বিদেশগামী শ্রমিকদের সাথে প্রতারণা, জাল জালিয়াতি ছাড়াও নানা অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় ২৪৮টি রিক্রুটিং এজেন্সির লাইসেন্সের কার্যক্রম স্থগিত (সার্ভার লকড) করে দিয়েছে।
জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর কর্মকর্তারা বলছেন, যেসব রিক্রুটিং এজেন্সি মালিকদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে তাদেরই লাইসেন্সের কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে। যতক্ষণ পর্যন্ত এসব অভিযোগের নিষ্পত্তি না করা হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত তাদের লাইসেন্সের কার্যক্রম বন্ধই থাকবে। তবে শুধু প্রতারণা আর জাল জালিয়াতির কারণে লাইসেন্স স্থগিত হচ্ছে তা কিন্তু নয়, নির্ধারিত সময়ে এজেন্সির লাইসেন্স নবায়ন না করার কারণেও কর্মকাণ্ড স্থগিত করা হচ্ছে।
এ দিকে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের জুন-২০২৫ মাসের সমন্বয় সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, অভিযোগের সংখ্যা মাত্রাতিরিক্ত হওয়ায় সব অভিযোগ বিএমইটিতে না পাঠিয়ে মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের তদন্তের সাথে সম্পৃক্ত করার প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেয়ার জন্য ওই সভার সভাপতি সিনিয়র সচিব ড. নেয়ামত উল্যা ভূঁইয়া সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পরিসংখ্যান অনুযায়ী জনশক্তি ব্যবসার সাথে বৈধভাবে সম্পৃক্ত রয়েছে ২ হাজার ২৭৪টি রিক্রুটিং এজেন্সি। এ সবের মধ্যে বেশকিছু রিক্রুটিং এজেন্সির মালিক ও তাদের প্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে শত শত বিদেশগামী কর্মী নানাভাবে জনশক্তি ব্যুরোর কর্মসংস্থান সেলে লিখিত অভিযোগ জমা দিয়েছেন। তাদের দেয়া অভিযোগের ভিত্তিতেই জনশক্তি ব্যুরোর কর্মকর্তারা প্রথমে উভয়পক্ষকে চিঠি দিয়ে অফিসে ডেকে শুনানি করেন। এরপর জরিমানার মাধ্যমে বেশকিছু অভিযোগের নিষ্পত্তি করা হয়। তবে যেসব অভিযোগের নিষ্পত্তি করা সম্ভব হয় না, সেগুলোর বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে দেয়া হয়। এরপর মন্ত্রণালয়ের গঠিত টাস্কফোর্স (মনিটরিং ও এনফোর্সমেন্ট বিভাগ) এসব অভিযোগের ওপর অনুসন্ধান এবং আরো শুনানি করে যেগুলোর বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা মিলেছে ওইসব এজেন্সির কার্যক্রম স্থগিত (সার্ভার লকড) রাখার সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। অভিযোগ রয়েছে, প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় এবং বিএমইটির কিছু কর্মকর্তা প্রায় ক্ষেত্রেই কর্মীর বিরুদ্ধে গিয়ে মালিককে ছাড় দিয়ে থাকেন। একাধিক ভুক্তভোগী নয়া দিগন্তকে বলেন, অভিযোগ নিয়ে এসব কর্মকর্তা তাদের অধীনস্থ কর্মচারীদের দিয়ে নানাভাবে অর্থ হাতিয়ে নিয়ে থাকেন বলে দীর্ঘদিনের অভিযোগ। এর ফলে বিদেশগামী কর্মীদের সাথে প্রতারণা, জাল জালিয়াতি করে অনেক রিক্রুটিং এজেন্সির মালিক পার পেয়ে যায় এবং আবারো একই ধরনের অপরাধে জড়িয়ে পড়ে। তখন তারা আরো বেপরোয়া হয়ে ওঠে বলে ভুক্তভোগী কর্মী ও বিএমইটির কর্মকর্তারা জানান।
গতকাল শুক্রবার রাতে জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর দায়িত্বশীল একজন কর্মকর্তা নয়া দিগন্তকে এ প্রসঙ্গে বলেন, রিক্রুটিং এজেন্সির লাইসেন্স নানা কারণে স্থগিত হয়। এরমধ্যে বিদেশগামী কর্মীর অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সার্ভার লকড হয়। আবার অনেকের লাইসেন্স নবায়ন না হওয়ার কারণেও লকড বা স্থগিত করা হয়। আবার অনেকে পুরনো জামানতের সাথে বর্ধিত টাকা জমা না দেয়ার কারণে লাইসেন্স স্থগিত রয়েছে। আবার অনেক ক্ষেত্রে মালিকানা সমস্যার কারণে লাইসেন্স স্থগিত করা হয়।
গত রাতে কাকরাইলের একজন জনশক্তি ব্যবসায়ী নিজের পরিচয় না জানিয়ে নয়া দিগন্তকে বলেন, আমার লাইসেন্স স্থগিত রয়েছে বর্ধিত জামানতের টাকা জমা না দেয়ার কারণে। পুরনো লাইসেন্স নেয়ার সময় জামানতের ফি ছিল ৮ লাখ ৫০ হাজার টাকা। এটি এখন ২৩ লাখ ৯৫ হাজার টাকা করা হয়েছে। টাকা জমা না দেয়ায় লাইসেন্স স্থগিত করেছে বিএমইটি। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, এ ছাড়াও বিদেশগামীদের সাথে প্রতারণা করার অভিযোগে অনেক মালিকের লাইসেন্স স্থগিত রয়েছে বলে জানি। তবে এই সংখ্যা কত তা আমি বলতে পারব না।
প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের মাসিক বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সভার সভাপতি সিনিয়র সচিব টাস্কফোর্সকে নির্দেশনা দিয়েছেন, মনিটরিং ও এনফোর্সমেন্ট অনুবিভাগে প্রতিবেদনাধীন মাসে প্রাপ্ত অভিযোগের সংখ্যা, মাসে অভিযোগের নিষ্পত্তির সংখ্যা এবং অনিষ্পন্ন অভিযোগের সংখ্যা পরবর্তী সভায় উপস্থাপন করতে হবে। একই সাথে অভিযোগ নিষ্পত্তির লক্ষ্যে কী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে তাও পরবর্তী সভায় উপস্থাপন করার জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।