- ৩৯৬ কোটি টাকার পশু পালন
- ২৫ হাজার মেট্রিক টন দুধ উৎপাদন
নিকলী হাওরের পানি শুকাতেই কৃষকের ব্যস্ততা বেড়েছে কয়েকগুণ। ধানের পাশাপাশি গবাদিপশু লালন-পালন করে অধিক লাভের আশায় তারা ছুটছে হাওরের বাতানে। আবাদি ও অনাবাদি জমিতে ঘাসের আবাদ ছড়িয়ে পড়ছে, যা শুধু পশুর খাদ্য হিসেবে নয়, বিক্রির মাধ্যমেও আয় দিচ্ছে। কৃষকদের মতে, ধানের তুলনায় বাতানে পশু পালনে প্রায় ৩০-৪০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তি লাভ হয়। ফলে যৌথভাবে ধানচাষ ও পশুপালনই এখন সবচেয়ে লাভজনক পদ্ধতি হিসেবে বিবেচিত।
হাওরের বুকে অস্থায়ী খামার গড়ে তুলেই ‘বাথান’ নামে পরিচিত এলাকাগুলোয় পশুর পরিচর্যা চলছে। এখানকার খরচ কম। বাজার থেকে অতিরিক্ত খাবার কেনার প্রয়োজন পড়ে না। প্রাকৃতিক ঘাসই খাদ্যের বড় অংশ জোগান দেয়। স্থানীয় প্রাণিসম্পদ অফিসের তথ্যে জানা যায়, গত বছর নিকলীতে ৬৬ হাজার গরু পালন হয়েছে, যার বাজারমূল্য প্রায় ৩৯৬ কোটি টাকা। পাশাপাশি ছিল ১৩ হাজার ছাগল, চার হাজার ৩০০ ভেড়া এবং ১৮০টি মহিষ। চলতি মৌসুমে ৭৪ হাজার গরু পালনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে, অন্যান্য পশুর সংখ্যাও তার সাথে বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এসব পশুর প্রায় ৬০ শতাংশই হাওরের বাথান এলাকায় পালন হয়।
মাংসের পাশাপাশি দুধ উৎপাদনও বাথানের বড় শক্তি। গত বছর নিকলীতে প্রায় ২৫ হাজার মেট্রিক টন দুধ উৎপাদন হয়েছে। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে এই দুধ নৌ ও সড়কপথে ঢাকা ও আশপাশের বাজারে পাঠানো হয়। হাওরের দুধের দাম তুলনামূলক কম হওয়ায় ভোর হতে না হতেই পাইকারদের ভিড় জমে। এই দুধ দিয়েই তৈরি হয় অষ্টগ্রামের পনির, বাজিতপুর সন্দেশ ও নিকলীর নাড়ুসহ নানা ধরনের মিষ্টান্ন। এমনকি গবাদিপশুর বিষ্ঠাও জৈবসার হিসেবে বিক্রি হয়ে খামারিদের বাড়তি আয় নিশ্চিত করে।
কিশোরগঞ্জ জেলা মূলত হাওরনির্ভর। জেলার বড় অংশই পানির আধিপত্যে থাকা এই ভূপ্রকৃতি নিয়ে গঠিত। নিকলীর আয়তন প্রায় ২১৪ বর্গকিলোমিটার। বর্ষায় ছয় মাস পানিতে ডুবে থাকলেও পানি নামলেই শুরু হয় দিন-রাত পরিশ্রম। উর্বর জমিতে অল্প ইউরিয়া ব্যবহারেই ঘাস ভালো জন্মায়, রোপণের ঝামেলাও কম। স্বাস্থ্যকর পরিবেশে পশু দ্রুত বেড়ে ওঠে, রোগবালাই কম হয়।
সরেজমিন ২৭ নভেম্বর ঐতিহ্যবাহী নিকলী সাজনপুর-আঠার বাড়িয়া গরুর হাটে দেখা গেছে বাড়ন্ত ও শুকনো গরু কেনার ব্যস্ততা। ছাতিরচরের শহীদ মিয়া জানান, মোটা তাজাকরণের জন্য অনেকেই একসাথে ১০ থেকে ১০০টি পর্যন্ত গরু কিনছেন। বোরোলিয়া হাওরের কৃষক কামরুল হাসান বলেন, বোরো ধানের পাশাপাশি তিনি এ বছর অন্তত ২০টি গরু পালনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
ছাতিরচর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সামসুজ্জামান চৌধুরীর মতে, কৃষকদের সহজ শর্তে ঋণ ও অবকাঠামো সহায়তা নিশ্চিত করা গেলে কৃষি ও খামার দুটোতেই লাভ আরো বাড়বে। উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা: আবু হানিফ জানান, বাতানে পালিত পশুর সংখ্যাই সবচেয়ে বেশি এবং বর্ষার আগমুখ পর্যন্ত এখানেই লালন-পালন চলে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুস সালাম বলেন, সারে সরকারি প্রণোদনা ও সেচ-বীজ সহায়তায় কৃষকরা উপকৃত হচ্ছেন। জেলা কৃষি কর্মকর্তা ড. সাদিকুর রহমান জানান, গত মৌসুমের ভালো ফলনের ধারাবাহিকতায় চলতি বছরও বোরো আবাদ বাড়বে এবং এরই মধ্যে প্রায় ৩০ শতাংশ বীজতলার কাজ শেষ হয়েছে।



