নির্ভুল হামলা। দ্য মার্কার উল্লেখ করেছে, ইরানের এই হামলা কোনো ‘এলোমেলো’ হামলা নয়, বরং খুবই সচেতনভাবে বাছাইকৃত একটি আঘাত। কারণ এই ইনস্টিটিউটটি বহু বছর ধরে সামরিক গবেষণাকে বৈজ্ঞানিক ছদ্মবেশে চালিয়ে আসছিল। বিশ্লেষকদের মতে, ইরানের এই হামলা ইসরাইলের পারমাণবিক বিজ্ঞানীদের হত্যার প্রতিশোধ হিসেবেও দেখা যেতে পারে।
গবেষণাগারের অধ্যাপক শ্যারেল ফ্লেইশম্যান বলেন, ‘লাইফ সায়েন্সের গবেষণাগারগুলোতে এমনসব উপাদান থাকে, যেগুলো সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করতে বহু বছর লাগে। এগুলো ধ্বংস হয়ে গেলে তা আর ফিরে পাওয়া যায় না।’
অপর গবেষক অধ্যাপক ওরেন শুল্ডিনার বলেন, ‘মনে হচ্ছে যেন গোটা ল্যাবটাই বাতাসে মিলিয়ে গেছে।’ এটি পুরোপুরি পুনর্গঠন করতে কমপক্ষে দু’বছর সময় লাগবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি। বিশ্লেষকরা বলছেন, এ হামলার মাধ্যমে ইরান একটি স্পষ্ট বার্তা দিয়েছে। তা হলো- ইসরাইলি গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলো যখন যুদ্ধযন্ত্রে রূপান্তরিত হয়, তখন সেগুলো আর নিরীহ থাকে না। এমন ‘দ্বৈত পরিচয়’ আর বিনা প্রতিক্রিয়ায় চলতে দেয়া হবে না।
২১টি আরব ও মুসলিম দেশের বিবৃতি : ইরানে ইসরাইলি হামলার নিন্দা জানিয়ে যৌথ বিবৃতি দিয়েছে আরব ও মুসলিম দেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা। এতে তারা উত্তেজনা প্রশমনের আহ্বান জানিয়েছেন। আনাদোলু এজেন্সির খবরে বলা হয়েছে, মিসর, জর্দান, পাকিস্তান, বাহরাইন, ব্রুনেই, তুরস্ক, চাদ, আলজেরিয়া, কোমোরোস, সংযুক্ত আরব আমিরাত, জিবুতি, সৌদি আরব, সুদান, সোমালিয়া, ইরাক, ওমান, কাতার, কুয়েত, লিবিয়া এবং মৌরিতানিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা ‘অঞ্চলের বিপজ্জনক উত্তেজনা নিয়ে গভীর উদ্বেগ’ প্রকাশ করেছেন। বিবৃতিতে মন্ত্রীরা রাষ্ট্রগুলোর সার্বভৌমত্ব ও ভৌগোলিক অখণ্ডতা এবং সুপ্রতিবেশীসুলভ নীতির প্রতি শ্রদ্ধার প্রয়োজনীয়তা নিশ্চিত করার গুরুত্বের কথা বলেছে। সব পক্ষকে শান্তিপূর্ণ উপায়ে তাদের বিরোধ নিষ্পত্তির আহ্বান জানিয়েছেন। এ ছাড়া ২০ মুসলিম দেশের মন্ত্রীরা জোর দিয়ে বলেছেন, সঙ্ঘাতের সমাধান কূটনীতির মাধ্যমে হওয়া উচিত, সামরিক উপায়ে এর সমাধান সম্ভব নয়।
এসব দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা পারমাণবিক অস্ত্র এবং অন্যান্য গণবিধ্বংসী অস্ত্রমুক্ত একটি মধ্যপ্রাচ্য তৈরির গুরুত্বের ওপর জোর দিয়েছেন।
ইরানে ইসরাইলি হামলার ‘ভয়াবহ পরিণতি’ হতে পারে : কাতার
ইরান-ইসরাইলের চলমান উত্তেজনা কাতারের রাজধানী দোহায় এক সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেছেন দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাজেদ আল-আনসারি। এ সময় তিনি ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় ইসরাইলের হামলায় কড়া নিন্দা জানিয়েছেন। পাশাপাশি আঞ্চলিক শান্তি ফিরিয়ে আনার জন্য অবিলম্বে সহিংসতার পথ পরিহারের আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
আলজাজিরা জানায়, সংবাদ সম্মেলনে কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় ইসরাইলের হামলার ঘটনাকে থথ‘অবিবেচনাপ্রসূত পদক্ষেপ’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন। ইসরাইলি এই হামলার ‘ভয়াবহ পরিণতি’ হতে পারে উল্লেখ করে কড়া নিন্দা জানান তিনি।
মাজেদ আল-আনসারি বলেন, এই হামলার সময়টিও তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ ইরান যখন ওয়াশিংটনের সাথে কূটনৈতিকভাবে ইতিবাচক পথে আলোচনার প্রক্রিয়ায় এগিয়ে যাচ্ছিল ঠিক তখনই এই হামলা চালানো হয়েছে। আর ওই আলোচনায় আঞ্চলিক অনেক দেশ সরাসরি যুক্ত ছিল। তিনি বলেন, কাতার এখনো যুক্তরাষ্ট্রের সাথে মধ্যস্থতায় সক্রিয় রয়েছে এবং একটি চুক্তির ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রহ রয়েছে বলে দোহা বিশ্বাস করে। আনসারি বলেন, আমরা ইসরাইল ও ইরানের মধ্যে যুদ্ধবিরতির জন্য কাজ চালিয়ে যাবো।
তেহরানের বাসিন্দাদের সরে যেতে বললেন ট্রাম্প
তেহরানের বাসিন্দাদের সরে যেতে বলার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, ‘আমি শুধু চাই, মানুষ নিরাপদে থাকুক।’ ইসরাইলের জন্য কিছু করতে পারেন কি না সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের উত্তরে ট্রাম্প বলেন, ‘এই মুহূর্তে আমরা মোটামুটি ভালো করছি। মনে রাখবেন, ইরান পরমাণু অস্ত্র পেতে পারে না।’ খবর আলজাজিরার।
ট্রাম্প সোমবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেয়া এক পোস্টে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ইরানিদের অবিলম্বে তেহরান খালি করতে হবে। সিএনএন জানায়, নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে ট্রাম্প লিখেছেন, সবাইকে এখনই তেহরান ত্যাগ করতে হবে। তবে এর পেছনে নির্দিষ্ট কোনো কারণ উল্লেখ করেননি তিনি। ইরানি কর্মকর্তাদের সাথে আলোচনার জন্য মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তার ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স বা মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক দূত স্টিভ উইটকফকে পাঠানোর কথা ভাবছেন। সিবিএস নিউজের এক সাংবাদিক এমনটাই জানিয়েছেন। এই সাংবাদিক ট্রাম্পের সাথে একই উড়োজাহাজে (এয়ারফোর্স ওয়ান) করে কানাডা থেকে যুক্তরাষ্ট্রে ফিরছেন। জি-৭ সম্মেলনে অংশ নিতে কানাডায় গিয়েছিলেন ট্রাম্প। সিবিএস নিউজের এই সাংবাদিক জানিয়েছেন, ভ্যান্স বা উইটকফকে পাঠানো হবে কি না, তা নির্ভর করছে ওয়াশিংটনে ফিরে তিনি কী পরিস্থিতি দেখতে পান তার ওপর। সিবিএস নিউজের এই সাংবাদিক এক্স এ (সাবেক টুইটার) লিখেছেন, ট্রাম্প আরো বলেছেন, তিনি চান ইরান যেন পুরোপুরি পারমাণবিক অস্ত্র ত্যাগ করে। তিনি তেহরানের সাথে পারমাণবিক সঙ্কটের সত্যিকারের চূড়ান্ত সমাধান চান।
ইরান-ইসরাইল সঙ্ঘাতে ‘ঘি ঢালছেন’ ট্রাম্প : চীন
ইরান ও ইসরাইলের মধ্যে বেড়ে চলা সামরিক উত্তেজনার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মন্তব্যকে ‘আগুনে ঘি ঢালা’ বলে কড়া ভাষায় নিন্দা জানিয়েছে চীন। গত সপ্তাহে ইসরাইল ইরানের অভ্যন্তরে একাধিক লক্ষ্যবস্তুতে আকস্মিক বিমান হামলা চালায়। দাবি করে, তাদের উদ্দেশ্য ছিল ইরানকে পারমাণবিক অস্ত্র অর্জন থেকে বিরত রাখা। যদিও তেহরান বারবার পারমাণবিক অস্ত্র অর্জনের অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে।
এই পরিস্থিতিতে ট্রাম্প ‘ট্রুথ সোশ্যাল’-এ বলেন, ‘সবাই অবিলম্বে তেহরান ত্যাগ করুন।’ গতকাল বেইজিংয়ে নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্পের মন্তব্য সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র গুও জিয়াকুন বলেন, ‘আগুন উসকে দেয়া, ঘি ঢালা, হুমকি দেয়া এবং চাপ সৃষ্টি করা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে সাহায্য করবে না, বরং কেবল সঙ্ঘাতকে আরো তীব্র ও বিস্তৃত করবে।’
তিনি আরো বলেন, ‘চীন সব পক্ষকে, বিশেষ করে ইসরাইলের ওপর যাদের বিশেষ প্রভাব রয়েছে, তাদের দায়িত্বশীল ভূমিকা পালনের আহ্বান জানাচ্ছে, যেন অবিলম্বে শান্তি রক্ষায় পদক্ষেপ নেয়া হয় এবং এই সঙ্ঘাত ছড়িয়ে পড়া রোধ করা যায়।’ এদিন চীনের ইসরাইলস্থ দূতাবাসও দেশটির নাগরিকদের উদ্দেশে সতর্কবার্তা দিয়েছে। বিবৃতিতে বলা হয়, ‘ইসরাইল-ইরান সাম্প্রতিক পাল্টাপাল্টি হামলার পর চীনা নাগরিকদের দ্রুত ইসরাইল ত্যাগ করা উচিত।’ ট্রাম্পের মন্তব্য পারমাণবিক আলোচনা বন্ধের পাশাপাশি মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে অস্থিরতা ডেকে আনতে পারে। সঙ্ঘাত যদি পূর্ণমাত্রায় রূপ নেয়, এর প্রভাব ছড়িয়ে পড়তে পারে গোটা অঞ্চলে।
জেরুসালেম ও তেলআবিবে বিস্ফোরণ :
উড়ে আসছে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র; ইসরাইলের সেনাবাহিনীর এমন সতর্কতা জারির পরপর তেলআবিব ও পশ্চিম জেরুসালেমে বিকট বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে বলে জানিয়েছে আলজাজিরা। ইসরাইলের সেনাবাহিনী এক বিবৃতিতে বলেছে, তাদের বিমানবাহিনী হুমকি মোকাবেলায় প্রয়োজন বুঝে আক্রমণ প্রতিহত করছে এবং আক্রমণ চালাচ্ছে।
ওই বিবৃতি প্রকাশের প্রায় ২০ মিনিট পর সেনাবাহিনী আরেকটি বিবৃতি প্রকাশ করে বলেছে, দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে মানুষজনকে নিরাপদ আশ্রয়স্থল থেকে বের হওয়ার অনুমতি দেয়া হয়েছে। ইসরাইলি পুলিশের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, যেসব স্থানে ক্ষেপণাস্ত্র পড়ে থাকার খবর পাওয়া গেছে, সেসব এলাকায় উদ্ধারকারী দল তল্লাশি ও উদ্ধারকাজ চালিয়ে যাচ্ছে।
তেলআবিব এলাকায় ক্ষেপণাস্ত্র ও গোলা পড়ে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তবে হতাহতের কোনো ঘটনা ঘটেনি বলেও ওই বিবৃতিতে জানানো হয়েছে। দেশটির অগ্নিনির্বাপণ বাহিনী বলেছে, তেলআবিবের কাছেরদান জেলায় প্রাথমিকভাবে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা ও অগ্নিকাণ্ডের খবর পাওয়া গেছে। স্থানীয় সময় সকাল ৮টা ৪৫ মিনিট নাগাদ তারা বেশ কয়েকটি ফোন পান। ফোনে গুশদান এলাকায় ক্ষেপণাস্ত্র হামলা ও অগ্নিকাণ্ডের কথা বলা হয়।
ইসরাইলি সেনাবাহিনীর বরাত দিয়ে টাইমস অব ইসরাইল জানিয়েছে, গত রাতে ইরান থেকে ১০টির কম ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, ক্ষেপণাস্ত্রগুলো তিন দফায় ছোড়া হয়। লক্ষ্যবস্তু ছিল ইসরাইলের মধ্য ও উত্তরাঞ্চলীয় এলাকা। সময় ছিল দিবাগত রাত ১২টা, সাড়ে ৩টা ও ভোর সাড়ে ৪টা। ইরানের ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্র ইসরাইলের অন্তত চারটি স্থানে আঘাত হেনেছে। এতে ইসরাইলের মধ্যাঞ্চলের হার্জলিয়া শহরের একটি আটতলা ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ ছাড়া উপকূলীয় শহরটিতে একটি ফাঁকা বাসে আগুন ধরে যায়। ইসরাইলের ওয়াইনেট নিউজ এসব তথ্য জানিয়েছে।
টেলিভিশনে হামলায় নিহত বেড়ে ৩ :
ইসরাইলের হামলায় ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন আইআরআইবির মোট তিন কর্মী নিহত হয়েছেন। আলজাজিরার খবর অনুসারে, ইসরাইলি বাহিনী সোমবার ইরানের রাজধানী তেহরানে অবস্থিত আইআরআইবির সদর দফতরে হামলা চালায়। ইরানি সংবাদমাধ্যমে আগে জানানো হয়েছিল, এই হামলায় আইআরআইবির দুই কর্মী নিহত হয়েছেন। এখন তিন কর্মী নিহত হওয়ার তথ্য জানানো হলো। নিহত তিনজনের মধ্যে দু’জনের নাম-পরিচয় প্রকাশ করেছে ইরানের সরকারি সংবাদ সংস্থা আইআরএনএ।
তারা হলেন নিমা রেজবপুর ও মাসুমেহ আজিমি। রেজবপুর ছিলেন আইআরআইবির বার্তা সম্পাদক। আর আজিমি ছিলেন আইআরআইবির সচিবালয় শাখার একজন কর্মী। হামলার জেরে আইআরআইবির সরাসরি সম্প্রচার বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। পরে অবশ্য সম্প্রচার আবার শুরু হয়।
ইসরাইল যুদ্ধক্ষেত্র সম্প্রসারণ করছে : জর্দান
ইসরাইলের সামরিক অভিযানে ইরানকে অন্তর্ভুক্ত করার ঘটনাকে কেন্দ্র করে মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা চরমে পৌঁছেছে। এ প্রেক্ষাপটে ইউরোপীয় পার্লামেন্টে এক ভাষণে গতকাল মঙ্গলবার জর্দানের রাজা আবদুল্লাহ দ্বিতীয় সতর্ক করে বলেছেন, ইসরাইলের এই ‘আক্রমণাত্মক সম্প্রসারণ’ শুধু তার অঞ্চল নয়, গোটা বিশ্বের জন্যই হুমকি। তিনি বলেন, ‘ইসরাইল যখন তার আক্রমণের পরিসর ইরান পর্যন্ত সম্প্রসারিত করছে, তখন বলা মুশকিল, এই যুদ্ধক্ষেত্রের সীমানা কোথায় গিয়ে থামবে। আর সেটাই, আমার বন্ধুরা, সারা বিশ্বের মানুষের জন্য হুমকি।’ তিনি আরো বলেন, মধ্যপ্রাচ্যে এমন উত্তেজনা ও সঙ্ঘাত ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা আছে, যা বৈশ্বিক নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতাকে বিপন্ন করতে পারে। রাজা আবদুল্লাহর এই বক্তব্য এমন সময়ে এলো, যখন ইসরাইল ও ইরানের মধ্যে পাল্টাপাল্টি হামলা চলছেই এবং পরিস্থিতি আরো জটিল আকার নিচ্ছে।



