ফেব্রুয়ারিতে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার সম্ভাবনাকে সামনে রেখে নীলফামারীর চারটি আসনে বইতে শুরু করেছে নির্বাচনী হাওয়া। চার আসনে জামায়াতের একক প্রার্থী চূড়ান্ত হলেও তিনটি আসনে বিএনপির একাধিক মনোনয়ন প্রত্যাশির নাম শোনা যাচ্ছে। এ তালিকায় রয়েছে বিভিন্ন দলের কেন্দ্রীয় ও হেবিওয়েট নেতা। মনোনয়ন প্রত্যাশীরা নিজ নির্বাচনী এলাকার বিভিন্ন ধর্মীয় ও সামাজিক অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে আসন্ন নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার ইঙ্গিত দিচ্ছেন। অনেকে বিভিন্ন দিবসে নিজের ছবি সম্বলিত পোস্টার ছাপিয়ে শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন।
নীলফামারী-১ (ডোমার-ডিমলা) আসনে প্রার্থীর তালিকায় রয়েছেন কয়েকটি দলের কেন্দ্রীয় ও হেবিওয়েট নেতা। এই আসনে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর একক প্রার্থী হিসেবে রয়েছেন কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার সদস্য ও জেলা আমির অধ্যক্ষ মাওলানা আব্দুস সাত্তার। বিএনপির প্রার্থী হিসেবে শুধুমাত্র এই আসনে এক রকম চূড়ান্ত হয়ে আছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার ভাগ্নে ইঞ্জিনিয়ার শাহরিন ইসলাম চৌধুরী তুহিন। এ ছাড়া এই আসন থেকে ভোট করবেন জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী।
নীলফামারী-২ (সদর) আসনটি হচ্ছে জেলার গুরুত্বপূর্ণ আসন। এই আসনে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের বিনা ভোটে নির্বাচিত হয়ে একবার সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী ও দু’বার এমপি ছিলেন নাট্য অভিনেতা আসাদুজ্জামান নূর। ২০১৮ সালের সংসদ নির্বাচনে ২০ দলীয় জোটের মনোনীত প্রার্থী জামায়াতের মনিরুজ্জামান মন্টুর বিজয়ের সমূহ সম্ভাবনা দেখে দুপুর ১২টার পর ভোট কেন্দ্র দখল করে নূরের নৌকা মার্কায় সিল মারতে শুরু করে ছাত্রলীগ-যুবলীগের নেতাকর্মীরা। ফলে, সাংবাদিক সম্মেলন ডেকে জামায়াত নির্বাচন বর্জন করে।
এবার এ আসনে জামায়াতের প্রার্থী এখনো কেন্দ্রীয়ভাবে ঘোষণা হয়নি। তবে গত কয়েকদিন ধরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জেলা জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি ও নীলফামারী আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট আল ফারুক আব্দুল লতীফের নাম শোনা যাচ্ছে। বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীর তালিকায় রয়েছেন জেলা বিএনপির সভাপতি আলমগীর সরকার ও জেলা যুবদলের সভাপতি এ এইচ এম সাইফুল্লাহ রুবেল। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের রংপুর বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক এম হাছিবুল ইসলাম ও এবি পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সমাজ কল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক অধ্যাপক আবু হেলাল এ আসনে তাদের প্রার্থীতা চূড়ান্ত করা হয়েছে বলে জানা গেছেন।
নীলফামারী-৩ (জলঢাকা ও কিশোরগঞ্জ) আসনটি জলঢাকা ও কিশোরগঞ্জ উপজেলার একাংশ নিয়ে গঠিত। জামায়াত অধ্যুষিত এলাকা হিসেবে বেশ খ্যাতি রয়েছে এই আসনটিতে। বিগত ৯৬ ও ২০০১ সালের নির্বাচনে জামায়াতের আলহাজ মিজানুর রহমান চৌধুরী বিপুল ভোটে বিজয়ী হন। এ আসনে জামায়াতের প্রার্থী হিসেবে এবার রয়েছেন রংপুর মহানগর জামায়াতের সাবেক সেক্রেটারি ও জেলা জামায়াতের কর্মপরিষদ সদস্য অধ্যক্ষ ওবায়দুল্লাহ সালাফী। বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীর তালিকায় রয়েছেন জেলা কমিটির সহসভাপতি আলহাজ সৈয়দ আলী ও জলঢাকা উপজেলা বিএনপি নেতা ফাহমিদ ফয়সাল চৌধুরী কমেট। জাতীয় নাগরিক পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম-মুখ্যসংগঠক আবু সাঈদ লিয়ন এবং ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের জলঢাকা উপজেলা শাখার সভাপতি আলহাজ আমজাদ হোসেন।
নীলফামারী-৪ (সৈয়দপুর ও কিশোরগঞ্জ) আসনটি সৈয়দপুর উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়ন ও কিশোরগঞ্জ উপজেলার একাংশ নিয়ে গঠিত। এ আসনে জামায়াতে ইসলামীর একক প্রার্থী হিসেবে রয়েছেন সৈয়দপুর উপজেলা আমির হাফেজ মাওলানা আব্দুল মুনতাকিম। এ আসনে বিএনপির একাধিক সম্ভাব্য প্রার্থীর নাম শোনা যাচ্ছে। তারা হলেন- বিএনপির সংরক্ষিত আসনের সাবেক সংসদ সদস্য বিলকিস ইসলাম, বিএনপি নেত্রী কণ্ঠশিল্পী বেবি নাজনিন, সৈয়দপুর বিএনপির সভাপতি আব্দুল গফুর সরকার ও উপজেলা বিএনপির সহসভাপতি অ্যাডভোকেট এস এম ওবায়দুর রহমান। এ ছাড়া, জাতীয় নাগরিক পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম মুখ্য সংগঠক আবু সাঈদ লিয়ন ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী হিসেবে চূড়ান্ত হয়েছেন আলহাজ শহিদুল ইসলাম।
ভোটাররা বলছেন, দীর্ঘ দিন তারা ভোট কেন্দ্রে যেতে পারেনি। দিনের ভোট রাতে ও মৃত ব্যক্তির ভোটও ফ্যাসিস্টের দোসররা দিয়েছিল। এখন ফ্যাসিস্ট নেই, এবার স্বাচ্ছন্দ্যে নিজের ভোট পছন্দের প্রার্থীকে দিতে পারব এটা ভেবে ভালো লাগছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এবার আওয়ামী লীগ মাঠে না থাকায় নীলফামারীর চার আসনে বিএনপি ও জামায়াতের প্রার্থীর মধ্যে দ্বি-মূখী লড়াই হবে। তবে নির্বাচিত হয়ে এই চার আসনের কাণ্ডারি কে কে হবেন সেটি দেখার জন্য আমাদের আরো কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে।