বহুজাতিক কোম্পানিকে পুঁজিবাজারে আনতে আইন করছে সরকার

সৈয়দ সামসুজ্জামান নীপু
Printed Edition

দেশে পরিচালিত বহুজাতিক কোম্পানিগুলোকে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হতে বাধ্য করা হবে। এ জন্য প্রণয়ন করা হচ্ছে একটি নতুন আইন। আগামী ছয় মাসের মধ্যে এই আইন প্রণয়ন করা হবে। এটি তৈরির দায়িত্ব দেয়া হয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ (এফআইডি) ও বিএসইসিকে। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের সময় এটি অর্ডিনেন্স আকারে জারি করা হবে। পরে জাতীয় সংসদে এটি আইন আকারে পাস করা হবে। এই আইনের আওতায় যেসব বহুজাতিক কোম্পানি এখন পর্যন্ত শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয়নি তাদেরকে একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বাজারে চলে আসতে হবে। এ ছাড়া আইনের এমন ধারা রাখা হবে যেখানে বলা থাকবে কোম্পানিকে কি পরিমাণ শেয়ারবাজারে ছাড়তে হবে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে শেয়ার তালিকাভুক্ত না করলে শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে। একই সাথে যেসব বহুজাতিক কোম্পানির শেয়ার পুঁজিবাজারে রয়েছে তাদেরকেও শেয়ারের পরিমাণ বাড়ানোরও বিষয়ে আইনে বাধ্যবাধকতা থাকবে।

সম্প্রতি সচিবালয়ে সরকারের মালিকানা রয়েছে এরূপ বহুজাতিক কোম্পানিসহ রাষ্ট্র মালিকানাধীন লাভজনক মৌলভিত্তি সম্পূর্ণ কোম্পানিগুলোকে পুঁজিবাজারে সরাসরি তালিকাভুক্তির বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণসংক্রান্ত এক সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান রাশেদ মকসুদ জানান , বহুজাতিক কোম্পানিগুলো এবং দেশীয় রাষ্ট্রমালিকানাধীন কোম্পানিগুলো পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হলে কোম্পানিগুলোর মার্কেট ভ্যালুসহ প্রকৃত আর্থিক অবস্থা জানা যাবে। এর মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের ডিভিডেন্ট বৃদ্ধি ও সরকারের ট্যাক্স বাড়বে। তিনি আরো জানান যে, প্রতিবেশী ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কাসহ বিভিন্ন দেশে বহুজাতিক কোম্পানিগুলো পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্তির বিষয়ে আইনি বাধ্যবাধকতা রয়েছে। দি সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অর্ডিন্যান্স, ১৯৬৯ এর ধারা ১০ মোতাবেক কমিশন কোনো সিকিউরিটির প্রকৃতি এবং লেনদেন বিবেচনা করে জনস্বার্থে স্টক এক্সচেঞ্জের সাথে পরামর্শ এবং ইস্যুকারীকে শুনানির সুযোগ প্রদান করে স্টক এক্সচেঞ্জ-কে সিকিউরিটি তালিকাভুক্ত করার নির্দেশ দিতে পারে বলে তিনি সভায় অবহিত করেন।

তবে এ ক্ষেত্রে বহুজাতিক কোম্পানিগুলোকে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত করার জন্য একটি আলাদা আইন করা যেতে পারে মর্মে তিনি মতামত পেশ করলে সভায় উপস্থিত সবাই একমত পোষণ করেন। এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে, আগামী ছয় মাসের মধ্যে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ ও বিএসইসি এই আইনটি প্রণয়ন করবে।

সভায় আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব নাজমা মোবারক পুঁজিবাজারের সার্বিক অবস্থা পর্যালোচনা এবং এর উন্নয়ন ও শক্তিশালীকরণের লক্ষ্যে গত ১১ মে তারিখ প্রধান উপদেষ্টার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় সরকারের মালিকানা রয়েছে এমন বহুজাতিক কোম্পানিগুলোকে সরকারের শেয়ার কমিয়ে পুঁজিবাজারে অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের নির্দেশনা দেন। পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির লক্ষ্যে ইতোমধ্যে বেশ কিছু কোম্পানির তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশনা অনুযায়ী বহুজাতিক কোম্পানিসহ রাষ্ট্র মালিকানাধীন লাভজনক মৌল ভিত্তিসম্পন্ন কোম্পানিগুলোকে পুঁজিবাজারে সরাসরি তালিকাভুক্তির বিষয়ে আলোচনা জন্যই সভার আয়োজন করা হয়।

সভায় শিল্প সচিব জানান যে, পুঁজিবাজারের সার্বিক অবস্থা পর্যালোচনা, উন্নয়ন ও শক্তিশালীকরণের জন্য প্রধান উপদেষ্টার দিকনির্দেশনা বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে শিল্প মন্ত্রণালয়ে এক সভা আয়োজন করা হয়।

সভায় সরকারি কোম্পানিগুলোর শেয়ার পুঁজিবাজারে ছাড়ার বিষয়ে আলোচনা হয়। সভায় যেসব বহুজাতিক কোম্পানিতে সরকারি মালিকানা রয়েছে সেগুলোতে সরকারি মালিকানার কমপক্ষে ৫ শতাংশ এবং বিদেশী মালিকানার কমপক্ষে ৫ শতাংশ শেয়ার পুঁজিবাজারে ছাড়ার বিষয়ে ইতিবাচক আলোচনা হয়েছে বলে শিল্প সচিব সভায় অবহিত করেন।

সভায় জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগ এবং বিদ্যুৎ বিভাগের আওতাধীন রাষ্ট্রমালিকানাধীন লাভজনক কোম্পানিগুলো তালিকাভুক্তির বিষয়ে সরকারের সিদ্ধান্ত গৃহীত হলে তারা এ বিষয়ে কার্যকর উদ্যোগ নেবে মর্মে ওই বিভাগের প্রতিনিধিরা সভায় মতামত পেশ করেন।

সভায় সার্বিক পর্যালোচনা শেষে কয়েকটি সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়

(ক) বহুজাতিক কোম্পানিসহ রাষ্ট্র মালিকানাধীন লাভজনক মৌল ভিত্তিসম্পন্ন কোম্পানিগুলোকে পুঁজিবাজারে সরাসরি তালিকাভুক্তির বিষয়ে একটি তালিকা প্রস্তুত করে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়/বিভাগকে পুঁজিবাজারে তালিভুক্তির প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য চিঠি দেয়া হবে। এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ, বিএসইসি ও আইসিবি। সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের জন্য তাদের ১৫ দিনের সময় দেওয়া হয়েছে।

(খ) দি সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অর্ডিন্যান্স, ১৯৬৯-এর ধারা ১০ মোতাবেক আলোচ্য তালিকা অনুযায়ী পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির সময় ও প্রক্রিয়া সহজ করে কোম্পানিগুলোকে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন সরাসরি তালিকাভুক্ত করার ব্যবস্থা নেবে।

এ ছাড়া বিভিন্ন মন্ত্রণালয়/বিভাগের অন্য কোনো কোম্পানি তালিকাভুক্তির জন্য বিবেচিত হলে এ প্রক্রিয়ায় কার্যক্রম গ্রহণ করতে পারবে। এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ, বিএসইসি। সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের জন্য তিন মাস সময় দেয়া হয়েছে।