আওয়ামী নেতাদের নাম না থাকায় কমিটি অনুমোদন দিচ্ছেন না যুগ্ম নিবন্ধক

সমবায় অধিদফতরে আদালতের রায় উপেক্ষিত

আমিনুল ইসলাম
Printed Edition

সমবায় অধিদফতরের আওতাধীন ঢাকা বিভাগের বিভিন্ন সমবায় সমিতিতে আওয়ামী দোসরদের নাম না থাকায় তার অনুমোদন দিচ্ছেন না যুগ্ম নিবন্ধক। এমনকি আদালত থেকে রায় দেয়ার পরও তা আমলে নেয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে। জানা গেছে, চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থানের আগে বিভিন্ন সমিতির নিয়ন্ত্রক ছিলেন আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা। ৫ আগস্টের পর তারা পালিয়ে গেলে নেতৃত্বের অভাবে প্রায় অচল হয়ে পড়ে কমিটি। আবার কোনো কোনো কমিটির মেয়াদও শেষ হয়ে যায়। যার কারণে নতুন করে কমিটি গঠন করা হলেও সেখানে আওয়ামী নেতাদের নাম না থাকায় তা অনুমোদন দেয়া হয়নি। এতে বাধ্য হয়ে আদালতের দারস্থ হয়েছেন অনেকেই। আদালত থেকে রায় আসার পরও তা আমলে নিচ্ছেন না বলে অভিযোগ উঠেছে ঢাকা বিভাগীয় সমবায় কার্যালয়ের যুগ্ম নিবন্ধক মো: কামরুজ্জামানের বিরুদ্ধে।

শুধু তাই নয়, অভিযোগ রয়ে রয়েছে বিগত সময়ে স্বৈরাচার আওয়ামী লীগের প্রভাব ব্যবহার করে তিনি অনিয়ম, প্রশাসনিক পক্ষপাত ও রাজনৈতিক প্রভাবে প্রতিষ্ঠানে আধিপত্য বিস্তার করেছিলেন। সাবেক প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্যের ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসেবে পদোন্নতি, বদলি ও নিয়োগের ক্ষেত্রে করেছেন অনিয়ম। তার এসব অনিয়মের ফিরিস্তি তুলে অভিযোগ দাখিল করা হয়েছে।

অভিযোগে বলা হয়, মো: কামরুজ্জামান ২০২০ সালের মার্চ থেকে ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত সমবায় অধিদফতরের উপনিবন্ধক (প্রশাসন) পদে কর্মরত ছিলেন। সেই সময় থেকেই তিনি স্বৈরাচার আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক নেতৃত্বের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তোলেন এবং প্রশাসনিক পদে থেকে প্রতিমন্ত্রীর নির্দেশে প্রকল্প থেকে রাজস্বে নিয়োগ, বদলি বাণিজ্য, মামলা বাণিজ্যে জড়িয়ে পড়েন। এ ছাড়া তিনি উপনিবন্ধক (প্রশাসন) পদে থাকাকালে সিভিডিবি প্রকল্পসহ রাজস্বভিত্তিক নিয়োগ প্রক্রিয়ায় কোটি টাকার আর্থিক লেনদেনের মধ্যস্থতা করে প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্যের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করেন। রাজনৈতিক আনুগত্যের পুরস্কার হিসেবেই পরবর্তীতে তাকে ঢাকা বিভাগের যুগ্ম নিবন্ধক পদে পদোন্নতি দেয়া হয়। এই পদে আসার পরও তার প্রশাসনিক সিদ্ধান্তগুলোতে স্বৈরাচার আওয়ামী লীগের প্রভাব স্পষ্টভাবে লক্ষ্য করা যায়।

অভিযোগে বলা হয়, স্বৈরাচার আওয়ামী লীগের পতনের পর বিভিন্ন সমবায় সমিতির ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্যরা পলাতক থাকায় পুরনো কমিটি কার্যত অকার্যকর হয়ে পড়ে। এই সময় বিভিন্ন সমিতির সদস্যরা এ অকার্যকর অবস্থা নিরসনে আদালতের দারস্থ হন এবং আদালতের রায় অনুযায়ী নতুন কমিটি গঠনের উদ্যোগ নেন। কিন্তু মো: কামরুজ্জামান বিভিন্ন সমিতিতে আদালতের রায় উপেক্ষা করে বিপুল পরিমাণ অর্থের বিনিময়ে স্বৈরাচার আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী সংবলিত পুরনো কমিটিগুলোকেই বহাল রাখেন। সেই সাথে আওয়ামী লীগের প্রতি রাজনৈতিক আনুগত্যকে প্রাধান্য দেয়া হয়।

মিরপুর বহুমুখী ক্ষুদ্র কুটির শিল্প সমবায় সমিতি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা কমিটিতে যুবলীগ নেতা নূরুল আমিন বাচ্চু এবং ফারুক ওরফে বোমা ফারুককে বহাল রাখার জন্য ২৫ লাখ টাকার আর্থিক লেনদেন করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। হাইকোর্ট ও জেলা সমবায় কর্মকর্তা, ঢাকার দেয়া পৃথক দুটি রায়ের বিপরীতে যুগ্মনিবন্ধক মো: কামরুজ্জামান রায় দিয়ে পুরনো কমিটি বহাল রাখেন।

অভিযোগে আরো বলা হয়েছে, মিরপুর এলাকার এই সমিতির কমিটিতে ছিলেন যুবলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক এমপি মাইনুল হোসেন খান নিখিলসহ আরো কয়েকজন প্রভাবশালী নেতা। কামরুজ্জামানের সাথে তাদের ঘনিষ্ঠতার কারণেই কমিটি বিলুপ্ত না করে পুনর্গঠনের নামে বহাল রাখা হয়। অভিযোগকারীদের দাবি, এই একই প্রক্রিয়ায় ঢাকা বিভাগের আরো কয়েকটি সমবায় সমিতিতেও আওয়ামী লীগ ঘনিষ্ঠদের সুবিধা দেয়া হয়েছে। মিরপুর বহুমুখী ক্ষুদ্র কুটির শিল্প সমবায় সমিতি লিমিটেডের সদস্যদের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগ হতে তদন্ত কার্যক্রম শুরু করা হলেও বিভিন্ন তথ্য প্রমাণে যখন দেখা যায় যুগ্মনিবন্ধক মো: কামরুজ্জামানসহ আরো এক কর্মকর্তার অপরাধ প্রমাণিত হওয়ায় সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে তখন অদৃশ্য হাতের ইশারায় তা স্থগিত হয়ে যায়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কামরুজ্জামান নয়া দিগন্তকে বলেন, এসব অভিযোগ সত্য নয়। একটি চক্র তার বিরুদ্ধে মিথ্যা তথ্য ছড়াচ্ছে।