বাংলাদেশে ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রমের হার হ্রাস পেয়েছে বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) ও ইউনিসেফ। বিশ্ব শিশুশ্রম প্রতিরোধ দিবস উপলক্ষে বৃহস্পতিবার প্রকাশিত এক যৌথ প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশে ২০১৩ সালে ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রমের হার ছিল ৩ দশমিক ২ শতাংশ, যা ২০২২ সালে কমে দাঁড়িয়েছে ২ দশমিক ৭ শতাংশে। এতে প্রায় ১০ লাখ ৭০ হাজার শিশু ঝুঁকিপূর্ণ কাজ থেকে সরে এসেছে।
‘চাইল্ড লেবার : গ্লোবাল এস্টিমেটস ২০২৪, ট্রেন্ডস অ্যান্ড দ্য রোড ফরওয়ার্ড’ শীর্ষক এই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিগত এক দশকে স্কুলে ভর্তি হার বৃদ্ধি, সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি সম্প্রসারণ এবং সচেতনতা বৃদ্ধির ফলে এ অগ্রগতি সম্ভব হয়েছে। যদিও শিশুশ্রম সম্পূর্ণ নির্মূলের পথ এখনো দীর্ঘ, তবু ঝুঁকিপূর্ণ কাজ থেকে শিশুদের সরিয়ে আনার এই ইতিবাচক প্রবণতা প্রশংসার দাবিদার।
প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০১৩ সালের তুলনায় বাংলাদেশে ক্ষতিকর কাজে নিযুক্ত শিশুদের অনুপাতও স্থিতিশীল রয়েছে। এই হার ৪ দশমিক ৩ শতাংশ থেকে সামান্য বেড়ে ২০২২ সালে ৪ দশমিক ৪ শতাংশ হয়েছে। তবে সামগ্রিক শিশুশ্রমের হার ৮ দশমিক ৭ শতাংশ থেকে বেড়ে ৮ দশমিক ৯ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।
বাংলাদেশে ইউনিসেফের প্রতিনিধি রানা ফ্লাওয়ার্স বলেন, ‘আমরা ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রম কমানোর ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অর্জনকে স্বীকৃতি দিই। এটি প্রমাণ করে যে সরকারি ও বেসরকারি সংস্থাগুলোর যৌথ প্রচেষ্টা, সমাজের সচেতনতা এবং পরিবারকেন্দ্রিক সহায়তা শিশুশ্রম নিরসনে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে।’
তিনি আরো বলেন, ‘তবে এখনো শিশুশ্রমের মোট পরিমাণ অপরিবর্তিত থাকায় আমাদের দায়িত্ব শেষ হয়নি। সামাজিক সুরক্ষা ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করতে হবে, শিক্ষাব্যবস্থাকে আরো অন্তর্ভুক্তিমূলক করতে হবে এবং শিশুশ্রম প্রতিরোধে আরো বিনিয়োগ বাড়াতে হবে।’ বিশ্বব্যাপী কৃষি খাতেই শিশুশ্রমের হার সবচেয়ে বেশি, যা ৬১ শতাংশ। বাংলাদেশেও অনানুষ্ঠানিক খাত, বিশেষ করে কৃষি, গৃহস্থালি ও হালকা শিল্পে শিশুরা নিযুক্ত থাকে। এসব ক্ষেত্রে নিরাপত্তা ঝুঁকি বেশি এবং শিশুদের শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হওয়ার সম্ভাবনাও বেশি।
আইএলও বাংলাদেশ অফিসের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা গুঞ্জন ডালাকোটি বলেন, ‘শিশুশ্রমের হার কমলেও কাজ এখনো শেষ হয়নি। ঝুঁকিপূর্ণ শ্রম বন্ধে আইএলও কনভেনশন ১৩৮ ও ১৮২ এর বাস্তবায়ন আরো জোরদার করতে হবে।’