আগস্ট মাসে বড় ধরনের নাশকতার ছক তৈরি করেছিল নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা। তবে গ্রেফতার আতঙ্ক এবং অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের কারণে ১৫ আগস্টে শোক দিবসের অনুষ্ঠান পুরোপুরি পালন করতে পারেনি নেতাকর্মীরা।
ধানমন্ডি ৩২ গ্রুপের ধ্বংস : গত ১ আগস্ট ‘ধানমন্ডি ৩২’ টেলিগ্রাম গ্রুপের মূল একটিভিস্ট সোহেল রানা ওরফে গোলন্দাজ গ্রেফতার হওয়ার পর নেতাদের নাশকতার পরিকল্পনা ফাঁস হয়ে যায়। গোলন্দাজের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে আরো অনেক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যের নাম জানতে পারে গোয়েন্দারা। পরবর্তীতে ধানমন্ডি ৩২ গ্রুপের অন্য একটিভিস্ট ইউসুফ কবীর, মিলটন ও শম্পা গ্রেফতার হওয়ার পর গোয়েন্দারা পুরো নাশকতার রোডটম্যাপ হাতে পায়।
গোয়েন্দা সূত্র জানায়, সম্প্রতি গ্রেফতার মেজর সাদিক মূলক একজন মুজিববাদী ও কট্টর আওয়ামী লীগ সমর্থক। তিনি নিষিদ্ধ দলের নেতাকর্মীদের গেরিলা প্রশিক্ষণ দিচ্ছিলেন। সেনাবাহিনী তথ্য পাওয়ার সাথে সাথে তাকে হেফাজতে নেয়। বর্তমানে তার বিরুদ্ধে অভিযোগের তদন্ত এবং বিচারকাজ চলমান রয়েছে সেনা আইনের মাধ্যমে।
অপারেশন ঢাকা ব্লকেড ব্যর্থ : ১৫ আগস্টে রাজধানীর শাহবাগ এবং বিমানবন্দর এলাকায় বড় জমায়েতের পরিকল্পনা করা হয়েছিল, যার নাম রাখা হয়েছিল ‘অপারেশন ঢাকা ব্লকেড’। নিষিদ্ধ দলের নেতাকর্মীরা নাশকতা চালানোর চেষ্টা করছিলেন। এই পরিকল্পনায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কয়েকজন সদস্যও সমর্থন দেয়ার কথা ছিল। তবে মেজর সাদিক ও তার স্ত্রী গ্রেফতার হওয়ার পর অনেক তথ্য ফাঁস হয়ে যায়, যার ফলে নাশকতার পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়।
সাবেক সেনা সদস্যদের সাড়া : গোয়েন্দা সূত্রে অভিযোগ উঠে প্রাক্তন জেনারেল (অব:) আকবরের বিরুদ্ধে। তিনি এক দিনের জন্য দেশে এসে কয়েকজন সাবেক সেনা সদস্যদের সাথে বৈঠক করেছিলেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এবং গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে তাদের বৈঠকের পরিকল্পনাও ভেস্তে যায়। মেজর (অব:) রেজা এবং মেজর জেনারেল (অব:) জাহাঙ্গীরের নামও তদন্তে উঠে আসে।
কেন ব্যর্থ হলো নাশকতার পরিকল্পনা : আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও নেতাকর্মীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দলের মধ্যে তুমুল দ্বন্দ্ব চলছে। সিনিয়র নেতারা মাঠপর্যায়ের নেতাকর্মীদের আর্থিক সহায়তা বন্ধ করে দিয়েছেন। নেতাকর্মীরা ক্ষুব্ধ এবং ছদ্মবেশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়েছেন। ধানমন্ডি ৩২ গ্রুপের অ্যাডমিন সোহেল রানা, ইউসুফ কবীর, মিলটন ও শম্পা গ্রেফতার হওয়ায় গ্রুপ দুর্বল হয়ে পড়ে। অন্যান্য টেলিগ্রাম গ্রুপ সচল থাকলেও চরম অস্থিরতা দেখা দিয়েছে।
নেতাকর্মী ও গোয়েন্দারা জানান, গ্রুপের ত্যাগী নেতারা সিনিয়র নেতাদের উদ্দেশ্য করে বলছেন, ‘আপনাদের পাপের ফল এখন আমাদের ওপর চলছে। প্রতিদিন নেতাকর্মীরা গ্রেফতার হচ্ছে, অথচ তাদের কারাগারের খরচ এবং পরিবারের খরচ মেটাচ্ছেন না কেউ। আগে অর্থ পাঠানো হতো, এখন সব বন্ধ।’
কলকাতায় নেতাকর্মীদের আতঙ্ক : কলকাতা পুলিশ অবৈধ বাঙালিদের গ্রেফতারে অভিযান চালিয়ে পাঁচজনকে গ্রেফতার করে। তাদের আওয়ামী লীগ পরিচয় দিয়েও পার পায়নি। এ কারণে কলকাতায় থাকা নেতাকর্মীরাও আতঙ্কিত।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা : পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম নয়া দিগন্তকে বলেন, শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার পর থেকে পুলিশ শিগগিরই নেতাদের দেশে ফিরবেন বলে জানেন। নাশকতার তথ্য পাওয়া গেছে, তবে পুলিশের ব্যাপক তৎপরতায় নেতাকর্মীরা আত্মগোপনে গেছে। ১৫ আগস্টসহ যেকোনো অনুষ্ঠান চলাকালে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং সেনাবাহিনী কঠোর অবস্থানে রয়েছে। এ ছাড়া র্যাব ও পুলিশও নাশকতা রোধে প্রতিদিন কাজ করছে।