ছাত্র সংসদ নির্বাচন

বহুল প্রতীক্ষিত চাকসু নির্বাচন আজ

ভোট দেবেন সাড়ে ২৭ হাজার শিক্ষার্থী

প্রায় তিন যুগ পর অনুষ্ঠিতব্য এই নির্বাচনকে সামনে রেখে বিশ্ববিদ্যালয়ে গড়ে তোলা হয়েছে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তাব্যবস্থা। চবির শিক্ষার্থীরা সবাই এখন নিজেদের কাক্ষিত ভোটাধিকার প্রয়োগের প্রতীক্ষায়।

চট্টগ্রাম ব্যুরো
Printed Edition

দীর্ঘ প্রতীক্ষিত চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন আজ বুধবার। প্রায় তিন যুগ পর অনুষ্ঠিতব্য এই নির্বাচনকে সামনে রেখে বিশ্ববিদ্যালয়ে গড়ে তোলা হয়েছে নি-িদ্র নিরাপত্তাব্যবস্থা। চবির শিক্ষার্থীরা সবাই এখন নিজেদের কাক্সিক্ষত ভোটাধিকার প্রয়োগের প্রতীক্ষায়।

ভোটাররা ইতোমধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বী প্যানেলগুলোর প্রার্থী এবং তাদের ইশতেহার পর্যালোচনার পর্ব শেষ করেছেন। ভোটের আগের দিন গতকাল প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা শিক্ষার্থীদের সাথে কুশলবিনিময়ে সময় পার করেছেন। ১৩টি প্রতিদ্বন্দ্বী প্যানেল থাকলেও আলোচনায় রয়েছে হাতেগোনা কয়েকটি প্যানেল। এর মধ্যে ক্যাম্পাসে ছাত্রদলের সাংগঠনিক অবস্থান তেমন মজবুত নেই। এর ওপর আবার রয়েছে বেশ ক’টি উপ গ্রুপ। বামপন্থী সংগঠনগুলো পৃথক প্যানেল দিলেও উপজাতীয় শিক্ষার্থীদের প্রাধান্য নির্ভর একটি প্যানেল থাকায় তারাও বেশ সুবিধাজনক অবস্থায় নেই। অন্য দিকে ছাত্রশিবিরের রয়েছে ক্যাম্পাসে মজবুত সাংগঠনিক ভিত্তি। এর ওপর গত এক বছরে শিক্ষার্থীবান্ধব নানা কর্মসূচি শিক্ষার্থীদের মাঝে সব সময় আলোচনায় রেখেছে। ফলে ছাত্রশিবির সমর্থিত ‘সম্প্রীতির শিক্ষার্থী জোট’ প্যানেলকেই এগিয়ে রাখছেন ভোটাররা। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ শিক্ষার্থী যেহেতু রাজনীতি সম্পৃক্ত নয়, কিন্তু রাজনীতি সচেতন, ফলে তারা শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ে সক্ষম স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচন করা বেশ ক’জন প্রার্থীর শিক্ষার্থীদের আলোচনায় স্থান পাচ্ছেন। এর বাইরে ডাকসু নির্বাচন এবং জাকসু নির্বাচনের ফলাফলও সামনে রাখছেন উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শিক্ষার্থী।

প্রার্থীর ছড়াছড়ি : চাকসুর প্রধান তিনটি পদের প্রতিটিতে বিশের অধিক প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন। এ ছাড়া বাকি সম্পাদকীয় পদগুলোতেও প্রতিটিতে দশের অধিক প্রার্থী রয়েছেন। সব মিলিয়ে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচনের ইঙ্গিত দেখা যাচ্ছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তালিকা অনুযায়ী চাকসু ও হল সংসদে চূড়ান্ত প্রার্থী আছেন ৯০৭ জন। এর মধ্যে চাকসুর ২৬টি পদের বিপরীতে ৪১৫ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। হল সংসদে নির্বাচন করছেন ৪৯২ জন। নির্বাচনে মোট ভোটার ২৭ হাজার ৫১৬ জন। এর মধ্যে ছাত্র ১৬ হাজার ৮৪ জন ছাত্র ও ছাত্রী ১১ হাজার ৩২৯ জন। চাকসু নির্বাচনে সহসভাপতি (ভিপি) পদে ২৪ জন, সাধারণ সম্পাদক (জিএস) ২২ জন, সহসাধারণ সম্পাদক (এজিএস) পদে ২১ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

এ ছাড়া সম্পাদকীয় পদগুলোর মধ্যে মুক্তিযুদ্ধ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনবিষয়ক সম্পাদক পদে ১৭ জন, খেলাধুলা ও ক্রীড়া সম্পাদক পদে ১২ জন, সহ-খেলাধুলা ও ক্রীড়া সম্পাদক ১৪ জন, ছাত্রীকল্যাণবিষয়ক সম্পাদক পদে ১৩ জন, সহ-ছাত্রীকল্যাণবিষয়ক সম্পাদক পদে ১০ জন, দফতর সম্পাদক পদে ১৭ জন, সহদফতর সম্পাদক পদে ১৪ জন, আবাসনবিষয়ক সম্পাদক পদে ১৭ জন, সহযোগাযোগ ও আবাসনবিষয়ক সম্পাদক পদে ১৪ জন, আইন ও মানবাধিকারবিষয়ক সম্পাদক পদে ৯ জন, পাঠাগার ও ক্যাফেটেরিয়াবিষয়ক সম্পাদক পদে ২০ জন, সাহিত্য, সংস্কৃতি ও প্রকাশনা সম্পাদক পদে ১৭ জন, সহসাহিত্য, সংস্কৃতি ও প্রকাশনা সম্পাদক পদে ১৫ জন, বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক পদে ১১ জন, গবেষণা ও উদ্ভাবনবিষয়ক সম্পাদক পদে ১২ জন, সমাজসেবা ও পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক পদে ২০ জন, স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক পদে ১৫ জন, ক্যারিয়ার ডেভেলপমেন্ট ও আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক পদে ১৬ জন, যোগাযোগ, পাঠাগার ও ক্যাফেটেরিয়াবিষয়ক সম্পাদক পদে ২০ জন ও নির্বাহী সদস্যের পাঁচটি পদে ৮৫ জন প্রার্থী রয়েছেন।

ক্যাম্পাসের বাইরে থাকা শিক্ষার্থীরা এবং ছাত্রীরাই হবে ফলাফলের নিয়ামক : চট্টগ্রাম শহর থেকে চবি ক্যাম্পাসের দূরত্ব প্রায় ২২ কিলোমিটার। এবারের চাকসু নির্বাচনের সাড়ে ২৭ হাজার ভোটারের তিন-চতুর্থাংশই থাকেন ক্যাম্পাসের বাইরে। বাকি এক-চতুর্থাংশ থাকেন হল ও আশপাশের কটেজগুলোতে। তাই সঙ্গতকারণেই ভোটের ফলাফলে নিয়ামক শক্তি হিসেবে থাকবেন বাইরের ভোটাররা (যারা ক্যাম্পাসে থাকেন না)। এর ওপর আবার ছাত্রীরা ভোটের ফলাফল নির্ধারণে পৃথকভাবে নিয়ামক শক্তির ভূমিকায় থাকবেন। সদ্যসমাপ্ত ডাকসু ও জাকসু নির্বাচনের ফলাফলে ছাত্রীদের ভোটই মূল ফ্যাক্টর। আজকের চাকসু নির্বাচনেও ছাত্রীদের একই ভূমিকা থাকবে বলে মনে করছেন ক্যাম্পাস সংশ্লিষ্টরা। ফলে প্রতিদ্বন্দ্বী প্যানেলগুলোর মূল ফোকাসও তাদেরকে ঘিরেই। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের প্রচারণার মূল টার্গেটে পরিণত হয় শাটল ট্রেনকেন্দ্রিক এবং শহরে বিভিন্ন বাসা বা মেসে অবস্থানকারী শিক্ষার্থীরা।

ভোট হবে পাঁচটি কেন্দ্রে : চাকসু, হল ও হোস্টেল সংসদ নির্বাচনের জন্য পাঁচটি ভোটকেন্দ্র নির্ধারণ করেছে নির্বাচন কমিশন। তবে এর বাইরে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ভোটারদের জন্য চাকসু কেন্দ্রের দোতলায় পৃথকভাবে ভোট দেয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, ভোট কেন্দ্রগুলোর মধ্যে আইটি ভবনে (ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদ) ভোট দেবেন সোহরাওয়ার্দী হলের ভোটাররা। শহীদ হৃদয় চন্দ্র তরুয়া ভবন (কলা মানববিদ্যা অনুষদ নতুন ভবন) কেন্দ্রে ভোট দেবেন শাহজালাল হল, এ এফ রহমান হল ও আলাওল হলের ভোটাররা। বিজ্ঞান অনুষদ ভবন কেন্দ্রে ভোট দেবেন শাহ আমানত হল, শহীদ আবদুর রব হল ও মাস্টারদা সূর্যসেন হলের ভোটাররা। ড. মুহাম্মদ ইউনুস ভবন (সমাজবিজ্ঞান অনুষদ) কেন্দ্রে ভোট দেবেন নবাব ফয়জুন্নেসা হল, শামসুন নাহার হল, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া হল ও অতীশ দীপঙ্কর হলের ভোটাররা। ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদ ভবন কেন্দ্রে ভোট দেবেন প্রীতিলতা হল, বিজয়-২৪ হল, শহীদ ফরহাদ হোসেন হল ও শিল্পী রশিদ চৌধুরী হোস্টেলের ভোটাররা।

ভোটারদের যাতায়াতে বর্ধিত ট্রেন ও বাস সার্ভিস : এ দিকে চাকসু নির্বাচনে শিক্ষার্থীদের ভোট দানের সুবিধার্থে ক্যাম্পাসে যাতায়াতের জন্য শাটল ট্রেনের বাড়তি সিডিউল ও দুই স্পট থেকে বাসের ব্যবস্থা করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। আজ বুধবার সকাল ৯টায় নগরীর নিউমার্কেট মোড় থেকে পাঁচটি ভাড়া বাস ও ষোলশহর রেলস্টেশন থেকে পাঁচটি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব বাস ক্যাম্পাসের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাবে। এ ছাড়া সকাল ১০টায় ষোলশহর রেলস্টেশন থেকে আরো পাঁচটি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব বাস ক্যাম্পাসের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাবে।

চাকসু নির্বাচনে ভোটারদের যাতায়াতের সুবিধার্থে আজ সকাল সাড়ে ৭টা ও সকাল ৮টায় বটতলী রেলস্টেশন থেকে, সকাল সাড়ে ৯টা, সোয়া ১০টা ও সাড়ে ১১টায় ষোলশহর রেলস্টেশন থেকে শাটল ট্রেন ক্যাম্পাসের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাবে। এ ছাড়া দুপুর ১২টায় একটি বিশেষ ট্রেন ষোলশহর থেকে ক্যাম্পাসের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাবে। এর বাইরে বেলা আড়াইটা এবং বেলা সাড়ে ৩টায় বটতলী রেলস্টেশন থেকে দু’টি ট্রেন ক্যাম্পাসের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাবে বলেও সূত্র জানায়। প্রসঙ্গত; সর্বশেষ চাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ১৯৯০ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি। প্রায় তিন যুগ পর সপ্তমবারের মতো চাকসু নির্বাচন হতে যাচ্ছে আজ বুধবার। সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত চাকসু নির্বাচনের ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এরপর ভোট গণনা শুরু হবে। এবারের নির্বাচনে মোট ভোটার সাড়ে ২৭ হাজারের বেশি।