ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নারায়ণগঞ্জ-১ (রূপগঞ্জ) আসনে রাজনৈতিক উত্তাপ বাড়ছে। এ আসনে বিএনপি থেকে একাধিক মনোনয়ন প্রত্যাশী ইতোমধ্যে মাঠে সক্রিয় হয়ে উঠছেন। প্রত্যাশিত প্রার্থী হিসেবে নিজেদেরকে তুলে ধরতে লিফলেট বিতরণ, গণসংযোগ, সভা-সমাবেশ, উঠান-বৈঠক ও ব্যানার-ফেস্টুন লাগিয়ে প্রচারণায় ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা। অন্য দিকে জামায়াতে ইসলামীর রয়েছে একক প্রার্থী।
রূপগঞ্জের অবস্থান ঢাকার সীমানার সাথেই। এ আসনটি পূর্বাচল উপশহর, দুটি পৌরসভা এবং সাতটি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত। এখানে ভোটার সংখ্যা প্রায় সাড়ে চার লাখ। এ ছাড়া আছে কয়েক হাজার শিল্প-কারখানা, যা এ আসনকে রাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ করে তুলছে।
রূপগঞ্জ-১ আসনে অতীতে জাতীয় পার্টি, বিএনপি ও আওয়ামী লীগের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হলেও বিগত জুলাই বিপ্লবের পর রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে আওয়ামী লীগ প্রকাশ্য রাজনীতি থেকে এক প্রকার হারিয়ে যাওয়ায় বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যকার মূল প্রতিযোগিতা দেখা যেতে পারে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।
বিএনপি থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে আছেন সাবেক সংসদ সদস্য ও বস্ত্রমন্ত্রী মরহুম আব্দুল মতিন চৌধুরীর উত্তরসূরিরা, বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি ও কেন্দ্রীয় নেতা মুক্তিযোদ্ধা কাজী মনিরুজ্জামান, নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান ভূঁইয়া (দিপু), সাবেক চেয়ারম্যান শরিফ আহমেদ টুটুল, রূপগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি মাহফুজুর রহমান হুমায়ূন এবং কেন্দ্রীয় যুবদলের সাবেক নেতা দুলাল হোসেন। এ ছাড়া বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত সাবেক বিআরটিসি চেয়ারম্যান তৈমুর আলম খন্দকারও স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনার কথা জানিয়েছেন।
জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী আনোয়ার হোসেন মোল্লা স্থানীয়ভাবে বেশ পরিচিত। তিনি ধর্মীয় ও সামাজিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে দলকে সুসংগঠিত করে তুলেছেন। তিনি বলেন, রূপগঞ্জের মানুষ পরিবর্তন চায়। জামায়াতে ইসলামী মানুষকে নতুন বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখাচ্ছে। রূপগঞ্জের জনগণ আগামীতে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে তাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করতে চায়। জনগণ ভোট দিয়ে নির্বাচিত করলে রূপগঞ্জকে তিনি ভূমিদস্যু, চাঁদাবাজ, মাদক ও দুর্নীতিমুক্ত সমাজ গড়ে তুলবেন।
বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে কাজী মনিরুজ্জামান বলেন, ১৬ বছর ধরে আওয়ামী দুঃশাসনের বিরুদ্ধে লড়াই করেছি। রূপগঞ্জে দলের হারানো গৌরব ফিরিয়ে আনতে আবারো প্রস্তুত আছি। মোস্তাফিজুর রহমান ভূঁইয়া (দিপু) বলেন, শেখ হাসিনার দমননীতির বিরুদ্ধে আমরা সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছি। দলীয় কর্মসূচিতে তৃণমূলের সক্রিয় অংশগ্রহণ আমাকে অনুপ্রাণীত করছে। শরিফ আহমেদ টুটুল বলেন, কঠিন সময়ে দলের পাশে ছিলাম। ক্লিন ইমেজ নিয়ে নির্বাচন করতে চাই, যদি দল মনোনয়ন দেয়। মাহফুজুর রহমান হুমায়ূন বলেন, ফ্যাসিস্ট আওয়ামী আমলে নির্যাতিত হলেও মাঠ ছাড়িনি। জনগণের ভোটাধিকার ফিরিয়ে দিতে নির্বাচনে অংশ নিতে চাই। দুলাল হোসেন বলেন, জেল-জুলুমের কারণে দীর্ঘদিন রূপগঞ্জে থাকতে পারিনি। তবুও দলের প্রতি আস্থা আমার অটুট ছিল, এখনো আছে।
এ দিকে তৈমুর আলম খন্দকার বলছেন, দলীয় সংস্কার হলে স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচন করে জয়ী হতে চাই।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, রূপগঞ্জে বর্তমানে বিএনপি পাঁচটি বলয়ে বিভক্ত। এই বিভাজন নিরসন না হলে জামায়াত সুবিধা নিতে পারে। তবে দলের নেতাকর্মীদের মতে, মনোনয়ন চূড়ান্ত হলে সবাই একত্র হয়ে কাজ করবে।
সর্বশেষ গত দ্বাদশ নির্বাচনে বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের মনোনীত আওয়ামী লীগ প্রার্থী গোলাম দস্তগীর গাজী প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচনগুলোতে টানা তিনবার এ আসন থেকে নির্বাচিত হন। ভূমি দখল, হাউজিং প্রকল্পের নামে কৃষিজমি দখলের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। ফলে রূপগঞ্জের সাধারণ মানুষের মধ্যে পরিবর্তনের আকাক্সক্ষা তৈরি হয়েছে।
স্থানীয়রা বলছেন, বিএনপির কোন্দল যদি নিরসন হয় এবং যোগ্য প্রার্থীকে মনোনয়ন দিতে পারে, তা হলে এবার ধানের শীষ প্রতীক ফিরে পেতে পারে তার পুরনো ঘাঁটি। অন্যথায়, বিভক্ত বিএনপির সুযোগ নিয়ে জামায়াত বা অন্য কেউ এ আসনে সামনে চলে আসতে পারে।