এবার ২০ লক্ষাধিক কোরবানিযোগ্য পশু অবিক্রীত থাকতে পারে

রাজশাহী রংপুর ও খুলনা বিভাগের গরু দিয়ে ঢাকার চাহিদা মেটানো হচ্ছে

কাওসার আজম
Printed Edition

আর এক দিন পরই পালিত হবে মুসলমানদের সবচেয়ে বড় উৎসব পবিত্র ঈদুল আজহা। শেষ মুহূর্তে জমে উঠেছে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশের কোরবানির পশুর বাজার। গত বছরের চেয়ে এবার কোরবানির পশুর মজুদ ও চাহিদা দুটোই কম। প্রাণিসম্পদ অধিদফতর বলছে, এবার কোরবানিযোগ্য গবাদিপশু মজুদ আছে এক কোটি ২৪ লাখ ৪৭ হাজার ৩৩৭টি। আর চাহিদা নির্ধারণ করা হয়েছে এক কোটি তিন লাখ ৭৯ হাজার ২০২টি। গত বছর কোরবানির পশুর মজুদ ছিল এক কোটি ২৯ লাখ ৮০ হাজার ৩৬৭টি। এর মধ্যে এক কোটি ছয় লাখ ২১ হাজার ২২৮ গবাদিপশু বিক্রি হয়েছে। অবিক্রীত থেকে যায় ২৩ লাখ ৫৯ হাজার ১৩৯টি পশু।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত ৫ আগস্ট দীর্ঘদিনের আওয়ামী শাসকগোষ্ঠীর পতন হয়েছে। শেখ হাসিনার পাশাপাশি দলটির হাজার হাজার নেতাকর্মী এলাকা ছাড়া। লুটপাটকারী নেতাদের বেশির ভাগই দেশছাড়া; আবার অনেকে দেশে থাকলেও প্রকাশ্যে আসছেন না। বর্তমান রাজনৈতিক বিবেচনায় এবার কোরবানি কিছুটা কম হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই প্রাণিসম্পদ অধিদফতর থেকেও এবার গত বছরের চেয়ে প্রায় আড়াই লাখ কোরবানি পশুর চাহিদা কম দেখানো হয়েছে। গত বছরের চেয়ে কোরবানিযোগ্য পশুর মজুদ কম থাকা সত্ত্বেও এবার প্রায় সমসংখ্যক (প্রায় ২১-২২ লাখ) গবাদিপশু অবিক্রীত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে করছেন প্রাণিসম্পদ খাত সংশ্লিষ্টরা।

প্রাণিসম্পদ অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, গত বছরের চেয়ে এবার কোরবানিযোগ্য গবাদিপশুর মজুদ পাঁচ লাখ ৩৩ হাজার ৩০টি কম রয়েছে। অন্য দিকে সম্ভাব্য চাহিদাও কমেছে দুই লাখ ৪২ হাজার ২৬টি। প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের মহাপরিচালক (ডিজি) ডা: আবু সুফিয়ান জানান, মাঠের তথ্যের ভিত্তিতে প্রাপ্যতা নির্ধারণ করা হয়েছে, কম-বেশি বিষয় না। চাহিদার চেয়ে উদ্বৃত্ত বেশি থাকছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রাজধানীর কোরবানির পশুর হাট জমে উঠেছে। তবে ঈদের দিন সকাল পর্যন্ত চলবে বেচাকেনা। দাম বলা চলে নাগালের মধ্যেই রয়েছে। তবে শেষ মুহূর্তে কোরবানির পশুর দাম কম হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

গরু-মহিষের চেয়ে ছাগল-ভেড়া বেশি : প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের (ডিএলএস) তথ্য অনুসারে দেশে মোট খামারির সংখ্যা আট লাখ ৮৭ হাজার ৫৪৪ জন। এসব খামারে মোট এক কোটি ২৪ লাখ ৪৭ হাজার ৩৩৭টি কোরবানিযোগ্য গবাদিপশু রয়েছে। এর মধ্যে গরু ও মহিষের সংখ্যা ৫৬ লাখ দুই হাজার ৯০৫টি। আর ছাগল ও ভেড়ার সংখ্যা ৬৮ লাখ ৩৮ হাজার ৯২০টি। অন্যান্য কোরবানিযোগ্য গবাদিপশুর সংখ্যা পাঁচ হাজার ৫১২টি। তবে গরু-মহিষের সংখ্যা আগের চেয়ে কিছুটা বেড়েছে।

সবচেয়ে বেশি পশু রাজশাহী বিভাগে, কম সিলেটে :

গরুসহ কোরবানিযোগ্য পশুর সবচেয়ে বেশি মজুদ রয়েছে রাজশাহী বিভাগে। আর সবচেয়ে কম রয়েছে সিলেট বিভাগে। রাজশাহী বিভাগের আট জেলায় মোট গবাদিপশুর প্রাপ্যতা রয়েছে ৪৩ লাখ ৪৪ হাজার ৪৯টি। সিলেটে তিন লাখ আট হাজার ৫১৫টি পশু। এ ছাড়া ঢাকা বিভাগে গবাদিপশুর মজুদ রয়েছে ১৩ লাখ ৭২ হাজার ৫৬৭টি, চট্টগ্রাম বিভাগে ১৯ লাখ ৭৪ হাজার ৭৪টি, খুলনা বিভাগে ১৪ লাখ ৩৪ হাজার ৫৭৮টি, বরিশাল বিভাগে চার লাখ ৫৯ হাজার ৮৪৮টি, রংপুর বিভাগে ১৯ লাখ ৮০ হাজার ৪১৩টি এবং ময়মনসিংহ বিভাগে পাঁচ লাখ ৭৩ হাজার ২৯৩টি।

রাজশাহী, রংপুর ও খুলনার গরু দিয়ে ঢাকার চাহিদা মেটানো হচ্ছে

ডিএলএসের তথ্য বলছে, প্রতি বছরের মতো এবার গবাদিপশুর চাহিদা সবচেয়ে বেশি ঢাকা বিভাগে। দেশের অন্যান্য অঞ্চল থেকে গবাদিপশু এনে চাহিদা পূরণ করতে হবে এই বিভাগের মানুষকে। ডিএলএস বলছে, ঢাকা বিভাগে এবার কোরবানির পশুর চাহিদা রয়েছে ২২ লাখ ৩৭ হাজার ৬৮৫টি। দেশের অন্যান্য বিভাগে যেখানে উদ্বৃত্ত রয়েছে, সেখানে ঢাকায় আট লাখ ৬৫ হাজার ১১৮টি গবাদিপশুর ঘাটতি রয়েছে। চট্টগ্রাম বিভাগে ২৭ হাজার ৪৬৫টি, রাজশাহী বিভাগে ১৬ লাখ ৮৯ হাজার ২৬৬টি, খুলনা বিভাগে তিন লাখ ৮৭ হাজার ৮৮৯টি, বরিশাল বিভাগে ৬৫ হাজার ২৯৬টি, সিলেট বিভাগে ৩৭ হাজার ৩৮টি, রংপুর বিভাগে পাঁচ লাখ ৬৮ হাজার ২৬৭টি এবং ময়মনসিংহ বিভাগে এক লাখ ৫৮ হাজার ৩২টি কোরবানিযোগ্য গবাদিপশু উদ্বৃত্ত থাকবে। এগুলো ঢাকা বিভাগে নিয়ে বিক্রি করতে হবে। এর বড় একটি অংশ প্রতি বছরই অবিক্রীত থেকে যায়।

জানা যায়, নরেন্দ্র মোদি ভারতের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর হঠাৎ করেই বাংলাদেশে গরু রফতানি বন্ধ করে দেয়া হয়। এতে বিপাকে পড়ে বাংলাদেশ। তবে বছর দুই যেতে না যেতেই বাংলাদেশ গরু-ছাগলে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করে। সারা দেশে হাজার হাজার শিক্ষিত যুবক ডেইরি খামারে সম্পৃক্ত হন। আস্তে আস্তে এ খাতটি বড় হতে চলেছে। কয়েক বছর ধরে কোরবানির পশুর চাহিদা মিটিয়ে লাখ লাখ পশু অবিক্রীতই থেকে যাচ্ছে। তবে নানাভাবে ভারত ও মিয়ানমার থেকে অসাধু চক্র কোরবানি উপলক্ষে অবৈধ উপায়ে গরু আমদানি করে। এতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। এবার শুরু থেকেই সীমান্ত হয়ে যাতে কোনোভাবেই গরু আমদানি না হতে পারে এ বিষয়ে শক্ত অবস্থানের কথা জানান মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার। তিনি বলেছেন, কোরবানির জন্য দেশে পর্যাপ্ত পশু মজুদ রয়েছে। পার্শ্ববর্তী দেশের গরু প্রয়োজন নেই। সীমান্তবর্তী এলাকা দিয়ে চোরাইপথে যেন প্রতিবেশী কোনো রাষ্ট্রের গরু ঢুকতে না পারে সে জন্য কড়া নজরদারি রাখছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। গত সোমবার রাজধানীর তেজগাঁওয়ের ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট মাঠের পশুহাট পরিদর্শন শেষে উপদেষ্টা এসব কথা বলেন।