আদালত অবমাননা

হাসিনার বিরুদ্ধে অভিযোগের শুনানি ও আদেশ ১৯ জুন

বাসস
Printed Edition

ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ছাত্রলীগ নেতা শাকিল আলম বুলবুলের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগের পরবর্তী শুনানি ও আদেশের জন্য আগামী ১৯ জুন দিন ধার্য করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।

পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেয়ার পরও হাজির না হওয়ায় বিচারপতি মো: গোলাম মূর্তজা মজুমদারের নেতৃৃত্বাধীন ৩ সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গতকাল মঙ্গলবার এই আদেশ দেন। আদালতে প্রসিকিউশনের পক্ষে শুনানি করেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম।

‘আমার বিরুদ্ধে ২২৭টি মামলা হয়েছে, তাই ২২৭ জনকে হত্যার লাইসেন্স পেয়ে গেছি’, বলে ‘শেখ হাসিনার দেয়া বক্তব্যের’ একটি অডিও ভাইরাল হয়। পরে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) ওই কথপোকথনের ফরেনসিক পরীক্ষা করে সেটি হাসিনার বলে সত্যতা পায়। পরবর্তীতে এই বক্তব্যের বিষয়ে আদালত অবমাননার আবেদন করা হয় ট্রাইব্যুনালে।

প্রসিকিউশনের করা সে আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ট্রাইব্যুনাল অভিযোগটি আমলে নিয়ে গত ১৫ মের মধ্যে তাদের জবাব দাখিলের নির্দেশ দেন। কিন্তু ১৫ মে জবাব দাখিল না করায় তাদেরকে ২৫ মে ট্রাইব্যুনালে হাজির হওয়ার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়। তবে ২৫ মেও তারা হাজির না থাকায় প্রসিকিউশনের আবেদনে শেখ হাসিনাসহ দু’জনকে আদালত অবমাননার অভিযোগের ব্যাখ্যা দিতে হাজির হওয়ার জন্য বহুল প্রচারিত দু’টি পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের নির্দেশ দেন ট্রাইব্যুনাল।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এর নির্দেশক্রমে ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রার (সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ) এ এস এম রুহুল ইমরান স্বাক্ষরিত নোটিশটি ২৬ মে যুগান্তর ও নিউ এজ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন ১৯৭৩ এর ১১(৪) ধারা এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ কার্যপ্রণালী বিধিমালা-২০১০ এর ৪৫ বিধি অনুসারে অভিযুক্তদের ট্রাইব্যুনালে উপস্থিতির এই নোটিশে বলা হয়, ‘অভিযুক্ত শেখ হাসিনা ও শাকিল আকন্দ বুলবুল ওরফে মো: শাকিল আলমের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে (আইসিটি-১) চিফ প্রসিকিউটর আদালত অবমাননার অভিযোগ আনেন এবং অভিযোগের জবাব দাখিলের জন্য তাদের বরাবরে নোটিশ প্রেরিত হয়। যেহেতু নোটিশ সত্ত্বেও তারা ট্রাইব্যুনালে উপস্থিত হন নাই এবং কোনো জবাব দাখিল করেন নাই, সেহেতু আত্মপক্ষ সমর্থনের অধিকতর সুযোগ প্রদানের লক্ষ্যে তাদেরকে পুনরায় নোটিশ প্রদান করা যাইতেছে ৩ জুন সকাল ১০টায় ট্রাইব্যুনালে সশরীরে উপস্থিত হয়ে অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তাদের জবাব বা বক্তব্য দাখিল করিবেন। অন্যথায় উক্ত ধার্য তারিখ অথবা পরবর্তী যেকোনো তারিখ তাদের অনুপস্থিতিতে অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বিচারকার্য সম্পন্ন হইবে।

পলাতক ৪ আসামি হাজিরে বিজ্ঞপ্তি দেয়ার নির্দেশ : এদিকে গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলাকালে রাজধানীর চাঁনখারপুলে আনাসসহ ৬ জনকে হত্যার ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে দায়ের করা মামলায় পলাতক চার আসামিকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে হাজির করতে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি জারির নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

এই চার আসামি হলেন- ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমান, সাবেক যুগ্ম কমিশনার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী, রমনা অঞ্চলের সাবেক অতিরিক্ত উপকমিশনার শাহ্ আলম মো: আখতারুল ইসলাম ও রমনা অঞ্চলের সাবেক সহকারী কমিশনার মোহাম্মদ ইমরুল।

আদেশে ট্রাইব্যুনাল একটি বাংলা দৈনিক ও একটি ইংরেজি দৈনিকে বুধবার (৪ জুন) এই বিজ্ঞপ্তি দেয়ার নির্দেশ দিয়ে এ বিষয়ে পরবর্তী শুনানির জন্য আগামী ২২ জুন দিন ধার্য করেছেন। বিচারপতি গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল বেঞ্চ গতকাল এই আদেশ দেন। এদিন ট্র্যাইব্যুনালে মামলায় প্রসিকিউশনের পক্ষে শুনানি করে প্রসিকিউটর শহিদুল ইসলাম সরদার।

ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থান চলাকালে গত ৫ আগস্ট রাজধানীর চাঁনখারপুলে গুলি করে ছয়জনকে হত্যার ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় প্রথম (ফরমাল চার্জ) আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গত ২৫ মে আমলে নেন ট্রাইব্যুনাল। ওইদিন আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিলের পর তা ট্রাইব্যুনালে উপস্থাপন করে অভিযোগটি আমলে নেয়ার আবেদন করেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। এরপর ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো: গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেল অভিযোগটি (কগনিজেন্সে নেয়ার) আমলে নেয়ার আদেশ দিয়ে এ বিষয়ে পরবর্তী শুনানির জন্য ৩ জুন দিন ধার্য করেন। এর আগে ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা চিফ প্রসিকিউটর বরাবর এই মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করে। সে তদন্ত প্রতিবেদনের অভিযোগে বলা হয়, রাজধানীর চাঁনখারপুল এলাকায় আসামিরা নিরস্ত্র ও শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকারীদের ওপর প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করে শহীদ শাহরিয়ার খান আনাস, শেখ মাহদি হাসান জুনায়েদ, শহীদ মো: ইয়াকুব, শহীদ মো: রাকিব হাওলাদার, শহীদ মো: ইসমামুল হক এবং শহীদ মানিক মিয়াকে গুলি করে হত্যা করে।

তদন্ত সংস্থা এই মামলায় তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের পর চিফ প্রসিকিউটর সাংবাদিকদের জানান, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্র্যাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার দেয়া এই মামলার তদন্ত প্রতিবেদনটি ৯০ পৃষ্ঠার। তদন্ত করতে তদন্ত সংস্থার সময় লেগেছে ৬ মাস ১৩ দিন। তদন্ত প্রতিবেদনে ৭৯ সাক্ষীর জবানবন্দি নেয়া হয়। এ ছাড়া ১৯টি ভিডিও, পত্রিকার ১১টি রিপোর্ট, দু’টি অডিও, বই ও রিপোর্ট ১১টি এবং ৬টি ডেথ সার্টিফিকেট সংযুক্ত করা হয়। তদন্ত প্রতিবেদনে আসামি করা হয় সাবেক ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমানসহ আটজনকে। তাদের মধ্যে গ্রেফতার আছেন পরিদর্শক আরশাদ, কনস্টেবল মো: সুজন, ইমাজ হোসেন ইমন ও নাসিরুল ইসলাম।

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন নির্মূলে আওয়ামী লীগ সরকার, তার দলীয় ক্যাডার ও সরকারের অনুগত প্রশাসনসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংগঠিত করে বলে একের পর এক অভিযোগ জমা পড়ে। এসব অপরাধের বিচার এখন অনুষ্ঠিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে।