সেনা সদরের ব্রিফিং

সরকার ও সেনাবাহিনী মুখোমুখি দাঁড়ায়নি, একসাথে কাজ করছে

নিজস্ব প্রতিবেদক
Printed Edition
সেনা সদর দফতরে ব্রিফিং
সেনা সদর দফতরে ব্রিফিং |নয়া দিগন্ত

  • পুশইন ঠেকাতে সরকার আদেশ দিলে কাজ করা হবে
  • মব বানিয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করলে কঠোর ব্যবস্থা

সরকার ও সেনাবাহিনী একে অপরের সম্পূরক হিসেবে কাজ করছে। সরকারের নির্দেশনা মেনেই কাজ করছে। দেশ চালাতে গিয়ে বিভিন্ন স্টেকহোল্ডাররা বিভিন্ন সময় কথা বলেন। তবে আমরা যেইভাবে চিন্তা করছি সরকারের সাথে সেনাবাহিনীর বিশাল মতপার্থক্য হয়েছে, বিভেদ হয়েছে, এমন সংবাদ দেখছি বিভিন্ন মিডিয়াতে আসলে যেভাবে প্রচার-প্রকাশ হচ্ছে এরকম কিছু হয়নি। সরকার এবং সেনাবাহিনী পরস্পরের বিপরীতে দাঁড়ায়নি। খুব সুন্দরভাবে একে অপরের সহযোগিতায় একসাথে কাজ করছে। দেশের সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে সেনাবাহিনী আপসহীন।

গতকাল সোমবার দুপুরে সেনাবাহিনীর আনুষ্ঠানিক ব্রিফিংয়ে করিডোর প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন সেনা সদরের অপারেশনস পরিদফতরের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো: নাজিম-উদ-দৌলা। এ সময় তিনি বলেন, করিডোর একটি স্পর্শকাতর ইস্যু। দেশের স্বার্থ সেনাবাহিনীর কাছে সবার আগে। তাই দেশের স্বাধীনতা, নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে কোনো ধরনের আপস নয়। তিনি বলেন, মিয়ানমারের সাথে বাংলাদেশের সীমান্ত পরিস্থিতি যেকোনো সময়ের চেয়ে বর্তমানে সংবেদনশীল। সেনাবাহিনী এ বিষয়ে সর্বোচ্চ সতর্ক আছে। ঢাকা সেনানিবাসের অফিসার্স মেসে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা জানিয়েছে সেনা সদর। এ সময় দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিসহ সমসাময়িক বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেন সেনাবাহিনীর মিলিটারি অপারেশনসের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো:নাজিম-উদ-দৌলা এবং সেনা সদরের মিলিটারি অপারেশনস ডাইরেক্টরেটের কর্নেল স্টাফ কর্নেল মো: শফিকুল ইসলাম।

সংবাদ সম্মেলনে করিডোর ইস্যু, সীমান্তে পুশইন, মব ভায়োলেন্স, কেএনএফসহ নানা বিষয় নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তর দেন তিনি। একই সাথে বাহিনীর বিভিন্ন কর্মকাণ্ডও তুলে ধরা হয়েছে।

বিষয়গুলো জটিলভাবে চিন্তা না করে সহজভাবে ভাবার আহ্বান জানিয়ে নাজিম-উদ-দৌলা বলেন, আমরা যেন বিষয়টিকে এমনভাবে না দেখি যে সরকার ও সেনাবাহিনী ভিন্ন ভিন্ন চিন্তা করছে এবং একে অপরের বিপরীতে দাঁড়িয়ে আছে। এটা কখনোই নয়। সরকার ও সেনাবাহিনী একসাথে কাজ করছে। ভবিষ্যতেও আমরা একসাথে কাজ করে যাবো বলে সুদৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি। তিনি বলেন, সরকার ও সেনাবাহিনীর মধ্যে কোনো বিভেদ নেই। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যেসব তথ্য প্রচারিত হচ্ছে, তা সত্য নয়। গত ৫ আগস্টের পর থেকে সেনাবাহিনী দেশের স্বার্থে সবার সাথে সমন্বিতভাবে কাজ করছে।

ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো: নাজিম-উল-দৌলা বলেন, সেনাবাহিনী সব সময় দেশের সার্বভৌমত্ব, স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তা রক্ষায় দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করে আসছে। সরকারের সাথে আমাদের সুসম্পর্ক রয়েছে এবং আমরা সমন্বিতভাবে কাজ করছি। বন্দর-করিডোর নিয়ে প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, জাতীয় নিরাপত্তা বিঘি্নত হয় এমন কোনো বিষয়ে সেনাবাহিনী কখনোই সম্পৃক্ত হবে না। দেশের স্বার্থের বাইরে গিয়ে সেনাবাহিনী কোনো সিদ্ধান্ত নেয় না। করিডোরের বিষয়টি অত্যন্ত স্পর্শকাতর একটি প্রশ্ন। এটা আমাদের দেশ, আমাদের সবার দেশ। এই দেশের স্বার্থ এবং সার্বভৌমত্বের সাথে আমরা সবাই জড়িত। এ দেশকে ভালো রাখতে আমাদের সবাইকে কাজ করতে হবে। সুতরাং আমি মনে করি না যে, এ বিষয়টি এমন একটি পর্যায়ে গেছে- যেভাবে বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন ধরনের আলোচনা-সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে। সরকার এবং সেনাবাহিনী খুব সুন্দরভাবে ওতপ্রোতভাবে একে অপরের সম্পূরক হিসেবে কাজ করছে। আমরা প্রতিনিয়ত সরকারের সাথে কাজ করছি এবং সরকারের নির্দেশে দায়িত্ব পালন করছি। সরকার এবং সেনাবাহিনী খুব সুন্দরভাবে একে অপরের সহযোগিতায় কাজ করছে। করিডোরের সাথে বর্ডারে আরসার মুভমেন্টের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। এ দু’টি বিষয় আলাদা। সরকার ও সেনাবাহিনী ভিন্ন ভিন্ন চিন্তা করছে, এ রকম যেন আমরা না ভাবি। সরকার ও সেনাবাহিনী একই সাথে কাজ করছে, ভবিষ্যতেও আমরা আরো সুন্দরভাবে কাজ করে যাবো বলে দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি।

ভারত থেকে সীমান্ত দিয়ে নাগরিকদের ‘পুশইন’ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এটি কোনোভাবেই কাম্য নয়। গ্রহণযোগ্য নয়। বর্তমানে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সীমান্তে বিষয়গুলো মোকাবেলা করছে। তবে যদি কোনো কারণে প্রয়োজন হয় বা সরকার আদেশ দিলে এ বিষয়ে সেনাবাহিনীও কাজ করবে। তবে বিষয়টি কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না।

চট্টগ্রামের একটি কারখানায় সন্ত্রাসী সংগঠন কেএনএফের ৩০ হাজার পোশাক পাওয়ার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে মো: নাজিম-উদ-দৌলা বলেন, কেএনএফ মূলত বম কমিউনিটিভিত্তিক সংগঠন। পোশাক পাওয়ার সংবাদটি একটি বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ। এ সংগঠনটির অস্ত্রের ব্যবহার আমরা পার্বত্য চট্টগ্রামে দেখছি। তাদের আক্রমণে আমাদের কয়েকজন সেনাসদস্য মৃত্যুবরণ করেছেন এবং আহত হয়েছেন। সেই প্রেক্ষাপটে নিশ্চয়ই এটা ভালো কোনো খবর নয়। ৩০ হাজার ইউনিফর্ম পাওয়ার ছবি দেখার পর আমরা সাথে সাথে কথা বলেছি- এটা আসলে ব্যাপারটা কি এ বিষয়ে আমাদের জানতে হবে। এ পোশাক কাদের জন্য তৈরি করা হয়েছিল সেটা আমরা খুঁজে বের করার চেষ্টা করছি। এটা নিয়ে ইতোমধ্যে কাজ চলছে। এই সংগঠনের সাথে অন্যদের সংশ্লিষ্টতা থাকতে পারে। কিন্তু বম কমিউনিটির জনসংখ্যা মাত্র ১২ হাজার। সুতরাং এই ৩০ হাজার ইউনিফর্ম কেএনফের জন্য ছিল কি না সেটা খুঁজে দেখার সুযোগ আছে। এ বিষয়টি আমরা অত্যন্ত গুরুত্বসহকারে নিয়েছি। বিষয়টি দেশের নিরাপত্তার সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। বিষয়টিকে আমরা হালকাভাবে নেইনি নিশ্চিত করে বলতে পারি। এ ব্যাপারে যতটুকু ব্যবস্থা নেয়া দরকার আমাদের দায়িত্বের মধ্যে যেটা পড়ে সেটা আমরা করব। গত এক মাসে কেএনএফের এক হাজার ৯৭৯ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সবমিলিয়ে এ পর্যন্ত মোট ১৪ হাজারের বেশি কেএনএফ সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ ছাড়া চার হাজারের বেশি মাদক কারবারিকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

মব তৈরির বিষয়ে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলা হয়, কেউ মব তৈরি করে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করলে সেনাবাহিনী তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেবে।

বাংলাদেশ একটা ছায়া যুদ্ধের মধ্যে আছে বলে বিভিন্ন মাধ্যমে বলা হচ্ছে। আরসা বাংলাদেশের লোকজনকে তুলে নিয়ে যাচ্ছে এবং বাংলাদেশে ঢুকে তারা কার্যক্রম পরিচালনা করছে। অনেক সময় বিভিন্ন মাধ্যমে খবর আসছে তাদের কাছে ভারী ভারী অস্ত্র আছে, তাদের কাছে এ অস্ত্র কোথায় থেকে আসছে। এসব বিষয়ের পরিপ্রেক্ষিতে আসলে বর্ডার কি আমাদের নিয়ন্ত্রণে আছে নাকি এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি যদি এক লাইনে উত্তর দিতে চাই অবশ্যই আমরা বর্ডারে কম্প্রোমাইজ (আপস) করিনি। যতক্ষণ পর্যন্ত আমাদের গায়ে বিন্দুমাত্র শক্তি থাকবে আমরা কখনোই বর্ডার নিয়ে আপস করব না। এটা আমাদের দেশ আর দেশকে আমরা যেকোনো মূল্যে রক্ষা করব। কোনো একটা সম্প্রদায়ের মাধ্যমে এ দেশের সার্বভৌমত্ব বিনষ্ট হতে পারে সেটা কখনোই হবে না। বাংলাদেশ ও মিয়ানমার বর্ডার অত্যন্ত জটিল একটি পরিস্থিতির মুখে আছে। মিয়ানমারের সরকারের অস্তিত্ব বিলীনের মুখে। আরাকান আর্মি রাখাইন রাজ্যটিকে প্রায় দখল করে নিয়েছে। তাদের দখলে রাখাইন রাজ্যের ৮৫ থেকে ৯০ শতাংশ রয়েছে। আরাকান আর্মি কোনো অথরাইজ সংগঠন নয়। এ জায়গাটাতে না আছে কোনো সরকারের অস্তিত্ব, না আছে আরাকান আর্মিকে স্বীকৃতি দেওয়ার বিষয়টি। এই মুহূর্তে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের বর্ডারে যে পরিস্থিতি যেকোনো সময়ের তুলনায় সংবেদনশীল। সেক্ষেত্রে এই সময়ে ওই এলাকায় কিছু সশস্ত্র গ্রুপের মুভমেন্ট (চলাফেরা) করাটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। তার মানে এই নয় যে, এটাকে আমরা স্বীকৃতি দেবো বা দেখেও না দেখার ভান করব। এ ধরনের ঘোলাটে পরিস্থিতিতে এ ধরনের মুভমেন্ট হতে পারে। কিন্তু আপনাদের আশ্বস্ত করতে চাই- বিজিবি প্রাথমিকভাবে ডিফারেন্টলি সাপোর্টেড বাই আর্মি (সেনাবাহিনীর দ্বারা ভিন্নভাবে সমর্থিত)- আমরা এই বর্ডারে প্রচণ্ডভাবে নজরদারি রাখছি। এখানে যেন সার্বভৌমত্ব বিঘি্ণত হতে না পারে এমন পরিস্থিতি যেন সৃষ্টি না হয়, সে বিষয়ে আমরা ওয়াকিবহাল আছি। তবে অবশ্যই এই মুভমেন্টটি উদ্বেগের বিষয় এবং কাক্সিক্ষত নয়।

লালমনিরহাট বিমানবন্দরের পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চাইলে সেনা সদর দফতরের এই কর্মকর্তা বলেন, লালমনিরহাট বিমানবন্দর সংস্কার করা হচ্ছে। এটার কলেবর বৃদ্ধি করা হচ্ছে। চীন এই বিমানবন্দর ব্যবহার করবে কি না, কবে ব্যবহার করবে-এই সংক্রান্ত কোনো তথ্য আমাদের কাছে নেই। তবে আশ্বস্ত করতে পারি যে দেশের নিরাপত্তা বিঘি্ণত হয় বা দেশের স্বার্থ বিঘ্নিত হয়, এ রকম কোনো কর্মকাণ্ডে কেউ যুক্ত হবে না।

এর আগে আনুষ্ঠানিক ব্রিফিংয়ে বিগত ৪০ দিনে সেনাবাহিনীর বিভিন্ন কর্মকাণ্ড তুলে ধরেন সেনা সদরের মিলিটারি অপারেশনস ডাইরেক্টরেটের কর্নেল স্টাফ কর্নেল মো: শফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে মব ভায়লেন্স ও সামাজিক নিরাপত্তা বিঘ্নিতকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেয়া হবে। এ ছাড়া আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি আগের সাথে তুলনা করলে বর্তমানে অনেক ক্ষেত্রে স্থিতিশীল বা কোথাও উন্নতিও আছে। তবে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি দেখভালের দায়িত্ব কেবল সেনাবাহিনীর একার নয়, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও অন্য সংস্থাগুলোর সম্মিলিত প্রচেষ্টায় পরিস্থিতির আরো উন্নতি করতে হবে। নির্বাচন নিয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন না হলে সেনাবাহিনী ক্ষমতা গ্রহণ করবে-এমন গুজবের কোনো ভিত্তি নেই। সেনাবাহিনীর ক্ষমতা নেয়ার কোনো ইচ্ছা নেই, এমনকি এ বিষয়ে আমাদের অভ্যন্তরেও কোনো আলোচনা হয়নি।

৪০ দিনের বিভিন্ন কর্মকাণ্ড : সংবাদ সম্মেলনে গত ৪০ দিনে সেনাবাহিনীর বিভিন্ন কর্মকাণ্ড তুলে ধরা হয়। ৪০ দিনে ২৪১টি অবৈধ অস্ত্র ও ৭০৯ রাউন্ড গোলাবারুদ এবং আগস্ট থেকে এ পর্যন্ত ৯ হাজার ৬১১টি অবৈধ অস্ত্র ও ২ লাখ ৮৫ হাজার ৭৬১ রাউন্ড গোলাবারুদ উদ্ধার করা হয়েছে। এ ছাড়াও গত এক মাসে কিশোর গ্যাং, তালিকাভুক্ত অপরাধী, অপহরণকারী, চোরাচালানকারী, প্রতারক ও দালাল চক্র, চাঁদাবাজ, ডাকাত, ছিনতাইয়ে জড়িত ১ হাজার ৯৬৯ জনকে এবং এ পর্যন্ত ১৪ হাজার ২৬৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ২০ মে ভাষানটেক এলাকায় বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে ৪টি বিদেশী পিস্তল, ২৮ রাউন্ড গুলিসহ সন্ত্রাসী হিটলু বাবুসহ তার গ্যাংয়ের ১০ জন সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়েছে। যার ফলে স্থানীয় এলাকাবাসীর মধ্যে স্বস্তি ও নিরাপত্তা বিরাজ করছে।

৪০ দিনে যৌথ অভিযানে ৪৮৭ জন মাদক ব্যবসায়ী গ্রেফতার এবং আগস্ট থেকে এ পর্যন্ত মাদকের সাথে সংশ্লিষ্ট ৪ হাজার ৪০০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। উদ্ধার করা হয়েছে ইয়াবা, ফেনসিডিল, গাঁজা, অবৈধ মদ।

৫ আগস্ট পরবর্তী সময় থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত শিল্পাঞ্চল এলাকার সার্বিক নিরাপত্তার জন্য সেনাবাহিনী নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। এক মাসে নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতে দেশের বিভিন্ন স্থানে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে ভেজাল শিশু খাদ্য উৎপাদন, বাজারজাতকরণ এবং বিপণনের সাথে জড়িত প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। এ ছাড়াও যশোর ও সাতক্ষীরায় অভিযান পরিচালনা করে বিপুল পরিমাণ জেলি মিশ্রিত চিংড়িসহ সিন্ডিকেটের সদস্যদের আটক করা হয়েছে।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষার পাশাপাশি জুলাই অভ্যুত্থানে ছাত্র আন্দোলনের বিভিন্ন সময়ে যারা আহত হয়েছেন, তাদের সুচিকিৎসার জন্য সেনাবাহিনী এখন পর্যন্ত ৪ হাজার ৫৯৬ জনকে দেশের বিভিন্ন সিএমএইচে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছে। যার মধ্যে ৩৬ জন এখনো চিকিৎসাধীন রয়েছেন। আসন্ন ঈদুল আজহা উপলক্ষে ঘরমুখো মানুষের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ও সুশৃঙ্খল যানবাহন চলাচল নিশ্চিত করতে ঈদের আগে ও পরে মিলে ২ সপ্তাহের বিশেষ কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। এর অংশ হিসেবে জাতীয় মহাসড়কগুলোতে নির্বিঘ্নে যান চলাচল নিশ্চিত করতে ঢাকাসহ দেশের গুরুত্বপূর্ণ বাসস্ট্যান্ড, রেলস্টেশন, লঞ্চ টার্মিনাল ও মহাসড়কে দিনরাত টহল পরিচালনা, গাড়ির অতিরিক্ত গতি নিয়ন্ত্রণের জন্য স্পর্শকাতর স্থানে চেকপোস্ট স্থাপনসহ টিকিট কালোবাজারি অথবা অধিক মূল্যে টিকিট বিক্রয় রোধ এবং জনগণের মধ্যে সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে।

কোরবানির পশুহাটকে কেন্দ্র করে চাঁদাবাজ এবং ছিনতাইকারীদের দৌরাত্ম রোধে এবং মূল সড়কের পাশে পশুহাট বসতে না দিয়ে জনদুর্ভোগ কমাতে সেনাবাহিনী নিয়মিত টহল ও বিশেষ অভিযান পরিচালনা করবে।

২০২৪ সালের বন্যায় অধিক ক্ষতিগ্রস্ত ৪টি জেলায় (কুমিল্লা, ফেনী, নোয়াখালী ও চট্টগ্রাম) দরিদ্র ও গৃহহীন মানুষের জন্য বিশেষ আবাসন নির্মাণ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় ৩০০টি ঘরের নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করেছে। যা গত ৩০ এপ্রিল প্রধান উপদেষ্টা কর্তৃক সুবিধাভোগী পরিবারের মাঝে হস্তান্তর করা হয়। সেনাবাহিনী ওই প্রকল্পের জন্য বরাদ্দকৃত অর্থের অর্ধেক টাকা দিয়েই প্রকল্পটি সুন্দরভাবে নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই সম্পন্ন করেছে। যা সবার দ্বারা প্রশংসিত হয়েছে।